আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিস্তব্ধ রাতের বাস যাত্রা ।

রাত ১০ টা । অফিসের প্রয়োজনে আমার এই নিশি যাত্রা ঢাকার উদ্দেশ্যে । যেহেতু রাতে বাস সফর তাই বোধহয় এর আয়োজনও একটু বেশি, বাস ছাড়ার আগে পুলিশ চেকিং হল এক অফিসার তার ফটো এলবামে আমাদের ছবি রাখার জন্য বেশ কিছু ছবি তুললেন। বছর খানেক আগে ভিডিও করা হতো, পুলিশের সাথে এক লোক থাকতো সে বিয়ের বর যাত্রীদের ভিডিও করার মতো বাস যাত্রীদের ভিডিও করতো । আমি চেষ্টা করতাম সবসময় একটু হাসি দিয়ে সে ভিডিওতে অংশ গ্রহন করতে কে জানে, ধরুন বাসটা ডাকাত দের হাতে পড়ল বা গভীর রাতে ডাইভার ভাই বাসটা ব্রিজ থেকে একবারে আমাদের ডুবিয়ে দিলেন নদীতে ।

তখন যদি এই ভিডিও দেখে তাহলে দেখা যাবে যাত্রীরা কত আনন্দ নিয়ে সফর শুরু করেছিল। যা হোক পুলিশ অফিসার ভাই আমাদের ছবি নিয়ে ছেড়ে দিলেন। আমার যাত্রা শুরু হল, এক নিরব রাতের যাত্রা । রাতের এই যাত্রা শুরু হবার কিছু পরেই আমরা মনে হল আসলেই এই রাত নিরবতার নয় । অন্ধকার আলো ছায়ায় রাস্তার ধারে সারি সারি গাছ গুলোকে আমার জীবন্ত মনে হলো মনে হতে লাগল এরা এখন একে অপরের সাথে কথা বলছে ।

কথা বলছে পৃথিবী নিয়ে। পৃথিবীতে কি ঘটছে আর ঘটবে বৃক্ষরাই বোধ হয় আগে জানতে পারে । এদের শিকড় মাটির গভীরে । তারা হয়তো একে অপরকে বলছে, এই পৃথিবী বোধ হয় আর কয়েক শতাব্দী টিকে থাকবে আমি মাটির উত্তাপ টের পাচ্ছি বুঝতে পারছি এক দানব জেগে উঠছে। হয়ত বা এর কথা বলছে কবরে কারও আযাব নিয়ে।

এই নিরবতায় আমাকে মৃত্যু ভাবনার অনেক কাছে নিয়ে গেল, সেই নিরবতা ভাঙ্গল ট্রাসের হেড লাইটের আলোতে । শত শত ট্রাক বাস একটার পর একটা ট্রাক পার করছে। ট্রাক চালকদের প্রতি কোথা থেকে অনেক মায়া চলে এলো, ট্রাক চালকরা আজ রাতের মানুষ হয়ে গেছে । বাসটা এখন পার হচ্ছে দীর্ঘ এক জন মানব হীন প্রান্তর । অর্ধ চন্দ্রের আলোতে মায়াবী এক অবস্থা ।

কৃষকের চাষ করা ফসল মাঠ একটু যেন বিশ্রাম নিয়েছে। আর কত অভাব পূরন করবে সে এই ভেবে বোধহয় সে ক্লান্ত। মাঝে মাঝে দুএকটা ঘর চোখে পড়ে দূর সীমানায় । অদ্ভুত খেয়াল চেপে বসে মন হয় এই নিরবতায় এই খানে আমার বাড়িটা হলেই বোধ হয় ভালো হত । জীবনের এই ব্যস্ততা বড্ড যাতনা ময় কিন্তু বাস্তবতা হলো সেই নিরবতায় থাকার ঘৃহের মানুষকেও জীবিকা মুক্তি দেয়নি এই ভাবনা থেকে আগামীকাল সংসার চলবে কি করে।

তবে মাঝে হঠাৎ মন ভালো হয়ে গেল এই ভেবে এখানেও কারেন্ট চলে এসেছে। অর্ধ চন্দ্রটি আস্তে আস্তে অন্য পাশে চলে যাচ্ছে। যাক কি আর করা, যে যাবার সে তো যাবেই । চন্দ্র থেকে একটু চোখ সরিয়ে বাসের মধ্যে তাকাতেই চোখে পড়ল সবাই কুম্ভকন্ডের মতো ঘুমাচ্ছে । দু একজন ঘুই ঘুই করছে ।

আমার সামনের সিটের ভদ্রলোক সিটটাকে পুরো কাত করে দিয়েছেন । বিরক্তিকর অবস্থা । আমি আবার গাছদের দিকে মন দিলাম, ওদের সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করছে । পূন্যবান মানুষরাই প্রকৃতির সাথে কথা বলতে পারেন আমি তাদের দলে নয় এটা আফসসের এক পাহাড় তৈরি করল। সেই পাহাড় থেকে পড়তেও বেশি সময় নিলাম আমি।

নিরব এক রাস্তার পাশে বিশাল বোর্ডে এক বিজ্ঞাপন । বিজ্ঞাপনের মডেল মেহেজাবিন । নিরব রাস্তার পাশে সে চোখ আর ভঙ্গি দিয়ে কিছু একটা বলতে চাইছে । তাকে কখনোও এত ভালো লাগে নি যতটা এই নিরবতায় লাগছে আলো ছায়ায় তাকে মায়াবী করে ফেলেছে । আরও বেশিক্ষণ থাকলে বোধহয় মেহেজাবিনের প্রেমে পড়ে যেতাম ।

আমার ভাগ্য ভালো মেহেজাবিন সেকেন্ড ৫ এর মধ্যে চোখের সামনে থেকে বিদায় নিল । এদের প্রেমে পড়া বিপদজনক। আমি বুঝতে পারছি রাতের এই নিস্তব্ধ যাত্রা শেষ হতে চলেছে । আমি শহরের বেশ কাছাকাছি চলে এসেছি কারণ বিপরীত দিক থেকে অজস্র বহর আমাদের অতিক্রম করছে। রাস্তার আলো চাঁদের আলোকে তাড়িয়ে দিচ্ছে ।

আমি আবার বাস্তবতার জীবনে প্রবেশ করতে যাচ্ছি আবার শুরু হবে জীবনের ব্যস্ততায়। মন বলতে লাগল আমি বৃক্ষ হতে চাই । ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.