রাজাকার মুক্ত বাংলাদেশ চাই
তখন ক্লাশ সেভেনে কি এইটে পড়তাম, মনে হচ্ছিলো একটু একটু বড় হয়ে উঠেছি। তাই পরীক্ষার আগে নকল করার একটা ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়েছিলাম। বিজ্ঞান পরীক্ষা, সবকিছু পড়েছি কিন্তু জীববিজ্ঞানের একটা ছবি (মনে হয় শ্বসনতন্ত্রের ছবি) কোনো মতেই মাথায় ঢুকতো না। তাই ট্রেসিং পেপারে একে নিয়ে গেলাম। পকেটা রাখলাম, দেখলাম, আমার পাশে বসা বন্ধুও সেই প্রশ্নটা শিখে আসে নাই, আমার কাছে কপি আছে দেখে সে মারাত্মক উৎসাহিত হলো কিন্তু যেই পরীক্ষার সময় কাছে আসছিলো, আমার ভয় বাড়ছিলো।
পরীক্ষার হলে স্যার আসার ঠিক আগমূহুর্তেই আমি নকল খানা বন্ধুর হাতে গছিয়ে দিলাম।
এইটের অংক পরীক্ষা। আমার এক বন্ধু, খুবই ভালো একটা ছেলে। তার বড়ভাই তাকে পড়ায়। স্কুলে প্রত্যেকদিন পরীক্ষা দেওয়ার পর তাকে আবার বাসায় গিয়ে বড়ভাইয়ের কাছে পরীক্ষা দেওয়া লাগে।
যাই হোক, আমি অংক পরীক্ষায় সব অংকের উত্তর করেছি। হাতে আরো ৪০ মিনিট মতো সময় বাকী। তখন বন্ধুর খোজ নিচ্ছি, বন্ধু ৮০ নাম্বার কমন পড়েছে, বাকীটুকু পারে না।
আমি বললাম, আমার থেকে দেখে দেখে বাকী ২টা অংক করে নে। সে বলল, সম্ভব নয়।
কারণ বাসায় তার ভাইয়ের কাছে আবার পরীক্ষা দিতে হবে, তার ভাই জানে, তার ঐ অংক ২টা পারার কথা না। সুতরাং পরীক্ষায় যদি বেশি নম্বর পেয়ে যায়, তাহলেতো সমস্যা
আর একবার এইটে থাককালীন পরীক্ষার দেখাদেখি করার জন্য শাস্তিস্বরূপ সবার সামনে আমরা ২ জনকে ১০বার করে কানে ধরে উঠবস করতে হয়েছিলো।
এরপর মোটামোটি ভালো ছেলে হয়ে গেছি। কিন্তু ইন্টারমিডিয়েটে ফাইনার পরীক্ষাতে আমার অংক প্রথমপত্র তেমন ভালো হয় নাই। আমার পাশে যে বসেছিলো, সে আমাকে অনেক সাহায্য করেছিলো।
খাতা দেখায় নাই, কিন্তু ফিস ফিস করে ২টা জ্যামিতিরি অংক বলেছিলো, সূত্র সহ। শুধু অংক পরীক্ষায় না, আরো অনেক পরীক্ষাতে সে আমাকে টুকটাক সাহায্য করেছিলো। সে আমার তেমন কোনো ক্লোজড বন্ধু ছিলো না, তারপরও তার এই সহায়তায় আমি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো।
অনার্সে আল্লাহর রহমতে আর নকল করার দরকার হয় নাই। যে কয়টা নকল করেছি, সে গুলো ক্লাশরুমে না।
হয়ত ছোট কোনো ফর্মূলা, মানিব্যাগে রেখেছিলাম। টয়লেটে গিয়ে দেখে এসেছি।
মাস্টার্সেও একই কাজ। কিছু নন ডিপার্টমেন্টাল কোর্স করতে হয়েছিলো, যেগুলো সব সময় মাথার উপর দিয়ে যেত। আবার সেই টয়লেট থেরাপী।
আর একবার করেছিলাম, মোবাইল থেরাপী। একবুড়া স্যার ছিলো। ঐ কোর্সে ইয়া লম্বা লম্বা ইতিহাস মুখস্হ করতে হতো। ঐ স্যারের মিডটার্মে সব উত্তর টেক্সট ফরমেটে কম্পুতে লিখে মোবাইলে ঢুকিয়ে নিয়ে গিয়েছিলাম। ক্লাশরুমের এক কোনায় বসে নিশ্চিন্তে পরীক্ষা দিয়েছি।
আমার সব ঝাড়িঝুড়িতো ফাঁস করে দিলাম। এইবার আপনাদের গুলো বলেন। কে কিভাবে নকল করেছেন?
আর একজন পরিচিত, শহরে থাকেন, গ্রামের কলেজ থেকে ডিগ্রী পরীক্ষা দিচ্ছেন। তিনি আবার মারাত্মক চালাক। তিনি প্রত্যেক নকলের ৩টা করে সেটা নিয়ে যেতেন।
কারণ অনেক সময় ম্যাজিস্ট্যাট এসে অনেক সময় পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগেই বলে দেয়, যার যা আছে, নিজ উদ্যোগে বের করে দাও, না হলে বিপদে পড়বা। দেখাগেলো, নকলের কয়েকটা সেট থাকলে এক সেট দিয়ে ম্যাজিস্ট্রেটকে একসেট দিয়ে এক্সটার্নালকে শান্ত করা যায়, বাকী একসেট দিয়ে পরীক্ষা দাও।
আমার আগের কিছু পোস্ট:
আমার ফেইল বেলা, পরীক্ষার যত ফেইল গুলো!!!
আমার প্রিয় চট্টগ্রামের বালতি () স্কুলের কিছু মজার+করুণ স্মৃতি।
স্কুল স্মৃতি (বালতি স্কুল): ২য় পর্ব ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।