আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বালি আর ধূলি

যে ব্যথা দেয়,তারও তো ব্যথা থাকতে পারে-মাটির ময়না ছুটিতে ছোটবেলায় নানুবাড়িতে আমরা কাজিনরা যেতাম সব দল ধরে। সকাল সকাল রাতের খাওয়াদাওয়া শেষ করতাম গল্প শোনার লোভে। তারপর সবাই মিলে চেপে ধরতাম খালাকে গল্প বলার জন্যে। এসব অনেক আগের কথা। এখনত আর নানুবাড়িতে যাবার সময়ই হয় না।

খালা এসেছিল কিছুদিন আগে। পেপার পড়ছিলাম। খালা পাশে বসে ছোট্ট খালাত বোনটিকে খাওয়াচ্ছিল। কানে আসল কাজিনের চিৎকার,গল্প শুনবে। অগত্যা খালা শুরু করল- একনদীর পাশে বসে একলোক কিছুএকটা রান্না করছিল।

লোকটির নাম বালি। সে ভান করছিল যেন ভাত রান্না করছে। কিন্তু তার হাড়িতে শুধু পানি ছাড়া কিছুই ছিল না। বালি তবুও একমনে রান্না করেই যাচ্ছে। এমনসময় নদীর অপর পাড় থেকে এক লোক হাঁক দিল,'ও ভাই,কি রাধছ?'জবাবে বালি বলল ভাত রাধছে।

শুনে লোকটি বলে তার কাছে কিছু চাল আছে,বালি নিবে কিনা। বালি এইভেবে রাজি হয়ে গেল যে একইসাথে রান্না হয়ে গেলে লোকটি বুঝতে পারবে না হাড়িতে আগে কিছুই ছিল না। আসলে ব্যাপারটা হয়েছে,লোকটির কাছেও কোন চাল ছিলনা। সেও বালির মতই ফন্দি আটছিল। অতঃপর লোকটি বালির অলক্ষ্যে কিছু বালু নদীর কূল থেকে তুলে একটা থলেতে নিল।

তারপর অপর পাড়ে আসল। লোকটির নাম ছিল ধূলি। ধূলি বালিকে বলল,'দেখো ভাই,কি দারুন বকপাখি!'এটা শুনে বালি যেই উপরে তাকাল,অমনি ধূলি বালু হাড়িতে ঢেলে দিল। এতে বালি-ধূলি দুজনের কেউই বুঝতে পারল না,আসলে হাড়িতে বালু ছাড়া কিছুই নেই। খানিকপর যখন হাড়ির মুখ খোলা হল দুজনেই দেখল হাড়িতে কিছুই নেই।

এটা দেখে দুজন দুজনের দিকে কয়েকমুহূর্ত অপলক চেয়ে থাকল এবং জড়িয়ে ধরল। তারা যে দুজনেই চালাকি করেছে বুঝতে পারল। তারা দুজনে বন্ধু হয়ে গেল। চোরে চোরে মাসতুতো ভাই আরকি! এরপর তারা ভাবতে লাগল কিভাবে তাদের এই মূল্যবান বুদ্ধি কাজে লাগান যায়। তাদের গ্রামে এক প্রভাবশালী ব্যক্তি মারা গিয়েছিল।

তারা ফন্দি আঁটে ওই ব্যক্তির সম্পত্তি দখল করবে। পরামর্শানুযায়ী বালি লুকিয়ে থাকে ওই ব্যাক্তির কবরে আর ধূলি যায় ওই ব্যক্তির বাড়িতে। ধূলি কবরের কাছে গিয়ে কাঁদতে থাকে। এলাকাবাসী ধূলিকে কাদাঁর কারণ জিজ্ঞেস করে। ধূলি নিজেকে মৃত লোকটির সন্তান হিসেবে পরিচয় দেয়।

এলাকাবাসী জানত যে লোকটি নিঃসন্তান। তারা ধূলিকে একথা বলায় সে চিৎকার করে বলতে থাকে,'বাবা,আপনার একমাত্র সন্তানকে লোকে অপমান করছে আর আপনি নিঃশ্চুপ!'একথা বলামাত্র বালি বলে উঠল,'এটাই আমার ছেলে'। একথা শোনামাত্র লোকজন বিশ্বাস করল। নিজের সন্তান না হলে মৃত মানুষ নিশ্চয়ই কথা বলবে না,এলাকাবাসী তাই ভাবল। তারা ধূলিকে অনেক টাকাপয়সা ,ধনসম্পদ দিয়ে দিল।

ধূলি বালিকে না নিয়েই অতিদ্রুত এলাকা ত্যাগ করল। লোকজন চলে গেলে বালি কবর থেকে বেরিয়ে আসল। বুঝল ধূলি তাকে ঠকিয়েছে। সে তখন নতুন এক বুদ্ধি বের করল। দোকানে গিয়ে দামি একজোড়া জুতা কিনল।

কিছুদূর গিয়ে একটা জুতা পথে ফেলল। তারপর আরও মাইলখানেক গিয়ে অপরটি ফেলল। ধূলি যেতে যেতে একটি জুতা পেল। জুতাটি তার ভারী পছন্দ হল। কিন্তু একটি দেখে সে আর সেটি নিলনা।

কিছুদূর গিয়ে সে অপর জুতাটি দেখতে পেল। লোভ সামলাতে না পেরে সে ধনসম্পদ ভর্তি ঠেলাগাড়িটি রেখে আগের জুতাটি নিতে আবার ফিরে গেল। এই সুযোগে ধূলি ধনসম্পদ নিয়ে পালাল। বালি জুতা নিয়ে ফিরে এসে দেখল তার ধনসম্পদ সেখানে নেই। সে তখন বুঝতে পারল এটা বালির ফাঁদ।

ধূলি তখনই বালির বাড়িতে গেল। দেখল বালির বউ কাঁদছে। কারণ জানতে চাইলে বলল বালি মারা গেছে। ধূলি সন্দেহ করল এটা নিশ্চয়ই তার বন্ধুর কোন চালাকিই হবে। সে তখন বালির বউকে বলল যে,তার বউতো আর একা দাফনের কাজ করতে পারবে না,তাই সেই সব করবে।

এইকথা বলে সে বালিকে নিয়ে গেল। দেখল বালির কোন নড়াচড়া নেই। এদিকে বালিও পড়েছে বিপদে। বালি ভেবেছিল ধূলি বুঝি তার মৃ্ত্যুসংবাদ শুনে চলে যাবে। কিন্তু এ কি হল! ওদিকে ধূলি বালিকে বনের মধ্যে এক গাছের নিচে রাখল।

আর নিজে ওই গাছের ওপর চড়ে বসল,বালি কখন পালাবে তার আশায়। কিন্তু বালিতো নড়বেনা । এরইমধ্যে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। সে চোখ পিটপিট করে দেখল ধূলি গাছে বসে ঝিমুচ্ছে। বালি উঠে দৌড়াতে যাবে অমনি বনের মধ্যে জোরালো কথার আওয়াজ শুনল।

অগত্যা সে চুপ করে পড়ে রইল। পরক্ষণে একদল ডাকাত গাছতলায় এসে হাজির হল। ডাকাতদল গাছতলায় বালিকে দেখে অনেক ডাকাডাকি করল। বালি কোনো সাড়া দিল না। ডাকাতদল ভাবল লোকটা বুঝি মৃত।

ধূলিও গাছের উপরে ভয়ে ভয়ে বসে রইল। ডাকাতদল ডাকাতি করে ফিরছিল। তারা গাছতলায় বসে হিসাব শুরু করল। বালির প্রচণ্ড হাঁচি পেল। সে চাপাতে গিয়ে সজোরে হাঁচি দিয়ে বসল।

হাঁচি শুনে ধূলি আচমকা গাছ থেকে পড়ে গেল। ডাকাতদল ভূত ভেবে ডাকাতির জিনিসপত্র রেখে দৌড়ে পালাল। বালি আর ধূলি খুশিতে জড়িয়ে ধরল। এবার তারা সব ধনসম্পদ বাড়িতে গিয়ে ভাগ করে নিল। খালার গল্প বলা শেষ হলে মনে পড়ল,এই গল্পটা ছোটবেলায় আমাদেরকেও শোনাত।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।