আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বেড়েই চলছে গুপ্তহত্যা!!!!!

বদলে যাচ্ছে হত্যাকাণ্ডের ধরন। কমেছে প্রকাশ্যে খুনের ঘটনা। বাড়ছে গুপ্তহত্যা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নামে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা কখনো রাতের আঁধারে কখনোবা প্রকাশ্যেই লোকজনকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। কারও লাশ মিলছে জঙ্গলে, কারওবা নির্জন স্থানে।

আবার অনেকে নিখোঁজ থাকছেন বছরের পর বছর। নিহত বা নিখোঁজ ব্যক্তির স্বজনরা জানতেই পারছেন না, খুনি বা অপহরণকারীদের পরিচয়। পুলিশও রহস্য উদঘাটনে চরমভাবে ব্যর্থ হচ্ছে। এ অবস্থায় রাজধানীসহ সারা দেশে গুপ্তহত্যা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে এ আতঙ্ক অপরাধীদের মধ্যেও।

গুপ্তহত্যায় পুলিশের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে নানা মহলে আলোচনা হওয়ায় শুধু বাহিনীর শীর্ষ পর্যায় নয়, তোলপাড় শুরু হয়েছে সরকারের মধ্যেও। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে বাসাবাড়ি থেকে লোকজনকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর তাদের আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এসব ঘটনার দায়-দায়িত্ব আইনশৃক্সখলা রক্ষাকারী বাহিনী যেমন নিচ্ছে না, তেমনি নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধানও তারা মেলাতে পারছে না। গুলিবিদ্ধ অজ্ঞাতনামা লাশের সংখ্যাও বাড়ছে। আর যে সব লাশের পরিচয় মিলছে, তাদের হত্যাকারী সম্পর্কেও অন্ধকারে থাকছেন স্বজনরা।

গাজীপুর থেকে পুরনো ঢাকার তিন তরুণের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার হলেও তাদের স্বজনরা জানেন না_ কী কারণে তারা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে, কারাইবা তাদের হত্যাকারী। সূত্র জানায়, গত দু'বছরে রাজধানীতে এ ধরনের ২০টি হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। তবে প্রতিটি ঘটনায়ই আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। এমনই একটি গুপ্তহত্যার শিকার মোহাম্মদপুরের যুবদল নেতা মনজুর মোর্শেদ শিপু। ২০০৯ সালের ১৯ জুন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তাকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়।

আট ঘণ্টা পর তাজমহল রোডের ঈদগাহ মাঠে তার গুলিবিদ্ধ লাশ মেলে। ওই ঘটনার মাত্র ছয় মাস পরই পুলিশ মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। পুলিশের পদস্থ এক কর্মকর্তা জানান, ঢাকায় বিভিন্ন জায়গা থেকে লোক এসে থাকে। বিভিন্ন জায়গা থেকে অপরাধ করেও অনেকে ঢাকায় আসে। এখানে অধিকাংশ লোকেরই ঠিকানা অস্থায়ী।

অনেক ক্ষেত্রে নিহত ব্যক্তিদের পেছনের ঘটনা জানা যায় না। ফলে অজ্ঞাতই থেকে যায় খুনি। একইভাবে ঢাকা থেকে কাউকে ধরে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে হত্যা করা হলেও খুনি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সন্দেহ, দেশ-বিদেশে সমালোচনার মুখে আইনশৃক্সখলা রক্ষাকারী বাহিনী ভিন্ন কৌশলে 'ক্রসফায়ারের' ঘটনা ঘটাচ্ছে। তারা ধরে নিয়ে যাওয়ার পর এখন আর স্বীকার করছে না।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এই কৌশল সন্ত্রাসীরাও ব্যবহার করছে। তারাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নাম ব্যবহার করে প্রতিপক্ষের লোকজনকে ধরে নিয়ে হত্যার পর লাশ নির্জন স্থানে ফেলে দিচ্ছে। সূত্রমতে, গুপ্তহত্যা নিয়ে পুলিশ কঠিন ইমেজ সংকটে পড়েছে। সরকারের পক্ষ থেকেও গুপ্তহত্যার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনা রোধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

তাই এ নিয়ে পুলিশ পড়েছে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে। বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে অনেকেই বলেছেন, অন্য কোনো বাহিনী যদি এসব ঘটনা ঘটায়, তা পুলিশের ওপর কেন বর্তাবে। এতে করে পুলিশের নেতিবাচক ভাবমূর্তিই প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। তবে এক পদস্থ কর্মকর্তার মতে, পুলিশের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ ওঠার পর ওই ঘটনা নিয়ে পুলিশেরই তৎপর হওয়া উচিত। কিন্তু এখন পর্যন্ত যে সব অভিযোগ এসেছে, সে বিষয়ে তাদের দায়িত্বশীল দেখা যায়নি।

এক্ষেত্রে পুলিশের এক সংস্থা আরেক সংস্থার ওপর দায় চাপিয়ে নিজেদের রক্ষার চেষ্টা করায় প্রশ্নের সৃষ্টি হচ্ছে। অবশ্য 'অপরাধীরাই পুলিশের পরিচয়ে এসব গুপ্তহত্যার ঘটনা ঘটাচ্ছে' বলে দাবি র‌্যাব-ডিবিসহ আইনশৃক্সখলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের। একাধিক কর্মকর্তা জানান, রাজধানী ও তার আশপাশ এলাকায় অজ্ঞাতনামা লাশের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় পুলিশ এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছে। তবে অধিকাংশ লাশের পরিচয় পাওয়া যায় না। অন্য কোথাও হত্যার পর খুনিরা লাশ ফেলে রেখে যাচ্ছে।

পুলিশ এদের শনাক্ত করতে না পারায় ডিএমপির প্রতিটি থানায় ছবি টানিয়ে রাখা হয়। গত মাসে পুলিশের সর্বশেষ অপরাধ পর্যালোচনা সভায় এ সব হত্যাকাণ্ডকে 'গুপ্তহত্যা' উল্লেখ করে তা বন্ধের তাগিদ দেওয়া হয়। পুলিশ কর্মকর্তাদের মতে, গুপ্তহত্যার রহস্য উদঘাটিত না হওয়া ও আসামিরা অজ্ঞাত থাকায় এর প্রবণতা বাড়ছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের মুখপাত্র গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার মনিরুল ইসলামের দাবি, এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে পুলিশের সংশ্লিষ্টতা নেই। তবে অপরাধীরা পুলিশের পরিচয়ে অপহরণ বা খুন ঘটাতে পারে।

তিনি বলেন, পুলিশের প্রতিটি পর্যালোচনা সভায় এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড যেন না ঘটে, সে ব্যাপারে সরকারের নির্দেশনা রয়েছে। পুলিশের মাঠ পর্যায়ের সদস্যদেরও বিষয়টি মাথায় রেখে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার এম সোহায়েল বলেন, র‌্যাব এ ধরনের কোনো কাজের সঙ্গে কখনো যুক্ত ছিল না। র‌্যাবের নামে সন্ত্রাসীরা এ কাজ করতে পারে।

তবে নিখোঁজ হয়েছে, এমন অনেক পরিবার থেকে অভিযোগ এসেছে র‌্যাবের কাছে। র‌্যাব তাদের অনেককেই উদ্ধার করে দিয়েছে। সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.