আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছোটবেলার উড়োজাহাজের স্মৃতি, বড়বেলাতে ও ছেলেমানুষী

রাজাকার মুক্ত বাংলাদেশ চাই ২৬-২৭ বছর আগের কথা। খুব ছোট বেলাতে আমরা তখন গ্রামে থাকতাম। আব্বা থাকতো বিদেশে। যে সময়ের কথা বলছি, আমার তখন বয়স মাত্র আড়াই বছর। সেই বয়সেই কোনো এক বিশেষ কারণে মায়ের সাথে আমার একবার বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ হয়েছিল।

দুবাই গিয়ে প্রায় ৩ মাস ছিলাম। আব্বুর নানা বন্ধু, শুভাকাংকীরা দেখা করতে আসতো। সাথে ছিলো নানা রকম উপহার, আর আমি ছোট বলে অনেক খেলনা ও পেতাম। অনেকগুলো খেলনার মধ্যে যেটা আমার মন কেড়েছিলো, সেটা ছিলো একটা খেলনার উড়োজাহাজ। প্রায় ২ ফুট লম্বা, অনেকগুলো ব্যাটারী দিয়ে চালাতে হতো , দেখে সত্যিকারের একটা প্লেনের মডেলের মত মনে হতো।

প্লেনটা চালু করলে কিছুক্ষণ রানওয়ের মত চাকা দিয়ে চলে ৩-৪ ফিট উপরে উঠে যেত, আবার আস্তে আস্তে নিচে নামতো, অবিকল সত্যিকারের প্লেনের মতও , এর সাথে শব্দও করতো সত্যিকারের প্লেনের ইন্জিনের মত। কিন্তু কোনো রিমোট ছিলোনা ওটাতে। সব খেলনা নিয়ে একসময় দেশে আসলাম, দেশে মানে গ্রামের বাড়ীতে। যৌথপরিবারে থাকতাম, জেঠা, চাচা, জেঠাতো ভাই, সবাই বড় বড়। আব্বা যেহেতু বিদেশে থাকতো, তাই তারাই ছিলো পরিবারের অভিভাবক।

একসময় আমার সেই প্লেনটা তাদের নজরে পড়লো। তারা বুঝতে পারলো, এই প্লেনটা মাটিতে চালালে চাকা নষ্ট হয়ে যাবে, তখন এটা ভ্যালুলেস হয়ে যাবে। তাই শহর থেকে এক কাস্টমার ডেকে এনে বিক্রি করে দিলো সেটা। আমার বয়স তখন তিন বছরও হয় নাই, প্রতিবাদ কি জিনিস, সেটা বুঝার আগেই আমার প্রিয় খেলনাটা হাতছাড়া হয়ে গেল। খুব মন খারাপ হয়ে গেল, এর পর থেকে আর কখনো খেলনা দিয়ে আমি খেলি নাই।

কখনো কারো কাছে আবদার ও করি নাই, আমাকে কোনো খেলনা কিনে দেওয়ার জন্য। কিন্তু সেই উড়োজাহাজের স্মৃতি এখনো ভুলি নাই। ছোট বেলাতে যখন কোনো প্লেনের শব্দ শুনতাম, জানালার কাছে গিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখতাম। যতক্ষণ দেখা যেত, একদৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখতাম। আর বড়বেলাতে? কোন প্লেন ৪ ইন্জিনের, কোনটা ২ ইন্জিনের, কোনটা কোন এয়ারলাইন্সের, এই সব দেখার চেষ্টা করি।

যেমন, এমিরেটস এর সব প্লেনের নিচে লাল কালিতে এমিরেটস লিখা থাকে, একই রকম ভাবে বুঝার চেষ্টা করি যখন কোনো প্লেন খুব নিচু দিয়ে উড়ে যায়। এখনো দেখি আমি। আমার প্লেন দেখা যেন শেষ হয় না। এটা নিয়ে আমার বউ হাসাহাসি করে। আমি নাকি খুব চাইল্ডিস হয়ে যাই প্লেন দেখলে।

এমন না যে, আমি এর পরে আর কখনো প্লেনে চড়ি নাই, তা নয়। বড় হয়ে আর বেশ কয়েকবার প্লেনে চড়ার সুযোগ হয়েছিলো, কিন্তু পুরোনো সেই স্মৃতি ভুলতে পারি না।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।