মন্ত্রিসভায় ইতিমধ্যে অনুমোদিত আর্থিক প্রতিবেদন আইন (ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট বা এফআরএ), ২০১৩ জাতীয় সংসদের চলতি অধিবেশনেই উপস্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
অর্থমন্ত্রী বলেন, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট বা সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদদের (সিএ) অনেক প্রতিবেদনেই বাস্তবতার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক থাকে না। তাঁরা যেসব ভুলত্রুটি করেন এবং ফাঁকি দেন, তাঁরা চান না যে এগুলো ধরা পড়ুক। তাই তাঁরা এই আইনের ব্যাপক বিরোধিতা করছেন। কিন্তু সরকার এই আইন করবেই।
সচিবালয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ গ্রাম পুলিশ কর্মচারী ইউনিয়নের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন।
এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারই এফআরএ অধ্যাদেশ জারি করেছিল। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালে ওই অধ্যাদেশটি উপস্থাপন করা হয়েছিল সংসদে। পরে আমরা আইনটি নতুন করে করার সিদ্ধান্ত নিই এবং এ ব্যাপারে একটি কমিটি করে দেওয়া হয়। ’
কিন্তু এ কমিটির ওপর সিএরা প্রচুর চাপ তৈরি করে বলে জানান অর্থমন্ত্রী।
যে কারণে এফআরএর একটি কাঠামো দাঁড় করাতে চার বছর লেগে গেছে। সিএদের সঙ্গে আলোচনা করেই এফআরএর খসড়া তৈরি করা হয়েছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘তাঁদের সব চাওয়া তো আর আমলে নেওয়া সম্ভব হবে না। তাঁদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট অভিযোগ রয়েছে। স্টক এক্সচেঞ্জগুলো বলে যে সিএ ফার্মগুলো তাদের ধ্বংস করে দিচ্ছে। এটা ঠিক, সিএদের তৈরি করা অনেক আর্থিক প্রতিবেদনের সঙ্গে বাস্তবতার কোনো সম্পর্ক থাকে না।
’
সিএ ফার্মের বর্তমান কাজ ও জবাবদিহির প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘তোমার কাজ তুমিই পরীক্ষা করবে, আবার তুমিই এর মান নির্ধারণ করবে, এটা কেমন কথা?’
আর্থিক প্রতিবেদন আইন প্রণীত হওয়ার পর এটি প্রতিপালন তদারকির জন্য গঠন করা হবে আর্থিক প্রতিবেদন কাউন্সিল (এফআরসি)। আইনের খসড়ায় এ কথা বলা রয়েছে। তবে সিএদের সংগঠন ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) এফআরসি গঠনের বিপক্ষে। অবশ্য এর পক্ষেও কিছু হিসাববিদ রয়েছেন।
আইসিএবি ইতিমধ্যেই সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছে, এই আইন দেশের হিসাব পেশার মানকে ধ্বংস করবে।
আর, আইনের বলে গঠিত এফআরসি হয়ে যাবে আইসিএবির সমান্তরাল সংস্থা। এতে হিসাব ও নিরীক্ষা পেশা নিয়ন্ত্রণে দ্বৈধতা ও সাংঘর্ষিক অবস্থার সৃষ্টি হবে। কারণ, কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে যাঁদেরকে রাখা হচ্ছে, তাঁদের অনেকেরই হিসাববিজ্ঞান সম্পর্কে শিক্ষা নেই।
সম্প্রতি নিজেদের আয়োজনে এক গোলটেবিল বৈঠকে আইসিএবির এই সদস্যরা আরও বলেছেন, প্রস্তাবিত আইনে নিরীক্ষককে এমনভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, যাতে হিসাববিদ নয়, এমন ব্যক্তিরাও নিরীক্ষক হিসেবে কাজ করার সুযোগ পেয়ে যেতে পারেন। এ বিষয়টি দেশীয় বিভিন্ন আইনের সঙ্গেই শুধু সাংঘর্ষিক নয়, আন্তর্জাতিক রীতিনীতিরও পরিপন্থী।
এফআরসি গঠনের পরিবর্তে বরং আইসিএবিকে শক্তিশালী করার দাবি জানান তাঁরা। তাঁদের মতে, আইসিএবিকে শক্তিশালী করলে এফআরসি গঠনের দরকারই পড়বে না। আইসিএবি আদেশে সংশোধনী এনেই হিসাব ব্যবস্থাপনার উন্নতির পাশাপাশি নিরীক্ষা কার্যক্রমকে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও শৃঙ্খলার মধ্যে আনা সম্ভব।
অবশ্য একই বৈঠকে দ্বিমত পোষণ করে হিসাববিদ ফেরদৌস আহমেদ খান বলেছিলেন, বর্তমান আইসিএবির জবাবদিহির ঘাটতি রয়েছে। হিসাববিদদের কর্মকাণ্ডের জন্য আদতেই জবাবদিহিমূলক একটি সংস্থা থাকা দরকার।
কারণ, স্বনিয়ন্ত্রণ অনেক দেশেই ভালো কাজ করেনি। এ ছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হিসাববিদ ও নিরীক্ষকদের নানা নেতিবাচক কর্মকাণ্ড ধরা পড়েছে। বাংলাদেশেও প্রশ্ন উঠেছে। জবাবদিহিটা সে কারণেও জরুরি।
আইসিএবির বিরোধিতার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে আইনের খসড়ার তৈরির সঙ্গে যুক্ত অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, ‘এই বিরোধিতা নিতান্তই তাঁদের স্বার্থের কারণে।
অথচ খসড়া তৈরির প্রতিটি ধাপেই আইসিএবির প্রতিনিধি ছিলেন। আইনে তাঁদের মতামতের প্রতিফলন রয়েছে। ’
অন্যদিকে যোগাযোগ করলে ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট বাংলাদেশের (আইসিএমএবি) সভাপতি এ কে এম দেলোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশের হিসাব, নিরীক্ষা ও ব্যবস্থাপনা পেশার মান উন্নয়নে এই আইন প্রণয়ন ও এফআরসি গঠনের উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। ’
দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘এফআরসি গঠিত হলে আইসিএবি, আইসিএমএবি এবং আইসিএসবির মতো সংস্থাগুলো একই ছাতার নিচে আসবে, যা আর্থিক খাতে জবাবদিহি বাড়াতে ভূমিকা রাখবে। ’।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।