আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইউনূসকে দিয়ে তদ্বির করিয়েও হিলারির সাক্ষাত মিলল না

আমি নতুন কিছু লিখবো বিএনপি নেতাকর্মীরা হতাশ, রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের নেতা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বৈঠক না হওয়ার বিষয় নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা শুরম্ন হয়েছে। গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইউনূসের সহযোগিতা নিয়ে বিএনপির পৰ থেকে অনেক চেষ্টা-তদ্বির চালিয়েও কি কারণে এ বৈঠক হলো না_ এ প্রশ্নের উত্তর জানতে রাজনৈতিক সচেতন মহলেও কৌতূহলের অন্ত নেই। আর দলের পৰ থেকে ব্যাপক প্রচার চালিয়ে চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে সেদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাৰাত করতে না পারায় বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যেও হতাশা লৰ্য করা গেছে। তবে নিউজার্সি সিনেট থেকে সম্মাননা পাওয়া ও মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী রবার্ট বেস্নকসহ সেদেশের গণ্যমান্য কিছু লোকের সঙ্গে সাৰাত করা সম্ভব হলেও মূলত যে উদ্দেশ্য নিয়ে খালেদা জিয়া যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়েছিলেন সে উদ্দেশ্য সফল না হওয়ায় তাঁর এ সফর ফ্লপ হয়েছে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করছে। খালেদা জিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সফরে যাওয়ার ৬ মাস আগে থেকেই সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে সাৰাতের ব্যাপারে লবিং শুরু করে বিএনপি।

প্রথম দফায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত সাবেক রাষ্ট্রদূত শমসের মবিন চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুক, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, সাংবাদিক শফিক রেহমান চেষ্টা-তদ্বির শুরম্ন করেন। এক পর্যায়ে এ ব্যাপারে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইউনূসের সহযোগিতা নেয়া হয়। ইউনূসের সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের নিবিড় সম্পর্ক থাকায় তাঁকে দিয়ে লবিং করা হয়। জোর লবিংয়ের এক পর্যায়ে হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠক চূড়ান্ত বলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী নিশ্চিত করেন। এ পরিস্থিতিতে এ বৈঠক সম্পর্কে বিএনপির পৰ থেকে ব্যাপক প্রচার চালানো হয়।

কিন্তু শেষ পর্যনত্ম খালেদা জিয়া হিলারির সঙ্গে বৈঠক করতে ব্যর্থ হলে মান রৰা করতে সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরার্ট বেস্নকের সঙ্গে সাৰাত করেন। এর আগে নিউজার্সি সিনেট তাঁকে সম্মাননা জানায়। আর একেই বিশাল বিজয় বলে দলের পৰ থেকে প্রচার চালানো হয়। বৃহস্পতিবার রাজধানীতে আনন্দ মিছিলও বের করা হয়। তবে বিএনপির এক কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, হিলারির সঙ্গে খালেদা জিয়ার সাৰাত না হওয়ায় দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে তা কাটাতেই আনন্দ মিছিল করা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রেওয়াজ অনুসারে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দ্বিপাৰিক স্বার্থসংশিস্নষ্ট বিষয় নিয়ে সংশিস্নষ্ট দেশের প্রধানমন্ত্রী বা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে থাকেন। এর বাইরে কোন দেশের অন্য কোন নেতার সঙ্গে বৈঠক করার রীতি না থাকলেও খালেদা জিয়ার অনুরোধে ড. ইউনূস জোর লবিং। ড. ইউনূসের লবিংয়ের কারণে প্রথমে সরাসরি নেতিবাচক জবাব না দিলেও এক পর্যায়ে স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে জানানো হয়, হিলারি ক্লিনটন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ সফরে থাকায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠকের সময় করা যাচ্ছে না। এ কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে খালেদা জিয়াসহ বিএনপি শিবিরে হতাশা নেমে আসে। তবে এক পর্যায়ে খালেদা জিয়া আরও কিছুদিন যুক্তরাষ্ট্রে থেকে হিলারি দেশে ফেরার পর তাঁর সঙ্গে সাৰাত করার চেষ্টা চালান।

কিন্তু ইতিবাচক সাড়া না পেয়ে সে চেষ্টা থেকে বিরত থাকেন। হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে ড. ইউনূসের নিবিড় সম্পর্ক থাকায় খালেদা জিয়াকে বৈঠকে বসানোর ব্যবস্থা করতে পারবেন বলে দলের নেতাকর্মীরা আশাবাদী ছিলেন। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে ড. ইউনূসের আগের মতো সুসম্পর্ক নেই। গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি থাকতে গিয়ে সরকারের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়া এবং তাঁকে নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন মিডিয়ায় নেতিবাচক প্রচার হওয়ার বিষয়টি ভালভাবে নিতে পারেননি হিলারি ক্লিনটন। এ জন্যই ড. ইউনূসের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক কিছুটা শীতল হয়েছে।

এ ছাড়া বাংলাদেশের রাজনীতিতে খালেদা জিয়া মৌলবাদী দলগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা, একটি নির্বাচিত সরকারের পতনের জন্য মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি করা, পাকিসত্মানের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকা, সংসদে না যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে মার্কিন সরকার বিএনপিকে কাছে টানতে চায় না। এদিকে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সফরে থাকাকালে সে দেশের আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের পৰ থেকে বিএনপির বিরম্নদ্ধে ব্যাপক নেতিবাচক প্রচার চালানো হয়। সরকারী দফতর, সরকারী ও বিরোধী দলের মন্ত্রী-এমপি, বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশন ও মানবাধিকার সংগঠনের কাছে লিখিত ও মৌখিকভাবে খালেদা জিয়ার দল বিএনপি যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচাল করতে চায় বলে অভিযোগ করেন তাঁরা। এর ফলে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সরকার বিএনপির বিষয়ে সতর্ক অবস্থান নেয়। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের সঙ্গে সাৰাত করতে না পারার এটিও একটি কারণ বলে কেউ কেউ মনে করছেন।

আবার কারও কারও মতে সরকারী দলের কূটনৈতিক তৎপরতার কাছে এ যাত্রায় বিএনপি হেরে গেছে। অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, পাকিসত্মানের সঙ্গে বরাবরই ভাল সম্পর্ক বজায় রাখে বিএনপি। সম্প্রতি আল কায়েদার শীর্ষ নেতা ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করা নিয়ে পাকিসত্মানের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নষ্ট হয়। এ কারণে বিএনপির সঙ্গে আপাতত সম্পর্ক উন্নয়ন করতে আগ্রহী নয় যুক্তরাষ্ট্র। তাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন খালেদা জিয়াকে সাৰাতের সময় দেননি।

এ পরিস্থিতিতে বেকায়দায় পড়ে যান খালেদা জিয়া। তবে বিদেশ সফরকালে দুই দেশের সরকারী ও বিরোধী দলের রাজনৈতিক নেতা ও বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাৰাত এবং নিউজার্সি সিনেটে পাওয়া সম্মাননায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও তাঁর দলের নেতাকর্মীরা কিছুটা হলেও সানত্ম্বনা খুঁজে পেয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। এদিকে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাৰাতের ব্যবস্থা করতে না পারায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া তাঁর সফরসঙ্গী শমসের মবিন চৌধুরীর ওপর ৰুব্ধ হয়েছেন বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, এই দুই দেশে সফরে যাওয়ার অনেক আগে থেকেই শমসের মবিন চৌধুরী ডেভিড ক্যামেরন ও হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে খালেদা জিয়াকে নিশ্চয়তা দেন। আর এ সাৰাত হবে এমনটি ধরেই খালেদা জিয়া দেশে ফিরে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে কঠোর কর্মসূচী দেয়ার প্রস্তুতি নেন।

মিশন সফল হলে দেশে ফিরে সরকারের বিরম্নদ্ধে আন্দোলনের কঠোর কর্মসূচী দেয়ার প্রস্তুতি থাকার কারণেই তাঁর নির্দেশে দলের সাংসদরা জাতীয় সংসদের চলতি নবম অধিবেশনে যোগ দেয়নি বলে জানা গেছে। তবে এখন আন্দোলন কর্মসূচীর ব্যাপারে পরিস্থিতি পাল্টে যেতে পারে বলে কেউ কেউ মনে করছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান জনকণ্ঠকে জানান, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠক করার ব্যাপারে অনেক আগে থেকেই চেষ্টা করা হয়েছিল। বৈঠকের আশ্বাসও পাওয়া গিয়েছিল। গত ২৪ মে মঙ্গলবার এ বৈঠক হওয়ার কথা ছিল।

কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সফরে থাকায় এ গুরম্নত্বপূর্ণ বৈঠকটি হয়নি। ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.