আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মহাসড়কে লাশের জ্যাম

মহাসড়কে প্রতি বছরে মৃত্যু ৬ হাজার শাস্তি হয় না দোষীদের কেউ জানে না ক্লেইম ট্রাইব্যুনালের খবর মহাসড়কগুলোর বাঁকে বাঁকে এখন কেবলই মৃত্যুর হাতছানি। সারা দেশে যত সড়ক দুর্ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে তার ৪৫ ভাগই হচ্ছে জাতীয় মহাসড়কগুলোতে। প্রতি বছর শুধু জাতীয় মহাসড়কগুলোতেই প্রাণ হারাচ্ছে ৬ হাজার মানুষ। সংঘটিত এসব দুর্ঘটনার জন্য দোষীদের বিচার না হওয়ায় দিন দিন আরো বেশি বেপরোয়া হচ্ছে চালকরা। দুর্ঘটনা রোধে কাগজে-কলমে ক্লেইম ট্রাইব্যুনাল থাকলেও বাস্তবে এর কোনো অস্তিত্ব নেই।

দুর্ঘটনার ৬ মাসের মধ্যে এই ট্রাইব্যুনালে ক্লেইম করলে ক্ষতিপূরণের বিধান রয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে কেউ জানে না বলে ক্লেইমও হয় না। বুয়েট নিয়ন্ত্রিত অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউট (এআরআই) কর্তৃক প্রাপ্ত এক জরিপে দেখা যায়, অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে যানবাহনের পরিমাণ কম থাকা সত্ত্বেও এখানে সড়ক দুর্ঘটনার পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশে প্রতি হাজারে যন্ত্রচালিত যানবাহনের পরিমাণ ২ ভাগ। কিন্তু রেজিস্ট্রেশনকৃত প্রতি ১০ হাজার যানবাহনে মৃত্যুহার ৬০ ভাগ।

অন্যদিকে প্রতি হাজারে যন্ত্রচালিত যানবাহনের পরিমাণ যুক্তরাজ্যে ৪২৬, জাপানে ৫৪৩, যুক্তরাষ্ট্রে ৭৬৫ ভাগ। কিন্তু সেই তুলনায় রেজিস্ট্রেশনকৃত প্রতি ১০ হাজারে যানবাহনে মৃত্যুর হার যুক্তরাজ্যে ১.৪ ভাগ, জাপানে ১.৭ ভাগ ও যুক্তরাষ্ট্রে ২ ভাগ। এআরআই’র পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি শতকরা ৪৫ ভাগ দুর্ঘটনা ঘটে জাতীয় মহাসড়কগুলোতে। ঝুঁকিপূর্ণ এসব সড়কগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকা-কক্সবাজার-টেকনাফ, ঢাকা-সিলেট-তামাবিল, ঢাকা-ময়মনসিংহ, গাজীপুর-টাঙ্গাইল-জামালপুর, ঢাকা-নগড়বাড়ি-পঞ্চগড় ও নগরবাড়ি-রাজশাহী মহাসড়ক। এছাড়া ঢাকা-মাগুড়া-খুলনা, ঢাকা-বরিশাল-পটুয়াখালী, যমুনা সেতু অ্যাপ্রোচ রোড, কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী-নোয়াখালী, চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি, বগুড়া-নাটোর, দিনাজপুর-বেলাডাঙ্গা, যশোর-মাগুড়া ও ঝিনাইদহ-দাসুরিয়া সড়কও অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক।

এছাড়া শতকরা ১২ ভাগ ঘটে আঞ্চলিক মহাসড়কে এবং ১৫ ভাগ ঘটে ফিডার রোডে। গবেষণায় দেখা যায়, জাতীয় মহাসড়কের মাত্র ৪ শতাংশ এলাকায় ৩৫ ভাগ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। মহাসড়কের এই ৪ শতাংশে রয়েছে সেতু, ঝুঁকিপূর্ণ মোড়, হাটবাজার, বাসস্টপেজ, স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা। এআরআই’র আরকেটি গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায়, পথচারীদের সাথে সংঘর্ষজনিত কারণে শতকরা ৫৪ ভাগ, যানবাহনের মুখোমুখি সংঘর্ষে ১৩ ভাগ, পেছন থেকে ধাক্কায় ১১ ভাগ এবং যানবাহন উল্টে যাওয়ার কারণে ৯ ভাগ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। আর সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে বাস-ট্রাকের মধ্যে।

বাসের মাধ্যমে ৪৫.৬ ভাগ এবং ট্রাকের মাধ্যমে ৩১.৬ ভাগ দুর্ঘটনার সূত্রপাত হয়। এআরআই’র তথ্যমতে শতকরা ৬১ ভাগ চালকেরই বৈধ লাইসেন্স নেই। ডিএমপি সূত্রে জানা যায়, দেশের ২১ হাজার কি.মি. মহাসড়কের জন্য হাইওয়ে পুলিশ আছে মাত্র ২ হাজার। আর তাদের যাতায়াতের জন্য যানবাহন আছে মাত্র ৭২টি। বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার জন্য এআরআই যেসব বিষয়গুলোকে চিহ্নিত করেছে সেগুলো হলো, চালক ও পথচারীর অসতর্কতা, লাইসেন্স প্রদানকারীর অসততা ও অসতর্কতা, ত্রুটিপূর্ণ সড়ক ও যানবাহন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অসততা ইত্যাদি।

এছাড়া খারাপ আবহাওয়া, ওভারটেকিং, মাদক সেবন করে গাড়ি চালানোসহ সড়ক দুর্ঘটনার অন্যান্য কারণগুলোকেও চিহ্নিত করা হয়েছে। এদিকে সড়ক দুর্ঘটনার জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী যে চালক তার শাস্তির বিধানও খুব সামান্য। সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী চালকের সর্বোচ্চ শাস্তি মাত্র ২ থেকে ৩ বছরের কারাদ-। কিন্তু অধিকাংশ সড়ক দুর্ঘটনাই আপস মীমাংসার মাধ্যমে শেষ হয়। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.