আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমাদের সংস্কৃতি জগতে পরিবারতন্ত্র ! ..৫

আগের পর্ব- Click This Link ২০০২ সালে এক কাজে ফরিদপুর যাই। ডিসি সাহেবের রুমে বসে পুরনো ডিসিদের তালিকা দেখতে দেখতে চোখ আটকে গেলো একটি নামে-খান বাহাদুর আবদুল হালিম চৌধুরী। তিনি ফরিদপুরের (এখনকার বৃহত্তর ফরিদপুরের ৫ জেলা মিলে ছিলো তখনকার ফরিদপুর) জেলা প্রশাসক ছিলেন ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত। ঘটনাক্রমে ২০০২ সালের ডিসি ইসমাইল জবিউল্লাহ (পরে সচিব হয়ে অবসরে গেছেন) আর খান বাহাদুর সাহেবের বাড়ী একই জেলায়-বৃহত্তর নোয়াখালীর লক্ষ্মীপুর। খান বাহাদুর সাহেব পিতা হিসাবেও ছিলেন সার্থকনামা- ১৪ ছেলে মেয়ে।

সবার বড়ো জনের নাম কবীর চৌধুরী। বিশিষ্ট লেখক ও শিক্ষাবিদ। বর্তমানে জাতীয় অধ্যাপক। মেঝ ছেলের নাম মুনীর চৌধুরী। কিংবদন্তী অধ্যাপক, নাট্যকার,লেখক।

আমাদের শ্রেষ্ঠ শহীদ বুদ্ধিজীবীদের একজন। মুনীর চৌধুরীর স্ত্রী লিলি চৌধুরী নাটকে অভিনয় করতেন। তাঁদের ছেলে আশফাক মুনীর ১৬ মিটার মুভি ক্যামেরায় আমাদের দেশের সেরাদের একজন। এস এম সুলতানের জীবনীভিত্তিক তারেক মাসুদের 'আদমসুরত' ছবির ধারাবর্ণনা দিয়েছেন আশফাক মুনীর। খান বাহাদুরের কনিষ্ঠ সন্তানের নাম ফেরদৌসী মজুমদার-আমাদের সেরা মঞ্চ ও টিভি অভিনেত্রীদের একজন।

তাঁর বর রামেন্দু মজুমদার বেতার টিভির এককালের বিখ্যাত সংবাদ পাঠক, মঞ্চনাটক আর নাট্যশিক্ষার গুরু। তাঁদের কন্যা ত্রপা মজুমদার আর তার বর আপন আহসানও নাট্যজগতে প্রতিষ্ঠিত। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকায় যে সোনালী নামগুলো আছে তাঁদের মধ্যে দুই সহোদরের থাকার নজীর মাত্র একটি-শহীদুল্লাহ কায়সার আর জহীর রায়হান। ঘটনাক্রমে খানবাহাদুরদের মতো এরাও বৃহত্তর নোয়াখালীর লোক। বর্তমান জেলা ফেনী।

শহীদুল্লা কায়সারের সারেং বৌ কিংবা সংসপ্তক দেখে আবেগাপ্লুত হননি এমন মানুষ কম পাওয়া যাবে। শহীদের স্ত্রী পান্না কায়সার এবং কন্যা শমী কায়সার আমাদের সংস্কৃতি জগতের পরিচিত মুখ। জহীর রায়হান প্রথমে বিয়ে করেছিলেন অভিনেত্রী সুমিতা দেবীকে। তাঁদের পুত্র অনল রায়হানও সংস্কৃতি জগতের চেনা মুখ। জহীর পরে বিয়ে করেছিলেন আরেক অভিনেত্রী সুচন্দাকে।

সুচন্দার বোন ববিতা আর চম্পা আমাদের শীর্ষ চলচ্চিত্র অভিনেত্রী। ববিতা সত্যজিত রায়ের ছবিতে আর চম্পা গৌতম ঘোষের ছবিতেও কাজ করেছেন। এখনকার নামী চিত্রনায়ক রিয়াজ সম্পর্কে এদের ভাই হন। সারা জাকের আর আলী জাকেরের প্রেম কাহিনী নিয়ে কিছুদিন আগেই টিভি চ্যানেলগুলোতে বিজ্ঞাপন দেখেছেন সবাই। মঞ্চ আর টিভি নাটকে অভিনয় ছাড়াও সংস্কৃতির নানা ক্ষেত্রে তাঁদের সরব বিচরণ।

তাঁদের পুত্র ইরেশ জাকের এখন সংস্কৃতি জগতে সুপরিচিত। সারার মামী ড. সিদ্দিকা কবীর তাঁর রেসিপির জন্য রীতিমতো তারকা বনে গেছেন। ড. ইনামুল হক আর লাকী ইনাম দীর্ঘদিন ধরে আমাদের অভিনয় জগতে আলো ছড়িয়ে চলেছেন। তাঁদের কন্যা হৃদি হক আর প্রৈতি হকও মিডিয়া জগতে চেনা মুখ। হৃদির বর লিটু আনাম আর প্রৈতির বর সাজু খাদেম স্বনামেই পরিচিত।

লাকী ইনামের ছোট ভাইয়ের বউ হলেন আমাদের নামী গায়িকা শাকিলা জাফর। আবুল হায়াত ছিলেন ঢাকা ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী। অভিনয়ের টানে চাকরী ছেড়ে দেন। চলচ্চিত্র আর নাটকে আমাদের সেরা অভিনেতাদের একজন তিনি। তাঁর দুই কন্যা বিপাশা আর নাতাশা জনপ্রিয় অভিনেত্রী এবং তাদের বর (যথাক্রমে) তৌকির আহমেদ ও শাহেদ শেরিফ খান আমাদের দুই জনপ্রিয় অভিনেতা।

গতকাল নাট্যজন আতাউর রহমানের সত্তর বছর পূর্তিতে সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে। তাঁর ভাই মুজিবুর রহমান দিলুও শক্তিমান অভিনেতা। ড. হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের অধ্যাপক। এ বিষয়ে বাংলায় একটি বইও লিখেছেন তিনি। আমাদের বইয়ের আলমারীতে এক সময় পশ্চিম বাংলার বইয়ের রাজত্ব ছিলো।

সেই অবস্থা বদলে বাংলাদেশের লেখকদের বই ঢোকানোর মূল কারিগরদের শীর্ষ নামটি হুমায়ূন আহমেদ। নাট্যকার, চলচ্চিত্র পরিচালক হিসাবেও তিনি তুমুল জনপ্রিয়। তার স্ত্রী শাওনও অভিনেত্রী এবং কণ্ঠশিল্পী। হুমায়ূনের ভাই ড.মুহাম্মদ জাফর ইকবাল অধ্যাপনা, গবেষনা, বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করার আন্দোলন আর লেখালেখিতে এক সমীহজাগানিয়া নাম। তাঁদের আরেক ভাই আহসান হাবীব চিত্রশিল্পী।

তাঁর সম্পাদিত ম্যাগাজিন উন্মাদ খুবই জনপ্রিয়। সম্প্রতি হুমায়ূনদের মা আয়েশা ফয়েজ আত্মজীবনীমূলক বই ''জীবন যখন যেমন'' লিখে বাজীমাত করে দিয়েছেন। (চলবে) পরের পর্ব- Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.