আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নেপালের লোকেদের খাওয়া দাওয়া



লোকজন সকাল ৯ টা থেকে ১০ টায় দুপুরের খাওয়ার খায় এটা জানলে যে কারোই অবাক হওয়ার কথা। কিন্তু নেপালে বিষয়টি খুব স্বাভাবিক। এখানে লোকজন সকালে ভাত খায়। এটি তাদের লাঞ্চ। তাহলে সকালের নাস্তা খায় কখন? সে হয় সকাল ৬ টা থেকে সাতটার মধ্যে।

নেপালিরা খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে। সকালের নাস্তা হিসেবে বেশিরভাগ নেপালি দুই একটা বিস্কুট আর চা খায়। তাতে যাদের পেট ভরে না তারা খায় চাউমিন। বাংলায় যাকে বলে নুডলস। এই নাস্তা খেয়েই বেশিরভাগ নেপালি কাজে বেরিয়ে পড়ে।

এরপর ১০ টার দিকে তারা লাঞ্চ করে । বেশিরভাগ নেপালির নাস্তার মেনু ভাত আর সবজি। কেউ কেউ মুরগির মাংস খায়। মাছ এখানে সেভাবে চলে না বললেই চলে। আমরা ৩ এপ্রিল যখন হোস্টেলের এসে শুনলাম সকাল ৬ টায় নাস্তা, আর ১০ টায় লাঞ্চ করতে হবে আমাদের তো আক্কেল গুড়ুম।

সবার মাথায় হাত। অন্তত আমার। আমার সকাল হয় ১০ টায়। কখনো কখনো আরো পরে। তাই হোস্টেলের ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলে টাইমটেবিল চেঞ্জ করলাম।

আমাদের সেই বাঙ্গালি টাইম। খাবারের মেনুও বদলাম। আমরা দুপুর ১ টায় লাঞ্চ আর রাত ১১ টায় রাতের খাবার খাবো শুনে তারা বেশ অবাক। তাদের নিয়ম ভাঙ্গছি দেখে হয়তো হতাশও। যাই হোক।

নেপালের অদ্ভুত এক খাবারের নাম চাউমিন আর মম। মম মানে পুলি পিঠার মতো করে বানানো ভেতরে মাংস, সবজি, গরু, খাসি যা ইচ্ছে আপনার সেটিই অডর্যার দিতে পারবেন। মুরগি থাকলে এর নাম হবে চিকেন মম, গরু থাকলে বাফ মম। অদ্ভুত এই জিনিষ। নেপালে কখনো এলে এই মম খেতে ভুলবেন না।

নেপালিরা ভাতের সঙ্গে ডাল, চাটনি এসব খায়। ভাত-তরকারি-ডাল এখানকার জাতীয় খাবারের মতো। এর সঙ্গে থাকে পাপড়ভাজা। ভাতের সঙ্গে মেখে মেখে এটা খাওয়া চলে। এখানে চায়ের নাম চিয়া।

এক কাপ চায়ের দাম ৮ থেকে ১০ রুপির মতো। বেশ ভালো চা। যারা সবজিভোজী তাদের জন্য নেপাল খুবই ভালো। যারা মাছ খেতে চান তাদের জন্য দুসংবাদ। এখানে মাছ পাওয়া বেশ কঠিন।

আর পেলেও দাম বেশি। নেপালের মূল টুরিস্ট এলাকা থামেল ছাড়া সেভাবে মাছ পাওয়া যায় না অন্য এলাকার হোটেল-রেস্তারায়। যারা মুরগি খেতে চান তাদের জন্য সমস্যা নেই। এই বস্তুটি কম বেশি সব জায়গায় মেলে। পাবেন শুয়োরর মাংসও।

বিদেশিদের খুবই প্রিয় এই জিনিষ। মিষ্টি, দই এসবই পাবেন এখানে। এখানকার ঘি বেশ ভালো। ৫ এপ্রিল এখানে নেপাল সরকার আমাদের সংবর্ধনা দিলো। ওই অনুষ্ঠানে নেপালের তথ্যমন্ত্রী শের বাহাদুর থাপা ছিলেন।

অনুষ্ঠান শেষে আমাদের বুফে স্টাইলে খাওয়ানো হলো। খুবই মজার সেসব খাবার। টকদইটা ছিল অনন্য। এমনিতেই নেপালের হোটেল রেস্তারার রান্না মোটামুটি। থামেল এলাকায় খাবারের দাম খুবই বেশি।

ওখানে অবশ্য বিভিন্ন দেশের খাবার মেলে। যারা মদ্য পান করেন তাদের জন্য নেপাল স্বর্গ। এখানে পান-সিগারেটের মতো রাস্তা ঘাটে মদের দোকান পাবেন। দামও বেশ সস্তাই। ভারতীয়-নোপলি-বিদেশি সবই পাবেন।

তবে এখানে রাস্তা ঘাটে নেপালি লোকজনকে সিগারেট খেতে দেখিন সেভাবে। যা খায় ওই পর্যটকরাই। তবে যারা বেনসন খান তাদের জন্য খারাপ খবর। নেপালে বেনসন পাওয়া প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। গত বছর বার ডেইলি স্টারের তুষার ভাই আর আমি এসেছিলাম।

সেবার শিক্ষা হইছে। তাই এবার আসার আগে আমি ব্যাগে সবার আগে বেনসনের প্যাকেট নিয়েছি বেশিকেরে। নেপালের সবচেয়ে দামি সিগারেট সুরাইয়া বা সুর্য। টেস্ট পানসে। নেপালের হোটেল রেস্তোরায় টুরিস্ট ছাড়া সেভাবে কাউকে চোখে পড়ে না।

আর যাও চোখে পড়ে দেখা যায় তারা চাউমিন খাচ্ছে। প্রথমদিন আসতে আসতে আমাদের বিকেল হয়ে গিয়েছিলো। কি খাবো বুঝতে পারছিরাম না কারন তখন কোন হোটেলে ভাত নেই। আমরা আছি তিনকুনে এলাকায়। এটি শহরের একটু বাইরে।

তাই কি করবো বুঝে উঠতে পারছিরাম না। অগত্যা এক দোকনে ঢুকলাম। জানতে পারলাম তাদের কাছে লুচি আর সবজি আছে। আমরা তাই গ্রোগাসে খেলাম। আমরা আছি তিনকুণে এলাকায়।

এটি বিমানবন্দরের কাছাকাছি। এখানে কেএফসির একটি দোকান আছে। আজ নেপালি দুই বান্ধবীকে নিয়ে সেখানে মম খেলাম। সাথে পাকুড়া আর জুস। ভালোই।

ও একটি বিসয় বলতে ভুলে গেছি। যারা ফল খান তাদের জন্য নেপাল দুর্দান্ত জায়গা। এখানে আঙ্গুরের কেজি বাংরাদেশি টাকায় ৪০ থেকে ৫০ টাকা। কমলা২০-৪০। অন্যান্য ফলের দাম আরো সস্তা।

তাই ফল খেতে পারেন। কাঠমান্ডুর বাইরে পোখরায় যেতে কোথাও যাত্রাবিতি দিলেই দেখবেন মহিলারা পিঠে করে কমলা বিক্রি করছে। দারুন মিস্টি এই পাহাড়ি কমলা। কেজি ১৫-২০ টাকা। নেপালি খাওয়া গত তিনদিন ধরে খেয়ে আমাদের সঙ্গে থাকা মেয়েরা বেশ ক্লান্ত।

তারা এখন ফল খায়, কেউ চানাচুর আর কোক। তারা এরই মধ্যে কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে। আমাদের কেউ কেউ সবজি আর মুরগি খেতে খেতে বিরক্ত। মাছ চায় সবাই। দেখা যাক কি হয়।

এর মধ্যে একটি সুখবর হলো আমাদরে সবাইকে ১১ এপ্রিল বাংলাদেশ অ্যাম্বাসিতে দাওয়াত দিছে। পহেলা বৈশাখের অনুস্ঠান হবে সেদিন। আশা করি ইলিশ আর পান্তা মিলবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।