অপেশাদার কূটনীতিক নেপালের কাঠমান্ডুতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত অধ্যাপক ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক নিয়মিত সেখানকার 'ড্যান্স বারে' যান! দূতাবাসের এক কর্মচারীর মোটরসাইকেলে করে নিয়মিত ড্যান্স বারে যাতায়াত করে কূটনৈতিক শিষ্টাচার, মূল্যবোধ ভাঙার নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি। রাষ্ট্রদূত হিসেবে তাকে একটি মার্সিডিজ বেঞ্জ দেওয়া হলেও আসলে তার নিষিদ্ধ জীবনযাপনের সুবিধায় তিনি কর্মচারীর মোটরসাইকেলের পিছনে চড়তেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। এখানেই শেষ নয় বদনামের শীর্ষে থাকা নিমচন্দ্র ভৌমিক কাঠমান্ডুতে এক ভারতীয় কূটনীতিকের বাসায় প্রবেশ করতে গিয়ে দারোয়ানদের বাধার মুখে পরেন। তারপরও মাদকের নেশার মতো আসক্ত নিম ভৌমিক ওই মহিলা কূটনীতিকের বাড়ির সামনেই গাড়িতে বসে থাকেন। এ ঘটনায় একই দূতাবাসে দায়িত্বপালনরত মহিলা কূটনীতিকের স্বামী বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনিকভাবে অভিযোগ করেন।
রাষ্ট্রদূতের এমন অসভ্য আচরণের বিরুদ্ধে নেপালের পররাষ্ট্র সচিব ঢাকায় পররাষ্ট্র সচিব মিজারুল কায়েসের কাছে অভিযোগ করেছেন। ঢাকার নেপাল দূতাবাসও দ্রুত এর সুরাহা চায়। তারা বলেছে, এমন ঘটনা তাদেরকে শুধু ব্যথিতই করেনি রীতিমতো বিস্মিত করেছে।
এদিকে, ওমানের মাস্কাটে রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন তিন বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য চট্টগ্রামের নুরুল আলম। তার বিরুদ্ধে ওমানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে শিষ্টাচার লক্সঘনের অভিযোগ করা হয়েছে।
তিনি ২০১০ সালের ২২ মে রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্বপালন শুরু করেন। ওমানের সুলতানের কাছে পরিচয়পত্র পেশের আগে দেখা করেন তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউসূফ বিন আব্দুল্লাহর সঙ্গে। সাক্ষাৎকালে তিনি ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাঁধে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া বন্ধুর মতো হাত তুলে দেন। এতে বিস্মিত, ক্ষুব্ধ ও অপমানিত হন ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ওমানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিফ অব প্রটোকল বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কূটনৈতিক শিষ্টাচারের লক্সঘন বলে অভিযোগ করেছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ওই ঘটনার পর রাষ্ট্রদূত নুরুল আলমের সঙ্গে স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনায় আগ্রহী নয় ওমান সরকার। যে কোনো প্রয়োজনে সরাসরি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওমান। এ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর দফতরে দেওয়া গোয়েন্দা প্রতিবেদনে ওমানের রাষ্ট্রদূত সম্পর্কে অভিযোগ করা হয়েছে, তিনি দূতাবাসের স্বাভাবিক কার্যক্রমের চেয়ে আড্ডায় বেশি আগ্রহী। মাস্কাট বাংলাদেশ দূতাবাসে গভীর রাত পর্যন্ত আড্ডা চলে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, শুধু এই দুজনই নন, রাজনৈতিক বিবেচনায় অপেশাদার যাদের কূটনৈতিক পেশায় দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে তারা সবাই বিতর্কের ঝড় তুলছেন।
দেশের সুনাম কুড়াতে না পারেন বদনামের কলঙ্ক মাথায় নিয়ে বেশ আরামের জীবনযাপনই করছেন। এই দুই রাষ্ট্রদূতের কাণ্ডকীর্তি নিয়ে বিব্রত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তোলপাড় চলছে সরকারের উপর মহলে। গোয়েন্দা সংস্থার এ সংক্রান্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে, যথাযথ প্রশিক্ষণ ছাড়াই তাদের পাঠানোর কারণেই এমনটি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছেও এমন একটি প্রতিবেদন গেছে।
যার অনুলিপি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আছে।
ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, অভিযোগ পাওয়ার পর সরকারের তদন্তে সত্যতা মিলেছে। সে কারণে সরকারের ভেতরই আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। তাদের মতে, 'রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ হতেই পারে। তবে কর্মক্ষেত্রে যোগদানের আগে যথাযথ প্রশিক্ষণের প্রয়োজন আছে।
ফরেন সার্ভিস একাডেমীতে ওরিয়েন্টেশন প্রোগাম করলে এমনটা হতো না। ' এদিকে, জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তারই সহকর্মীকে যৌন হয়রানির। বিষয়টির তদন্ত চলছে। জানা গেছে, বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর পেশাদার বাদ দিয়ে অপেশাদারদের নজীরবিহীনভাবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়। অতীতে কোনো সরকার এই পরিমাণ অপেশাদারদের নিয়োগ দেয়নি।
শুধু তাই নয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একজন মন্ত্রী ছাড়াও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় রয়েছেন আরও পাঁচজন। অতীতে এমন ঘটনাও আর ঘটেনি। এরমধ্যে মন্ত্রীর মর্যাদায় একজন উপদেষ্টা এবং প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় একজন সাবেক রাষ্ট্রদূত বসেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। তারা নিয়মিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের খোঁজ খবর নেন। এ ছাড়া প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় আছেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত, যুক্তরাজ্য ও ভারতের হাই কমিশনার।
একজন সাবেক পররাষ্ট্র সচিবের মতে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অধিক সন্ন্যাসিতে গাজন নষ্ট হয়েছে। প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদার রাষ্ট্রদূত কোনোভাবে সচিব কিংবা সংশ্লিষ্ট শাখার মহা পরিচালককে পাত্তা দেওয়ার কথা নয়। সরকার কূটনৈতিক শৃক্সখলা ফিরিয়ে আনতে এখনই বাস্তবমুখী পদক্ষেপ না নিলে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও ক্ষুণ্ন হবে। (জুলকার নাইন, বাংলাদেশ প্রতিদিন) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।