আমিনীদের মতে, বর্তমান নারীনীতিতে পিতৃপরিচয় নয়, মাতৃপরিচয়ের কথা বলা হয়েছে। আমিনী বহু দিন ধরে দেশের নারীদের নিয়ে নানা রকম মাথাব্যথায় পীড়িত হয়ে আছেন। বিশেষ করে নারীর সতীত্ব নিয়ে নিয়ে বড় উদ্বিগ্ন হয়েছেন। নারীর অধিকার যেটা ইসলামে স্বীকৃত, সেটাও তিনি পারলে নাকচ করে দেন।
নারী নীতিমালার বিরোধিতা করে আমাদের ধর্ম ব্যবসায়ীরা ধর্ম গেল ধর্ম গেল চীৎকার করে চলেছেন, কিন্তু কোথায় গেল? ধর্ম তো আমাদের হৃদয়ে গাঁথা, ধর্ম তো আমাদের অনুভূতি, ধর্ম তো আমার প্রাত্যহিক চর্চা, আমাদের জীবনাচরণের সঙ্গে জড়িত।
তাহলে ধর্মটা কোথায় গেলো, কীভাবে গেলো? বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ৮ মার্চ ১৯৯৭ সালে একবার নারী উন্নয়ন নীতিমালা দিলেন, ২০০১ সালে বিএনপি-জামাত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে গোপনে সেই নারী নীতিমালা থেকে কিছু অংশ বাদ দিয়ে নারী নীতিমালা ২০০৪ ঘোষণা দিল। আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসে কিছু কাঁটা ছেড়া করার চেষ্টা করেছে। বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে আবার ক্ষমতায় এসে ১৯৯৭ সালের ঘোষিত নীতিমালাকে কিছু সংস্কার করে আবার নতুন করে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা-২০১১ ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে আমাদের সংবিধান ও জাতিসঙ্ঘ সনদকে সমন্বয় করে এটা প্রণীত হয়েছে। এখানে ধর্মের কোন বিরোধিতা ও ব্যাখ্যাও আসেনি।
এসেছে আজকের বিশ্বে নারীর প্রতি সকল বৈষম্য-বঞ্চণা-শোষণ দূর করে পুরুষের সম-অধিকার ভোগ করা ও সুযোগ-সুবিধার নিশ্চয়তা নিয়ে। যুগ যুগ ধরে আমাদের মেয়েরা ধর্মান্ধতা, ধর্মীয় অপব্যাখ্যা ও নানা কুসংস্কারের শিকার হয়ে শোষিত, বঞ্চিত নির্যাতিত, অবহেলিত পশ্চাৎপদ থেকেছে। তাদের প্রতি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে কেউ তাকায়নি। বরং পুরুষ প্রধান সমাজ ব্যবস্থায় তাকে পুরুষরাই নিয়ন্ত্রণ করেছে, ভোগ ও বিনোদনের সামগ্রী করেছে। নারীকে পতিতাবৃত্তিতে নামিয়েছে, পাচার করেছে।
আর একদল নারীকে বিবাহ করেছে ক্রীতদাসী ও সন্তান জন্মের যন্ত্র বিবেচনা করে। এই তো পুরুষ শাসিত সমাজ ব্যবস্থার চিত্র। আরব দেশে কন্যা জন্মালে হত্যা করা হতো। নারীকে শুধুমাত্র ক্রীতদাসী ও ভোগের সামগ্রী বিবেচনা করা হতো। নারী কেনা-বেচাও হতো।
ইসলাম র্ধম এসে নারীকে সেই অন্ধকার থেকে সামান্য একটু তুলতে সমর্থ হয়। নারীকে তার অধিকার ও মর্যাদা রক্ষায় নূন্যতম নির্দেশ দিয়েছে। এই নূন্যতমটা সেই সময়কার পুরুষরাও দিতে চায়নি। আর আজকের বিশ্বে সভ্যতা এগিয়েছে, মানবতা প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে, শুধু আমাদের ধর্মব্যাবসায়ীরা মানবিক হতে পারেনি। তারা নারীর সামান্য উন্নতি ঘটলে আর অবস্থান ভালো দেখলে ‘ধর্ম গেল’, ‘ধর্ম গেল’ বলে হৈ চৈ করে ওঠে।
নারী ধর্ষণ-নারী হত্যা-নারী পরিত্যাক্তা- যৌতুক তালাক দেয়া দেনমোহর না দেয়া, ফতোয়া ও দোররা মারা, পতিতাবৃত্তি-বিদেশে নারী পাচার করে দেহ ব্যবসায় বাধ্য হতে দেখলে এদের পামর হৃদয় কাঁদে না। এরা প্রতিবাদে-বিক্ষোভে সোচ্চার হয় না। তখন এদের ধর্মজ্ঞান জাগে না। একাত্তরে পাকসেনাদের নারী ধর্ষণকে এরা জায়েজ বলেছে। কখনও এর বিরুদ্ধে একটা কথাও বলে নি।
এখানে আরও একটি উল্লেখযোগ্য কথা না বলে পারছি না, ১৯৬১ সালে বহু বিবাহ বন্ধের বিরুদ্ধে যখন সারা পাকিস্তানে আইন করার আন্দোলন হয় তখন এই ধর্মীয় লেবাসধারীরা বিরোধিতা করে। জেনারেল আইয়ুব খান তখন আইন করে দেন প্রথম স্ত্রীর বিনানুমতিতে দ্বিতীয় বিবাহ করলে শাস্তি দেয়া হবে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে এরা সহ্য করতে পারে না। কেননা শেখ হাসিনা নারীর সঠিক উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে বিশ্বাসী। এরা শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী হতে দেখলে হৈ হৈ করে বলে ওঠে ‘নারী নেতৃত্ব হারাম’।
আর যখন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী হতে দেখে তখন এদের মনে হয় ‘নারী নেতৃত্ব আরাম। ’ খালেদার চারপাশে ভিড় করে তার উচ্ছিষ্ট লাভের জন্য। এরা তাই জ্ঞানপাপী এবং ধর্মপাপী। এরা ধর্মকে নিয়ে ব্যবসা করে ফায়দা হাসিল করতে, নিজেদের আখের গোছাতে। এরা বাঙালি ও বাংলাদেশের শত্রু ।
এরা প্রদীপ জ্বালালে হিন্দুয়ানি বলে, কিন্তু বিদ্যুৎ জ্বালালে খৃষ্টানি বলে না। কপালে টিপ দিলে হিন্দুয়ানি বলে, কিন্তু ঠোঁটে লিপস্টিক দিলে খৃষ্টানী বলে না। এরা যে মতলববাজ-ধান্দাবাজ এবং বাঙালি জাতির শত্রু সেকথা বলার অপেক্ষা রাখে না। এদের প্রতিরোধ করা আমাদের জাতীয় দায়িত্ব।
“জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১” ২৮পৃষ্ঠায় তিনটি ভাগে মোট ৪৯টি ধারা আছে এই নীতিমালায়।
সম্পূর্ণ বাংলা শব্দে, স্পষ্টভাবে সহজ ভাষায় এটি লিখিত। এই নীতিমালার কোথাও ধর্ম বিরোধী শব্দ নেই, তথ্য নেই, তত্ত্ব নেই এবং পদক্ষেপ নেই।
বাংলাদেশের সংবিধানে নারীর যেসব অধিকার ও সুযোগ রয়েছে এবং জাতিসঙ্ঘ নারীসনদে যেসব ধারা রয়েছে তারই আলোকে সরকারের নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে।
আমাদের সংবিধানে নারীর অধিকার স্বীকৃত আছে। সেখানে পাওয়া যায়:
১. “সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী।
” (২৭ অনুচ্ছেদ)
২.“কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী বর্ণ নারী-পুরুষভেদে বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করিবেন না। ”) (২৮(১) অনুচ্ছেদ)
৩. “রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী, পুরুষের সমান অধিকার লাভ করিবেন। (২৮(২) অনুচ্ছেদ)
৪. “কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ নারী-পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে জনসাধারণের কোন বিনোদন বা বিশ্বাসের স্থানে প্রবেশের কিংবা কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির বিষয়ে কোন নাগরিককে কোনরূপ অক্ষমতা, বাধ্যবাধকতা, বাধা বা শর্তের অধীন করা যাইবে না। ” (২৮(৩) অনুচ্ছেদ)
৫. “নারী বা শিশুদের অনুকূলে কিংবা নাগরিকদের যে কোন অনগ্রসর অংশের অগ্রগতির জন্য বিশেষ বিধান প্রণয়ন হইতে এই অনুচ্ছেদের কোন কিছুই রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করিবে না। ” (২৮(৪) অনুচ্ছেদ)
৬. “প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের ক্ষেত্রে কোন নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকবে।
” [২৯(১)]
৭. “কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ নারীপুরুষ ভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিক প্রজাতন্ত্রের কর্মের নিয়োগ বা পদলাভের অযোগ্য হইবেন না কিংবা সেই ক্ষেত্রে তাহার প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করা যাইবে না। ” [২৯(৩)]
সংবিধানের ৬৫(৩) অনুচ্ছেদে নারীর জন্য জাতীয় সংসদে ৪৫টি আসন সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। ৯ অনুচ্ছেদের অধীনে স্থানীয় শাসন সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান সমূহের উন্নয়নে নারীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হয়েছে।
সংবিধানে উল্লেখিত এইসব ধারার মধ্য দিয়ে নারী-পুরুষের বৈষম্য দূর করতে নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নেয়ার কথা আছে। জাতীয় ‘নারী উন্নয়ন নীতি-২০১১ এই সংবিধান প্রদত্ত অধিকারকেই নিশ্চিত করেছে।
এখানে ধর্ম বিরোধী আইন কোথায় হলো আমরা তো খুঁজে পাচ্ছি না। তবে নারী নীতিমালার কয়েকটি লক্ষ্যসমূহ তাদের গাত্রদাহের কারণ হতে পারে।
সেগুলো হলো:
১. ‘বাংলাদেশের সংবিধানের আলোকে রাষ্ট্রীয় ও গণজীবনের সকল ক্ষেত্রে নারী পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা’। (১৬.১)
২.‘ নারী-পুরুষের সমান বিদ্যমান বৈষম্য নিরসন করা। ’ (১৬.৮)
৩. ‘ স্থানীয় বা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কোন ধর্মের কোন অনুশাসনের ভুল ব্যাখ্যার ভিত্তিতে নারী স্বার্থের পরিপন্থী এবং প্রচলিত আইন বিরোধী কোন বক্তব্য বা অনুরূপ কাজ বা কোন উদ্যোগ গ্রহণ না করা’।
(১৭.৫)
৪. ‘বৈষম্যমূলক কোন আইন প্রণয়ন না করা বা বৈষম্যমূলক কোন সামাজিক প্রথার উন্মেষ ঘটতে না দেয়া’। (১৭.৬)
৫. সম্পদ, কর্মস্থান, বাজার ও ব্যবসায় নারীকে সমান সুযোগ ও অংশীদারিত্ব দেয়া। (২৩.৫)
৬. ‘উপার্জন, উত্তরাধিকার, ঋণ, ভূমি এবং বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অর্জিত সম্পদের ক্ষেত্রে নারীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রদান করা। ’ (২৫.২)
৭. নারীর ব্যাপক কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট আইন, বিধি ও নীতির প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হবে। (২৬.৬)
নারী উন্নয়ন নীতি-২০১১-এর লক্ষ্যসমূহ কোথাও কোন ধর্ম বিরোধী কথা বলা হয়েছে– এটা মূর্খ, নারী বিদ্বেষী, ধর্মান্ধ, ধর্ম ব্যবসায়ী ছাড়া আর কেউ উচ্চারণ করতে পারে না।
যারা প্রকৃত ধর্মচর্চা করেন, ধর্মীয় আদর্শ মেনে চলেন তারা সংবিধান প্রদত্ত অধিকার ভোগ করছেন, শিক্ষার্জন করছেন ও চাকুরিতেও নিয়োগলাভ করছেন। তারা তো কোন বাধা বা সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন একথা তো শোনা যায় না। নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে ১৯৭৯ সালের ডিসেম্বরে জাতিসঙ্ঘের নারী সনদ গৃহীত হয় এবং ১৯৮১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সেটা কার্যকর করার জন্য বিশ্বের সব রাষ্ট্রকে আহ্বান করা হয়।
আগে নারীরা অশিক্ষিত ছিল, এখন শিক্ষাপ্রাপ্ত হচ্ছে। নিজের ঘর-সংসার এবং মা-বাবার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিচ্ছে।
সমাজের যে দায়িত্ব ছেলেদের পালন করার কথা, সেটাও তারা আজকাল নিজের কাঁধে তুলে নিচ্ছে। নারীরা স্বাধীন ব্যবসায় লিপ্ত হচ্ছে, যে ধরনের ব্যবসা আমাদের নবীর স্ত্রী বিবি খাদিজা (রা.) তাঁর জীবদ্দশায় প্রায় এক হাজার পাঁচ শ বছর আগে করে গেছেন। যে নারী জাতিকে রাসুলুল্লাহ (সা.) বারবার মায়ের সম্মান দান এবং ভক্তির কথা বলে গেছেন, সেই নারী জাতির প্রতি মুফতি আমিনীর এ রকম বিশ্বাস এবং আস্থা দেখে আমাদের দেশের নারীরা মোটেই আশ্চর্য হননি। কারণ নারীর প্রতি বিশ্বাস এবং ভক্তি মানুষের ছেলেবেলা থেকে, যখন সে মাতৃক্রোড়ে, তখন থেকেই জন্ম নেয়। আমিনীর ছেলেবেলায় নিশ্চয়ই এমন কোনো ঘটনা ঘটেছে, যেখানে তিনি নারীকে স্বৈরিণীর ভূমিকায় দেখেছেন এবং সেই ভূমিকার কথা তাঁর মন থেকে এখনো মুছে যায়নি।
আমিনী হয়তো এ কথা জানেন না, নারীকে বোরখার আড়ালে ঢেকে রাখলেও এবং তাঁর পায়ে শিকল পরালেও সে ইচ্ছা করলে প্রতিবছর জারজ সন্তান পয়দা করতে সক্ষম। এমনকি এ কথাও জোর দিয়ে বলা যায় যে পৃথিবীর কোনো পুরুষই আজ পর্যন্ত জানেন না তাঁদের প্রকৃত জনক বা বাবা কে! একমাত্র মায়েরাই জানেন তাঁদের সন্তানের প্রকৃত জনক কে। তবুও সেই মায়ের চরণেই রাসুলুল্লাহ (সা.) তিনবার করে ভালোবাসা এবং ভক্তি নিবেদনের কথা বলে গেছেন। কারণ ইসলামের মূল কথা হলো বিশ্বাস। বিশ্বাস ছাড়া এ পৃথিবী এক চুলও নড়তে পারে না, সামনে এগোতে পারে না।
ছেলেবেলা থেকে আমিনীর সেই বিশ্বাসেই কোথাও চোট খেয়ে গেছেন, সেই অবরুদ্ধ মানসিক জটিলতা থেকে তিনি আর বেরোতে পারছেন না। এখন এই বয়সে এসে আমি দিব্যচোখে দেখছি, ভবিষ্যতে এসব তথাকথিত পীরের সঙ্গেই দেশের নারীদের টক্কর বাধবে। কারণ আমিনীর মতো মানুষরা মনে করেন, নারীর জারজ সন্তান উৎপাদন বন্ধ করতে হলে নারীকে বন্দি করে রাখতে হবে ঘরের চার দেয়ালের ভেতর। আমিনীদের হয়তো জানা নাই, নারীর অধিকাংশ অবৈধ সন্তান জন্ম হয় ঘরের চার দেয়ালের ভেতরেই, ঘরের বাইরে নয়। বিভিন্ন সমীক্ষায় জানা গেছে বিভিন্ন ব্রথেলে গিয়ে নারীদের জিজ্ঞেস করে , কেন সে মুসলিম গৃহস্থ ঘরের মেয়ে হয়েও বেশ্যালয়ে এসে হাজির হয়েছে? অধিকাংশ মেয়েই বলেছে, তারা তাদের নিকটাত্মীয়স্বজনের দ্বারা উৎপীড়িত হয়েই ঘর ছেড়েছে।
আমিনীদের মতো মানুষকে বুঝতে হবে, মায়ের পরিচয়ই হচ্ছে মানুষের সবচেয়ে বড় পরিচয়। আমিনীরা এত বছর ধরে যে রাজনীতি করছেন সেটি একটি জারজ রাজনীতি, কারণ বাঙালি হয়ে, গরিব বাংলা মায়ের ঘরে জন্ম নিয়ে, মাতৃভূমিতে উৎপাদিত সবুজ শস্যে পালিত হয়ে, হৃষ্টপুষ্ট হয়ে তিনি যে রাজনীতির পসরা খুলে বসেছেন_এ দেশে সেটি হলো পাকিস্তানের ঔরসে জন্ম নেওয়া এক রাজনীতি_যার সঙ্গে আমাদের দেশের ১৬ কোটি মানুষের কোনো সম্পর্ক নেই। কোনো মাতৃভূমিই আর যা-ই হোক, জারজ সন্তান চায় না।
ইসলাম পূর্ব যুগে আমরা দেখেছি বিবি খাদিজা বিধবা হয়ে স্বামীর রেখে যাওয়া ব্যবসা নিজে নিয়ন্ত্রণ করতেন। তিনি আমাদের নবী হযরত মোহাম্মদ (দ কে তার ব্যবসা দেখাশোনার কাজে নিয়োগ করেন।
পরে তার সততা, আদর্শ ও দক্ষতায় মুগ্ধ হয়ে তাকে বিবাহ করেন এবং তিনিই প্রথম মানুষ যিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। বিবি খাদিজা বিশাল সম্পত্তি অর্জন ও ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন, এতো এক মহা অনুসরণীয় আদর্শ আজকের নারীর কাছে। তাহলে এই তথাকথিত ধর্মবাজরা কেন নারীকে অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী হতে দেবে না। নারী ভালো থাকুক, সুস্থ থাকুক, সম্পদশালী হোক, ক্ষমতাসীন হোক, মেধা ও শ্রম শক্তি দ্বারা অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী হোক এটা তারা চায় না।
যেখানে ধর্ম-শিক্ষা-সংস্কৃতি-উন্নয়ন আমাদের জীবনযাপনে কোন ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারবে না।
আমরা সবাই যেন মানুষ হই, মনুষত্ব ও বিবেকের আলোকে আমরা যেন পরিবারে, সমাজে ও রাষ্ট্রে মানবিক অবদান রাখতে পারি। শুধু নারী নয়, পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে উঠুক উন্নততর জীবনাদর্শে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মানব সম্পদের উন্নয়নে বিশ্বাসী। পরিবারে ও সমাজে উন্নয়নের স্পর্শ থেকে নারী পুরুষ শিশু কাউকে বঞ্চিত, অবহেলিত ও পশ্চাৎপদ দেখতে চাই না। ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করা ইসলামে নিষিদ্ধ।
ধর্মকে পুঁজি করে যারা মানুষকে নিপীড়ন ও অবদমিত রাখতে চায়, তারা মানুষেরই শত্রু।
সৌজন্যে: হামিদুর রহমান পলাশ
শব্দনীড়
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।