আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফানুস (২য় পর্ব)

২ মোবারক হোসেন সাহেবের বাড়ির পেছনে বেশ বড় পুকুর। গ্রীষ্মে তাল পুকুর শুকিয়ে গেলেও এ পুকুরে পানি থাকে। দিন পুকুরে বর্শি ফেলে মাছ ধরছে। মোবারক হোসেন সাহেবের বড় মেয়ে কাজল বেশ ব্যাস্ত ভঙ্গিতেই এদিক ওদিক ছুটে বেড়াচ্ছে। কাজলের কিছুই মনে থাকে না, সে কেন ছুটে বেড়াচ্ছে এই মুহূর্তে সে নিজেও ভুলে গেছে।

কাজল অবশেষে তার মা কে খুজে পেল। মোবারক হোসেন সাহেবের স্ত্রী হালিমা বেগম কোন কথায় ইদানিং স্বাভাবিকভাবে বলতে পারেন না, তার ভাবখানা এমন যেন তিনি সবার উপরেই মহা বিরক্ত। - মা, ও মা। - মা মা না করে কি বলতে এলি তাই বল। - বলার জন্যই তো খুজছি, কিন্তু কি যে বলব ভুলে গেছি।

- তাহলে আমার কাছে এলি কেন? আমি কি আজকাল গণনা করছি নাকি? - ধুর এত বক কেন? তুমি মা একটু অপেক্ষা কর, আমি মনে করেই তোমার কাছে আসছি। - আমি ছাদে আছি মনে করে আয়। মোবারক হোসেন সাহেবের স্ত্রী হালিমা বেগম ছাদে গেলেন আর ঠিক তখনই কাজলের মনে পড়ে গেল ও দিনকে খুজছে, দিন ওর থেকে মাত্র কয়েক গজ দূরে, কিন্তু ও দিনের কাছে না গিয়ে মায়ের কাছে ছুটল না মনে পড়া কথাটি বলবার জন্য। সিড়ি বেয়ে দৌড়ে উঠতে গিয়ে পা শাড়িতে বেধে নিচে গড়িয়ে পড়ল কাজল। কাজলের যখন জ্ঞান ফিরল তখন সে হাসপাতালে।

তার দিকে চেয়ে আছে কয়েক জোড়া চোখ। মায়া কাজলের জ্ঞান ফিরতে দেখে হাত তালি দিয়ে বলল “জ্ঞান ফিরেছে, জ্ঞান ফিরেছে” - আমার কি হয়েছে? - মেজ আপা, তুমি না পড়ে গিয়েছিলে, তোমার তো ডান্ডি পটাশ হয়ে গিয়েছিল, তোমার জ্ঞান ফেরা দেখে ভাল লাগছে। মোবারক হোসেন সাহেব মায়াকে ধমক দিয়ে বললেন - থাম তো মায়া, সব সময় ফাজলামো, কেমন লাগছে এখন কাজল? - বাবা দিন কোথায়? - ও তো বিশ্ববিদ্যালয়ে। - ওকেই তো খুজছিলাম বাবা, বাবা কটা বাজে? ১২ টা ৩০ মিনিট। - am না pm বাবা? - Pm, pm।

- তাহলে বাবা ও তো কিছুক্ষণের মাঝেই এসে যাবে। - হ্যাঁ এসে যাবে, ওকে কি দরকার? - ওকে তো আসলে বাবা------ বাবা, কি যেন দরকার ভূলে গেছি, মনে করতে পারছি না। - তোকে মনে করতে হবে ও না, তুই ঘুমা। - বাবা, আমার পা নাড়াতে পারছি না বাবা। - আগামি কিছুদিন পারবি ও না, তোর পা ভেঙ্গে গেছে।

আর কোন কথা নয় চুপ করে ঘুমা। কাজলের জ্ঞান ফেরাতে সবাই খুশি শুধু পাপনেরই মনটা খারাপ খারাপ ভাব। ও হাসপাতালের বাইরের বারান্দায় বসে আছে। মায়া ওর সঙ্গে কথা বলছে। - পাপন, তোর মন খারাপ কেন আমি জানি।

- কেন বল তো আন্টি? - পাপন তোকে না কতবার বলেছি আমাকে আন্টি ফান্টি ডাকবি না, ওসব আমার পছন্দ না, আন্টি! এমনি তোর চেহারায় ইংরেজ ইংরেজ একটা ভাব আছে, আবার বলিশ আন্টি, খালা বলতে কষ্ট হলে মাসি ডাকবি, সেটা বলতে কষ্ট হলে নাম ধরে ডাকবি। - তোমাকে আমি খামা বলে ডাকব। - খামা? - হ্যাঁ, খামা, খালা থেকে খা, মাসি থেকে মা, খামা। - তোর তো মাথায় অনেক বুদ্ধি রে পাপন। তোর রোল যেন কত? - আন্টি, সরি খামা, আমার রোল দুই।

আগের বার ছিল ৪, তার আগে ৬। - পরেরবার নিশ্চয় শূন্য হবে রে। - শূন্য আবার হয় নাকি? - না তোর রোল দুই করে কমছে তো, ৬ থেকে ৪, ৪ থেকে ২, ২ থেকে তাহলে শূন্য। - কথাটা তো ঠিক ই বলেছ খামা। - কথা আমি সবসময় ঠিক ই বলি, কেও বুঝতে পারেনা এই যা, তা পাপন, বড় হয়ে তুই কি হতে চাস? - বড় হয়ে আমি দাদুর মত বড় শিক্ষক হতে চাই।

মা বলেছে বাবা যত বড় ইঞ্জিনিয়ার ই হোক না কেন বিদেশে যাওয়া ঠিক না, নিজের দেশেই কত কাজ। - ঠিক বলেছিস কিন্তু তুই শিক্ষক হবার চিন্তা বাদ দে, তার চেয়ে বরং তুই এক কাজ কর, তুই চুরি করা শেখ, তোকে দিয়ে একাজ ভাল হবে। মায়ার এ কথা শুনে পাপনের ভুরু বেশ কুচকে গেল। - তুই অযথাই আমার উপর রাগ করছিস, তোর দাদুর মত শিক্ষক হয়ে কি করবি? সপ্তাহে ৬ দিন শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ে বকবক করবি আর মাথা নষ্ট করা, কিন্তু শোন তুই যদি মাত্র একটাদিন আলমারি থেকে লাখখানেক সরাতে পারিস তাতেই পুরোমাস বসে খেতে পারবি। - খামা তোমার বুদ্ধিটা বোধহয় ভালই।

- মনে হয় কি রে ব্যাটা? বল অবশ্যই ভাল। - অবশ্যই ভাল। কিন্তু খামা----- - কোন কিন্তু নাই ওসব লেখাপড়া করে কিচ্ছু হবে না, বুঝলি? - খামা তুমি নিজে লেখাপড়া করছ যে? - তোর মাথায় গোবর ভরা, আমি কার মেয়ে? - দাদুর মেয়ে। - তোর দাদু শিক্ষক কি না? - হ্যাঁ - একটা শিক্ষকের মেয়ে হয়ে আমি চুরি করলে হবে? তাছাড়া কিছু মানুষের চেহারায় থাকে চোর টাইপ। - আমার চেহারা কি চোর টাইপ? - আরে ব্যাটা না।

- তাহলে তো আমি চুরি করতে পারব না। - তুই একটা আস্ত গাধা, হাদার বাচ্চা গাধা। - খামা হাদা কি? - হাদা হচ্ছে গাধার বাবা। শোন তোর চেহার গাধা টাইপ, গাধা টাইপ মানুষগুলো সত্যবাদি হয়। তোর চেহারা সত্যবাদি টাইপ ও।

- ও আচ্ছা - এই জন্যই তো তুই চুরি করবি, চুরি করলেও ভয় নেই, সবাই ভাববে তুই সাধু। - চুরি করলে যে পাপ হয়, আল্লাহ নাকি জ্বিহ্বা টেনে মাথার পেছনে পেরেক দিয়ে বেধে রাখেন? - তোকে যে বলেছে সে কিচ্ছু জানে না। শোন তাহলে, সৎ ব্যাবসা হালাল না হারাম? - হালাল - যদি তুই চুরিটাকে হালালভাবে নিস তাহলেই তো হল। - সেটা কিভাবে নিব? - আরে পাগল ঐটার জন্য তো আমি আছি। মন দিয়ে শোন, ধর তুই যখন আলমারিতে দেখলি ১ লক্ষ টাকা তখন তুই ওখান থেকে ৫০ হাজার টাকা সরিয়ে নিবি, আর বাকি ৫০ হাজার যার টাকা তার জন্য রেখে দিবি।

তুই তো চাইলে ১ লক্ষ টাকায় নিতে পারতি কিন্তু তুই তা করলি না, এতে কি আল্লাহ খুশি হবে না? - অবশ্যই হবে। কথা বলার এই মূহুর্তে হঠাৎ একজন নার্স বারান্দায় এলো। তাকে অন্য সব নার্সের মত বিধবা বিধবা লাগছে না, মুখটাও হাসি হাসি, মায়াকাড়া চেহারা। তার চেহারায় ভালমানুষ ভালমানুষ ভাব আছে। - তুমি কি মায়া? - জ্বি।

- একটু ভেতরে এসো। তোমাকে স্যার ডাকছেন। - স্যারটা কে? - জ্বি, তোমার বাবা। - চলুন। মায়া ভেতরে গেল।

- পাপন কোথায়? ওকে ডেকে নিয়ে আয়। মায়া পাপনকে ডেকে নিয়ে এলো। - পাপন, কি করছিলে দাদু? - দাদু, খামা চুরি---- মায়া খপ করে ওর মুখ চেপে ধরল। - বাবা কিছু না। তুই চুপ থাক আমি বলি।

- ওকে বলতে দাও, খামা, চুরি কিছুই বুঝলাম না। - বাবা ও ছোট মানুষ, ও কি বলবে, আমি বলছি। - ও ছোট তুই বুঝি বড়? - of course বড়, আমি কলেজে পড়ি, তুমি ক্লাস টেন থেকে বিয়ে করেছ সেই তুলনায় আমি বড়। সুন্দরী নার্সটি কাজলের সেবা ফেলে মায়ার কথা শুনছে, মায়ার কথা শুনতে তার ভাল লাগছে। মোবারক হোসেন সাহেব বেশ অপ্রস্তুতের মত বললেন - ওসব রাখ, এখন বল খামা, চুরি এসব মানে কি? - খুব simple, খালা থেকে খা, মাসি থেকে মা, খামা, আমি আজ থেকে ওর খামা।

- বাহবা, খামা, আর চুরি? - ও চুরি? চুরি মানে চুড়ি, ও একদিন বড় চাকরি করবে, চাকরি করে আমায় চুড়ি কিনে দেবে, লাল নীল চুড়ি। - আমাকে কি দেবে দাদু ভাই? - তোমাকে কিছু দেবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। - কেন? - ও যখন চাকরি পাবে তখন তুমি নাকি ডান্ডি পটাশ হয়ে যাবে, তাই মেয়ের কথায় মোবারক হোসেন সাহেব বেশ আনন্দ পেলেন। তিনি হা হা করে হেসে উঠলেন। - স্যার হাসবেন না, ম্যাডাম ঘুমাচ্ছেন।

মোবারক হোসেন সাহেব চুপ হয়ে গেলেন। নার্স মেয়েটিকে উনার পছন্দ হয়েছে, ঠিক কেন হয়েছে তা তিনি ধরতে পারছেন না। - তোমার নাম কি মা? - স্যার রুপকথা, রুপকথা চট্টোপাধ্যায়। মায়া বলল - বাহ আপনার নামটা খুব সুন্দর তো! মায়ার এ কথা শুনে রুপকথা কেন জানি খুব লজ্জা পেল। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।