আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার প্রথম ভালোবাসা- ভালো থেকো তুমি......

অন্ধকার দেয়ালে তোমার আলো জন্ম দেয় মিথ্যে ছায়াকে..... বৃষ্টি নেমেছে আজ আকাশ ভেঙ্গে হাটছি আমি মেঠো পথে মনের ক্যানভাসে ভাসছে তোমার ছবি বহুদিন তোমায় দেখিনা যে... বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে দুরন্ত প্রকৃতির মানুষ ছিল রফিক। সারাদিন আড্ডা আর দৌড়া দৌড়ি। সাংস্কৃতিক কাজ কর্ম থেকে শুরু করে হালকা পাতলা রাজনীতি কিছুই বাদ যায়নি তার। ক্লাসের সুন্দরীদের মধ্যে অন্যতম ছিল নীলিমা। প্রথম বর্ষ থেকেই নীলিমার সাথে ভাব জমে যায় রফিকের।

হয়ত এর কারন দু জনেই চিটাগং থেকে এসেছে। দুজন এক সাথে ছুটিতে বাড়ি যেত,একসাথে ফিরে আসত। ক্লাসে স্টাডি গ্রুপেও দুজন একসাথে থাকত। একসময় সবাই ভাবল তাদের মাঝে হয়ত প্রেম বা এই জাতীয় কিছু চলছে। কিন্তু আসল ব্যাপার হচ্ছে, রফিকের মাঝে এসব নিয়ে কোনো আগ্রহই ছিল না।

সে বন্ধুদের সাথে আড্ডা আর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার কবিতা আবৃতি নিয়েই খুশি ছিল। নীলিমা কি কারনে রফিকের প্রেমে পড়ল তা সে বলতে পারবে না। হয়ত তার জগতের সবটাই দখল করে ছিল রফিক। সেকেন্ড ইয়ারের মাঝা মাঝি থেকেই সে রফিককে আকারে ইঙ্গিতে বোঝাতে চেষ্টা করল। কিন্তু দুরন্ত রফিক সেদিকে ভ্রুক্ষেপও করল না।

রফিক সবই বুঝল। কিন্তু প্রেম ফ্রেম আসলে তার সাথে যায় না। সে তার এই দুরন্ত জীবন নিয়ে যথেষ্টই সুখি ছিল। তাছাড়া একটা মেয়েকে গার্লফ্রেন্ড বানিয়ে নিজের জগতটাকে ছোট বানাবার কোনো ইচ্ছা ছিল না তার। নীলিমা তার কাছে বন্ধু হিসেবেই যথেষ্ট ভালো ছিল।

থার্ড ইয়ার ফাইনাল দিয়ে সেবার তারা বাড়ি ফিরে যাচ্ছিল। প্রতিবারের মতই একসাথে পাশাপাশি সিটে বসে। কোনো কারনে নীলিমা ছিল খুব ক্লান্ত,খুব একটা কথা বলছিল না। বাসে রফিকের কাধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ল নীলিমা। ।

ওয়াকম্যানে গান শুনতে শুনতে নীলিমার দিকে তাকালো রফিক। আর আচমকা তার দুনিয়া পালটে গেল। নিস্পাপ মুখে নীলিমা ঘুমাচ্ছে ওর কাধে মাথা রেখে। এতদিন মেয়েটার সাথে মিশছে,কিন্তু আজ রফিক খেয়াল করল সে কখন মেয়েটিকে ঠিক মত দেখে নি। এত নিস্পাপ আর পবিত্র যে রফিকের অন্তর আত্মা কেপে উঠল।

আর কি পরম নির্ভরাতায় ওকে পাশে রেখে ঘুমাচ্ছে! রফিকের মনে হল এই মেয়েটাকে ছাড়া তার জীবন অচল। সকালে ফোনে ঘুম থেকে ডেকে তোলা থেকে শুরু করে ঠিক সময়ে খাওয়া দাওয়া- সব কিছুর দেখ ভাল করে এই মেয়েটি। এই মেয়েটিকে ছাড়া ওকে পঙ্গুই বলা চলে। রফিক আনেক তৃপ্ত বোধ করল। মাঝে মাঝে কাউকে কাধে মাথা রাখতে দেয়ার মাঝেও অনেক বড় তৃপ্তি থাকে।

সেদিনের সেই পথচলাই যে শেষ পথচলা হবে তা কখনই ভাবতে পারেনি রফিক। জীবনটা সত্যিই বিচিত্র। রফিক আর নীলিমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি। ভ্যাকেশনের পুরা একমাস সে নীলিমা রফিকর সাথে কথা বলেনি। মোবাইল বন্ধ।

বাসায় গিয়েও দেখা মেলে না। রফিকের কষ্টের পূর্নতা মিলল ভার্সিটিতে গিয়ে। নীলিমাকে দেখতে পেল শেখরের সাথে। শেখরকে রফিক ভালো মতই চেনে। ভার্সিটির অন্যতম টপরেটেড প্লে বয়।

কত মেয়ে যে সে ধরল আর ছাড়ল তা সেই বলতে পারবে। মাত্র মাস সাতেক আগেই প্রথম বর্ষের এক মেয়ের সাথে হোটেলে পুলিশের কাছে ধরা খেয়েছিল বলে শোনা যায়। আর সেই ছেলের সাথে নীলিমা! অনেক চেষ্টা করল রফিক নীলিমাকে ফেরাতে। পারল না। মাঝে মাঝে নীলিমার সাথে ডেটিং থেকে ফিরে বন্ধুদের সাথে ওকে নিয়ে রসালো আলাপ করত শেখর।

লোকের মুখ ঘুরে সেগুলো শেষে কানে আসত রফিকর। দুরন্ত রফিক আস্তে আস্তে নিজেকে গুটিয়ে নেয়। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষ দিন গুলোয় অবশ্য নীলিমার সাথে আরেকজনকে দেখা গেলো। সেটা রফিকের কাছের বন্ধু সোহরাব! রফিক বুঝতে পারল,এভাবেই চলতে থাকবে নীলিমার জীবন......... #### প্রতি মাসের শেষ শুক্রবার বিকালে কবরটি জিয়ারত করতে যান ভদ্রলোকটি। বয়স মধ্য পঞ্চাশ।

অনেকক্ষন কবরের পাশে দাঁড়িয়ে থাকেন। গত ২০ বছর যাবত কখনও ব্যতিক্রম হয়নি। সবাই ভাবে,হয়ত ভদ্রলোকের স্ত্রীর কবর এটি। সবাই যা জানে না তা হলো,ভদ্রলোক বিয়েই করেন নি কখনও। সন্ধ্যা হতে শুরু করেছে,মাগরিবের আজান পড়ল বলে।

ছোট একটি চিরকুট কবরের পাশে গুজে উদাস মনে ভদ্রলোকটি ফিরে যান। আনমনে চিরকুটে লেখা কথা গুলি আউড়িয়ে চলেন, আমার প্রথম ভালোবাসা,নীলিমা। যেখানেই থাকো,ভালো থেকো। তোমার রফিক।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.