মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা হোয়াইট হাউসে এক ইফতার পার্টিতে ১১ সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসী হামলা এবং ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধে নিহত মুসলমানদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি টুইন টাওয়ার ধসে পড়ায় নিহত মুসলমানদের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, তারা খুব দ্রুত আমাদের থেকে চিরবিদায় নিয়েছেন এবং তাদের প্রতি নিহতদের পরিবারবর্গ ও মার্কিন জনগণের ভালোবাসা চিরকাল অম্লান থাকবে এবং তাদেরকে কেউ ভুলবে না।
প্রতি বছরই রমজান মাসে মুসলিম প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে হোয়াইট হাউসে ইফতার পার্টির আয়োজন করা হয় এবং প্রেসিডেন্ট সেখানে বক্তব্য রাখেন। দশ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে ইসলাম ও মুসলিম আতঙ্ক সৃষ্টি হওয়ার পর এ ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজনের প্রতি সবার দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়। টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলার পর মার্কিন কর্মকর্তারা দেশটির গণমাধ্যম ও উগ্র রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলো জ্ঞাত কিংবা অজ্ঞাতসারে মুসলিমবিরোধী ব্যাপক প্রচারণা চালায় এবং মুসলমানদেরকে সহিংসকামী, উগ্র মৌলবাদী এবং সন্ত্রাসবাদের সমর্থক হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা চালায়।
এক জরিপে দেখা গেছে, গত এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী মুসলমানদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। এমনকি কেবল মুসলিম নামধারী হওয়ার অপরাধে অনেককে বিমানে উঠতে দেয়া হয়নি অথবা বিনা কারণে ও সন্দেহের বশবর্তী হয়ে নিরাপত্তা বাহিনী অনেক মুসলমানের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বর্ণবাদী, ইহুদিবাদী ও উগ্র খ্রিস্টান গোষ্ঠীগুলো এ পরিস্থিতিকে ঐশী ধর্মগুলোর মধ্যে শত্রুতা সৃষ্টির কাজে ব্যবহারের সুযোগ পায়।
সম্প্রতি একজন মার্কিন পাদ্রী কর্তৃক মুসলমানদের পবিত্র কোরআন পোড়ানোর উদ্যোগ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ইসলাম বিদ্বেষের গভীরতার বিষয়টি উপলব্ধি করা যায়। এমন কি যুক্তরাষ্ট্রের মুসলমানদের ধর্মীয় কেন্দ্র স্থাপনের ওপরও সীমাবদ্ধতা রয়েছে এবং মুসলমানরা স্বাধীনভাবে তাদের ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি বা চিন্তা-বিশ্বাস তুলে ধরতে পারে না।
অবশ্য প্রেসিডেন্ট ওবামা একজন মুসলিম পরিবারের সন্তান এবং প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে মার্কিন ইতিহাসে তিনিই প্রথম মুসলমানদের উদ্দেশে বক্তব্যে অনেক আশার বাণী শুনিয়েছেন। কিন্তু ওই বক্তব্যের পরও বিগত সরকারগুলোর তুলনায় ওবামার শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমানদের অবস্থার খুব একটা পরিবর্তন ঘটেনি। যুক্তরাষ্ট্রে এখনও সংখ্যালঘু মুসলমানদের বিরুদ্ধে ব্যাপক বৈষম্য বিরাজ করছে এবং কখনও কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে প্রথমেই মুসলমানদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। এছাড়া পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রেও যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যের স্বৈরাচারী সরকারগুলো এবং দখলদার ইসরাইলের প্রতি অন্ধ সমর্থন জানিয়ে আসছে। এ অবস্থায় ইফতার পার্টিতে প্রেসিডেন্ট ওবামার বক্তব্য এবং নিহত মুসলমানদের স্মৃতির প্রতি তার শ্রদ্ধা জ্ঞাপন লাখ লাখ মুসলমানের অবস্থা পরিবর্তনে কোনো ভূমিকা রাখতে পারবে না বলে অনেকে মনে করছেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।