ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা রুমানা মনজুরকে নির্যাতনের ঘটনায় স্বামী হাসান সাঈদকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গতকাল বুধবার দুপুরে রাজধানীর মুগদা এলাকা থেকে গ্রেপ্তারের পর বিকেলে মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি করা হয় সাঈদকে। পুলিশ জানায়, বিভ্রান্তিকর কথা বলে সাঈদ নিজের দোষ অস্বীকার করার চেষ্টাও করছেন। সাঈদ সাংবাদিকদেরও বলেছেন, হাতাহাতির একপর্যায়ে তাঁর চশমা পড়ে যায়। এরপর কী থেকে কী হয়েছে, তা তিনি জানেন না।
এদিকে হাসান সাঈদকে কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না, এর ব্যাখ্যা চেয়ে গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় স্বপ্রণোদিত হয়ে একটি রুল জারি করেন হাইকোর্ট। তাতে পুলিশের ধানমণ্ডি সার্কেলের সহকারী কমিশনার (এসি), ধানমণ্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও তদন্ত কর্মকর্তাকে আজ বৃহস্পতিবার ১০টায় আদালতে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে। এর চার ঘণ্টার মধ্যেই ডিবি পুলিশ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুমানার স্বামীকে গ্রেপ্তার করে।
ডিবি পুলিশের উপকমিশনার (ডিসি) মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, হাসান সাঈদকে গ্রেপ্তার করতে তাঁদের একাধিক টিম মাঠে নামে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সিনিয়র সহকারী কমিশনার শহীদুল্লাহর নেতৃত্বে একটি দল চট্টগ্রামে এবং সহকারী কমিশনার আহাদের নেতৃত্বে আরেকটি দল রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায়।
বুধবার দুপুর সোয়া ২টার দিকে উত্তর মুগদার এক আত্মীয়ের বাসা থেকে ডিবির টিম সাঈদকে গ্রেপ্তার করে। আত্মগোপন করতে সকালেই সাঈদ চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার এসে এই বাসায় ওঠেন।
ডিবি কার্যালয়ে উপস্থিত সাবংবাদিকদের কাছে রুমানা মনজুরকে নির্যাতনের কথা অস্বীকার করেন হাসান সাঈদ। তাঁর দাবি, রুমানা নিজেই তাঁর চোখ ও নাক ক্ষতবিক্ষত করেছেন। সাঈদ বলেন, রুমানা পড়াশোনার জন্য ২৭৩ দিন কানাডায় কাটিয়ে গত মাসের ১২ তারিখ দেশে ফেরেন।
ওখানে থাকাকালে তারেক বিন নাভিদ নামের ইরানি এক যুবকের সঙ্গে রুমানার সম্পর্ক গড়ে ওঠে বলেও সাঈদ দাবি করেন। দাবির পক্ষে যুক্তি হিসেবে সাঈদ বলেন, রুমানা কানাডা গিয়ে তাঁর সঙ্গে খুব বেশি যোগাযোগ রাখতেন না। ফোনে যোগাযোগ হলেও বেশিক্ষণ কথা বলতে চাইতেন না। রুমানা মেয়ের সঙ্গেও সাঈদকে কথা বলতে দিতেন না বলে তিনি দাবি করেন। সাঈদ বলেন, দেশে ফেরার পর এ নিয়ে বেশ কয়েকবার বাগ্বিতণ্ডা হয় তাঁদের মধ্যে।
সাঈদের দাবি, রুমানা দেশে ফেরার পর বেলের শরবতের সঙ্গে ১১০টি ঘুমের ট্যাবলেট খাওয়ায়। এতে অসুস্থ হয়ে ল্যাবএইড হাসপাতাল চিকিৎসা নিতে হয় তাঁকে। এতে তাঁর দৃষ্টিশক্তি কমে যায়। এখন তিনি মাত্র ৫ শতাংশ দেখতে পান।
ঘটনা সম্পর্কে সাঈদ দাবি করেন, ওই দিন সকালে রুমানার ফেইসবুক অ্যাকাউন্টের ফ্রেন্ডলিস্ট থেকে ইরানি ওই যুবকের নাম ডিলিট করেন তিনি।
এ নিয়ে তাঁদের দুজনের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এরপর কী হয়েছে, তা আর তিনি জানেন না।
মাত্র ৫ শতাংশ দেখতে পেলেও ফেইসবুকের অ্যাকাউন্ট দেখলেন কী করে_এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, \'ম্যাগনিফায়িং গ্লাস দিয়ে দেখেছি। \' এ ছাড়া রুমানা কোনো ধরনের বৃত্তি নিয়ে কানাডায় যায়নি বলে তিনি দাবি করেন। সাঈদ বলেন, ১১ বছর আগে বিয়ে করেছেন।
বিয়ের আগে তাঁদের সাত বছর প্রেম ছিল। কখনোই বেকার ছিলেন না বলে দাবি করে সাঈদ জানান, বিভিন্ন গাড়ি ছাড়াও অন্য ব্যবসা ছিল তাঁর। সংসারে অনেক খরচ বহন করতেন তিনি। আইনের প্রতি শ্রদ্ধার কথা জানিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, গতকাল বুধবার আদালতে গিয়ে আত্মসমর্পণ করার পরিকল্পনা ছিল তাঁর।
পুলিশের উপকমিশনার মনিরুল ইসলাম আরো বলেন, সাঈদ একাধিকবার তাঁর স্ত্রী রুমানাকে হত্যার চেষ্টা করেছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে তথ্য পাওয়া গেছে।
ন্যায়বিচারের স্বার্থে পুলিশ অবশ্যই এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করবে। নানা কারণে সাঈদ হতাশাগ্রস্ত ছিলেন। এর আগেরও স্ত্রীকে মারধর করার নজির আছে। রুমানাও মারধর করেন বলে সাঈদ দাবি করেছিলেন। কিন্তু তাঁর শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
নানা ধরনের কথা বলে সাঈদ নিজের দোষ অস্বীকার করার চেষ্টা করছেন বলেও জানান ডিসি মনিরুল।
গত ৫ জুন বাবার বাসায় স্বামী হাসান সাঈদের পাশবিক নির্যাতনের শিকার হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুমানা মনজুর। প্রথমে ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। সেখান থেকে মঙ্গলবার তাঁকে ভারতে নেওয়া হয়। ঘটনার পর থেকে স্বামী সাঈদ পলাতক ছিলেন।
ঘটনার পরদিন রুমানার বাবা মনজুর হোসেন ধানমণ্ডি থানায় হাসান সাঈদকে আসামি করে মামলা করেন। এরপর সাঈদ গা ঢাকা দেন। চিকিৎসকরা বলছেন, রুমানার একটি চোখ পুরোপুরি নষ্ট হয়েছে। আরেক চোখের দৃষ্টিশক্তি নিয়েও আশঙ্কা রয়েছে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।