[গত ১৬ জুন কনকো-ফিলিপস এর সাথে সমুদ্রের গ্যাসব্লক নিয়ে মহাজোট সরকারের বিশ্বাসঘাতকতামূলক চুক্তির প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি'র বক্তৃতার পরিমার্জিত অনুলিখন। ]
জনগণের বিরাট অংশের নিঃশ্চতেনার সুযোগ নিয়ে আজ যে চুক্তি করা হলো, তার মধ্য দিয়ে এই দেশ, দেশের জনগণের ভবিষ্যতকে ঠেলে দেয়া হয়েছে এক ভয়াবহ পরিণামের দিকে। আজ ১৬ জুন, ২০১১ বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কালো অধ্যায়ের সূচনা করা হলো। সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্য ও দখল লুন্ঠনের এক নতুন যুগে প্রবেশ করলো বাংলাদেশ।
ঠিক এ কারণেই এই কালো দিনকে বাংলাদেশের ভবিষ্যত রাজনৈতিক সমীকরণে এক গূরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
পাল্টে দিতে হবে বিগত সমস্ত অনুমান, বিদ্যমান সকল পরিচয়ের সীমা, ভেঙে দিতে হবে প্রতিষ্ঠিত সকল ভাবমূর্তিকে। ‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি’ বলে বিদ্যমান রাজনীতির এতদিনকার যে সমীকরণ, যাদের এখনো সেই সমীকরণে মোহ আছে, আজ সেই মোহ ঝেটিয়ে বিদায় করার দিন, সেই সমীকরণ পাল্টে দেয়ার দিন। কারা জনগণের পক্ষে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে, আর কারা জনগণের সরাসরি শত্রু , মীরজাফর আর নব্য রাজাকার, বর্তমান কালে তার বিচারের নিয়ামক ঘটনা ঘটে গেছে।
এই চুক্তি যে কোন মামুলি ঘটনা নয়, সে বিষয়ে বিশদ যুক্তিতর্ক শুরু থেকেই করা হয়েছে। লুণ্ঠনের দায়ে বিভিন্ন দেশ থেকে বিতারিত, ‘দুর্ঘটনার রাজা’ মার্কিন বহুজাতিক কনকো-ফিলিপসের হাতে সমুদ্রের গ্যাসব্লক তুলে দেয়ার ফলে যে কেবল গ্যাস সম্পদই নয়, অন্যান্য আরও যে সব সম্পদ পাওয়া যাবার সম্ভাবনা, তা সমেত পুরো সমুদ্র এলাকার সার্বভৌমত্বই সম্পূর্ণত বেহাত হবে, সেটা স্পষ্ট করে বারবার আমরা দেখিয়ে দিয়েছি।
শুধু তাই নয়, এর মাধ্যমে মার্কিন নেতৃত্বাধীন তথাকথিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সমীকরণে এই অঞ্চলে মার্কিন-ভারত অক্ষশক্তির যে ভূমিকা, তার পদতলে যে বাংলাদেশ নিক্ষিপ্ত হবে, সেই সতর্কবাণীও উচ্চারণ করেছি সুনির্দিষ্ট ভাবে। এমনিতেই আমাদের ভূখণ্ডের দ্বিগুণ পরিমান এলাকা বঙ্গোপসাগরে আমাদের ন্যায্য হিস্যায় এখনও সার্বভৌমত্বই প্রতিষ্ঠিত হযনি। ভারত, মিয়ানমার বিরাট এলাকা দখল করে আছে। জাতিসংঘের আদালতে এ নিয়ে যথাযথ লড়াই সম্পন্ন না করে উল্টো এই চুক্তি সম্পাদন যে আমাদের ঘোর অন্ধকারের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাবে সেই অনিবার্যতার কথাও তুলে ধরেছি জোর দিয়ে। কিন্তু সব কিছুই উপেক্ষা করা হলো।
সচেতন জনগণের শত প্রতিবাদ, এমনকি নিজেদের আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং পায়ে ঠেলে ‘নতুন দিগন্তের সূচনা’, ‘নতুন মাইলফলক’ অভিধা দিয়ে এ কালের বেঈমানরা ইতিহাসে নিজেদের নাম লেখালেন। দেশ, জাতি ও জনগণের সাথে এই চরম বিশ্বাসঘাতকতার তুলনা তাই কেবল মীর জাফর আর রাজাকারদের দুঃষ্কৃতির সঙ্গেই হতে পারে।
আওয়ামী লীগ-জাতীয় পার্টির নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার এই চুক্তি করেছে। অতএব দায় তাদের নিতেই হবে। কিন্তু বিএনপি-জামাত জোট কেবল এ বিষয়ে নিশ্চুপই ছিল না, জনগণের মনোযোগকে অন্যত্র সরিয়ে দিয়ে যে ভাবে চুক্তি সম্পাদনে সহায়তা করেছে, তাতে দায় তাদেরও কোন অংশে কম নয়।
কমিশন আর মসনদের নিশ্চয়তায় দেশ বিক্রির এই মহোৎসব বাংলাদেশের ইতিহাসে তাদের রাজনৈতিক ঠিকানা নতুন করে নির্ধারণ করবে। ‘মুক্তিযুদ্ধের চ্যাম্পিয়ন’ দল আর ‘স্বাধীনতার ঘোষক’ দাবি নিয়ে আর পার পাওয়া যাবে না। পার পাওয়ার কোন সুযোগ কি আমরা দিতে পারি?
এটা ঠিক যে, বাংলাদেশের জনগণ আরেকবার পরাজিত হয়েছে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র ও ভূখণ্ড আমরা অর্জন করলেও শুরু থেকেই জনগণের আকাঙ্ক্ষা পরাজিত হয়েছিল। জনগণের আকাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্র, সংবিধান ও সমাজ গড়ে ওঠেনি।
চল্লিশ বছর ধরে সেই পরাজয়ের ধারাবাহিকতাতেই আমরা আজ আবার নতুন করে পরাজিত হলাম। কিন্তু এই পরাজয়ের স্মৃতি যেন আমরা কিছুতেই ভুলে না যাই। চল্লিশ বছর ধরে এই পরাজয়ের স্মৃতি ভুলিয়ে দিয়ে আমাদেরকে যে নিঃশ্চেতন ও জড়তে পরিণত করা হয়েছে, ওরা ভেবেছে এটা চিরকাল স্থায়ী হবে। ওরা ভেবেছে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে, জ্ঞানচর্চাকে নির্বাসনে পাঠিয়ে দিয়েই আমাদের মাথা ও চোখ বন্ধ রাখা যাবে। ওরা ভেবেছে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে চুরি-দুর্নীতি ছড়িয়ে দিয়েই মানুষকে ভেতর থেকে পঙ্গু করে দিতে পারবে।
ওরা ভেবেছে অর্থ, ত্রাস আর বিদেশী প্রভুদের নেক নজরই তাদের দ্বিদলীয় পরিবারতান্ত্রিক মসনদের নিরাপত্তা দেবে। ওরা ভেবেছে চেতনানাশক মিডিয়ার ভেল্কিবাজিই সব কিছুর নিয়ন্তা থাকবে।
কিন্তু সবকিছুর পরও ইতিহাস থেকে যায়। ইতিহাসের মৃত্যু ঘটানোর সাধ্য কারো নেই। আর এই ইতিহাসের ভেতর থেকেই জন্ম নেয় নতুন মানুষ।
এই নতুন মানুষের বিজয়রথ রুখবে কে? সে কারণে আজ আমাদের নতুন শপথ নেয়ার দিন। পরাজয়ের দগদগে স্মৃতি সর্বত্র ছড়িয়ে দিয়ে জনগণকে জাগিয়ে তোলার নতুন প্রত্যয় ঘোষণার দিন। আসুন, বিজয়ের সেই নতুন সোপান আমরা রচনা করি।
নোট: বক্তৃতাটি পাঠ করে ভালো লেগেছে। তাই শেয়ার করলাম।
আরো বন্ধুরাও হয়তো এইটি পাঠ করে তাদের মূল্যবান মতামত আদান-প্রদান করতে পারবেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।