গ্যাট এ পঞ্চম ধারা মোতাবেক ট্রানজিট ও ট্রানশিপমেন্ট হচ্ছে ডবলিউটিও বা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্কের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু ট্রানজিটের ধূয়া তুলে ভারত শুধু ভৌগোলিক করিডরই চাচ্ছে না, অর্থনৈতিক করিডর চাইছে বাংলাদেশকে ঋণের জালে জড়ানোর বিনিময়ে।
উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতে (এনইআর) বাংলাদেশের জলপথ, রেলপথ, সড়কপথ ও সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করার মাধ্যমে ভারত যে পরিমাণ আর্থিক বেনিফিট পেতে যাচ্ছে, তার কত শতাংশ বাংলাদেশকে দেবে, ওটাই হতে পারতো বাংলাদেশের দর কষাকষির মূল এজেন্ডা। কিন্তু মহাজোট সরকারের আমলে এটা হয়নি। বরং ভারত সাফ জানিয়ে দিয়েছে, 'ট্রানজিট ফি দেবো না'।
যদিও অর্থমন্ত্রী শেষ পর্যন্ত বলেছেন, ট্রানজি ফি নেবো। কিন্তু তিনি জাতিকে এটা জানাকে পারেননি, ভারত ফি দিতে রাজি হয়েছে কিনা।
অথচ আইনগতভাবে বাংলাদেশ শুধু ট্রানজিট ফি-ই নয়, রেল, সড়ক, নৌপথ এবং সমুদ্র বন্দরের পরিচালন ব্যয় ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ, পরিবেশের ক্ষতিজনিত ফি দাবি করতে পারে। লেভিও চার্জ করতে পারে। কিন্তু গোপণ চুক্তির প্রকাশিত ছিটেফোঁটা থেকে বোঝা যাচ্ছে, ভরত এসব অবকাঠামোসহ নতুন করে তৈরি যাবতীয় অবকাঠামো ব্যবহার করবে।
কিন্তু সুদ গুণবে বাংলাদেশের নিরীহ জনগণ। ২০ বছর ঋণের সুদ গোনার পরও যদি টাকা বাকি থাকে, তাহলে জরিমানা হিসেবে প্রদত্ত ঋণের দ্বিগুণ টাকা ভারতকে পরিশোধ করতে হবে। কত বছরে পরিশোধ করতে হবে, তা জানা যায়নি।
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে ২৫ বছরের যে মৈত্রী চুক্তি (নাকি গোলামি চুক্তি) করেছিল, সেই চুক্তি মেয়াদ শেষে নবায়ন করা হবে নাকি হবে না, সেটার একক ক্ষমতা ছিল ভারতের হাতে। যাক, মেয়াদ শেষে ভারত এ চুক্তি নবায়ন করেনি।
আসাম, মিজোরাম, নাগাল্যঅন্ড, মণিপুর, অরুণাচল,মেঘালয়ও ত্রিপুরা হচ্ছে সেভেন সিস্টার্স বা সাত বোন। এ সাত বোনের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত দেড় হাজার কিলোমিটারের বেশি। অন্যদিকে শিলিগুঁড়ি করিডরের মাধ্যমে সাত বোনের সীমান্ত মাত্র এক শতাংশ। আবার ভারতের মোট আয়তনের ৮ শতাংশ হচ্ছে এই সাত বোন। ভারতের মোট জনসংখ্যার মাত্র ৪ শতাংশ এখানে বাস করে।
এখানকার অর্থনীতি স্থবির এবং গত ২৫ বছর ধরে এখানকার জাতীয় প্রবৃদ্ধি নিম্নমুখী।
'স্পেশাল ক্যাটাগরি স্টেটস' এর আওতায় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এখানকার যাবতীয় উন্নয়নের ৯০ শতাংশ মঞ্জুরি ও বাকি ১০ শতাংশ ঋণের মাধ্যমে করে থাকে। এখানে কৃষি উদ্বৃত্ত নেই। তবে এলঅকাটি শুধু জীববৈচিত্রের আধারই নয়। এখানে রয়েছে হাইড্রো-পটেনশিয়াল, তেল, গ্যাস, কয়লা ও বনজসম্পদ।
আগরতলা থেকে কলকাতায় ১৫ টনের একটি পণ্যবাহী ট্রাকের ভাড়া ৫০ থেকে ৬০ হাজার রুপি। ট্রানজিট পেলে তা মাত্র ২ থেকে ৩ হাজার রুপিতে নেমে আসবে। রেল ট্রানশিপমেন্টের মাধ্যমে পণ্য পাঠানো হলে খরচ আরও কম হবে। কিন্তু টট্রানশিপমেন্ট চুক্তি ভারত মোটেও চাইছে না। কারণ ট্রানশিপমেন্ট চুক্তি হলে ভারতের সীমান্ত স্টেশন থেকে পণ্য বাংলাদেশী ট্রাকের মাধ্যমে ভারতের অন্য সীমান্ত এলাকায় যাবে।
এতে বাংলাদেশ যদি কিছু টাকা পেয়ে ধনী হয়ে যায়, তাহলে দাদাদের তা সইবে কেন? তাছাড়া সমরাস্ত্র তো তখন পাঠানো মোটেও নিরাপদ হবে না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।