আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মহাসড়কে জোড়াতালি

চালু হয়নি ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক। এ নিয়ে টানা তিন দিন ধরে এই মহাসড়ক দিয়ে যাত্রীবাহী যানবাহন চলাচল বন্ধ আছে। কবে মহাসড়কটি চালু হবে, সে বিষয়ে এখনো ‘যদি’ আর ‘তবে’ রয়ে গেছে কর্তৃপক্ষের মধ্যে। এখন চলছে ইট ও খোয়ার জোড়াতালির মেরামতের কাজ। এদিকে মহাসড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনেও ঢাকা-ময়মনসিংহ পথে চলাচলকারী ট্রেনে ছিল উপচে পড়া ভিড়।

যাঁরা ট্রেনের টিকিট পাননি, তাঁরা কয়েক গুণ বেশি টাকা খরচ করে মাইক্রোবাস, ভেঙে ভেঙে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ও টেম্পোতে যাতায়াত করেছেন। জানতে চাইলে গতকাল ঢাকা-ময়মনসিংহ চার লেন প্রকল্পের পরিচালক ফিরোজ ইকবাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইট-খোয়া দিয়ে মহাসড়কটি চালু রাখার চেষ্টা চলছে। নতুন করে বৃষ্টি না হলে দু-তিন দিনের মধ্যে চলাচলের উপযোগী করা যাবে। ’ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) একজন কর্মকর্তা বলেন, ইট-খোয়ার জোড়াতালির মেরামত সব সময়ই চলে। এগুলো কোনো কাজে আসে না।

ঈদের আগে ভারী বৃষ্টি হলে ঢাকা-ময়মনসিংহের মতো সারা দেশের আরও অনেক মহাসড়ক প্রায় অচল হয়ে যাবে। তখন ঘরমুখো মানুষের বিড়ম্বনার শেষ থাকবে না। ময়মনসিংহ অফিস জানায়, মহাসড়কে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় শত শত মানুষকে ময়মনসিংহ শহরের মাসকান্দা ও শম্ভুগঞ্জ বাস টার্মিনাল থেকে ট্রাক, পিকআপ ভ্যান, অ্যাম্বুলেন্স, অটোরিকশায় ভেঙে ভেঙে ঢাকায় যেতে দেখা গেছে। গতকাল বেলা ১১টার দিকে শহরের মাসকান্দা বাসস্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, ১০-১২টি অটোরিকশা জনপ্রতি ২০০ টাকা ভাড়ায় গাজীপুরের মাওনা পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করছে। অটোরিকশার চালক আক্কাস আলী বলেন, পাঁচজন যাত্রী নিয়ে ভাঙা রাস্তায় মাওনা যেতে অনেক সময় লাগে।

সারা দিনে কোনো রকমে আসা-যাওয়া করা যায়। অ্যাম্বুলেন্সের চালক ইব্রাহীম মিয়া বলেন, রাস্তায় গর্ত থাকায় ঢাকায় রোগী পরিবহন কমে গেছে। তাই সাধারণ যাত্রী পরিবহন করছেন। দুপুর ১২টার দিকে শম্ভুগঞ্জ বাস টার্মিনালে কিছু লক্কড়-ঝক্কড় লোকাল বাসে যাত্রী তোলা হয়েছে। চালক ও পরিবহনকর্মীরা জানান, মাওনা পর্যন্ত ভাড়া ১০০ টাকা, ছাদে ভ্রমণ করলে ৮০ টাকা।

শেরপুরের নকলা থেকে আসা সরকারি কর্মকর্তা আরশাদ আলী বলেন, বাসের হেলপারদের কথা শুনে মনে হচ্ছে, তাদের দয়ায় যদি ঢাকায় যাওয়া যায়। এত দিন ধরে সড়ক খারাপ, তবুও দেখার কেউ নেই। ময়মনসিংহ জেলা মোটর মালিক সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম বলেন, সব মালিক মিলেই বেহাল মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ রেখেছেন। এদিকে ময়মনসিংহ রেলস্টেশনে গতকালও যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় ছিল। বসার জায়গা না পেলেও দাঁড়িয়ে ঢাকায় যেতে ট্রেনের নির্ধারিত সময়ের চার-পাঁচ ঘণ্টা আগে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করেন অনেকে।

দুপুরে ব্যবসায়ী আশ্রাফ হোসেন বলেন, পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নেত্রকোনার বারহাট্টা থেকে সকালে এসে বাস না পেয়ে ট্রেনের অপেক্ষায় বসে আছেন। বসার টিকিট না পেয়ে সকালের ট্রেনে যাননি। বিকেলের ট্রেনে দাঁড়ানোরও টিকিট পেতেই দীর্ঘ সারিতে দাঁড়াতে হয়। স্টেশনে বসার জায়গা না পেয়ে পত্রিকা বিছিয়ে বসে আছেন। ময়মনসিংহ রেলস্টেশনের মাস্টার আবুল কালাম আজাদ বলেন, সাধারণত শুক্রবার যাত্রীর চাপ কম থাকে।

কিন্তু আজ আসনবিহীন টিকিটেরও ছিল ব্যাপক চাহিদা। গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, বাস চলাচল বন্ধ থাকায় গতকালও জরুরি প্রয়োজনে হাজার হাজার মানুষকে রিকশাভ্যান, অটোরিকশা ও নছিমন-করিমনে যাতায়াত করতে দেখা গেছে। মানুষের অসহায়ত্বের সুযোগে এসব যানে দ্বিগুণ-তিন গুণ পর্যন্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। মাওনা চৌরাস্তার ফল ব্যবসায়ী মো. আমান উল্লাহ বলেন, গত বৃহস্পতিবার ৮০০ টাকায় অটোরিকশা ভাড়া করে ঢাকা থেকে এসেছেন। মাওনা চৌরাস্তার সংবাদপত্র পরিবেশক আবদুস ছালাম বলেন, এই মহাসড়কটি ১০ বছরের মধ্যে বড় ধরনের মেরামত করতে দেখা যায়নি।

বর্ষায় খানাখন্দ হলে সেগুলো বালু ও ইটের খোয়া দিয়ে যেনতেনভাবে ভরে দেওয়া হতো। সে জন্যই এখন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। শ্রীপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুর রউফ বলেন, গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় মহাসড়কটির মধ্যমেয়াদি মেরামতের দরকার ছিল। কিন্তু এই সরকারের আমলে এটা হয়নি। শ্রীপুর রেলস্টেশনের মাস্টারের কক্ষে গিয়ে দেখা গেছে, কয়েকজন মিলে ট্রেনের টিকিট বিক্রি করছেন।

স্টেশনমাস্টার হারুন অর রশীদ বলেন, কাউন্টারে টিকিট বিক্রি করে কুলিয়ে উঠতে পারছেন না। যাত্রীর চাপের কারণে টেবিলে টিকিট এনে বিক্রি করছেন। সওজের গাজীপুর বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ফজলে রাব্বি প্রথম আলোকে বলেন, সড়কটি চলাচলের উপযোগী করতে শুক্রবার সকাল থেকে বালু, ইটের খোয়া ও ইট বিছিয়ে জরুরি মেরামতের কাজ চলছে। এ মুহূর্তে ভারী মেরামত সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এখন বেশি টাকা খরচ করলে বৃষ্টির পানিতে সব নষ্ট হয়ে যাবে। ’ তিনি স্বীকার করেন, গত ১০ বছরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে সংস্কারকাজ হয়নি।

কারণ, এর জন্য বরাদ্দ পাওয়া যায়নি Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.