ভালবাসি
একই সঙ্গে সরকারের ঋণ-নির্ভরতার কারণে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবৃদ্ধি কমছে
একদিকে বিশ্ব আর্থিক মন্দার দিকে যাচ্ছে, অপরদিকে সরকারের ঋণ নির্ভরতার কারণে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে যাচ্ছে। এতে দেশে আর্থিক বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, সরকারের ঋণের চাপ সইতে না পেরে এরই মধ্যে দুইটি প্রাইমারি ডিলার আইপিডিসি এবং আইএলএফসিএল বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে তাদের ডিলারশিপ প্রত্যাহার (সালেন্ডার) করার আবেদন করেছে। ২০০৮ সালে সাউথ ইস্ট ব্যাংক ও প্রাইমারি ডিলারশিপ প্রত্যাহারের আবেদন করেছিল, কিন্তু এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি।
উল্লেখ্য, প্রাইমারি ডিলাররা রেপো, রিজার্ভ রেপো, ট্রেজারি বিল, বাংলাদেশ সরকার ট্রেজারি বিলসহ সব ধরনের বিল কিনে থাকে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সব ধরনের বিলের এক বছরের আগাম তারিখ নির্ধারণ করে রাখে। এর বাইরেও প্রাইমারি ডিলারদের ওপর বাড়তি ট্রেজারি বিল ও বাংলাদেশ সরকার ট্রেজারি বিল চাপিয়ে দেয়া হয়, যা প্রাইমারি ডিলারদের জন্য বোঝা হয়ে দেখা দেয়।
২০১১ অর্থবছর থেকে অআর্থিক সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো অতিমাত্রায় ব্যাংক ঋণনির্ভর হয়ে পড়েছে। ২০১১ সালের জুলাই-মার্চ সময়ে অআর্থিক সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংক ঋণের পরিমাণ ৪৫ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। যা বছর শেষে প্রকৃত হিসাবে ৫৪ বিলিয়ন বা ৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকায় দাঁড়াতে পারে।
বিরাজমান আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় অর্থবছর ২০১২তে তেলের মূল্য বৃদ্ধি পেতে পারে। সুতরাং অআর্থিক সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিশেষ করে বিপিসির ব্যাংক নির্ভরতা হ্রাস পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তাছাড়া পিডিবির ত্বরিৎ প্রকল্পগুলোর কারণে তাদের দেনাও বৃদ্ধি পাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, অর্থবছর ২০১২তে সরকার যদি ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নিট ২১৯ দশমিক ২১ বিলিয়ন বা ২১ হাজার ৯২১ কোটি টাকা ঋণ নেয় এবং অআর্থিক সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যদি অর্থবছর ২০১১ এর মতো ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরশীল থাকে, তবে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতে ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ২৩৭ বিলিয়ন বা ২৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। তাহলে প্রক্ষেপিত অভ্যন্তরীণ ঋণ ৭২৭ বিলিয়ন বা ৭২ হাজার ৭০০ কোটি টাকার মধ্যে বেসরকারি খাতে ঋণ দেয়ার জন্য ৪৫৪ বিলিয়ন বা ৪৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা (অর্থাৎ ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি) অবশিষ্ট থাকবে।
বেসরকারি খাত চলতি উন্নয়ন কৌশল ভাবনার সঙ্গে যা সঙ্গতিপূর্ণ নয়। অর্থবছর ২০১২-তে ৭ দশমিক শূন্য শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনে বেসরকারি
খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ন্যূনতম ১৬ দশমিক শূন্য শতাংশ হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু সরকারের ঋণনির্ভরতার কারণে তা ২ দশমিক ২০ শতাংশ কমে যাবে।
উল্লেখ্য, অর্থবছর ২০০৫ থেকে বিগত ৫ বছরে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে ১৭ দশমিক ০২, ১৮ দশমিক ২৭, ১৫ দশমিক ১২, ২৫ দশমিক ১৪ এবং ১৪ দশমিক ৬২ শতাংশ ছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে, সরকার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে এই বিপুল পরিমাণ ঋণ গ্রহণ করতে চাইলে সরকারি সিকিউরিটিজের সুদ হার বৃদ্ধি করতে হবেথ যা বাজার সুদ হারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং সরকারের সুদ বাবদ ব্যয় বৃদ্ধি পাবে।
একই সঙ্গে বেসরকারি খাতে ঋণ দেয়ার জন্য প্রাপ্য তহবিল হ্রাস পাবে। সরকার সম্মত সুদহারে তফসিলি ব্যাংকগুলো অর্থায়ন করতে ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ ব্যাংককে তা প্রদান করতে হবে যা কাঙ্ক্ষিত মুদ্রানীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হবে না। এমতাবস্থায়, সরকারের পরিকল্পিত ব্যয় নির্বাহের জন্য ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে বহিঃঅর্থায়ন বৃদ্ধি করার প্রচেষ্টা চালানো অধিকতর যুক্তিযুক্ত হবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, বিগত কয়েক মাসে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ বেড়ে গেছে। এতে প্রাইমারি ডিলারদের এসএলআর এর জন্য রক্ষিতব্য সিকিউরিটিজের অতিরিক্ত সিকিউরিটিজ ধারণ করতে হচ্ছে।
প্রাইমারি ডিলারদের সিকিউরিটিজের প্রকৃত এসএলআর এর জন্য রক্ষিতব্য সিকিউরিটিজের পরিমাণ হচ্ছে ২১২৮৩ দশমিক ৮২৫ কোটি টাকা। কিন্তু বর্তমানে রক্ষিত আছে ৩৮৪৮৯ দশমিক ৭২ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার চাপিয়ে দিয়েছে ১২৪০৮ দশমিক ৭২ কোটি টাকা। এতে প্রাইমারি ডিলাররা প্রায়ই তারল্য সঙ্কটের মুখোমুখি হচ্ছে।
এ বিষয়ে সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. মির্জা আজিজ যায়যায়দিনকে বলেন, বিশ্বে আবারো আর্থিক মন্দা দেখা দিচ্ছে।
বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। তাই ঘটনা ঘটার আগেই বাংলাদেশ ব্যাংককে ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ ঘটনা ঘটার পর ব্যবস্থা নিলে কোনো কাজে আসবে না।
এই অর্থনীতিবিদ মনে করেন, সরকার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে যত কম ঋণ নেবে আর্থিক খাতের জন্য ততই ভালো। কারণ সরকার কম ঋণ নিলে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে।
দেশের উন্নয়ন হবে, জিডিপি প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পাবে।
তিনি বলেন, সরকার যে হারে অভ্যন্তরীণ ঋণনির্ভর হয়ে যাচ্ছে তাতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে জোগান দেয়া সম্ভব হবে না। ফলে বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে এর জোগান দিতে হবে। এর ফলে ঘোষিত মুদ্রানীতি ব্যাহত হবে। তার মতে সরকারের উচিত বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ এবং এডিবিসহ দাতা সংস্থাগুলো থেকে স্বল্প সুদে ঋণ নেয়া, যাতে দেশের আর্থিক খাতে এর প্রভাব না পড়ে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমানে আর্থিক খাতে একটা টালমাটাল অবস্থা বিরাজ করছে। এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে হলে সরকারকে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেয়া কমাতে হবে।
প্রাইমারি ডিলারশিপ সালেন্ডার বিষয়ে সাবেক এ গভর্নর বলেন, তারা তাদের ডিলারশিপ প্রত্যাহার করার আবেদন করেছে, এখন প্রত্যাহার করা না করা বিষয়টি পুরোপুরি বাংলাদেশ ব্যাংকের এখতিয়ার। এ ব্যাপারে কারো কোনো কিছু করার নেই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।