আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভিটামিন এ ক্যাপসুল গুজব এবং যে অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে

পৃথিবীতে এখনো ভাল মানুষের সংখ্যাই বেশি বাসার দুই পিচ্চিকে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়েছে। তাদের কোন রকম সমস্যা হয় নি। এলাকায় আরো অনেক শিশুকে খাওয়ানো হয়েছে। তারাও দিব্বি সুস্থ আছে। গুজবের ডালপালা মেলার পরে পাশের বাসার এক মা বার বার ছেলেকে জিজ্ঞেস করতে থাকে, শরীর খারাপ লাগে কি না।

মায়ের প্যানিকড অবস্থা দেখে কি না জানি না, পিচ্চি জানিয়ে দেয় শরীর খারাপ। একটু বমি বমি লাগে। অন্যান্য ফ্যামিলিতেও বাচ্চাদের জেরা করা হয়। তবে এমন আর বের হয় নি। বেলা বাড়তে থাকে, আর সেই সাথে গুজবও।

কোথাও বাচ্চা মারা গেছে, কোথাও মহামারী, কোথাও হস্পিটাল শিশুতে ভর্তি এমন কত কি। শিশু যে ভর্তি হয় নি এমন না। শিশুবিশেষজ্ঞ এক ভাই হাসপাতাল থেকে জানাল, এমন রোগী আসছে। সবই ঐ বমি বমি উপসর্গ। এগুলো একজন দুইজনের হতেই পারে।

কোন সিরিয়াস কিছু না। মারা যাওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না। ভিটামিন এ ফ্যাটে দ্রবীভূত হয় এমন ভিটামিন। কাজেই এটি হজমের জন্য ভরা পেটে খেতে হয়। নতবা পেটের কিচু সাময়িক সমস্যা হতে পারে।

যেমন, বমি হওয়া, বমি বমি ভাব, ব্যাথা এরকম কিছু। তাতেও আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, বাচ্চাকেও আতঙ্কিত করা উচিত না। স্যালাইন বা জুস খাইয়ে বিশ্রাম করানো উচিত। এই গুজব সৃষ্টি, আতঙ্ক ছড়ানো, শিশুদের সাময়িক সমস্যা – এসবের জন্য প্রথমে দোষ দিব সরকারকে। একে তো এই ক্যাম্পেইন আগে থেকেই বিতর্কিত, তার উপর ভিটামিন এ নিয়ে কোন রকম তথ্য প্রচারও হয় নি।

এই ভিটামিন খাওয়ার নিয়ম, পরবর্তীতে যে সাময়িক সমস্যা হতে পারে, তা অনেক পিতামাতাই অবহিত নন। তাছাড়া আস্থা অর্জন না করে এমন স্পর্শকাতর ক্যাম্পেইন নিয়ে উল্টোটা ছড়ালে বরং অপূরণীয় ক্ষতি হয়। পিতামাতার কাছে সন্তানের চেয়ে আপন কিছু নেই। এই ক্যাপসুল সম্পর্কেও তাদের বিন্দুমাত্র ধারণা নেই। ফলে যখন গুজব ছড়ালো এটা খেয়ে বাচ্চারা মারা যাচ্ছে, তাদের মনের উপর কি পরিমান ঝড় গেছে ভাবা যায়? হোক গুজব, হোক সাময়িক সমস্যা, কিন্তু মানসিক ধকল তো কম না।

বিশেষ করে গ্রামের স্বল্পশিক্ষিত অঞ্চলে এই গুজব বেশি পরিমানে প্রভাব ফেলেছে। এখন যে অপূরণীয় ক্ষতিটা হবে, ভবিষ্যতে অনেক পিতামাতা সন্তানের টিকা দিতে দ্বিধা করবে। একমাত্র টিকার কারণে দেশ থেকে গুটি বসন্ত বিদায় নিয়েছে। টিকার কারণে অসংখ্য শিশু বেচে যাচ্ছে মারাত্মক সব রোগ থেকে। পোলিও প্রায় নির্মূলের পথে।

এখন যদি পিতামাতারা এই ক্যাম্পেইন থেকে সরে আসে তাহলে শিশুস্বাস্থ্যে নিশ্চিত ধ্বস নামবে, যার ভয়াল নেতিবাচক প্রভাব পড়বে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে। এই ক্যাপসুল আবার ভারতীয় কোম্পানী হওয়ায় গুজবে একদম সোনায় সোহাগা হয়েছে। সবচে বেশি সুবিধা পেয়েছে জামাতশিবির। তারা একেবারে কোলে তুলে গুজবটি সাজিয়ে গুছিয়ে যতটা সম্ভব আওয়ামী বিরোধী হিসেবে উপস্থাপন করেছে। দিনভর তারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে গেছে, যার প্রমান ওদের মিডিয়া আর পেজগুলো।

মানুষের মধ্যে আওয়ামী বিদ্বেষ তাতিয়ে দিলেই কি পাপ ধুয়ে যাবে রে ছাগুর দল? রাজনীতিতে যা খুশী হোক গে। কিন্তু যে নিষ্পাপ শিশুটা এই গুজবের কারণে ভবিষ্যতে টিকা না পেয়ে কোন একটা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাবে সেজন্য দায়ী হবে কে? সবশেষে সবার প্রতি অনুরোধ, গুজবে কান দিবেন না। আজকে ১০০ জন শিশুকে আইসক্রিম খাইয়ে পরে খোজ নিলে দেখবেন, এক দুই জনের হয়ত পেটে ব্যাথা, কিংবা ডাইরিয়া কিংবা বমি। তার মানে এই না যে আইসক্রিম খাওয়ানোর ফলে তা হয়েছে। ভিটামিন এ এর ক্ষেত্রেও এমন হয়েছে।

আজকে বাচ্চারা অন্য কারণে অসুস্থ হলেও ভিটামিন এ কে দোষারোপ করা হয়েছে। ভিটামিন এ এর কারণে যদি বমি বমি ভাব হয় সেটাও একদম সাময়িক। আমার বাসার পাশে সেই বমির কথা বলা বাচ্চাটি এখন দিব্যি সুস্থ আছে। বাচ্চাদের সুস্থসবল রাখার জন্য টিকা এবং ভিটামিনের ডোজ অত্যন্ত জরুরী। অভিভাবকদের এসব নিশ্চিত করা শিশুদের জন্মগত অধিকার।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.