জীবনে প্রাণ আসুক। প্রতিটা মুহূর্তকে আমরা সুন্দর করে তুলি।
সেদিন কান্দাহার ছবিটা দেখিলাম। ছেলে সাজিয়া জীবন সংগ্রামে রত বালিকা ওসামাকেও দেখিলাম। দেখিলাম রক্তাক্ত বালক, ইসরায়েলি সৈন্যদের পাথর ছুঁড়ে মারা ফিলিস্তিনি বালক, দুর্দশাগ্রস্ত ইরাকিদের রাগ।
দেখিতেছি শিয়া, সুন্নী ও কুর্দিদের বিভক্তি। আর দেখিলাম তালেবানের অন্ধকার। মাথার মধ্যে কেহ যেন ভোমরার ন্যায় ঘুরিতেছিল। চক্ষে ঠাহর করিলে দেখিতাম সে আমার নিয়তি।
রোগাভোগা শরীর আমার বড় দুর্বল।
মনও যেমন তেমন। তাই তো প্রভু বলিয়া থাকে, তুই নীচ, হীন। তোরে দেখিয়া লাগে ঘিন। তুই পরশ্রীকাতর, বেভুল, বেদমা, দুর্ভাগা। তাই তো তোরে ডাকি অভাগা।
আমি কেমন করিয়া কী করিব ভাবিয়া না পাইয়া ঘুমাইতে গেলাম। স্বপ্নে দেখিলাম আমারে হাইজ্যাকার পাইয়াছে। অনতিদূরে পুলিশ বসিয়া তাহার শক্ত দন্ত দিয়া মুরগির রান হইতে মাংস খসাইতেছিল। আমি চিৎকার করিয়া গলা ফাটাই, তেনারা মাংসে কামড় বসান, সালাদ খান, পরোটা খান। ঘি আনিয়া দেন দবির খান।
মনে হইল হাইজ্যাকার আমার মাথাশুদ্ধ লইয়া গিয়াছে। কিম্ভূত এক লোক আসিয়া আমাকে টিকটিকি খাওয়াইয়া দিল। টিকটিকির লেজটা আমার পিছনে গজাইয়া গেল। রক্ত সাদা হইয়া গেল, মন দমিয়া গেল, আমি হারাইয়া গেলাম।
মহাশয় চুপি চুপি আমার হাড়গুলি খুলিয়া ফেলিতে শুরু করিল।
আমার মন ছালি-বিছালি করিল। আমার দেহে জ্বর না ঝড় প্রবেশ করিল বুঝিতে পারিলাম না। হাড়গুলি জোড়া লাগাইতে চেষ্টা করিলাম। ঘুম আমার ঘুরিয়া গেল। কী করি!
পঙ্খীরাজ ঘোড়ায় চড়িয়া বিপুল বেগে আসিয়া এক রাজা আমার সামনে দাঁড়াইল।
রাজার চেহারা জঞ্জালের মতো। তাহার হাতে মল ও রক্ত লাগিয়া আছে। বলিল, আমিরিকা মাথার ওপর থাকিতে মাথা লইয়া অত ভাবনার দরকার নাই। বুঝিলাম একেবারে খাঁটি কথা। ঘাড়ে হাত দিয়া দেখিলাম মাথা সাহেব আছেন কিনা।
বহাল আছেন যথাস্থানে। নিশ্চিত হইয়া আঁখি মুদিলাম। আবার তাহারা হাত লাগাইয়া জোড়া জোড়া সব খুলিয়া লইয়া যাওয়ার জোগাড় যন্ত্র করিতে লাগিল।
উঠিয়া দুই হাত জোড় করিলাম। বলিলাম, প্রভু! তোর নাকের শিকনি পরিষ্কার করিয়া দেব।
তুই নোজ দেখাইয়া পোজ দিয়া এক নম্বর বিশ্বসুন্দর হইতে পারিবি।
প্রভু বলিল, আমেরিকা মানে আমি রিকা। রিকা মানে কারি। তাই আমি পারি। আমি ডিমও পাড়ি।
সবকিছুর মাস্টারি আমার কাছে আছে। সবকিছুর শুদ্ধরূপ আমি জানি। তাই ভুল প্রয়োগ করিতেছি। যখন সব ধ্বংস হইবে, আমি সারাইব। আমি আটলান্টিকে গিয়া আটবার গোসল দেব।
আমার পাপকে সাপ বানাইব।
প্রভু আমারে লইয়া চলো তোমার দেশে। আমি আমার মাথারে এতটুকু ঘামিতে দিব না। তখন মাথার ঘাম পায়ে পড়িবার তিলমাত্র সম্ভাবনাও থাকিবে না। আমি মনে মনে তিল খুঁজিব।
তিল পাইলে তাহাকে তাল বানাইব। সেই তাল আমার দেশীয় গর্দভদিগকে দেখাইয়া কহিব, ওহে দেখ, প্রভু কী জিনিস!
প্রভু হাসে। রসে রসে কাশে। কহিল, তোমরা ত কিলাইয়া কাঁঠাল পাকাও। আমি আবার তাল পাকাইতে পারি।
তাহার পর তোমাদিগকে বেতাল পিঠা নয়, পিটা খাওয়াইব চিকন চিকন বেতে। মন যেন না তেতে। তাহা হইলে আমি উঠিব মেতে। তখন পারিবে না যেতে।
তাহার মুখে সুচিক্কণ হাসি, মাথার উপরে কে তাহা দেখাইব।
কুকুরের মতো অনুগত হইতে চাও, আবার গৃহস্থের পাতিলে মুখ দিয়া ভাতও সাবাড় করিতে চাও। আহা আনন্দে বাঁচি না। ঠিক আছে, তোরে ‘গরু মারিয়া জুতা দান’ শিখাইব।
সকালে উঠিয়া আমি আকাশের দিকে তাকাইতে চাহিলাম। অদৃশ্য হইতে কেহ কহিল, হে হে শালা জাক্ষস, তোর কর্ণে অসুখ, হস্তে অসুখ, মস্তকে অসুখ।
তুই চক্ষে আন্ধা। আমি এইবার করিব ধান্ধা।
প্রভু! জাক্ষস আবার কী জিনিস?
তুই।
কেন গো?
রাক্ষস দেখিয়া যে চুপি চুপি চলিয়া যায়, রা কাড়ে না, সে হইল জাক্ষস।
আমার মাথা তো ‘জাম’।
বলি, জাম খাবেন?
বলিল, রাস্তায় বড্ড জ্যাম গো।
ম্যামের কথা বলিতেছেন? সে একবার দেখিয়াছিলাম বটে সাহেব-বিবির বাক্সে।
রাজার লোক রাগিয়া বলে, তোর কপালে ছালি।
আমি শুনিলাম কালি। বলি, সেই জ্যাম কালি এখন নাই।
এখন আছে ইকোনো, ম্যাটাডোর, অলিম্পিক।
বল পেনের রাজত্ব?
পেনের বল আছে! তাহা হইলে আমাদের ছেলেমেয়ের উন্নতি হইবে। বাঙালির ভবিষ্যৎ ত উজ্জ্বল দেখিতে পাইতেছি। হস্তে তাহার বল এসেছে।
বল দিয়া কি করিবে?
আমি উজবুকটার দিকে তাকাইলাম।
বলিলাম, সব নাশ করিবে।
নাশ করিতে গিয়া যদি সর্বনাশ করিয়া বসিয়া থাকে?
রাগিয়া বলিলাম, তাহা হইলে দুর্মুখ তুই গলায় ফাঁস পরিয়া বসিয়া থাকিবি।
কে যেন আমার কান টানিয়া ধরিল। আমি অবাক বিস্ময়ে দেখিলাম, প্রভু! প্রভু নমস্কার।
প্রভু বলিল, আসামি হাজির।
আমি শুনিলাম, আহ স্বামী। কার স্বামী?
কে যেন বলিল, দেশের।
দেশের আবার বিবাহ হয় নাকি!
প্রভু বলিল, কত জনে তাহারে সাদি করে।
আমি প্রভুর হস্তে ও পদে চুমু খাইলাম। প্রভু আমারে খাওয়াইল ভুটানের মুমু।
আমি কি প্রভুর গুণাগুণ না গাহিয়া থাকিতে পারি!
আমার বন্ধু এতসব বিশ্বাস করিল না।
বলিলাম, ওরে মূর্খ, দেখিয়া ল, প্রভু কি জিনিস!
দুর্ভাগা সে রাগিয়া বলিল, প্রভুর পোঁদে বাঁশ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।