ছোটবেলা হতেই আমরা সবাই তেলওয়ালা বাঁশের অঙ্কের কথা শুনে আসছি। আপনারা অনেকেই এই অংক করেছেন। বান্দর এক হাত আগায়, দুইহাত পিছায়। পুরা রাস্তাই পিছলা। বিরাট সমস্যার বাপার।
সারাদিন বাঁশের সাথে ডলাডলি করতে করতে বান্দর একসময় বাঁশের মাথায় যেতেও পারে, নাও পারে। এখন বাঙ্গালীর কাজ হল এইটা হিসাব করা, বান্দররের বাঁশের মাথায় পৌছাতে কত সময় লাগল। আমি এই টাইপ অঙ্ক খুব বেশি করি নাই, তবে যতবার করেছি, আমার বান্দর কখনই বাঁশের মাথায় পৌছাতে পারে নাই। ফলাফল যা হবার তাই হয়েছে, নিজেকেই বাঁশের মাথায় আবিস্কার করেছি। যাই হোক, যে প্রসঙ্গে এই কথা আনলাম, আমরা খুব ছোটবেলা থেকেই নেগেটিভ ব্যাপার নিয়ে অনেক বেশি ফালাফালি করেছি, কিন্তু পজেটিভ বিষয়কে খুব বেশি পুছি নাই।
কেউ কি কোনদিন খসখসা বাঁশের অঙ্কের কথা শুনছেন? যেই বাঁশ বেয়ে বান্দর একহাত এগিয়ে একলাফ দিয়ে আরও তিনহাত সামনে চলে যেতে পারে? আপনি শুনতে পারেন, আমি শুনি নাই। সামনে যাওয়া মানেই হল উন্নতি। সেটা বাঁশ বেয়ে যান আর রাস্তায় দৌড়িয়ে যান। আর জীবন অতি ছোট, সামনে এগোলেই হবে না, যতটা সম্ভব তাড়াতাড়ি যেতে হবে। তা না হলে সারাটা জীবন রাস্তাতেই পার হয়ে যাবে, গন্তব্যে আর পৌঁছানো হবে না।
তো যা বলছিলাম, পিছলা বাঁশের অঙ্ক করতে করতে আমাদের সবকিছুই কেমন যেন পিছলা পিছলা হয়ে গেছে। আমাদের চামড়াও পিছলা হয়ে গেছে, যতই গালি দেন, কিছুই গায়ে লাগবে না, সব গালি পিছলা খেয়ে পুচ্চুত করে চলে যাবে, গায়ে আটকাবেনা কিছুই। কাজ কামের বেলায়ও একই অবস্থা, দুইহাত আগায়, তিনহাত পিছায়। পুরো দেশটাই চলছে পিছলা রাস্তায়। দেশ সামনে যাচ্ছে না পিছনে, বলা বড়ই দুষ্কর।
যদিওবা সামনের দিকে যায়, তার গতি বড়ই মন্থর। এখন বলেনতো, বান্দরের ওই বাঁশের গায়ে না হয় কোন এক জারজ আদম সন্তান তেল লাগিয়ে দিয়ে মজা দেখছে, আমাদের দেশের রাস্তায় তেল লাগাল কে?
স্বাভাবিক একটা ব্যাপার, পুরা দেশের যা অবস্থা, আমাদের ক্রিকেট টিমের ঐ একই অবস্থা। একহাত সামনে গেলে দুইহাত পিছনে যায়। এই নিয়ে আমাদের ক্ষোভের অন্ত নাই। ম্যাচ হারলেই দে গালি।
আরে ভাই, ঐ ক্রিকেটারগুলাতো দেশেরই একটা অংশ, নাকি? দীর্ঘ একদশকের বেশি সময় সাধনার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে একপা সামনে চলে গেছিলো, এখন জিম্বাবুয়ের কাছে হেরে দুই পা পিছিয়ে গেছে। এতে অবাক হওয়ারও কিছু নাই, দুঃখ পাওয়ারও কিছু হয় নাই, গালি দেয়ারও দরকার নাই। আমাদেরই মত একদল বাংলাদেশীদের কাছ থেকে এটা কি খুব বেশি অপ্রত্যাশিত?
ওরা হয়ত আপ্রান চেষ্টা করছে, হয়ত করছে না, আমরা তা জানিনা। কিন্তু আমাদের মাথায় রাখতে হবে ওদেরও আছে আমাদেরই মত অসংখ্য সীমাবদ্ধতা। শক্তিশালী ঘরোয়া ক্রিকেটলিগ নেই, তৃনমূল পর্যায়ে মজবুত অবকাঠামো নেই, ক্রিকেট বার্ডের দুর্নীতির শেষ নেই, সীমিত সংখ্যক কিছু খেলোয়ার ছাড়া বাকিদের অর্থনৈতিক অবস্থার কোন মা বাপ নেই, আরও কত কি, খালি নেই নেই আর নেই।
এত যাদের সীমাবদ্ধতা, তারা বার বার হোঁচট খাবে এটাই তো স্বাভাবিক। সাধারন দর্শক হিসাবে আমরা যা করতে পারি তা হল, আশায় বুক বেঁধে সৃষ্টিকর্তাকে অনুরোধ করতে পারি, তিনি যেন এই অসহায় এতিম জাতির মুখের দিকে তাকিয়ে দলটাকে একটু সামনে নিয়ে যান। আর আমাদের যদি কপাল খুব ভালো হয়, তাহলে হয়ত সেইদিন দেখে মরতে পারব, যে দিন আমাদের এই দলটা পৌঁছে যাবে তৈলাক্ত বাঁশের মাথায়।
এখন অনেকেই অনেক কথা বলবেন, অনেক প্রশ্ন করবেন, যে দেশে মানুষ দুইবেলা ঠিকমত খাবার পায়না, সেখানে কোটি কোটি টাকা এই খেলার পিছনে ক্যান খরচ করব? কি জন্য তাদের জন্য এত টাকা খরচ করব যারা তাদের থেকে অনেক দুর্বল, আরও অনেক কম সুবিধাপ্রাপ্ত একটা দলের কাছে হেরে যায়, দুই এক ম্যাচ নয়, পুরো সিরিজ। এসব প্রশ্নের উত্তর আমি জানি না।
কিন্তু আমি শুধু জানি একটি কথা, আমাদের সেইদলে আছে আমাদেরই মত কিছু বাংলাদেশী, যাদের গায়ের চামড়া বড়ই পিচ্ছিল। কিন্তু তারপরেও এইদেশের ১৫ কোটি জনগন আশায় বুক বেঁধে তাকিয়ে থাকে কিছু মানুষের পানে, তারা মাঝে মাঝে হাসায়, মাঝে মাঝে কাদায়, মাঝে মাঝে একটু বেয়াদবি করে (আমাদের দেশের আমজনতার আদব কায়দার অবস্থাও কিন্তু খুব একটা ভাল না। )। কিন্তু দুই একটাবার তারা পেরেছে এই অভাগা জাতিকে একটু হাসার সুযোগ করে দিতে। আর কোন দল আছে এইদেশে যারা সমর্থন পেয়েছে পুরো দেশটার? কোন সেই দল যাদের জয়ে সমগ্রজাতি আনন্দ উল্লাসে ভেসেছে সারারাত? কোন সেই দল? তারা কি আ.লীগ? তারা কি বি.এন.পি? না, তারা “বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল”।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।