আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা এবং প্রাসঙ্গীক বিষয়ে রাষ্ট্র-বিশেষজ্ঞ আহসান উল করিমের

আমি মানুষ না অণুজীব কইতাম পারতাছিনা। রাষ্ট্র-বিশেষজ্ঞ আহসান উল করিমের সুপ্রীমকোর্টে পেশ করা প্রতিবেদন ৪০ বছরের এ সংকটের স্থায়ী সমাধানের জন্যে কোন ভূমিকা রাখতে পারে কি? [লেখাটতি একটু বড় তাই একটু ধৈর্য ধরে পড়ার অনুরধ রইল] প্রতিবেদনটি সরাসরি তুলে হলঃ In the Supreme Court of Bangladesh Appellate Division (Civil Appellate Jurisdiction) Civil Appeal No. 139/2005 In the Matter of: Md. Abdul Mannan Khan, Advocate & Others -----Appellants VS. Bangladesh Government & Others ----- Respondents Written Statements Submitted by Md. Ahsan ul Karim as per Direction of the Concerned Court, Appellate Division, Supreme Court of Bangladesh অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা এবং প্রাসঙ্গীক বিষয়ে অভিমত আমার পরিচয় মাননীয় আদালত, ১.১। গত ০৩/০৪/২০১১ তারিখে আদালতে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ও প্রাসঙ্গীক বিষয়’-এ অভিমত রাখার সুযোগ প্রদানের জন্যে আমি আবেদন করি। এর প্রেক্ষিতে মাননীয় আদালত ‘আমার পরিচয় এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিষয়ে আমি কেন অভিমত প্রদান করতে চাই’--- তা জানতে চান। উচ্চতর আদালতে আগে কখনো বক্তব্য উপস্থাপন না করায় এ প্রশেড়বর জবাব আমি সাবলীল ভাষায় দিতে পারিনি।

আমার নাম মোঃ আহ্সান উল করিম। পিতার নাম মরহুম ইস্রাইল হোসেন এবং মাতার নাম বেগম রিজিয়া হোসেন। পাবনা জেলার সদর উপজেলার পৌরএলাকায় সাধুপাড়া (নীলকুঠি) গ্রাম আমার স্থায়ী ঠিকানা। আমার অস্থায়ী ঠিকানা, বাসা নং-১৬, রোড নং-১০, সেক্টও নং-৭, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০। আমি জন্মসুত্রে বাংলাদেশের নাগরিক এবং বয়স প্রায় ৫৪ বছর।

রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পাবনা জেলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক (১৯৭২) এবং পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে উচ্চ-মাধ্যমিক (১৯৭৫) শিক্ষা আমি সমাপ্ত করি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে সড়বাতক (১৯৭৯) ও সড়বাতকোত্তর (১৯৮২) ডিগ্রি অর্জন করি। ১৯৮২ সালের ব্যাচে বিসিএস (অর্থনীতি) ক্যাডারে যোগদান করি। পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ইন্টারন্যাশনাল পলিটিক্যাল ইক্নোমি’-তে এম.এস ও ‘পাবলিক এ্যাফেয়ার্স’-তে এ এম.পি.এ ডিগ্রি অর্জন করি। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘পাবলিক পলিসি ও পলিটিক্যাল ইক্নোমি’ বিষয়ে আমি পিএইচডি ফেলো ছিলাম।

বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের একজন সাবেক উপ-সচিব। ১.২। আমি ১৯৮২ সাল থেকে বাংলাদেশকে একটি ‘সম্মৃদ্ধিশীল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র’-এ রূপান্তর করার জন্যে অপরিহার্য গণতন্ত্রমুখী প্রাতিষ্ঠানিক পুনঃর্গঠন/সংস্কারগুলোর উদ্যোগ নিয়ে আসছি। সেগুলোর মধ্যে নিমড়বলিখিতগুলো উল্লে২যোগ্য হলোঃ ** থানাগুলোকে মহকুমায় (উপজেলা) উনড়বীত করা; **মহকুমাগুলোকে জেলায় উনড়বীত করা; ** বাংলাদেশকে ৯টি বিভাগে বিভক্ত করা (২টি বাকী রয়েছে); ** গ্রামইউনিয়ন এলাকাকে ৯টি ওয়ার্ডে বিভক্ত করা; ** পার্বত্য ৩টি জেলাসহ স্থানীয় জেলা সরকার গঠণ করা; ** ৯টি আঞ্চলিক ক্যন্টনমেন্ট গঠন করা (২টি বাকী রয়েছে); ** আয়কর কাঠামো ০%-৫০% থেকে ০%-২৫%-এ হ্রাস করা; ** মন্ত্রীকে মন্ত্রণালয়ের প্রধান নির্বাহী করা; **সংসদে নির্বাচিত দলীয় প্রতিনিধির আনুপাতিক মহিলা আসন পদ্ধতি; ** দু’পদক্ষেপে আপীল বিভাগের বিচারপতির সংখ্যা ১১-এ উনড়বীত করা; ১.৩। উক্ত প্রাতিষ্ঠানিক পুনর্গঠন/সংস্কারগুলো জনসমর্থনে ও নির্বিঘেড়ব বাস্তবায়িত হয় এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থার গণতন্ত্রমুখী গুণগত পরিবর্তন এসেছে।

নিমেড়বালেখিত অবক্ষমান গণতন্ত্রমুখী ভিত্তিমূলক প্রাতিষ্ঠানিক পুনর্গঠনের প্রস্তাবনাগুলো বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ একটি উচ্চমাত্রার ‘সম্মৃদ্ধিশীল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র’-এ পরিনত হবেঃ ** ময়মনসিংহ ও কুমিল্লা বিভাগ গঠণ করা; ** সিলেটকে আঞ্চলিক ক্যন্টনমেন্ট-এ রূপান্তর করা; ** দুইকক্ষ ভিত্তিক সংসদব্যবস্থা প্রবর্তন করা; **সংসদীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন করা; ** একত্রীভুত আপীল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগকে সুপ্রীমকোর্ট ও হাইকোর্ট হিসেবে পৃথকীকরণ এবং বিভাগ ভিত্তিক হাইকোর্ট স্থাপন করা; ** সরকারব্যবস্থায় সুষম-গণতন্ত্রমুখী সন্মানী/বেতন কাঠামো প্রবর্তন করা; ** মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতিমালার বিধান। ১.৪। ২০০০ সাল পর্যন্ত সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগে প্রধান বিচারপতিসহ ৫ (পাঁচ) জন বিচারক নিয়ে একটি বেঞ্চ/কোর্ট প্রচলিত ছিল। ক্রমবর্দ্ধমান বিপুল জনসংখ্যা রাষ্ট্রের প্রয়োজনের সাথে এটা সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না। এতে আপীল বিভাগে বিবেচনাধীন মামলা্ ক্রমশঃ পুঞ্জিভুত হতে থাকে।

এজন্যে দু’পদক্ষেপে ১১/১২ জন বিচারক নিয়ে আপীল বিভাগ পুনর্গঠনের জন্যে প্রস্তাব রাখি (দৈনিক যুগান্তর, ১২/০৯/২০০০)। প্রধান বিচারপতি, আইন কমিশনের চেয়ারম্যন ও আইন-বিচার মন্ত্রীর সাথে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করি। সবাই সম্মত হন। এ প্রস্তাবনা ও উদ্যোগের জন্যে ১১ জন বিচারক নিয়ে বর্তমানে আপীল বিভাগ গড়ে উঠেছে। এর উদ্দেশ্য ছিল, জাপানের সুপ্রীমকোর্টের আলোকে আমাদের আপীল বিভাগে ৩(তিন) জন বিচারক ভিত্তিক μিমিন্যাল, সিভিল ও আর্থিক/প্রশাসনিক বিষয়ে ৩টি ‘নিয়মিত বেঞ্চ/কোর্ট এবং প্রয়োজনানুযায়ী অন্যান্য বিশেষ বেঞ্চ/কোটর্’ গঠনের সুযোগ সৃষ্টি করা।

এর লক্ষ্য ছিল, আপীল বিভাগের মামলা নিষ্পত্তির গতি বৃদ্ধির মাধ্যমে সার্বিক বিচারব্যবস্থাকে গতিশীল করা এবং সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বর্বরতম হত্যা মামলা স্বল্পসময়ে চুড়ান্ত নিষ্পত্তির সুযোগ সৃষ্টি করা। ১.৪। আমি সনদপ্রাপ্ত আইনজ্ঞ ও পেশাজীবি সংবিধান বিশেষজ্ঞ নই। তবে রাষ্ট্রব্যবস্থা বিষয়ে আমার সম্যক জ্ঞান রয়েছে। সে বিশ্বাস থেকে সন্মানীয় এমিকাস কিউরিগণের সাথে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ও প্রাসঙ্গীক বিষয়’-এ একজন নাগরিক হিসেবে মাননীয় আদালতে অভিমত রাখার সুযোগ প্রদানের জন্যে সন্মানীয় প্রধান বিচারপতির সমীপে ১৩/০২/২০১১ তারিখে আবেদন করি এবং সংশিষ্ট বেঞ্চের সন্মানীয় বিচারপতিগণকে অনুলিপি প্রদান করি।

অতীতে তালিকাভুক্ত বিজ্ঞ সংবিধান বিশেষজ্ঞ ছাড়া এমিকাস কিউরি হিসেবে অন্য কারো অভিমত রাখার নজীর আমাদের সুপ্রীমকোর্টে নেই। এজন্যে সন্মানীয় বিচারপতি এস কে সিন্হা, বিচারপতি মোঃ আব্দুল ওয়্হাাব মিঞা ও বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের সাথে আমি দেখা করি। তাঁদের সাথে আলোচনা মেতাবেক ০৩/০৪/২০১১ তারিখে মাননীয় আদালতে ‘প্রর্থিত বিষয়’-এ অভিমত রাখার সুযোগ প্রদানের জন্যে পুনরায় আবেদন জানাই। উক্ত প্রর্থিত বিষয়ে আমাকে লিখিত অভিমত রাখার পরামর্শ ও সুযোগ দেয়ায় মাননীয় আদালতের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। ১.৫।

পূর্বেল্লিখিত বাস্তবায়িত ও অবক্ষমান প্রাতিষ্ঠানিক পুনঃর্গঠনগুলো কোন আবেগপ্রসূত বিষয় নয়। রেলগাড়ী নিবিগেড়ব চলাচলের জন্যে যেমন রেল লাইন প্রয়োজন। তেমনি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রজীবনে স্বধারাবাহিকতার জন্যেও অপরিহার্য ভিত্তিমূলক গণতন্ত্রমুখী প্রতিষ্ঠানসমূহ আছে। বিশ্বে প্রচলিত ও পরীক্ষিত গণতন্ত্রমুখী প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার অভিজ্ঞতা থেকে লব্ধ এবং বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে রূপায়িত। বাস্তবায়িত পুনর্গঠনগুলো জন্যে ১৯৮২ উত্তর বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার অগ্রগতি হয়েছে।

অবক্ষমান প্রস্তাবিত প্রাতিষ্ঠানিক পুনঃর্গঠনগুলো বাস্তবায়িত হলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার ভিত্তিমূলক প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পনড়ব হবে এবং বাংলাদেশ একটি উচ্চমাত্রার ‘সম্মৃদ্ধিশীল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র’-এ রূপাস্তরিত হবে। ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা’ বিষয়ে আমার অভিমত রাখার আগে আমার রাষ্ট্রচিন্তার পটভুমি ও রূপরেখা সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরা সমীচীন হবে। আমার রাষ্ট্রচিন্তার পটভুমি মাননীয় আদালত, ২.১। আমার দাদা মরহুম ইস্মাইল হোসেনের বাবা মরহুম ইদ্রিস হোসেন ১৮৫৭ সালে কোলকাতাস্থ প্রেসিডেন্সী কলেজে পড়াকালীন সম্রাজ্যবাদী বৃটিশসম্রাটের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জাতীয়তাবাদী ভারতসম্রাটের পক্ষ নেন। তাঁর বাবা মরহুম দাউদ হোসেন তখন বৃটিশ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর ডাইরেক্টোরীতে (রাইটার্স বিল্ডিং, কোলকাত) কর্মরত।

যুদ্ধে পরাজয়ের পরে ভারতসম্রাটের পক্ষের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির শত শত মুসলমান কিশোর-যুবককে ফাঁসি-হত্যা করা হয়। বৃটিশ সরকারের হাত থেকে পরিবারকে রক্ষার জন্যে তিনি জ্যেষ্ঠসন্তান মরহুম ইদ্রিস হোসেনকে বাধ্য হয়ে ত্যাজপুত্র ঘোষণা করেন এবং আত্মগোপন করে বাঁচতে বলেন। ‘সাধু মন্ডল’নামধারণ করে মরহুম ইদ্রিস হোসেন পাবনার ইশ্বরদী উপজেলায় আত্মগোপন করেন এবং পরবর্তীতে সাহাপুর ইউনিয়নে বিবাহ করেন এবং কৃষিকর্ম ও গ্রামীন জীবন যাপন করেন। তিনি অল্প বয়সে মারা যান। ২.২।

মরহুম ইস্মাইল হোসেন প্রেসিডেন্সী কলেজে পড়াকালীন ১৯০৬ সালেই মুসলিম লীগে ছাত্রকর্মী হিসেবে যোগ দেন। ত্রিশ-চল্লিশ দশকে অবিভক্ত বঙ্গের বাস্তব রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্ভবতঃ ষাটদশকের অবিভক্ত পাকিস্তানের চেয়েও সংকটাপনড়ব ছিল। অনেকের মত আমার বাবা মরহুম ইস্রাইল হোসেনও ৯ম শ্রেণীতে পড়াকালীন মুসলিম ছাত্রলীগে এবং অতঃপর মুসলিম লীগের ন্যাশনাল গার্ডে যোগ দেন। ইংরাজীসহ কয়েক বিষয়ে লেটারসহ কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধীনে মুসলমান ছাত্রদের মধ্যে প্রথম স্থান থাকায় তাঁর প্রতি অনেকের বিশেষ আকর্ষন ছিল। বৃটিশ সরকারের আহ্বানে মুসলিম লীগের ১৯২৯ সালের ঐতিহাসিক ১৪ দফা পেশ করে।

অতঃপর লন্ডন প্রবাসী চৌধুরী রহমত আলী বৃটিশ-ভারত ভেঙ্গে পূর্বে বঙ্গ, মধ্যে ভারত ও পশ্চিমে পাকিস্তান নামে তিনটি স্বাধীন রাষ্ট্রের কথা ভবিষ্যতব্য করেন (১৯৩২)। ঐতিহাসিক ১৪ দফার আলোকে আরও প্রদেশ পুনর্গঠনসহ যুক্তরাষ্ট্রীয় ভারত গড়ে তোলার জন্যে ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন প্রণীত হয়। বৃটিশ-ভারতের পূর্বে ও পশ্চিমে নিরষ্কুুষ মুসলমান অধ্যুষিত প্রদেশের হওয়ায় ১৯৩৭ সালের নির্বাচনোত্তর গণতান্ত্রিক রাজনীতির নূতন মেরুকরণ দেখা দেয়। অতঃপর ১৪ দফা ১ম দফা সংশোধনপূর্বক মুসলিম লীগ ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব (১৯৪০) গ্রহন করে। লাহোর প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে ভবিষ্যতে পৃথক ‘বাংলাদেশ’ হবে এমন ধারণায় মরহুম ইস্রাইল হোসেন বিশ্বাসী হন।

২.৩। মরহুম ইস্রাইল হোসেনের ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণে মৌলানা ভাসানীও এমন ধারণায় বিশ্বাসী হন। ১৯০৭ সালে মৌলানা ভাসানী দেওবন্দ মাদ্রাসায় এবং মরহুম ইস্মাইল হোসেন প্রেসিডেন্সী কলেজে বিএ পড়াকালে পাবনাবসী হওয়ায় উভয়ের পরিচয় ও বন্ধুত্ব। সেইসুত্রে মৌলানা ভাসানীর সাথে মরহুম ইস্রাইল হোসেনের ঘনিষ্ট সর্ম্পক হয়। সমকালীন মুসলিম লীগের পাবনার যুব-ছাত্র সহকর্মী ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, মরহুম আমজাদ হোসেন, মরহুম বগা মিয়া, মরহুম মোতাহার হোসেন তালুকদার, প্রমুখকেও মরহুম ইস্রাইল হোসেন একই ধারণায় বিশ্বাসী হন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও মরহুম ইস্রাইল হোসেন ১৯৪২ সালে ম্যাট্রিক এবং একসাথে মুসলিম ছাত্রলীগে ছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবও তাঁর এ ধারণায় বিশ্বাসী হন। ২.৪। ১৯৪৭ উত্তর ‘দিল্লি প্রস্তাবে’র (১৯৪৬) প্রস্তাবক ও পরবর্তীতে একই আদর্শের (ইউনিয়ন রাষ্ট্রব্যবস্থা, ২টি প্রদেশ ও সংখ্যাসাম্য প্রতিনিধিত্ব নীতি) ভিত্তিতে শহীদ সোহরাওয়ার্দী ‘পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ গঠন করেন। অন্যদিকে লাহোর প্রস্তাবের আদর্শের (ফেডারেল রাষ্ট্রব্যবস্থা, ৫টি প্রদেশ ও আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব নীতি) ভিত্তিতে ‘পূর্ববঙ্গীয় জাতীয়তাবাদী’ চেতনায় মৌলানা ভাসানীর নের্তৃত্বে আওয়ামী মুসলিম লীগ গড়ে উঠে।

১৯৪৭-এর পূর্বে ছাত্রনেতা থাকাকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সতীর্থ ছিলেন। লাহোর প্রস্তাবের ভবিষ্যতব্যে বিশ্বাসী হওয়ায় তিনি মৌলানা ভাসানীর নের্তৃত্বে আওয়ামী মুসলিম লীগের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় যুক্ত হন। পাবনার মুসলিম লীগের সাবেক যুব-ছাত্রকর্মীদের অধিকাংশ আওয়ামী মুসলিম লীগে যোগদেন। তবে পারিবারিক কারণে মরহুম ইস্রাইল হোসেন ১৯৪৪ সাল থেকে ছাত্র রাজনীতি থেকে দূরে সরে যান। ২.৫।

পারিবারিক ঐতিহ্যে আমার জ্যেষ্ঠতর ভাইয়েরা (মরহুম রেজাউল করিম, ডঃ রেজওয়ানুল করিম ও ডঃ আনোয়ারুল করিম) কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র থাকাকালীন ছাত্রলীগের সাথে জরিত ছিলেন। পারিবারিক সুত্রেই আমিও কিছুটা রাষ্ট্রনীতিক মনস্ক। ষাটদশকের শেষভাগে অবিভক্ত পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সংকটাপনড়ব ছিল। তাই স্কুলছাত্র থাকাকালে ১৯৬৯ সালে আগরতলা মামলা প্রত্যাহার ও মুজিবমুক্তি আন্দোলনে এবং বঙ্গবন্ধুর ডাকে ২৬শে মার্চ ভোরবেলা থেকে স্ব^াধীনতা যুদ্ধে যুক্ত হই। পাবনা জেলার মুক্তিযোদ্ধাদের প্রধান সমন্বয়কারী মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুলের পরামর্শে তথ্য সরবরাহের দায়িত্বে থাকি।

স্বাধীনতোত্তর ছাত্রলীগ আওয়ামী ও জাসদ গ্রুপে বিভক্ত এবং উভয়ের মধ্যে সংঘর্ষিক সম্পর্ক দাঁড়ালে ১৯৭৩-এর গোড়ার দিক থেকে আমি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ি। ২.৬। মুক্তিযুদ্ধকালে আমি তিনবার মৃত্যৃর মুখামুখী হয়েছিলাম। এপ্রিল, ১৯৭১-এ দু’বার বর্বর পাকসেনার সম্মুখে। এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে পাকসেনারা ইশ্বরদী উপজেলায় সাহাপুর ইউনিয়নে বহুসংখ্যক ব্যক্তিকে হত্যা করে।

তৃতীয়বার সেপ্টেম্বরে পাবনায় তথ্য সরবরাহের দায়িত্বকালে পাকিস্তানীদের সহযোগী ও মুক্তিযোদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারী টিপু বিশ্বাস-আলাউদ্দিন-মতিনের নের্তৃত্বাধীন পূর্ববাংলা কমিউনিষ্ট পার্টির (নক্সালবাদী) কর্মীদের হাতে। এজন্যে স্বাধীন বাংলাদেশ আমার কাছে বড় বিজয়ের বিষয়। ১৯৬২ থেকে ১৯৭২ পর্যন্ত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলজীবনে আমি কাভ্, স্কাউট, সিভিল ডিফেন্সের সাথে জরিত ছিলাম। তখন রাষ্ট্রব্যবস্থা বোঝার বয়স ছিল না। তবে নাগরিক অধিকার সন্মন্ধে বুঝতে থাকি।

মাধ্যমিক ও উচ্চ-মাধ্যমিক পর্যায়ে ‘নাগরিক বিদ্যা’ আমার পাঠ্য বিষয় ছিল। সংবিধান প্রনয়ণের পরে পত্রিকায় পড়েছি যে, বাংলাদেশের সংবিধান বিশ্বের অন্যতম সেরা। মূল সংবিধান তখনই পড়েছি (ক্যাপ্টেন মনসুর আলী আব্বাকে দিয়েছিলেন)। কিন্তু স্বাধীনতোত্তর মনে হয়েছে ষাটদশকের তুলনায় বিশ্বের সেরা সংবিধানের অধীনে মানুষের অধিকার μমশঃ হ্রাস পাচ্ছে। সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও যেন গণজীবনের অধিকার হরণের ব্যবস্থা হয়ে উঠছে।

২.৭। জুন, ১৯৭৫-এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে সড়বাতক (সন্মান)-এ পড়ার জন্যে ভর্তি হতে আসি। ঢাকা ক্যান্টমেন্টস্থ শাহীন কলেজের ক্যাম্পাসে আমার এক আত্মীয়ার বাসায় থাকতাম। ১৫ই আগষ্ঠ, ১৯৭৫-এ ট্যাঙ্কের শব্দে ঘুম ভাঙ্গে। রেডিওতে ঘোষণা শুনলাম, জাতির নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে সপরিবারে হত্যা এবং দেশে সামরিক আইন জারী করা হয়েছে।

শুনার পরে আর দাঁড়িয়ে থাকতে র্পালাম না। ৮ই জানুয়ারী, ১৯৭২-এ রাতে বিবিসি রেডিওতে পাকিস্তানের কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির সংবাদ শুনে আনন্দে আমার কাছে থাকা সবগুলো গুলি ছুড়ে ফেলি। ১৯৭০ এ পাবনায় নির্বাচনী সভাকালে এবং ১৯৭৩ এ জয়পুরহাটে নির্বাচনী সভাকালে তাঁর সাথে আমার দু’বার দেখা হয়। আমার ডাক নামটাও তিনি মনে রেখেছিলেন। জুম্মার নামাজের জন্যে কারফিউ তুলে নিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে যাই।

পৌঁছে দেখি, আমার জ্যেষ্ঠতর দু’ভাই ও বোন রোকেয়া হলের সম্মুখে আমার জন্যে অপেক্ষা করছেন। আমার আবেগটা তাঁরা জানতেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনার পাশাপাশি আমাদের রাজনৈতিক বিপর্যয়ের কারণ ও প্রতিকারের কারণ আমি অনুসন্ধান করি। আমার রাষ্ট্রচিন্তার রূপরেখা মাননীয় আদালত, ৩.১। আদিমযুগে বৈরী প্রাকৃতিক পরিবেশে জীবনধারণ ও যৌনজীবনের জন্যে নারী-পুরুষের সংগবদ্ধ বসবাস ছিল।

মাতৃকেন্দ্রিক মানবজীবনের পারষ্পারিক সম্পর্ক, বিকাশমান প্রেম-প্রীতি-ভালবাসা (যা পশুদের নেই) এবং যৌনজীবনের শৃঙ্খলার ধারা থেকে পিতৃকেন্দ্রিক পারিবারিক জীবনের উৎপত্তি। সম্মৃদ্ধিশীল পারিবারিক জীবনের চেতনা থেকে সম্পদের সঞ্চায়ন এবং উত্তরাধিকার প্রথার উৎপত্তি। প্রজন্মান্তর পরিবারসংখ্যা ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে জ্ঞাতিসমাজ এবং সমাজপতিসহ সামাজিক আচরণের প্রথা, নীতিমালা ও অনুশাসন বিকাশমান হয়। ধর্মের পারিবারিক ও সামাজিক বিধানগুলোর জন্যে পারিবারিক জীবন প্রাতিষ্ঠানিক ও সার্বজনিন রূপ পায় এবং সভ্যতার বিকাশের ধারাকে ত্বরান্বিত করে। সংলগড়ব এলাকার জ্ঞাতিসমাজগুলোর সমন্বয়ে টেরিটোরীসহ প্রথম পর্যায়ের ছোট রাষ্ট্রগুলো (উপজেলার মত) গড়ে উঠে।

সংলগড়ব ছোট রাষ্ট্রগুলোর সমন্বয়ে পর্যায়μমে মধ্যম (জেলার মত), বৃহত্তর (প্রদেশ/বিভাগগুলোর মত) ও বৃহৎ রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে উঠে। তবে ইতিহাসে একই ধারায় রাষ্ট্রের উৎপত্তি, সম্প্রসারন ও বিবর্তন হয়নি। ৩.২। রাষ্ট্রের উৎপত্তি সাথে সাথে পারিবারিক জীবনের পাশাপাশি নাগরিক জীবনের উৎপত্তি। পারিবারিক জীবন ও নাগরিক জীবনের সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক জীবনের অভিপ্রায় এবং রাষ্ট্রজীবনের শৃঙ্খলা ও সম্মৃদ্ধির বিধি-বিধান নিয়েই রাষ্ট্রব্যবস্থা।

অন্যভাবে বলা যায়, মানবজীবনের পারিবারিক ও নাগরিক জীবন রাষ্ট্রব্যবস্থার সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে আবদ্ধ। প্রাচীনকালের ছোট রাষ্ট্রগুলোতে পারিবারিক ও সরকারব্যবস্থার প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয়ে ছিল রাষ্ট্রব্যবস্থা। রাষ্ট্রের এলাকা ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে একদিকে রাষ্ট্রব্যবস্থার সকল আঙ্গীকের ব্যক্তিক ও সমষ্টিক প্রতিষ্ঠান-সংস্থা-কর্তৃপক্ষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। অন্যদিকে পল্লী/শহর, উপজেলা, জেলা, বিভাগ/প্রদেশ, ইত্যাদি স্থানীয় এককের সমন্বয়ে গড়ে উঠা রাষ্ট্র-অবকাঠামো অধিবাসী ও অধিবাসীদের ব্যক্তিক ও সমষ্টিক প্রতিষ্ঠান-সংস্থা-কর্তৃপক্ষের স্থানীয় ও জাতীয় সমন্বয়ের প্রধান রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়। এজন্যে সকল রাষ্ট্রব্যবস্থার মূলে প্রত্যেক্ষ বা পরোক্ষভাবে পারিবারিক, রাষ্ট্র-অবকাঠামো ও সরকারব্যবস্থার প্রতিষ্ঠানসমূহ দ্যিমান।

তাই বাস্তবে এ তিনটি মৌলিক, সার্বজনিন ও সম্পুরক প্রতিষ্ঠানের স্বরূপের সমন্বিত প্রভাবের উপর রাষ্ট্রব্যবস্থার স্বরূপ প্রধানতঃ নির্ভর করে। ৩.৩। বৈবাহিক (সমকালীন) ও উত্তরাধিকার (উত্তরকালীণ) বিধান/প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে পারিবারিক বিধান/প্রতিষ্ঠান। মানবজীবনের সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্রায় সকল দিক পারিবারিক বিধান/প্রতিষ্ঠানেও অন্তর্ভুক্ত। এজন্যে মানবজীবনের বাস্তবমুখী ব্যক্তিক ও সমষ্টিক চেতনা-মূল্যবোধের প্রধান উৎস পারিবারিক প্রতিষ্ঠান।

বৈবাহিক প্রতিষ্ঠানের প্রভাব প্রধানতঃ পারিবারিক ও আন্তঃপারিবারিক ক্ষেত্রে সীমিত। তবে উত্তরাধিকার প্রতিষ্ঠানের প্রভাব সুদূর প্রসারী। পারিবারিক ছাড়াও রাষ্ট্রিক (নাগরিক) ও আন্তঃরাষ্ট্রিক জীবনেও বিস্তৃৃত। বিশ্বে প্রচলিত মৌলিক পারিবারিক বিধানগুলোর প্রভাব পর্যালোচনা করা হলে তা অনুধবাবন করা যায়। ৩.৪।

রোমান-ক্যাথলিক ধর্মের বৈবাহিক ও উত্তরাধিকার বিধান উভয়ই পুরুষতান্ত্রিক ও অগণতান্ত্রিক। রোমান-ক্যাথলিক ধর্মের উত্তরাধিকার বিধান পরিবার ও রাষ্ট্রে প্রজন্মোত্তর সম্পদহীন জনগোষ্ঠীসহ অর্থনৈতিক শ্রেণী ভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থার ধারা দেয়। এ বিধানের ধারাবাহিকতার জন্যে সভ্যতা ও প্রযুক্তির উনড়বতির সাথে সাথে ইউরোপে পর্যায়μমে দাসতন্ত্রী, সামন্ততন্ত্রী, ধনতন্ত্রী ও সমাজতন্ত্রী রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং বিশ্বে সাম্রাজ্যবাদী ধারা দেয়। হিন্দু-বৌদ্ধ ধর্মের বৈবাহিক বিধানও পুরুষতান্ত্রিক ও অগণতান্ত্রিক। অন্যদিকে নারীরা বঞ্চিত ও পুরুষেরা সমাধিকারী হওয়ায় উত্তরাধিকার বিধান পুরুষতান্ত্রিক ও আধা-গণতান্ত্রিক।

এ বিধান ভারতসহ পূর্ব এশিয়ায় সুদীর্ঘকাল অমিশ্রিত বহু জ্ঞাতিবর্ণসহ সামাজিক শ্রেণী ভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থার ধারা দেয়। ৩.৫। খৃষ্ট ধর্মের বৈবাহিক ও উত্তরাধিকার বিধান উভয়ই নারী-পুরুষের সম-অধিকার ভিত্তিক যা সম-গণতান্ত্রিক। সম-উত্তরাধিকার বিধান পরিবার ও রাষ্ট্রে অর্থনৈতিক বা সামাজিক শ্রেণীর ধারা দেয় না। তবে নারীকেন্দ্রিক বা পুরুষকেন্দ্রিক পরিবার না হওয়ায় এ বিধান উচ্চমাত্রায় বিবাহ বিচ্ছেদ, অবিবাহিত সহবাস, সমলিংঙ্গে বিবাহ, সন্তান লালন, ইত্যাদি সামাজিক সংকটের ধারা দেয়।

অন্যদিকে নারী-পুরুষের মানবসত্ত্বার স্বকীয় বৈশিষ্ট্য ও সম্পুরক সম্পর্কের ভিত্তিতে সুষম-অধিকার ভিত্তিক ও পুরুষকেন্দ্রিক হওয়ায় ইসলামী বা সুষম-গণতান্ত্রিক পারিবারিক বিধান মানবিক বান্ধব-পরিবেশসহ মানবসত্ত্বার প্রাকৃতিক ধারা দেয়। এজন্যে সুষম-গণতান্ত্রিক মুসলিম উত্তরাধিকার বিধান পরিবার বা রাষ্ট্রে ‘অর্থনৈতিক শ্রেণী’ বা ‘সামাজিক শ্রেণী’ অথবা সামাজিক সংকটের ধারা দেয় না। স্বভাবতঃই পারিবারিক জীবনের জন্যে সম-উত্তরাধিকার থেকে সুষম-উত্তরাধিকারের বিধান উত্তম মানবাধিকার ভিত্তিক জীবনদর্শন ও বিধান/প্রতিষ্ঠান। ৩.৬। বহু ব্যক্তি ও পরিবারের সমন্বয়ে জ্ঞাতিসমাজ এবং বহু জ্ঞাতিসমাজের সমন্বয়ে রাষ্ট্রসমাজ।

ব্যক্তিসত্ত্বার সুষম বিকাশের ধারা ছাড়া জ্ঞাতিসমাজ বা রাষ্ট্রসমাজ বিকাশমান হয় না। সামাজিক (মানবসম্পদ) ও অর্থনৈতিক সম্পদের উত্তরাধিকারসহ পারিবারিক ও নাগরিক জীবনের বহুমাত্রিক মানবাধিকারের বিধানাবলী মার্ক্সীয় সমাজদর্শনে নেই। এজন্যে সমাজতন্ত্র কোন স্ববিকাশশীল ও স্বধারাবাহিক সমাজদর্শন নয়। অসম্মৃদ্ধিশীল ও স্বৈরমুখী রাজনৈতিক ব্যবস্থা হওয়ায় গণবিদ্রোহে পূর্ব ইউরোপে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার অবসান হয়। বৌদ্ধধর্মের মত ইশ্বরহীন প্রকৃতিদর্শন ও সমাজদর্শনের সমন্বয় হওয়ায় মার্ক্সবাদকে অনুসারীরা ধর্মের মত জ্ঞান করে।

ইশ্বরহীন প্রকৃতিদর্শন ও রোমান সমাজদর্শনের সমস্বয়ে চেতনাধারী মার্ক্সবাদীরাও বৌদ্ধবাদীদের মত স্বকীয় সম্প্রদায়। ধর্মের মত জ্ঞান করায় মার্ক্সবাদীরা ব্যক্তির মানবাধিকারের বিধান/প্রতিষ্ঠান ছাড়া প্রাগৈতিহাসিক ও অবিকাশিত কমিউন জীবনদর্শনকে মানবমুক্তির পাথেয় ভাবে। মাননীয় আদালত, ৪.১। রাষ্ট্রধর্ম ক্যাথলিক হওয়ায় ওয়েলস্, স্কটল্যান্ড ও ইংল্যান্ডে স্থিতিশীল রাজ-সামন্তব্যবস্থা এবং রোমান ঐতিহ্যে দুইকক্ষ সংসদব্যবস্থা গড়ে উঠে। ১৫৩৬ সালের আগে ইংল্যান্ডের অধিকাংশ রাজাই ইতিহাসে স্বৈরাচার হিসেবে অভিহিত।

ওয়েলস্ ও ইংল্যান্ড একত্রীভুত হয়ে বৃটেন হলে (১৫৩৬) রাজ-সামন্ততন্ত্রের স্বৈরাচারিতা হ্রাস পায়। উদার, নৈতিক ও সৃজনশীল চেতনা, সাহিত্যের-দর্শন, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিল্প-বাণিজ্যসহ অর্থনৈতিক সম্মৃদ্ধির ধারা বৃদ্ধি পায় এবং গণতান্ত্রিক বিপ্লব (১৬৪৯) ও গৌরবজনক বিপ্লব (১৬৮৮)সহ গণতন্ত্র বিকাশমান হয়। স্কটল্যান্ড ও বৃটেন একত্রীভুত হয়ে গ্রেটবৃটেন হলে (১৭০৭) রাজ-সামন্ততন্ত্রের এ স্বৈরাচারিতার আরও হ্রাস পায় এবং উচ্চমাত্রায় উদার, নৈতিক ও সৃজনশীল চেতনা ও গণতন্ত্র বিকাশমান হওয়ায় বিজ্ঞান-প্রযুক্তি বিপ্লব ও শিল্প বিপ্লব ঘটে। তিন পর্যায়েই একই রাজ-সামন্ততন্ত্র ও দুইকক্ষ সংসদব্যবস্থা অব্যহত ছিল। কেবল রাষ্ট্র-অবকাঠামোর পরিবর্তন হয়।

১৫৩৫ পর্যন্ত ইংল্যান্ড ৪টি বিভাগ ভিত্তিক, ১৫৩৬-১৭০৬ সালে পর্যন্ত বৃটেন ৫টি বিভাগ ভিত্তিক এবং ১৭০৭-১৮০১ কালে গ্রেটবৃটেন ৯টি বিভাগ ভিত্তিক ছিল। রাষ্ট্র-অবকাঠামো স্বৈরমুখী থেকে সুষম গণতন্ত্রমুখী রূপান্তরিত হওয়ায় ভিতরকাঠামোতে সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের চরিত্র গণতন্ত্রমুখী হয় এবং গ্রেটবৃটেন সম্মৃদ্ধিশীল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিনত হয়। ৪.২। অষ্টম শতাব্দীতে রাষ্ট্রধর্ম বৌদ্ধ হওয়ায় জাপানে আধা-গণতান্ত্রিক উত্তরাধিকার বিধান প্রভাবশীল হয়। এতে ভারতের মত সম্রাজ্য ও রাজবংশ অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে।

সম্রাজ্য ও রাজবংশের স্থিতিশীলতার জন্যে দ্বাদশ শতাব্দীর শেষভাগে কোন বিভাগ/অঞ্চলে বিভক্তি ছাড়া জাপানকে ৬০টি জেলা ও প্রায় ৭০০টি উপজেলায় (প্রতি জেলায় গড়ে ১১.৭টি উপজেলা) বিভক্ত করা হয়। এতে রাষ্ট্র-অবকাঠামো ও ভিতরকাঠামোর রাষ্ট্রব্যবস্থা শিথিল/সন্ত্রসমুখী হওয়ায় জাপান দ্রুত দরিদ্র ও সন্ত্রাসী রাষ্ট্রে পরিণত হয়। কোন অর্থনৈতিক সংস্কারেই পরিস্থিতির উনড়বতি না হওয়ায় এর ধারাবাহিকতা প্রায় ৭০০ বছর থাকে। মেইজী আমলে জাপানকে ৩০৩টি উপজেলা (১৮৭১) ও ৪৮টি জেলায় (১৮৮৮) পুনর্গঠিত এবং হোক্কাইডো জেলাকে অঞ্চলে উনড়বীতসহ জাপানকে ৮টি অঞ্চলে (১৯০৫) বিভক্ত করা হয়। এতে জাপান প্রকারান্তে ৮টি অঞ্চল ও ৬০টি জেলায় বিভক্ত হয়।

রাষ্ট্র-অবকাঠামো গণতন্ত্রমুখী হওয়ায় ভিতরকাঠামোর সকল আঙ্গীকের প্রতিষ্ঠানসমূহ গণতন্ত্রমুখী হওয়ায় জাপান উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধিশীল গণতন্ত্রমুখী রাষ্ট্রে পরিণত হয়। সুদীর্ঘকালের সন্ত্রাসও দ্রুত অবসান হয়। বিভক্তি ও স্বাধীনতোত্তর (১৯৪৫) ৪টি বিভাগ (সরকারবিহীন প্রভিন্সে) ভিত্তিক হওয়ায় দক্ষিণ কোরিয়া স্বৈরমুখী রাষ্ট্রে পরিণত হয়। গণ-অভ্যুত্থানে নির্বাচিত সরকার পতিত হয় (১৯৬০)। ক্ষমতাসীন সামরিক সরকারের আমলে ৯টি বিভাগে বিভক্তসহ রাষ্ট্র-অবকাঠামোর গণতন্ত্রমুখী পুনর্গঠন করা হয় (১৯৬১)।

ভিতরকাঠামোর সকল আঙ্গীকের সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ গণতন্ত্রমুখী হওয়ায় দক্ষিণ কোরিয়া উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধিশীল রাষ্ট্রে পরিণত হয়। ৫.৩। ফরাসী বিপ্লবীরা কোন অঞ্চলে বিভক্তি ছাড়াই সংলগড়ব ফ্রান্সকে ৮৩টি ডিপাটর্মেন্ট (জেলা) ও প্রায় ১০৮৭টি ক্যান্টন (প্রতি ডিপাটর্মেন্টে গড়ে ১৩.১টি ক্যান্টন/থানা) পুনর্গঠন করে (১৭৯০)। ‘রাষ্ট্র-অবকাঠামো’ চরম শিথিল/সন্ত্রাসমুখী হওয়ায় ফ্রান্স দ্রুত একটি বিশৃংঙ্খল/সন্ত্রাসী রাষ্ট্রে পরিণত হয়। নেপোলিয়ন আমলে এরান্ডেসিমেন্ট (মহকুমা) পুনপ্রতিষ্ঠাসহ ফ্রান্সকে ৯টি সামরিক শাসনাঞ্চলে বিভক্ত করা হয় (১৮০০)।

সামরিক অঞ্চলে গড়ে ৯.২টি জেলা হওয়ায় রাষ্ট্র-অবকাঠামো গণতন্ত্রমুখী হয় এবং সন্ত্রাস দ্রুত হ্রাস পায়। নেপোলিয়ন শাসনাবসানে সামরিক অঞ্চলগুলো বিলুপ্ত হওয়ায় ফ্রান্স আবার বিশৃংঙ্খল/সন্ত্রাসী রাষ্ট্রে পরিণত হয়। তবে এরান্ডেসিমেন্ট অব্যহত থাকায় সন্ত্রাসের মাত্রা হ্রাস পায়। ১৯৪৬ সালে সংলগড়ব ফ্রান্সকে ১৮টি অঞ্চলে বিভক্ত করায় সন্ত্রাসের মাত্রা আরও হ্রাস পায়। স্বাধীনতোত্তর উত্তরাধিকারসুত্রে যুক্তরাষ্ট্র (১৩টি অঙ্গরাষ্ট্র), কানাডা (১৩টি প্রদেশ/অঞ্চল), অষ্ট্রেলিয়া (৮টি প্রদেশ/অঞ্চল), সংলগড়ব পশ্চিম জার্মানী (১১টি প্রদেশ), ভারত (১৫টি প্রদেশ) ও সংলগড়ব মালয়েশিয়ার (৯টি প্রদেশ) রাষ্ট্র-অবকাঠামো গণতন্ত্রমুখী ছিল।

এ রাষ্ট্রগুলোর গণতন্ত্র বিকাশমুখী ও উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধিশীল রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ায় মূলে ছিল গণতন্ত্রমুখী রাষ্ট্র-অবকাঠামো । ৫.৪। রাষ্ট্রের এলাকা ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে রাষ্ট্র-অবকাঠামো প্রতিষ্ঠানের ভুমিকা মুখ্য হয়ে উঠে। বিশ্বে অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রে কেন্দ্র-বিভাগ, বিভাগ-জেলা ও/বা জেলা-উপজেলার বিভাজন/সমন্বয়ের ভারসাম্য প্রায় ১: ৯ হলে রাষ্ট্র-অবকাঠামো ও রাষ্ট্রব্যবস্থা সবচেয়ে গণতন্ত্রমুখী হয়। অন্যদিকে সমন্বয়ের ভারসাম্য μমশঃ ১: ৫-এর নিচে বা ১:৯ এর উর্দ্ধে হলে রাষ্ট্র-অবকাঠামোর স্বরূপ স্বৈরমখী বা সন্ত্রাসমুখী হয় এবং ভিতরকাঠামোর সরকারী ও বেসরকারী রাষ্ট্রব্যবস্থা যথাক্রমে ক্রমশ অধিকতর স্বৈরমখী বা সন্ত্রাসমুখী হয়।

রাষ্ট্র-এলাকা ও জনতার প্রথম বিভক্তি হওয়ায় বিভাগবিভক্তি রাষ্ট্র-অবকাঠামো ও ভিতরকাঠামোর সরকারী ও বেসরকারী রাষ্ট্রব্যবস্থার জন্যে সবচেয়ে প্রভাবশীল (প্রায় দই-তৃতীযাংশ)। রাষ্ট্র-অবকাঠামো প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রব্যবস্থায় প্রাকৃতিক বিধান, শক্তি ও প্রভাব দেয়। আইনী প্রতিষ্ঠান দিয়ে তা হ্রাস-বৃদ্ধি করা যায়, কিন্তু নিঃশেষ করা যায় না। রাষ্ট্র অবকাঠামো গণতন্ত্রমুখী হলে জনগণসহ সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠান-সংস্থা-কর্তৃপক্ষসমূহের গণতন্ত্রমুখী বিভাজন/সমন্বয়ের ধারা থাকে এবং উদার, নৈতিক ও সৃজনশীল চেতনা বিকাশের ধারা দেয়। রাষ্ট্র-অবকাঠামো গণতন্ত্রমুখী হলে অর্থনীতির বাজার প্রতিষ্ঠানও সুষম প্রতিযোগী হয় এবং মূল্য স্থিাতশীলতাসহ সুষম আয়-বন্টনের ধারা দেয়।

এতে অর্থনীতি উচ্চমাত্রায় সম্মৃদ্ধিশীল হয়। ৫.৪। উত্তরাধিকারী প্রতিষ্ঠান সরকারী কর্তৃত্বের উৎস হওয়ায় রাজতন্ত্র হলো অবরোহমুখী রাজনৈতিক ব্যবস্থা। অন্যদিকে জনগণ ও গণভোট সরকারী কর্তৃত্বের উৎস হওয়ায় গণতন্ত্র হলো আরোহীমুখী রাজনৈতিক ব্যবস্থা। তবে উভয়ক্ষেত্রেই প্রশাসনিক প্রক্রিয়া হলো অবরোহীমুখী।

রাষ্ট্র-অবকাঠামোর স্বৈরমুখী হলে সরকারী প্রশাসনিক সংস্থা ও কর্তৃপক্ষসমূহের কাঠামোও স্বৈরমুখী থাকে। স্বৈরমুখী রাষ্ট্র-অবকাঠামোতে রাজতান্ত্রিক বা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় গঠিত সরকার স্বৈরমুখী হলে সরকারী প্রশাসনিক সংস্থা-কর্তৃপক্ষসমূহ আরও স্বৈরমুখী হয়। ব্যক্তি মৌলিক অধিকার ও স্বাভাবিক সম্মৃদ্ধিশীল জীবনের ধারা অবদমিত হওয়ায় স্বৈরমুখী রাষ্ট্র পরিচালনা বিরুদ্ধে ক্ষোভ-বিক্ষোভ-বিদ্রোহ হয়। স্বৈরমুখী রাষ্ট্র-অবকাঠামোর জন্যে সরকারের পরিবর্তন হলেও বাস্তব পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকে। ইতিহাসে সংবিধানিক বা অসংবিধানিক স্বৈরমুখী সরকার উত্থান, ধারাবাহিকতা এবং গণক্ষোভ-বিক্ষোভে পতনের অন্যতম কারণ স্বৈরমুখী রাষ্ট্র-অবকাঠামো।

রাষ্ট্র-অবকাঠামো গণতন্ত্রমুখী হলে রাষ্ট্রব্যবস্থায় জনগণের বহু সংকট স্বয়ংক্রিয়ভাবেই অবসান হয়। মাননীয় আদালত, ৫.১। রাষ্ট্রব্যবস্থা বিকাশের সাথে সাথে সংসদ (আইন), নির্বাহী ও বিচার প্রক্রিয়া--এ ত্রিধারার স্কীয় ও সম্পুরক সরকারী কর্তৃত্বের উৎপত্তি হয়েছে। গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থার মর্মার্থই হলো, জনগণমুখী সরকারের (Government of the People) ধারাবাহিকতা যা জনগণ কর্তৃক গঠিত হবে (by the People) এবং রাষ্ট্রপরিচালনা জনগণমুখী থাকবে (for the People)। বিশ্বে এটা পরীক্ষিত যে, গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থা জন্যে অপরিহার্য শর্তগুলো হলো- এক, সংসদ, নির্বাহী ও বিচার বিভাগের প্রয়োজনীয় পৃথকীকরণ ও সমন্বয়; দুই, আইন প্রণয়নের জন্যে স্বনিয়ন্ত্রিত দু’স্তরের সংসদব্যবস্থা; তিন, বিচারব্যবস্থার জন্যে স্বনিয়ন্ত্রিত দুস্তরের উচ্চতর আদালতব্যবস্থা; চার, গণমুখী রাষ্ট্রপরিচালনার জন্যে সংসদ ও বিচার বিভাগের কাছে নির্বাহী সরকারের জবাবদিহিতা; এবং পাঁচ, স্বল্পমেয়াদী কার্যকরী প্রতিনিধ্বিশীল সংসদ।

৫.২। গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থার ভিত্তিমূলক ও সার্বজনিন জনগণমুখী প্রতিষ্ঠান হলো সংসদ। গণতান্ত্রিক সংসদব্যবস্থা ছাড়া সরকারব্যবস্থা, রাষ্ট্রব্যবস্থা ও গণজীবন গণতান্ত্রিক হয় না। দু’স্তরের উচ্চতর আদালতব্যবস্থা (সুপ্রীমকোর্ট ও হাইকোর্ট) ছাড়া বিচারব্যবস্থা যেমন স্বনিয়ন্ত্রিত ও নিরপেক্ষমুখী হয় না। তেমনি ‘দুইকক্ষ সংসদব্যবস্থা’ ছাড়া আইন প্রণয়নের প্রμিয়াও স্বনিয়ন্ত্রিত ও নিরপেক্ষমুখী হয় না।

দুইকক্ষ সংসদব্যবস্থা কেবল সংসদকেই গণতান্ত্রিক করে না, সংসদীয় সরকারব্যবস্থাকেও গণতান্ত্রিক করে। দুইকক্ষ সংসদব্যবস্থা হলে, ১) দলীয় পদ্ধতিতেও সংসদ ও নির্বাহী বিভাগের প্রয়োজনীয় স্বকীয় থাকার প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা হয়; ২) নিরপেক্ষমুখী আইন প।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.