আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অ্যা জার্নি টু দোযখ

গায়ের ময়লা রঙ্গিলা জামায়, পুঁতি গন্ধ গোলাপ, আর কামে ভরা দেহের মধ্যে- জলের সন্তরণ, শুধুই জলের সন্তরণ ! ঐদিন কোচিং-এ ইংলিশ টিচার আসেন নি, নাইন এর ইংলিশ আর এমন কী- এই ভেবে ঢুকে গেলাম। Paragraph বের করলো, প্রথমটা ছিলো- My Country. বই খুলে দেখি,বহুত চাপাবাজি। “Bangladesh is my motherland, It’s a beautiful country, It is full of many natural resources, It is a rapidly developing country” Etc. Etc.. .. পরের Paragraphটা ছিল, Load Shedding, তারপরেরটা Traffic Jam, তারপর Unemployment Problem, তারপর A street beggar. Paragraph গুলোর নামেই বোঝা হয়ে যায়,কতটা RAPIDLY DEVELOPING আমার দেশ ! জন্ম থেকে শুনে আসছি বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। ক্রিকেট টীম খারাপ করলে-“আমরা উন্নতি করছি”, রোড এক্সিডেন্টে কেউ মারা গেলে-“আমরা এখনো উন্নত ট্রাফিক ব্যবস্থার জন্য কাজ করে যাচ্ছি”। গণপিটুনিতে ৬জন মারা গেলে-“আগে তো ৭জন মরতো,এখন তো আমরা সে তুলনায় উন্নত”।

কিছু না বুঝেই বুঝে নিতাম, আমার দেশ ক্রমশ উন্নতি করছে। জন্মের এই ২২বছর পরও যখন ঐ একই “উন্নয়নশীল” শুনি, তখন বুঝে নিতে বাধ্য হই, এটা অনেকটা honorary ডিগ্রীর মত। আমাদের নেতাদের দেয়া হয় অনারারি ডিগ্রী, যারা SSC পাশ ও করেননি, আর আমার দেশকে দেয়া হয় “উন্নয়নশীল” উপাধি, যে আদৌ উন্নয়ন শব্দের অর্থই বুঝে উঠতে পারেনি। কিন্তু কেন? সবসময় শুনি মাহাথির মোহাম্মদের কথা। যে লোক মালয়েশিয়াকে নিজের প্রচেষ্টায় তুলে নিয়ে গেছেন “অনুন্নত” থেকে “উন্নয়নশীল” পার করে একেবারে “উন্নত” দেশের তালিকায়।

আমাদের mango people সবসময় আফসোস করেন, যদি আমাদের একটা মাহাথির থাকতো !! বাঙ্গালী,কোত্থেকে থাকবে আমাদের মাহাথির? যে মাহাথির মালয়েশিয়া বানিয়েছেন,তিনিও কিন্তু ২০ বছর সময় পেয়েছিলেন। ২০ বছরে তিনি মালয়েশিয়া বানিয়েছেন, ১/২/৫ বছরে নয়। আমি বলি,আমাদের দেশে ঘরে ঘরে এমন মাহাথির আছে। প্রতিদিন জন্মায়। আমরা সেই জাতি, যারা রাগ উঠলে বউ-র চোখে আঙ্গুল ঢুকিয়ে তাকে অন্ধ করে ফেলি, আমরা সেই জাতি, যারা সেক্স উঠলে পথে হাঁটা কোন মেয়ের মুখে এসিড মেরে দিতে পারি, আমরা সেই জাতি, যারা এক হূলোতে একটা দেশ স্বাধীন করে ফেলতে পারি- নেগেটিভ হইলেও এই পটেনশিয়াল আছে বাঙ্গালীর।

কিন্তু সত্য হচ্ছে, সেই পটেনশিয়াল জেগে ওঠার আগেই তাকে মেরে ফেলা হবে,অথবা বসিয়ে দেয়া হবে। বাঙ্গালী পরিবর্তন চায় না, পরিবর্তন দেখলেই আমরা ভয় পাই, কি না কি হয় ! ছিলেন শেখ মুজিব, বুঝে ওঠার আগেই মেরে ফেলা হয় তাকে, ছিলেন তাজুদ্দীন আহমদ, সততার মূল্য দিলেন মৃত্যু দিয়ে। এই জমানায়-ই দেখেন, সোহেল তাজ,ডঃ ইউনুস- কাকেই বা টিকিয়ে রাখতে পেরেছেন? হালে পার্থ আন্দালিব সাহেবের একটা জ্বালা ধরানো ভাষণ শুনলাম সংসদে। আশান্বিত হতে গিয়েও আবার হতাশ হয়ে গেলাম। লাভ কি? তারও তো সেই একই ভবিষ্যত।

ভাষনটি চাইলে দেখতে পারেন- http://www.youtube.com/watch?v=7x5wpg31hlQ যেই আমরা উঠতি ভবিষ্যতদের ২ বছর টিকিয়ে রাখতে পারি না,তারা কিভাবে ২০ বছর ব্যাপী গজিয়ে ওঠা মাহাথির আশা করি?? সাথে তো আছেনই আমাদের শিক্ষিত ছাত্র সমাজ। তারা ফেনসিডিল খেয়ে ফ্যান্সি মুডে থাকতে রাজি আছেন, অন্ধকার ক্যাফেতে নারী সঙ্গ উপভোগ করতে রাজি আছেন, কিন্তু যখনই আসবে রাজনীতির কথা,তখন সুন্দর করে বলে দিবেন—I hate politics. যদি সবাই-ই এই কথা বলেন,তাহলে আমার মতে তাদের পরিবর্তন আশা করাই উচিত না। যে কাজ নিজে করতে গেলে ঘৃণা করেন,সে কাজ করতে কিভাবে আপনি আরেকজনকে বলেন? অবশ্য তাদের দোষ দিয়েও লাভ নাই। কি লাভ? তারা আসলেও তো তাদের সেই একই ভবিষ্যত। আমাদের সংসদ ভবন হইয়া গেসে “সংসার ভবন”।

একদল আসে,তারা ৫বছর সংসার করেন, আরেকদল পরের ৫ বছর। সংসার এর প্রতিটা সদস্যের পেছনে থাকেন আরও ১৫-২০ জন চামচা, তারা তাদের আখের গোছাতে চাপ দেন ঐ সদস্যের ওপর। ফলে একেবারে চেইন ধরে চলে দুর্নীতি। ৫ বছর চলে যায় আখের গোছাতেই, দেশ নিয়া ভাবার সময় আছে নাকি আবার? ক্ষমতা যদি আর ৫ বছর বাড়াইয়া পাওয়া যেতো, তাহলে হয়তো কিছু একটা চিন্তা ভাবনা করা যেত। তাও ঠিক নাই, যদি ধান্দার পর সময় পাওয়া যায় তবে।

কিন্তু সেটা তো আবার বাঙ্গালী হইতে দিবে না। তারা সংসারে নতুন মুখ দেখতে চায়, ধান্দার নতুন স্টাইল দেখতে চায়। সব মিলায়ে এক বিশাল সার্কাস পার্টি। আর কিছু হইলে তো আছেই সেই ৭১ আর সেই মুক্তিযুদ্ধের দোহাই। আমার তো মনে হয়,মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে যদি এখন ক্ষমতা থাকতো, তারাও ৭১ নিয়া পড়ে থাকতেন না।

তারা আরেকটা মুক্তিযুদ্ধ শুরু করতেন। মাকসুদ ভাই বলে গিয়েছেন ভালভাবে- “লক্ষ লক্ষ লোক শহীদ হয়নি এই ঠকবাজী মেনে নিতে”.. .. মুক্তিযুদ্ধ একটা চেতনা, ৩০ লাখ মানুষ রক্ত দিয়েছিলেন আরেকটা যুদ্ধের উঠান তৈরী করে দিতে, তাদের রক্ত নিয়ে হা-হুতাশ করার জন্য না। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের চেতনা, আমাদের বিশ্বাস, আমাদের অহঙ্কার,কিন্তু আমাদের দুর্বলতা নয়। এবার আরেকটা যুদ্ধ করার সময় এসে গেছে, দেশ গড়ার যুদ্ধ। মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে, যদি হাতে একটা AK-47 আর পেছনে ১০-১৫ হাজার পোলা পাইতাম, শালার এক সাইড হতে গুলি করা শুরু করতাম লিস্ট ধইরা।

যে শালার নামে একটা অভিযোগ আছে,সেটাও শেষ। কাউরে পরোয়া করি না। সামনে যদি লিস্টে নিজের বাপ-মাও পইড়া যায়, যাক, বলবো- “আম্মা, খোদা হাফেয। দোযখে দেখা হইবো” ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.