উঁকি দাও ফুল! আমার বন্ধু এক অদ্ভুত কাণ্ড ঘটালো একবার
ওদের বাড়িতে একজন আসতেন, বাবার বন্ধু। মাঝ বয়েসী। ধনী, চরিত্রবান, ভদ্র। দায়িত্বশীল পদে চাকরি করেন।
এবং ভয়ানক উপদেশপ্রবণ।
ইসলামী অর্থনীতি কেন সেরা, কেন মানুষের যৌনশুদ্ধাচার অবলম্বন করা উচিত, প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তিত্বদের কেন অনুসরণ করা উচিত, সমাজের আসল সমস্যা কেন অর্থনৈতিক নয়, বরং নৈতিক অবক্ষয়-- সব বিষয়য়েই খুব দৃঢ় আর কড়া বক্তব্য ছিল তার।
প্রতিরোজ সকালে বন্ধুটার সাথে আমার আলাপ হতো ঘন্টা খানেক, ঠিক ন'টায় ও ফোন করত। দু'জনের পিতৃদেবই তখন অফিসের দিকে। একদিন বলল, 'বুড়াকে একটা শিক্ষা দেব'।
'মতলবটা কি তোমার?'
'আরে দেখোই না!'
পারিবারিক কারণে হিজাব নিতে বাধ্য হয়েছিল বটে, কিন্তু শয়তানি মোটেই চাপা পড়ে নাই ওর।
আর সেই সাথে দুঃসাহস। আমি ওরে হাড়ে হাড়ে চিনতাম, ভয়ও পেতাম খুব। আর ও চাইবে, এবং হবে না, এমন কিছু তখনও চিনতাম না। 'কি মতলব তোমার?" বারবার চাপাচাপি করতে থাকি।
'বুড়াকে আমি লোভ দেখাব।
' খুব ঠাণ্ডা গলায় বলল বন্ধুটা। 'ঈমানের জোরটা দেইখা রাখা দরকার। '
বাকি অংশটা খুব সরল গতিতে এগুলো। ভদ্রলোকের দিকে ও তাকিয়ে থাকে। ফোন করে নানান বিষয়ে পরামর্শ চায়।
ক্লাসমেট ছেলেদের বিষয়ে নালিশ করে, তারা কতটা ফাঁপা। ভদ্রলোকের ইংরেজি কত ভাল, তার সাথে কারো তুলনা হয় না। আর তার ব্যক্তিত্ব! ও তো সারাদিন সেই কথাই ভাবে।
ঘটনাটা শেষও হলো খুব দ্রুত। ভদ্রলোক শিগগিরই ওর সাথে আলাদা দেখা করা শুরু করলেন।
শুরুতে এই সাক্ষাৎগুলোও বেশ একটা উপদেশ বিনিময়ের আবরণ রেখে চললেও অচিরেই তিনি কাবু হলেন, তার গিন্নী কতটা নিরামিষ, জীবনটা কত একঘেষে এই সব আলাপ আসতেও দেরি হল না। একটা পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণ, আর তারপর তিনি মেয়েটার সাথে নির্জনে দেখা করতে চাইলেন।
এই শেষ। কয়েকবারের চেষ্টার পরই ভদ্রলোক বুঝতে পারলেন তিনি একটা আজব ধাঁধার মুখোমুখি হয়েছেন। মেয়েটা তো বরবরই মুদ্ধতা দেখিয়েছে, কিন্তু অনুরক্তি দেখায়নি।
ফলে তাকে আর কখনোই সাক্ষাৎ না দেয়ায় তিনি যে একটা পরীক্ষার শিকার হয়েছিলেন, তা আর কোন দিন বেচারার জানা হয়নি। কেনই বা এলো, আর কেনই বা উধাও হলো, এ ধন্দে নিশ্চয়ই বহুদিন নামাজ কাজা হয়েছে, তসবি টিপতে টিপতে দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এসেছে। কিংবা হয়তো ভেবেছেন, কোন একটা সীমা লংঘন না করলে সারাজীবন মেয়েটার সাথে কথা অন্তত বলা যেত! কিংবা হয়তো রয়েসয়ে আরেকটু বুদ্ধিমানের মত এগুলে...
আগের অনুচ্ছেদটা পুরোটাই কিন্তু আমার কল্পনা, হয়তো তেমন কিছুই ঘটেনি। ভদ্রলোক স্রেফ নিজের আচরণে লজ্জা পেয়েছেন, হয়তো মুহুর্তেই ভুলে নিজের কাজে মন দিয়েছেন-- এমন সম্ভাবনাও তো বিস্তর। যাই ঘটুক না কেন তার, তরুণ আমাদের কিছু যায় আসে নি।
আমরা দু'জন বহুদিন তারপর ঠিক সকাল ন'টায় বুড়োকে নিয়ে জল্পনা কল্পনা করেছি। আর সব আলোচ্য বিষয় ফুরুলে, কিংবা হয়তো তাকে ছাপিয়েই বৃদ্ধ ঘুরেফিরে আসতো চলে। 'হি হি হি, ঈমান ছুটায়ে দিছি একদম। ' 'হো হো হো, ঈমান বটে!' আমাদের তরুণ বিদ্রোহী আত্মা জগতের সব কিছুর বিরুদ্ধে শক্তি নাকি সান্ত্বনা পেত বুড়োর ওই পতনে।
****
বহুদিন আমি এই কাহিনীটাকে ব্যবহার করে এসেছি মানুষের তাড়না আর অবদমন নিয়ে আমার ধারণাটাকে ব্যাখ্যা করার জন্য।
ঈমান একটা বদ্ধ অবদমন, আর তা খুবই ঠূনকো। কিন্তু একবার খুব হেরে গেলাম।
হাআবা, আমার খুব বন্ধু। এই রকম নেশাগ্রস্ত কেউ না হলে মনে হয় না আচমকা উল্টোচিন্তা দিয়ে তোমাকে তড়িতাহত করে।
হাআবা, কাহিনীটা শুনে বলে বসলো, কিন্তু ধরো, যদি ঈমান বলে স্থির চূড়ান্ত কিছু না থাকে, যেটা অর্জন করা যায়? যদি ধরো এইটা একটা ধারাবাহিক পরীক্ষার বিষয় না হয়? বরং ধরো এইটা এমন একটা কিছু যাতে তুমি হারলে তুমি হেরে যাও না, বরং আরেকবার শুরু কর।
হারলা বলে জানলা, এই বড়জোর। নবীদের ধর একটা পরীক্ষা থাকে, ঈসা তাই শয়তানের প্রলোভন অতিক্রম করতে পারেন। মানুষের জন্য তেমন কিছু নাই। পাপী তাপী মানুষের কি ঈমান নাই? আছে তো।
প্রায় পুরোটা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সকাল ন'টার স্মৃতির উজ্জ্বলতা ম্লান করে দিল হাআবা।
প্রায় এক তুড়িতে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।