আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সবারই সহ্যের সীমা থাকে, আমাদের একটু বেশীই... তারপরও আমরা মানুষ... সবার এটা মনে রাখা উচিৎ

গত ০১-০৬-১১ইং তারিখ, সময় আনুমানিক রাত ১০-৪৫ এ রোগী দিব্যজ্যোতি সাহা, বয়স ১৪ বছর,পিতা-গৌতম সাহা, মমেকহা মেডিসিন ইউনিট-২ (১৪নং ওয়ার্ড) এর অধীনে ভর্তি হন। ভর্তিকালীন সময়ে রোগীর ৭ দিনের জ্বর (১০৩°ফা), শ্বাসকষ্ট ও বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে আসেন। উপস্থিত ডিউটি ডাক্তার রোগীকে তাৎক্ষণিক ভাবে পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষণ এর মাধ্যমে তার শারীরিক অবস্থার অবনতির আশঙ্কা থাকার বিষয়টি তখনই রোগীর স্বজনদের অবহিত করেন। উল্লেখ্য যে আশঙ্কাজনক রোগীকে মূল ওয়ার্ড থেকে অনেক দূরে অবস্থিত পেয়িং ওয়ার্ডে স্থানান্তর করাকে রোগীর স্বার্থেই নিরুৎসাহিত করা হয়। তথাপি ১৪ নং ওয়ার্ডের বিছানা খালি না থাকার অজুহাতে রোগীর স্বজনরা ডাক্তারদের নিষেধ সত্ত্বেও রোগীকে পেয়িং ১৯ নং ওয়ার্ডে নিয়ে যায়।

এমতাবস্থায় কর্তব্যরত চিকিৎসকগণ মূল ওয়ার্ড থেকে নিয়মিত ভাবে পেয়িং ওয়ার্ডে গিয়ে রোগীর শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ ও যথাযথ চিকিৎসা করতে থাকেন। বুকের এক্স-রে তে রোগীর Pneumonic Consolidation ধরা পড়ে এবং পরবর্তীতে এর সাথে Severe Diarrhoea যুক্ত হয়। গত ০৩-০৬-১১ইং তারিখ, শুক্রবার, আনুমানিক সন্ধ্যা ৬টায় রোগীর স্বজন রোগীর অবস্থা খারাপ বলে জানালে ডিউটি ডাক্তার তাঁর সহকর্মী আরেকজন ডাক্তারসহ রোগীর কাছে যান। তাৎক্ষণিক ভাবে রোগীর স্বজনরা ডাক্তারদের উদ্দেশ্যে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। রোগীর চিকিৎসার স্বার্থে হাসপাতালের কাগজপত্র চাওয়া হলে তারা তা দিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং ডাক্তারদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে এই মর্মে সব কাগজপত্র নিয়ে যায়।

ডাক্তার বাধ্য হয়ে কাগজপত্র না দেখেই তাৎক্ষণিক পর্যবেক্ষণ এর ভিত্তিতে চিকিৎসা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ডাক্তার দেখতে পান রোগীর নাক মুখ দিয়ে স্যুপ বের হচ্ছে এবং রোগীর এক স্বজন স্যুপের বাটিসহ পাশে বসে আছে। উল্লেখ্য রোগীর চিকিৎসার অংশ হিসেবে মুখে খাওয়ানো কড়াকড়িভাবে নিষেধ ছিল। স্যুপ খাওয়ানোর ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তারা পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দেয়। উপরন্তু এক স্বজন শোয়া অবস্থায় স্যুপ খাওয়ালে অসুবিধা কি –এই প্রশ্ন তুলে ডাক্তারের সাথে বাকবিতন্ডা শুরু করে।

যে রোগীর মুখে খাওয়াই নিষেধ ছিলো, তাকে শুধু যে খাওয়ানো হয়েছে তাই নয়, শোয়া অবস্থায় খাইয়ে রোগীকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে তারই স্বজনেরা। এ ব্যাপারে ডাক্তার কৈফিয়ত চাইলে রোগীর স্বজনরা আরো ক্ষেপে যায় এবং সব দোষ ডাক্তারের বলে উপস্থিত মহিলা ডাক্তারসহ দুইজন ডাক্তারকেই শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। ডাক্তারদের মারধর করার একপর্যায়ে তারা মহিলা চিকিৎসকের অ্যাপ্রন ছিঁড়ে ফেলে এবং স্টেথোস্কোপ ছুঁড়ে ফেলে দেয়। কর্তব্যরত নার্সের উপরও তারা হামলা চালায়। এরপর উল্লিখিত দুইজন ডাক্তারকে তারা জিম্মি করে রাখে।

জিম্মি ডাক্তাররা সিনিয়র ডাক্তারদের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে মোবাইল ফোন কেড়ে নেয় তারা এবং প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে রোগীর শিরাপথে স্যালাইন মিনিটে ১০ ফোঁটা হিসেবে দেওয়া ছিল যা পরবর্তীতে অনেক বেশি গতিতে চলতে দেখা যায়; কিভাবে এই গতি বাড়লো তা ডাক্তার বা নার্স কারোরই জানা ছিলো না এবং রোগীর স্বজনরা এ বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হয় নি। শুইয়ে স্যুপ খাওয়ানোর কারণে Aspiration Pneumonia এবং বেশি গতিতে স্যালাইন চলার কারণে Pulmonary Oedema উভয়ই রোগীর অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটায়। সুস্পষ্টভাবেই বলা যায়, উপরোক্ত কারণদুটির কোনোটিই ভূল চিকিৎসা বা ডাক্তারের অবহেলার কারণে হয় নি। তবে রোগীর মৃত্যুর পূর্ণাংগ কারণ উদঘাটনের জন্য আমাদেরকে তদন্ত শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

এরপর পরিস্থিতি ক্রমাগত খারাপ হতে থাকে। রোগীর স্বজনের মারধর ও বাধার মুখে ডাক্তারদের পক্ষে রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। ফলে রোগী মারা যায়। এরই মধ্যে রোগীর স্বজনেরা ফোন করে ৫০-৬০ জনের একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসীদল হাসপাতালে ডেকে নিয়ে আসে। তারা হাসপাতালে প্রবেশ করেই তান্ডব চালাতে থাকে।

অন্যান্য যেসব চিকিৎসক জিম্মি চিকিৎসকদের উদ্ধার করতে এগিয়ে এসেছিলেন, তাঁরা সন্ত্রাসীদের অস্ত্রের মুখে অসহায় হয়ে পড়েন। তাঁদের মধ্যে অন্ততঃপক্ষে ৫ জন ডাক্তারকে সন্ত্রাসীরা মারধর করে। ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনতে ৩ জন পুলিশ সদস্য এগিয়ে এলে তাঁরাও প্রহৃত হন। পরবর্তীতে র‍্যাব এসে ৩ ঘন্টার অচলাবস্থার নিরসন ঘটায়। উক্ত ঘটনায় আমরা চিকিৎসকবৃন্দ তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জ্ঞাপন করছি।

এধরনের ন্যাক্কারজনক পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি রোধ করার জন্য ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত, বিচার ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসক, গণমাধ্যম, সুশীল সমাজ সহ সকলের সহযোগিতা কামনা করছি। ০৫-০৬-১১ তারিখে বিভিন্ন সংবাদপত্রে এই ঘটনাটির প্রকৃত চিত্র প্রকাশিত হয়নি যা অত্যন্ত দুঃখজনক। বরাবরের মত সত্য ঘটনাটি জনসাধারণের সামনে তুলে ধরার মহান দায়িত্ব সাংবাদিকমহল পালন করবেন বলে আমরা আশাবাদী Facebook থেকে share করলাম;লেখাটা আমার না ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.