আজমপুর বাসস্ট্যান্ড। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। ঘড়ির কাটায় সময় ৬টা পেরিয়ে ৭টা’র কাছা কাছি। অপেক্ষা করছিলাম বন্ধুর জন্য। ফোনে জানাল কোনাবড়ী থেকে বাসে উঠেছে, চৌরাস্তা হয়ে কলেজগেটের কাছাকাছি।
গাছের মধ্যে অবস্থিত চায়ের দোকানে বসলাম চায়ের আশায়। চা শেষে ইচ্ছে হল সেই পুরনো অভ্যেস সিগেরেটের। তো কি করা ইচ্ছা যখন সিগারেট ধরিয়েই ফেললাম, তুলে দিলাম পায়ের উপর অপর পা খানি। মনের সুখে সিগেরেটে টান ধরিয়ে ধুয়া ছাড়ার সময় লক্ষ্য করলাম আমার থেকে একটু দুরে বিশেষ সাজে দাঁড়িয়ে থাকা ৩টি মেয়েকে। তাকালাম বেশ আগ্রহ বশেই কয়েক বার।
সিগেরেট শেষ না হতেই ঐই ৩ মেয়ের ১ জন হেটে গেল পাশ দিয়ে। গিয়ে মিশল সঙ্গী দু’জনার সাথে। ১ মিনিট পার না হতেই আরেক জন হেটে গেল পাশ দিয়ে। আমি আবারও তাকালাম মেয়েগুলোর দিকে। এবার ইশারা করল আমাকে।
এই খানেও যে পতিতার হাট বসে ভেবে একটু হাসি আসল। স্বভাব সুলভ মুচকি হাসি হাসলাম। তাতে মনে হয় শাহস পেয়ে গেল মেয়েগুলো। এবার একজন পেছনে এসে উল্টো দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে উদ্দেশ্যহীন ভাবে বলল কিছু লাগবে নাকি?
তখনই বন্ধু এসে হাজির। ওর খাস বাংলা ল্যাংগুয়েজ-- কিরে এই ভজঘট মালের আড়ৎ-এর বসেছিস ক্যান।
হাত ধরে তুলে নিয়ে আসল, চলে গেলাম ওদের নিয়মিত আড্ডাস্থল আমীর কমপ্লেক্সের পেছনে। প্রায় ঘন্টা ব্যাপি আড্ডা দিয়ে দুজনে চলা শুরু করলাম ল্যাব এ্যায়িডের উদ্দেশ্যে। ওভারব্রীজ পার হয়ে সেই কাচা বাজারের রাস্তা দিয়েই হাটছি। ততক্ষনে জুটেছে আর কয়েকটি মেয়ে; ভ্যান চালক/রিক্সা চালক/নির্মান শ্রমিক টাইপের কিছু খদ্দেরও। আমি হতবাক হলাম এই ভেবে যে খোলা রাস্তার পাশেই গড়ে উঠেছে পতিতার হাট খোদ উত্তরাতেই!!!
দীর্ঘ দিনের এই যান্ত্রিকতাময় যান্ত্রিক শহুরে জীবনে আমাদের রাজধানীর অবস্থা আমার অজনা নাই।
উত্তরা এলাকাটা অন্যান্য এলাকা থেকে একটু ভালই মনে হয়েছে এতদিন।
ঢাকা শহরের ব্যস্ততাময় স্থানগুলোর পাশে এই হাট নতুন নয়, সেই সাথে ভাম্যমান’রা তো আছেই। ফার্মগেটে দাঁড়িয়ে কোন বোরখা পরা মেয়েদের দিকে তাকানো দায়। হয়তোবা চোখ পরেও যেতে পারে দেহ প্রসারীনিদের চোখে, দেবে ইশারা।
এটি সূর্যের আলোয় আলোকিত শহরের অবস্থা।
আর সূর্য ডুবলে সোডিয়ামের আলোয় অবস্থা আরো ভয়াবহ হয়ে ওঠে। এভাবে বনানী ব্যস্ত সড়কের পাশে হোটেলগুলোর প্রবেশের মুখে বসে থাকা লোকগুলোর দিকে তাকালেই বিভিন্ন চোখের ইশারাই ডাকা হয় খদ্দের। সংসদ ভবন কিংবা জিয়া উদ্যান/চন্দ্রিমা উদ্যান এলাকাতেও সমান দৌরত্ব। পলটন কাকরাইল, বিজয়নগড়, মগবাজারের কথা নতুন করে কিছু লেখার নাই। গুলশান ২ এর ৫০নম্বর সড়কের পাশে আর লেকের উপর নির্মিত নতুন ব্রীজে রাত হলেই শুরু হয়ে যায় এই সকল দেহপ্রসারীনিদের, প্রায় প্রকাশেই চলে বিকিকিনি।
আমাদের সমাজে এই সকল মেয়েদের নিয়ে কথা উঠলেই এক শ্রেণী বলেন পেটের দায়ে দেহ বিক্রী করে এরা, এগুলো উঠেগেলে ওরা চলবে কি করে আর প্রগতিশীলরাতো এই পেশার পক্ষেই। এদের মতে এরা আছে বলেই নাকি সামাজে ধর্ষণ, নারী নির্যাতনসহ নানা যৌন হয়রানি কম হয়।
যারা অভাবের পক্ষে যুক্ত খাড়া করেন তারা হয়তো খেয়ালই করেন না যে, বাংলাদেশে এখন মেয়েদের কাজের কোন অভাব নেই। মানুষের বাসায় ঝিয়ের কাজ করলেই ৫/৬ হাজার টাকা রোজগার করা সম্ভব। কেও বলে থাকেন বাসা বাড়ীতে নিরাপত্তা নেই জান মালের সইতে হয় নারী নির্যাতনও।
দু একটি ব্যতিক্রম ঘটনা হয়তো ঘটে কিন্তু অধিকাংশ লোকই কিন্তু ভাল। খারাপ এই কাজের লোকেরাই। একটি উদাহরণই দিই-- চাকুরী শুরু করার পর যখন ৬জন মিলে বাসা নিলাম একটা তখনই শুরু হল কাজের লোকের পেছনে ছুটা, চাকুরী পাওয়া থেকে কাজের লোক পাওয়া বেশী কঠিন মনে হয়েছিল। ১১ মাসের মাথায় ৯নং বুয়া’কে বিদেয় করে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল ১০নং বোয়াকে। আজও কাছ করছে সেই মেসেই।
যদিও এখন আর মেস নাই, এক মেম্বার এখন থাকে স্ব-পরিবারে আর বুয়াটিও কাজ করে ঐ বাসাতেই। ঐ বোয়াকে কখনও বোয়া ডাকে নাই কেও খালা ভিন্ন। উনাকে কোন কাজের কথা কোন দিন বলতে হয় নাই। ঠিক যেন বাড়ীর কর্ত্তী, সবকিছুই সাজানো গোছানো ভাবে সেরে রাখেন নিজের বাড়ীর মতই। উনার কর্মদক্ষতা ও আন্তরিকতায় আমরা ৬জন মিলে উনার খাওয়া, পোষাক-আষাক, চিকিৎসা ছাড়াও বেতন দিতাম ১হাজার টাকা সেই ২০০৩তেই।
আর এক বাড়ী ওয়ালী’র ঘর মোছার পরিবর্তে থাকত ঐ বাড়ীতে বাড়ীওয়ালীর মেয়ের সাথে।
দ্বিতীয়ত গার্মেন্টস শিল্প প্রসারের সাথে সাথে মেয়েদের কাজের পরিধি আরো বেড়ে গেছে। ফ্যাক্টিরিগুলো লোক পায় না কাজের জন্য। এর মধ্যে হয়তো কিছু ফ্যাক্টরী আছে যারা ঠিকমত বেতন দেয় না বা কম বেতন দেয় কিন্তু অধিকাংশ ফ্যাক্টিরিই ভাল বেতন ও সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকে। গার্মেন্টেসে নূন্যতম মুজুরী ১৬৫০টাকা যা এখন ৩০০০টাকা প্রতি ২০৮ঘন্টার জন্য, অতিরিক্ত ঘন্টার জন্য ওভার টাইম তো থাকছেই (অদক্ষ শ্রমীক)।
প্রতিদিনের সর্বোচ্চ ওভার টাইম ৪ ঘন্টা এর অতিরিক্ত হলে ৪০/৫০টাকা অতিরিক্ত এলাউন্স সহ ওভার টাইম। ২ঘন্টা ওভার টাইমের জন্য নূন্যতম ১২টাকার টিফিন আর এর অতিরিক্ত হলে নূন্যতম ১৮.৫০টাকার টিফিন। আর উৎপাদন ভিত্তিক যারা তাদের মধ্য থেকে একই মেশিন, একই কাজ করে কেও পাচ্ছে ১৫/১৮ হাজার টাকা আর কেও পাচ্ছে ৩/৪ হাজার টাকা। তো এখানে দোষটা যে কার তা খুজে পাওয়া মুশকিল। তাই ইচ্ছে করলেই যে কেও সুন্দর ভাবে বেচে থাকতে পারে।
শুধু স্বদইচ্ছা থাকলেই যথেষ্ট।
আর প্রগতিশীলদের উত্তর- বিবাহিতরা বউ রেখে অন্যজনের সাথে ফুর্তি মাস্তি করছেন। আপনাদের ঘরের বউরাও যে যাচ্ছে না এমটি হয়তো বলা যাবে না। আর এই সমস্ত মেয়েদের কারনে যারা বিয়ে করছেন না তাদের ঘরের বোনরাও কিন্তু আটকে যাচ্ছে, তাদেরও বিয়ে হচ্ছে না উপযুক্ত সময়ে। আর সেক্স এমনিই একটি ব্যপার যা ইচ্ছ করলেই এড়ানো সম্ভব নয়- তাই আপনাদের বোনটিও যে এমটি হবে না তার কোন নিশ্চয়তা কিন্তু নেই।
আর কোমড়ের শেষ মাথায় পরা জিন্স ও ফতুয়ায় বান্ধবী যেমনটি মানায় স্ত্রী হিসেবে কিন্তু ঐ পোষাকের মেয়েদের অধিকাংশরাই অপচ্ছন্দ করে থাকে।
তাই এই পতিতা বৃত্তির প্রতিরোধে আমাদের সকলেরই এগিয়ে আসতে হবে। সচেতনতা চাই সকলের।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।