'আমা পানে চাও, ফিরিয়া দাঁড়াও, নয়ন ভরিয়া দেখি' আবেদ খান কালের কণ্ঠ থেকে পদত্যাগ করেছেন। খবরটা দেখছি বেশ আলোচনার খোরাকই যুগিয়েছে। ভালোই। বোঝা যায়, দেশের গণমাধ্যম নিয়ে মানুষ এখন অনেক সচেতন। নানাজন নানাভাবে দেখছেন।
কেউ আবেদ খানের পিঠ চাপড়াচ্ছেন, কেউ গুষ্ঠি উদ্ধার করছেন। আমি একটু ভিন্নভাবে বিষয়টিকে দেখার চেষ্টা করছি। আরেকটু তলিয়ে। তার আগে ব্লগারদের অনুরোধ করবো আমার আগের এই লেখাটি একটু পড়ে আসতে।
পদত্যাগের পর সব থেকে বড় যে প্রশ্নটি উঠেছে সেটি হলো, আবেদ খান এই দেড় বছর কি বুঝতে পারেননি যে তিনি কোন সর্বনাশের পথে রয়েছেন? তাহলে এই দেড় বছর পর সিদ্ধান্ত কেন?
একটু পেছন ফিরে তলিয়ে দেখি।
আবেদ খান তার সম্পাদক হিসেবে কাজ করার জীবনে কোনোদিনই কোথাও স্থায়ী হতে পারেননি। আপনাদের মনে আছে নিশ্চয়, যুগান্তর ছাড়ার পর তিনি একটি চমৎকার লেখা লিখেছিলেন। সেখানে তিনি বর্ণনা দিয়েছিলেন, কীভাবে গোলাম সারওয়ার বাবুলের হাত পা ধরে আবার যুগান্তরে ঢোকার পথ করে নিলেন। আর আবেদ খানকে বেরিয়ে আসতে হলো। সেই সময় আবেদ খানের ঘনিষ্ঠদের তিনি বলেছিলেন, ভদ্র মালিকা ছাড়া মিডিয়ার মালিক হলে এমনই হয়।
এরপর তিনি সমকালের সম্পাদক হলেন। মজার ব্যাপারটি হলো, যুগান্তরে থাকা অবস্থাতেই আবেদ খানের সঙ্গে সমকালের প্রকাশক এখনকার এফবিসিসিআই সভাপতি একে আজাদের সঙ্গে কথাবার্তা শুরু হয়। আবেদ খান সেই ভরসাতেই যুগান্তর ছাড়েন। এরপর সমকালে দীর্ঘদিন তিনি ভালোই ছিলেন। কিন্তু টিম লিডার হিসেবে অযোগ্য হলে সম্পাদককে যে অসৎ মানুষদের ওপর নির্ভর করতে হয়, সে কথার প্রমাণ তিনি দিয়েছিলেন সমকালেই।
সে কারণেই শেষ পর্যন্ত একে আজাদের সঙ্গে তার আর বনিবনা হলো না। মজার ব্যাপারটি এখানেও। সমকালে তাকে নিয়ে টানাহেচড়া অনেক দিন ধরে চললেও যখন তিনি একটা কাগজ করবেন বলে নিশ্চিত হলেন, তখনই বেরিয়ে এলেন। সমকাল ছাড়ার পরের দিন তিনি তার ঘনিষ্ঠদের বলেই দিয়েছিলেন, কালের কণ্ঠ নামের একটি পত্রিকা তিনি বের করতে যাচ্ছেন। পরে দেখা গেলো সেই ইনভেস্টরই বসুন্ধরা।
কাজেই নিশ্চিতভাবে বলা যায়, আবেদ খান কালের কণ্ঠ ছাড়ার আগেই একটি নতুন পত্রিকার প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ফেলেছেন। বাজারে ফিসফাসও আছে, ওরিয়নের কাগজ করতে যাচ্ছেন তিনি।
এবার আসুন বারবার কাগজ বদলের কারণটা কী? ভোরের কাগজ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত তিনি যে কটি কাগজে সম্পাদক ছিলেন, সবগুলোতেই তিনি অন্ধভাবে কিছু অযোগ্য মানুষকে সঙ্গে রাখতেন। এই অংশটিই সব সময় তাকে পথভ্রষ্ট করতে বড় ভূমিকা রাখে। বসুন্ধরার মতো ভূমিদস্যু গ্রুপের কাগজ বের করার জন্যও এরাই ছিলো আবেদ খানের প্রধান উস্কানিদাতা।
এদের মধ্যে কেউ দুদিন আগের হেলথ বিটের রিপোর্টার থেকে নির্বাহী সম্পাদক হয়ে গাড়ি হাঁকান, কেউ ঢাকার বাজার থেকে ইলিশ কিনে আবেদ খানের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে তার গ্রাম থেকে পাঠানো ইলিশ বলে ভুল বুঝিয়ে তার হৃদয়ে স্থান করে নেন। এইসব মানুষগুলোর আচরণ আর ভাবভঙ্গির কারণেই প্রতিটি হাইজেই প্রথম সংকটটা তৈরি হয়। এরপর তা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। একসময় আবেদ খান নিজেও তা আর সামাল দিতে পারেন না।
বাংলাদেশের সংবাদপত্রে আবেদ খানের পদত্যাগের এই ঘটনাটিকে অনেকে মাইলফলক বলছেন।
আমি একমত নই। কারণ তার এই পদত্যাগ কেবলমাত্র নৈতিকতা থেকে উৎসরিত নয়। যদি তা হতো তাহলে, প্রথমত তিনি তাদের সঙ্গে কাগজ করতে যেতেন না। দ্বিতীয়ত, গেলেও কিছুদিনের মধ্যেই মোহভঙ্গ হতো। কাজেই ব্যাপারটি আরো গভীরে।
মনে আছে নিশ্চয়, বসুন্ধরার সঙ্গেই গোলাম সারওয়ার নবযুগ নামের একটি পত্রিকা করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু কিছুদিন পর গোলাম সারোয়ার পালিয়ে বেঁচেছেন। সেই গোলাম সারোয়ার, যিনি বাংলাদেশের সংবাদপত্র জগতে প্রথম মালিককে উলঙ্গ হতে শিখিয়েছেন। যুগান্তরে যিনি বাবুলের জন্য যা তা ছেপেছেন। সেই গোলাম সারোয়ার যখন টিকতে পারেনি, তখন আবেদ খান তো কোন ছাড়! কাজেই আমি মনে করি না যে, আবেদ খানদের এমন নাটকে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে ইতিবাচক কোন ফল আসবে।
বরং আমি মনে করি, সাংবাদিকতায় এই টাউট জেনারেশনটাকেই আউট করে দিয়ে তরুণদের মধ্য থেকে টিম লিডার বের করে আনলেই কিছু হলেও হতে পারে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।