আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্বপ্নগুলো বেচতে নেই

ঘটনাস্থল বুয়েট সংলগ্ন পলাশীর এক রেস্তোরা। কয়েকজন বন্ধু মিলে রাত ১১টার পর ক্ষুধা নিবারণে বের হয়েছিলাম। আশ্রয় নিলাম নিশী-রাত্রিতে খাবারের পশরা সাজিয়ে রাখা এক ভজনালয়ে। অর্ডার দিয়েই লক্ষ্য করলাম পাশের টেবিলে এক ভদ্রলোক বসা। কোট-প্যান্ট পরা।

টাই ঢিলে করা। চোখে-মুখে তৃপ্তির আভাস। লোকটার সাথে বুয়েটের এক ভাইয়া বসে গল্প করছিলেন। কেন যেন কান গেল তাদের কথোপকথনে। ভদ্রলোকের নাম আশরাফ।

বুয়েট থেকে পাশ করেছেন ১৯৯৮ সালে। কোন ডিপার্টমেন্ট তা বোঝা গেল না। তবে নিজ ডিপার্টমেন্ট থেকে তার ফলাফল যে খুবই ভালো ছিল তা পরবর্তী ১৫ মিনিটের কথোপকথনে স্পষ্টই বুঝতে পারলাম। বুয়েট থেকে পাশ করেই পারিবারিক চাপে তিনি আইবিএ থেকে এমবিএ পাশ করেন। প্রথমে চাকুরী শুরু করেন মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ হিসেবে।

বেতন ২ লাখ টাকা। ধীরে ধীরে তার দক্ষতার বদৌলতে বেতন বেড়ে ৩ বছর পর দাড়ায় ৮ লাখ টাকা। ৩মাস পর তিনি ঐ চাকুরী ছেড়ে দেন। এরপর তিনি চাকুরী পান সনি এরিকসনের কান্ট্রি ম্যানেজার হিসেবে। বুঝতেই পারছেন তার মাসিক ভাতার অংকটা এবার ১০লাখ এ গিয়ে দাড়ায়।

বছর ২ পর উক্ত চাকুরীতেও বিরক্ত হয়ে তিনি রিসাইন করেন। (এ অবস্থায় পাশে বসে থাকা বুয়েটের ছাত্রটি কিঞ্চিত বিরক্ত)। পরবর্তী কথোপকথন থেকে স্পষ্ট বোঝা গেল, এরপর তিনি গ্রামীন ফোনের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসারের চাকুরী পান। বেতন ১২.৫ লাখ টাকা। (উল্লেখ্য রুবাবদ্দৌলা মতিন উক্ত ভদ্রলোকেরই সহকর্মী ছিল বলে জানতে পারলাম) ।

কিন্তু, এবারও একই নিয়তি। তিন মাস পর আশরাফ সাহেব উক্ত চাকুরীও ছেড়ে দিলেন। এ অবস্থায় আমি, আমার বন্ধুবর্গ, বুয়েটের উক্ত ছাত্র তীব্র বিরক্ত। বাংলাদেশের একজন ইনজিনিয়ারের বেতন ১২.৫ লাখ টাকা মানে তো স্বর্গের সমান। এ লাইনটি বলতে গিয়েই যেন এ অধমের ভুল ভাংল।

মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ, কান্ট্রি ম্যানেজার, চীফ এক্সিকিউটিভ -- সবগুলো চাকুরীই ছিল ব্যবসায় শিক্ষা অঙ্গনের। আশরাফ সাহেবের শিরা-উপশিরাতে প্রকৌশল বিজ্ঞানের ছোটাছুটি। ওহম, ফ্যারাডে, লেনজ, আইনস্টাইন এর নীতি পড়ে ভাগ্যের বিড়ম্বনায় তিনি হয়তো বা এখন জাবেদা কষেন। কিন্তু, ইনজিনিয়ার আশরাফ তার প্রতিভাকে মেলে ধরার সুযোগ পাননি। যার কারণে নিজের লাখ টাকা বেতনের চাকুরীও তার মনে শান্তি আনতে পারে নি।

নিজের অপূর্ণ স্বপ্নগুলো বাস্তবায়নের ইচ্ছা তাকে সব সময়ই নাড়া দিত। সুপ্ত মেধাবী প্রতিভা অর্থে আগুনের নিচে যেন চাপা পড়ে ছিল। কিন্তু, আজ ১৩ বছর পড় আশরাফ আবার বুয়েটের পলাশীতে বসে আছেন। চোখে-মুখে হাসি। কারণ একটাই।

লাখ টাকা দামের চাকুরী আবার ছেড়ে দিয়ে অবশেষে তিনি একটি গবেষনা প্রতিষ্ঠানে ফ্রিল্যান্সার গবেষক হিসেবে যোগ দিয়েছেন। ১৩ বছরের সুপ্ত প্রতিভ আবার জেগে ওঠার সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু, এবারের বেতন মাসে ৭২হাজার টাকা মাত্র। আশরাফ সাহেব এ চাকুরী এখনো করছেন। বহু বছর পর তিনি এ চিরচেনা ক্যাম্পাসে এসে স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলছেন।

কারণ, অর্থের কাছে তিনি নিজের স্বপ্নগুলোকে বিক্রি করে দেন নি। জীবনের লক্ষ্যে ১৩ বছর পর হলেও পৌছতে পেরেছেন। খাবার শেষ করে হাত ধুয়ে উঠলাম। রাত ১১.৪৫মিনিট। রাস্তার ধার ধরে হাটছিলাম।

বুকের ভিতরটাতে কেমন যেন অনুভূত হচ্ছে। সেখানে ছিল আশরাফ ভাইয়ার জন্য গভীর শ্রদ্ধা। আর ওধরের ফাকঁ বেয়ে হঠাৎ করেই বের হয়ে এল, "নাহ! আমাদের স্বপ্ন গুলো অনেক সাধের। স্বপ্নগুলো বেচতে নেই"। আসুন আমরা সবাই নিজের স্বপ্নগুলোকে বাস্তবে রূপদানের প্রচেষ্টা চালাই।

অর্থের কাছে সেগুলোকে বিক্রি করবেন না। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।