শুভ'র কারখানা উৎসর্গপত্র
একটি ব্যতীত হুমায়ূন আহমেদের সকল গ্রন্থেই একটি পৃথক উৎসর্গবাণী আছে। এটি শিরোনাম পাতার পর পৃথক একটি পাতা। সাধারণতঃ উৎসর্গ পত্রের উর্দ্ধাংর্শে উৎসর্গবাণী লিখিত হয়ে থাকে। যে গ্রন্থটিতে কোন উৎসর্গপত্র নেই তা হলো কুহক।
উৎসর্গবাণী
তার উৎসর্গবাণীসমূহ অর্থপূর্ণ এবং সুখপাঠ্য হয়ে থাকে।
উৎসর্গবাণী নেই এমন গ্রন্থ নেই বললেই চলে। "হিমুর একান্ত সাক্ষাৎকার ও অন্যান্য" গ্রন্থটি ২০০৮-এর বাংলা একাডেমী বই মেলায় প্রকাশিত হয় যার উৎসর্গ পত্রে নিম্নরূপ লিখিতঃ
এক জীবনে অনেককে বই উৎসর্গ
করে ফেলেছি। এদের মধ্যে পছন্দের মানুষ
আছে আবার অপছন্দের মানুষও আছে।
অপছন্দের মানুষদের কেন বই উৎসর্গ করেছিলাম
এখন তা আর মনে করতে পারছি না।
উৎসর্গ খেলাটা আপাতত বন্ধ।
প্রথম উৎসর্গ
তাঁর প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস নন্দিত নরকে প্রকাশিত হয় ১৯৭২ খৃস্টাব্দে। এ গ্রন্থটির উৎসর্গবাণী নিম্নরূপ:
“ নন্দিত নরকবাসী মা-বাবা, ভাইবোনদের ”
যাদের উৎসর্গীকৃত
লেখক তাঁর ২শতাধিক গ্রন্থ নানাজনকে উৎসর্গ করেছেন। এরমধ্যে রয়েছেন তাঁর বন্ধু-বান্থব, আত্মীয়, সহকর্মী, বিশিষ্টজন, প্রকাশক, এবং ঘনিষ্ঠ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ। কয়েকটি গ্রন্থ এবং উৎসর্গীকৃত ব্যক্তির নাম নিম্নরূপ
* তোমাদের জন্য ভালোবাসা - ড: আলী নওয়াব
* নির্বাসন - জরী
* অচিনপুর - নুরুল আনোয়ার এবং আতিকুর রহমান
* সৌরভ - সালেহ চৌধুরী
* এই বসন্তে - হুমায়ুন আজাদ
* একা একা - কোহিনুর খান এবং আসাদুজ্জামান খান
* অমানুষ - কাজী আনোয়ার হোসেন
* প্রথম প্রহর - নওয়াজীশ আলি খান
* আমার আছে জল - কবি নির্মলেন্দু গণ
* দেবী - বিপাশা হায়াত
* ১৯৭১ - অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক
* ফেরা - খালিকুজ্জামান ইলিয়াস
* শীত এবং অন্যান্য গল্প - প্রণবকান্তি বোস
* মহাপুরুষ - তবিবুল ইসলাম বাবু
* নৃপতি - মামুনুর রশিদ
* দূরে কোথাও - আহমেদ হুমায়ুন
* নক্ষত্রে রাত - রশীদ করিম
* অন্যভূবন - নিয়াজ মোর্শেদ* নিশীথিনী - ওবায়দুল করিম
* অরণ্য - ইমদাদুল হক মিলন
* আকাশ জোড়া মেঘ - রাজা চৌধুরী
* ইরিনা - সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
* অপরাহ্ন - খালেদা হাবিব
* এলবেলে (১ম পর্ব) - ড. আবদুল করিম
* বৃহন্নলা - ডক্টর মুনতাসীর মামুন
* দ্বৈরথ - মোহাম্মদ মাসুম
* সাজঘর - শওকত আলী
* অন্ধকারের গান - ড. সরদার আবদুস সাত্তার
* রজনী - হুমায়ুন ফরিদী
* এইসব দিনরাত্রি - মুস্তাফিজুর রহমান
* একজন মায়াবতী - কাইয়ুম চৌধুরী
* আশাবরী - জাহানারা ইমাম
* কৃষ্ণপক্ষ - অধ্যাপক আবদুল বায়েস ভূঞা
* অনিল বাগচীর একদিন - অধ্যাপক মুহম্মদ ইউনুস
* অনীশ - শাহাদৎ চৌধুরী
* মিসির আলীর অমীমাংসিত রহস্য - হাফিজুল কবির
* নবনী - আসিফ নজরুল
* এই আমি - গাজী শামসুর রহমান
* জীবনকৃষ্ণ মেমোরিয়াল স্কুল - সাজ্জাদ শরীফ
* সকল কাঁটা ধন্য করে - ফরহাদ মজহার
বিভিন্নপ্রকার উৎসর্গবাণী
এই লেখকের অসংখ্য উৎসর্গবাণীকে কয়েকটি শ্রেণীতে ভাগ করা চলে। এর মধ্যে প্রধান হলো প্রশংসাবাচক উৎসর্গবাণী।
এছাড়া আছে কৃতজ্ঞতাজ্ঞাপক উৎসর্গবাণী। তৃতীয় পর্যায়ে আছে শ্রদ্ধামূলক উৎসর্গ। ইত্যাদি। বেশ-কিছু সংখ্যক উৎসর্গবাণী মজা করে লিখিত।
প্রশংসাবাচক উৎসর্গ
"তেঁতুল বনে জোছনা" বইটা উৎসর্গ প্রসঙ্গে অধ্যাপক হায়াৎ মাহমুদ সম্পর্কে লেখক বলেছেন, "কিছু মানুষ আছেন যাদের দেখামাত্র মন আনন্দে পূর্ণ হয়, কিন্তু তারা যখন কাছে থাকেন না তখন তাদের কথা তেমন মনে পড়ে না।
হায়াৎ ভাই সেই দলের আমার দেখা নিখুঁত ভালো মানুষদের একজন"। "যদিও সন্ধ্যা" বইটা অভিনেতা আহমেদ রুবেলকে উৎসর্গপূর্ব্বক হুমায়ূন আহমেদ লিখেছেন, "অভিনেতা হিসেবে A+, মানুষ হিসেবে A++"। "নীল মানুষ" বইটিতে লিখছেন, "জলিল আবেদিন, আড়ালে তাঁকে আমি ডাকি মিস্টার টুয়েন্টি টু ক্যারেট কারণ তাঁর হৃদয় বাইশ ক্যারেট সোনায় বানানো, কোনো খাদ নেই"। "তিথির নীল তোয়ালে" ১৯৯০ দশকের বিখ্যাত টেলিভিশন অভিনেত্রী সুবর্ণা মোস্তফাকে উৎসর্গ করে লিখেছেন, "আমার জানতে ইচ্ছে করে, একজন মানুষ এত ভাল অভিনয় কি ভাবে করেন"। এরূপ প্রশংসা প্রীতিকর সন্দেহ নেই।
কৃতজ্ঞতাবাচক উৎসর্গ
মৃত্যু চিন্তা
"দেখা না-দেখা" গ্রন্থটিতে তাঁর মৃত্যু চিন্তা বিধৃত। উৎসর্গ বাণীটি এরকম: "নিষাদ হুমায়ূন, তুমি যখন বাবার লেখা এই ভ্রমণ কাহিনী পড়তে শুরু করবে তখন আমি হয়তোবা অন্য এক ভ্রমণে বের হয়েছি। অদ্ভুত সেই ভ্রমণের অভিজ্ঞতা কাউকেই জানাতে পারব না। আফসোস!" নিষাদ এই লেখকের কনিষ্ঠ সন্তান ; লীলাবতীর পর তার জন্ম হইয়াছে। "চলে যায় বসন্তের দিন" উৎসর্গ করা হয়েছে মেহের আফরোজ শাওনকে।
তখনো তারা পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন নাই। উৎসর্গপত্রে লেখা :
উৎসর্গ
"আমার একটি খুব প্রিয় গান আছে, গিয়াসউদ্দিন সাহেবের
লেখা 'মরণ সঙ্গীত'- 'মরিলে কান্দিস না আমার দায়। '
প্রায়ই ভাবি আমি মারা গেছি, শবদেহ বিছানায় পড়ে
আছে, একজন কেউ গভীর আবেগে গাইছে- 'মরিলে
কান্দিস না আমার দায়। '
'নক্ষত্রের রাত' নামের ধারাবাহিক নাটকের শ্যুটিং
ফ্লোরে আমি আমার ইচ্ছা প্রকাশ করলাম। এবং
একজনকে দায়িত্ব দিলাম গানটি বিশেষ গাইতে।
সে রাজি হলো। উৎসর্গপত্রের মাধ্যমে তাকে ঘটনাটি মনে
করিয়ে দিচ্ছি। আমার ধারণা সময় এসে গেছে।
মেহের আফরোজ শাওন"
আরেকটি গ্রন্থোৎসর্গে মৃত্যুচিন্তা পরিস্ফুট। "দেখা না-দেখা" বইটির উৎসর্গ পত্রে তিনি কনিষ্ঠ পুত্র নিষাদকে (জন্ম ২০০৭) উদ্দেশ্য করে লিখেছেন:
"নিষাদ হুমায়ূন, তুমি যখন বাবার লেখা এই ভ্রমণ কাহিনী পড়তে শুরু করবে তখন আমি হয়তোবা অন্য এক ভ্রমণে বের হয়েছি।
অদ্ভুত সেই ভ্রমণের অভিজ্ঞতা কাউকেই জানাতে পারব না। আফসোস!"
ব্যক্তিগত বিষয়
স্ত্রী গুলতেকিনের সঙ্গে দীর্ঘ বৈবাহিক সম্পর্কের ইতি হয় ২০০৫-এ। তারপর শাওনের সঙ্গে বিয়ে। প্রথম কন্যা লীলাবতী মারা যায়। "দিঘির জলে কার ছায় গো " বইটির উৎসর্গপত্রে লিখেছেন : "কন্যা লীলাবতীকে।
এই উপন্যাসের নায়িকা লীলা। আমার মেয়ে লীলাবতীর নামে নাম। লীলাবতী কোনোদিন বড় হবে না। আমি কল্পনায় তাকে বড় করেছি। চেষ্টা করেছি ভালোবাসায় মাখামাখি একটি জীবন তাকে দিতে।
মা লীলাবতী : নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে, রয়েছ নয়নে নয়নে। " লীলাবতীর পর পুত্র নিষাদ। দুই খণ্ডে প্রকাশিত উপন্যাস মধ্যাহ্ন উৎসর্গ করতে গিয়ে হুমায়ূন আহমেদ লিখেছেন, "মেহের আফরোজ শাওন। পরম করুণাময় ত্রিভুবনের শ্রেষ্ঠ উপহার তাকে দিয়েছেন। তার কোলভর্তি নিষাদ নামের কোমল জোছনা।
আমার মতো অভাজন তাকে কি দিতে পারে? আমি দিলাম মধ্যাহ্ন। তার কোলে জোছনা, মাথার উপর মধ্যাহ্ন। খারাপ কি?"
মানব চারিত্র্য
মানব চরিত্র অবলোকন হুমায়ূন আহমেদের রচনার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। উৎসর্গবাণীর স্বল্পতম পরিসরেও তাঁর মানব চারিত্র্য পর্যবেক্ষণজাত মন্তব্য পরিলক্ষিত হয়। "সেদিন চৈত্রমাস" বইটি কবি মারুফুল ইসলামকে উৎসর্গক্রমে লিখেছেন,
"আমি লক্ষ্য করে দেখেছি অতি বুদ্ধিমান কেউ কখনো ভাল মানুষ হয় না।
মারুফ তার ব্যতিক্রম। আচ্ছা তার সমস্যাটা কি? ̶ মারুফুল ইসলাম ভালমানুষেষু" ।
ফারুক আহমেদকে দেয়া হয়েছে "লিলুয়া বাতাস" উপন্যাসটি। হুমায়ুন আহমেদ লিখেছেন,
"দীর্ঘদিন কেউ আমার পাশে থাকে না, এক সময় দূরে সরে যায়। হঠাৎ হঠাৎ এক আধজন পাওয়া যায় যারা ঝুলেই থাকে, যেমন অভিনেতা ফারুক।
"লিলুয়া বাতাস" বইটি তার জন্যে। পরম করুণাময় তার হৃদয়ে লিলুয়া বাতাস বইয়ে দেবেন, এই আমার শুভ কামনা। ফারুক আহমেদ। সুকনিষ্ঠেয়। "
ব্রাত্য রাইসুকে "এবং হিমু" বইটি উৎসর্গ করে লিখেছেন ,
"ব্রাত্য রাইসু, যে মাঝে মাঝে হিমুর মতো হাসে।
"
হাস্য-রসাত্মক উৎসর্গবাণী
যাকে উৎসর্গ করা হয়েছে তার সরাসরি প্রশংসা যদি না-ও করে থাকেন, লাগসই মন্তব্য দিয়ে হুমায়ূন আহমেদ বিষয়টি সরস করে তুলেছেন। অকালপ্রয়াত ঔপন্যাসিক প্রণব ভট্ট সম্পর্কে "আসমানীরা তিন বোন" উপন্যাসের উৎসর্গপত্রে তিনি লিখেছেন, "আমি একজনকে চিনি যিনি দাবি করেন তাঁর শরীরের পুরোটাই কলিজা। চামড়ার নিচে রক্ত মাংস কিছু নেই, শুধুই কলিজা। এ ধরনের দাবি করার জন্য সত্যি সত্যিই অনেক বড় কলিজা লাগে। প্রণব ভট্ট।
" আবার "বৃষ্টি ও মেঘমালা" উপন্যাসটির উৎসর্গবাণী : "মধ্যদুপুরে অতি দীর্ঘ মানুষের ছায়াও ছোট হয়ে যায়। অধ্যাপক তৌফিকুর রহমানকে। যাঁর ছায়া কখনো ছোট হয় না। " রোমেল সম্পর্কে সবিস্তার লিখেছেন "আমি এবং কয়েকটি প্রজাপতি" বইটাতে। লেখা হয়েছেন, "তার নাম রোমেল।
আমি তাকে রহস্য করে ডাকি ত্রুস্ক, রাশিয়ান সাবমেরিন ত্রুস্ক, নাবিকদের নিয়ে সাগরে তলিয়ে যাওয়া ত্রুস্ক। রোমেলকে দেখলেই আমার কেন জানি তলিয়ে যাওয়া সাবমেরিনের কথা মনে হয়। সে পড়াশোনা করেছে রাশিয়ায়। রুপবতী এক রাশিয়ান মেয়েকে বিয়ে করেছে। মেয়েটি রাশিয়ার এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা।
তাদের পুতুলের মতো একটা ছেলে আছে। রোমেল তার রাশিয়ান পরিবার নিয়ে পাবনায় বাস করছে। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ তার মাস্টার্স ডিগ্রি আছে কিন্তু সে জীবন নির্বাহ করছে পত্রিকা বিক্রি করে। আখতারুজ্জামান রোমেল (ত্রুস্ক)"। অভিনেতা জাহিদ হাসানকে "হিমুর দ্বিতীয় প্রহর" উৎসর্গ করে হুমায়ূন আহমেদ লিখেছেন, "জাহিদ হাসান, প্রিয় মানুষ।
মানুষ হিসেবে সে আমাকে মুগ্ধ করেছে, একদিন হয়তো অভিনয় দিয়েও মুগ্ধ করবে। (দ্বিতীয় বাক্যটি দিয়ে তাকে রাগিয়ে দিলাম, হা হা হা!)। "ছেলেটা" নামীয় গ্রন্থটির উৎসর্গবাণী এরকম : "আনোভা, এই মেয়ে, আমি তোমার নামের বানান জানিনা। তুমি কেমন, তোমার হাব ভাব কেমন এই তথ্য আমার জানা নেই। তুমি কোনদিন বাংলা শিখবে কিনা, আর শিখলেও আমার বই তোমাকে পড়তে দেয়া হবে কি না তাও জানি না।
তাতে কি? এই বইটা তোমার জন্য"। আরেকটি গ্রন্থ "হিমুর মধ্যদুপুর" বইটির উৎসর্গপত্রটি এরূপ : "নওশাদ চৌধুরী প্রিয়বরেষু। অসম্ভব্ প্র্যাকটিক্যাল একজন মানুষ। মাথায় ব্যবসা নিয়ে নানান পরিকল্পনা। তারপরেও তাঁর মধ্যে আমি হিমুর ছায়া দেখি এবং অবাক হই।
""মিসির আলীর চশমা" গ্রন্থটি উৎসর্গ করা হইয়াছে অনিমেষ আইচকে। হুমায়ূন আহমেদ লিখেছেন: "সম্প্রতি আমি একজনকে পেয়েছি যে বাংলাদেশের বিভিন্ন মানুষদেরকে মিসির আলী হিসেবে নিয়ে আসছে। এবং সবাইকে বাধ্য করছে এদের মিসির আলী হিসেবে ভাবতে। তরুণ পরিচালক অনিমেষ আইচ, মিসির আলি সন্ধানেষু। "
তথ্যসূত্র
1. হুমায়ূন আহমেদ, কুহক, ১৯৯১, প্রতীক প্রকাশনা সংস্থা, ঢাকা।
2. শওকত আলী, 'ভাইয়ের লাশের জন্য প্রতীক্ষা', বই, মার্চ, ১৯৭৩
3. হুমায়ূন আহমেদ, নন্দিত নরকে, ১৯৭২, খান ব্রাদার্স এণ্ড কোম্পানী,
4. : হাসান হাফিজ (সম্পা), হুমায়ূন আহমেদ - সমকালের চোখে, ১৯৯৫, কাকলী প্রকাশণী, ঢাকা। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।