স্বপ্নবাজ। একটা রাতের রংধনুর স্বপ্ন দেখি...। -কিঙ্কর আহ্সান মানুষই পারে
- কিঙ্কর আহ্সান
বরিশালের কালীবাড়ি রোডের পাশাপাশি দুটি বাড়িতে সমবয়সী দুটো ছেলেমেয়ের বাস। ছেলেটি একটু সহজ সরল। খেলার সাথী মেয়েটি ছেলেটিকে তাই আগলে রাখে সবসময়।
ইশকুলে থাকতেই এক দূর্ঘটনায় দুটো চোখই হারায় ছেলেটি। তারপর বন্ধ পড়াশোনা। শুধুই ঘরে বসে থাকা। মেয়েটি আসে প্রতিদিন। ছেলেটিকে কাকাবাবু,ফেলুদা পড়ে শোনায়।
ছেলেটি আবার চোখে দেখতে শুরু করে। মেয়েটি তার চোখ হয়। হয় পাশাপাশি চলতে থাকা ছায়া। তাসফিক নামের সেই ছোট্ট ছেলেটির বয়স এখন চব্বিশ। পড়াশোনা করছে ইংরেজী ভাষা নিয়ে।
ইমি নামের মেয়েটির পড়াশোনার বিষয় ইতিহাস। প্রতিদিন ছেলেটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে আসে সে। পুরো ক্লাসে পাশে বসে থেকে টুকে নেয় শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় কথাগুলো। নিজে নোট তৈরি করে। ছেলেটির পাশে বসে থেকে পড়ে শোনায় সব।
ছেলেটি মুখস্ত করে। তারপর পরীক্ষায় টাইপ করে পরীক্ষা দেয়। মেয়েটি ছেলেটিকে ভালোবাসে বলেনি কখনও তা। তবে মেয়েটি আমাকে বলেছে,কখনও কখনও ভালোবাসায় বলাটা অর্থহীন। আমি বুঝতে পারি ওকে ছাড়া আমার কিছু নেই।
কিছুই না। তাসফীক এই একই কথাগুলো বলেছে অন্যভাবে। ‘ আমি যখন এক একটি কঠিন পরীক্ষায় উতরে যাই তখন ও কাঁদে। চোখে আলো নেই বলে অশ্র“ দেখতে পারিনা। তবে কান্নার শব্দ ঠিক ঠিকই ঠাওর করতে পারি।
আমাকে ভালোবাসার কোনো কারন নেই ওর। তারপরও কেন যে বাসে বুঝিনা। ’ কথাগুলো বলার সময় তাসফিকের ভালোবাসা,আনন্দ,গর্বটা বোঝা যায় স্পষ্ট। তাসফিককে বলি,আপনাকে হিংসে করি খুব। শুধুই আমিই নয়,আমার মতন ভালোবাসা না পাওয়া অনেক ছেলেই যে আপনাকে হিংসে করছে এ মুহূর্তে এতে সন্দেহ নেই কোনো।
*** অনেক আগের লেখা। প্রথম আলোর ‘স্বপ্ন নিয়ে’ তে একটা অ্যাসাইনমেন্ট করতে গিয়ে আমার এই ছেলেটির সাথে পরিচয়। সে পড়াশোনা করে ‘ব্রাক’ বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার সাথে যেদিন কথা বলেছিলাম সেদিন জিজ্ঞেস করেছিলাম ‘সৃষ্টিকর্তার প্রতি আপনার কোন ক্ষোভ নেই? নেই কোন আক্ষেপ?’ প্রচন্ড আত্মবিশ্বাস নিয়ে সে বলেছিলো ‘নাতো। কেন থাকবে? আমি পরিপূর্নভাবে সুখী একজন মানুষ।
’
তার চোখে স্বপ্ন আর বেঁচে থাকার প্রচন্ড হাহাকার দেখে সেদিন নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছিল। কত অল্পতেই না ভেঙে পড়ি ! আর এই ছেলেটা নিজের সাথে ভয়ংকর লড়াই করেও, কখনও আলো দেখতে পারবেনা এমন একটা জীবন বেছে নিয়েও কি সুন্দর বেঁচে আছে। বেঁচে থাকছে।
কি দরকার ছিলো? এ জীবন বয়ে বেড়াবার চেয়ে ভালোই ছিলোতো মরে যাওয়া!
মানুষ পারে। মানুষই পারে।
সবকিছু ভুলে দিব্যি বেঁচে থাকতে, স্বপ্ন দেখতে, প্রেম করতে।
জয়তু মানুষ। মানুষ হয়ে বেঁচে থাকতে চাই আরো কয়েক হাজার বছর, লক্ষ বছর, কোটি বছর...।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।