আমি এই আমাকে খুঁজে ফিরি সবার মাঝে………………….. তোমাদের মধ্যে কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত প্রকৃত মুসলমান হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত সে তার ভাইয়ের জন্য সেটাকেই পছন্দ করে যা সে নিজের জন্য ভালো মনে করে। আল-হাদিস বিভিন্ন বিবেচনা থেকেই মুসলমানদের মাঝে কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়। অন্যসব ধর্মীয় জাতি-গোষ্ঠীর তুলনায় চিন্তামূলক, রাজনৈতিক, সামাজিক, ভৌগোলিক, বস্তুগত সামর্থ-শক্তি এবং প্রাকৃতিক সম্পদ ও খনিজ ভাণ্ডারের দিক থেকে মুসলমানরা চোখে পড়ার মতো অবস্থানে রয়েছেন। মুসলমানদের রয়েছে সেই ব্যাপক ও সর্বব্যাপী জীবনব্যবস্থা এবং পরিপূর্ণ শরীয়তবিধি, অন্যদের তুলনায় যা তাদেরকে একটি আলাদা মর্যাদা দান করেছে। অপরদিক থেকে ধর্মীয় ও ইসলামী প্রতীক ও মর্যাদা সংরক্ষণের স্বার্থে জীবন বিলানো ও আত্মোৎসর্গের প্রস্তুতি এবং সত্যের পথে জান-মাল কুরবানীর প্রেরণা তাদের মাঝে অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি বিদ্যমান।
রাজনৈতিক বিবেচনার দিক থেকেও কিছু মুসলিম দেশ রয়েছে অত্যন্ত- গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে। সেসব স্থান থেকে গোটা দুনিয়ার নেতৃত্ব, পরিচালনা ও পর্যবেক্ষণের কাজ আঞ্জাম দেওয়া সম্ভব সুন্দরভাবে। এ কারণেই বিশ্বশক্তিগুলো ওইসব মুসলিম দেশকে কব্জায় নিতে কিংবা সেসবের ওপর অধিপত্য বিস্তার করতে বার বার চেষ্টা করেছে, করে যাচ্ছে। সেসব অঞ্চলের মাঝে কিছু আছে স্থলভূমি আর কিছু সমুদ্র অঞ্চল। এসব অঞ্চল রক্ষা করতে মুসলমানরা সব সময় ত্যাগ দিয়েছেন এবং ইউরোপের ধারাবাহিক আক্রমণ থেকে অঞ্চলগুলোকে রক্ষা করেছেন।
সেসব অঞ্চলে পরিচালিত ক্রুসেডিয় আক্রমনে গোটা ইসলামী জগতে তীব্র প্রতিক্রিয়া প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। মুসলমানরা ইসলামী আত্মমর্যাদা ও চেতনায় উদ্দীপ্ত হয়ে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোকে মুকাবেলা করতে যুদ্ধের ময়দানে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছেন এবং শত্রু সেনাদের হামলাগুলোকে ব্যর্থ করে দিয়েছেন।
সাম্রাজ্যবাদী লক্ষ্যের ব্যর্থতার পর ইউরোপ সেসব অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিতে নতুন কিছু উপায় অবলম্বন করেছে। সেটা হচ্ছে মধ্যস্থতার ভিত্তিতে নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি। এ পদ্ধতি অবলম্বন করে বড় মাপে সেসব গুরুত্বপূর্ণ ও ভূরাজনৈতিক তাৎপর্যের অধিকারী অঞ্চলগুলোতে ইউরোপ নিজেদের প্রাধান্য বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে, যেসব অঞ্চলের সঙ্গে রয়েছে স্বার্থের সংশ্লিষ্টতা ।
সেসব অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ একটি হচ্ছে ফিলিস্তীন। ফিলিস্তীনে ইহুদী রাজত্ব মূলত ইউরোপের সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থ ও লক্ষ্যের পূর্ণতারই একটি উপায়। তাই এই রজত্বকে টিকিয়ে রাখতে ইউরোপ ও আমেরিকা তাদের সমস্তউপায়-উপকরণকে ব্যবহার করে আসছে। এই রাজত্বকে টিকিয়ে রাখার পেছনে মূল ভূমিকা হচ্ছে একটি আশঙ্কা বা ভীতির। সেটি হচ্ছে এই ইহুদী রাজত্বটি যতই শক্তিধর হোক না কেন, তার চারপাশের মুসলিম বসতি তাকে ঘিরে রেখেছে।
আর ওই রাজত্বটির ওপর মুসলিম বসতিগুলো তাদের ঐতিহাসিক অধিকারও ধারণ করে। এর সঙ্গে আরেকটি বিষয় এটাও রয়েছে যে, সেখানকার মুসলিম বসতিগুলোর অধিকাংশ বাসিন্দা রাজত্ব ও নেতৃত্ব পূনোরুদ্ধার এবং সাম্রাজ্যবাদী শক্তিকে দেশছাড়া করতে সচেষ্ট রয়েছেন এবং এর জন্য সর্বাত্মক ত্যাগ দিতেও তৈরি হয়ে আছেন।
ফিলিস্তীন ছাড়াও ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বের অধিকারী বহু মুসলিম দেশ পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে অবসি'ত। সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো সেসব অঞ্চলগুলোকেও নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পরিকল্পিত ও ধারাবাহিক চেষ্টা তদবির চালু রাখছে। এই চেষ্টা তদবিরের অংশ হিসেবে মুসলমানদের মাঝে অপসে গৃহযুদ্ধ এবং পারস্পরিক দূরত্ব ও বিক্ষিপ্ততা উষ্কে দেওয়া হচ্ছে।
একই সঙ্গে আরেকটি বড় কূটকৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে। সেটি হচ্ছে, সেসব অঞ্চলের শাসক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে নিজেদের চিন্তার অনুগামী এবং নিজেদের প্রতিনিধি বানিয়ে রাখা। শাসকদের মাঝে অর্থকড়ি, খ্যাতি ও জাগতিক সুখ-সম্ভোগের লালসা ঢুকিয়ে দিয়ে শাসকশ্রেণী ও জনগণের মাঝে ঘৃণা ও শত্রুতার এমন উত্তেজনা সৃষ্টি করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে, যার ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে শাসক ও জনতার মাঝে যুদ্ধ কিংবা দ্বন্দ্বের রূপ পরিগ্রহ করছে। আর এটিতো একটি কঠোর বাস্তবতা যে, কোনো দেশ অপর দেশের ওপর প্রবল হওয়ার সুযোগ তখনই পায় যখন সে দেশের শাসকদের পক্ষ থেকে তার প্রতি সাহায্য ও আনুগত্য অর্জিত হয়ে যায়। মুসলিম সেসব অঞ্চলে ইউরোপীয়দের আধিপত্য ও প্রাবল্য ততদিন প্রতিষ্ঠিত থাকতে পারবে যতদিন পর্যন্ত সেখানকার শাসকেরা তাদের অনুগত থাকবে এবং জনতা থাকবে সম্পূর্ণ উদাসীন ও অসচেতন।
এ কারণেই ইউরোপিয়ান দেশগুলো ইসলামী জাগরণের ব্যাপারে চরম ভীত ও সন্ত্রস্ত। কেননা, ইসলামী জাগরণের অর্থ হচ্ছে, যদি তা অংকুরিত ও দৃঢ় হওয়ার সুযোগ লাভ করে, তাহলে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির নিয়ন্ত্রণ শেষ হয়ে যাবে। ইউরোপিয়ান সংবাদ ও প্রচার মাধ্যমগুলো ইসলামী জাগরণের প্রতি তাদের এই ভীতি ও অশ্বস্তির প্রকাশ বার বার করে যাচ্ছে যে, ইসলামী জাগরণ ঘটলে ইউরোপের রাজনৈতিক, বাণিজ্যিক ও প্রতিরক্ষাগত স্বার্থ হুমকির মুখে পড়ে যেতে পারে।
এ জন্যই সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো নিজেদের স্বার্থ সংরক্ষণের লক্ষ্যে ইসলামী জাগরণের টুটি চেপে ধরতে সম্ভব সব প্রয়াস চালু রেখেছে। ইউরোপের এই অশ্বস্তি সেখানকার লেখক ও কলামিষ্টদের প্রতিটি লাইন থেকে প্রকাশিত হচ্ছে।
কিন্তু এই বিদ্বেষমূলক কর্মপন্থার ফলে মুসলমানদের মস্তিষ্কে বিরাজমান ইসলামী চিন্তা-চেতনায় আরো দৃঢ়তার জন্ম হচ্ছে। ইউরোপীয় কোনো কোনো রাজনৈতিক মহল এ সত্যেরও স্বীকৃতি দিয়েছেন এবং পরামর্শ দিতে শুরু করেছেন যে, এখন ইসলামী জাগরণের বিরুদ্ধে চলমান প্রকাশ্য যুদ্ধ বন্ধ করে নিরাপত্তাময় ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করা হোক এবং মুসলিম দেশগুলোর ‘উদারচিন্তা’ লালনকারীদের সঙ্গে বোঝাপড়া ও মতবিনিময় করা হোক। এ লক্ষ্যে মুসলিম বুদ্ধিজীবী ও আলেমদের ইউরোপ ও আমেরিকায় দাওয়াত করে নেওয়া হচ্ছে। তাদের মগজ ধোলাইয়ের চেষ্টা চালু করা হয়েছে। কেননা, তাদের মাঝে এই উপলব্ধির উদয় হয়েছে যে, শক্তি ব্যবহারের ফলে ইসলামের গ্রহণযোগ্যতায় আরো বৃদ্ধি ঘটেছে এবং মানুষের মাঝে ইসলাম গ্রহণের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে।
খোদ মুসলমানদের মাঝেও নিজেদের দ্বীন-ইসলামের সঙ্গে সম্পর্ক দিন দিন দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হচ্ছে। নিজেদের ধর্মীয় পরিচিতি ও ইসলামী প্রতীকসমূহ সংরক্ষণের প্রেরণা শক্তিশালী হচ্ছে।
http://www.alkawsar.com/article/56 ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।