লেখার চেয়ে পড়ায় আগ্রহী। ধার্মিক, পরমতসহিষ্ণু। সম্প্রতি ভারত-বাংলাদেশে সম্প্রদায়-ঘনিষ্ট রাজনীতি বা ধর্মভিত্তিক রাজনীতির একেবারে পুরোধা শ্রেণির দুজন ব্যক্তির প্রয়াণ হল। একজন ভারতের বাল ঠাকরে এবং অপরজন বাংলাদেশের মুফতি ফজলুল হক আমিনী। তাদের মৃত্যুর বিষয়টি স্বাভাবিক অর্থাৎ রোগাক্রান্ত পরিস্থিতির সঙ্গে জড়িত।
কোনো অপঘাত-অঘটন-জনিত নয়। তাই আমাদের রক্ষা! তবুও মৃত্যু তো মৃত্যুই। বন্ধুর হোক আর শত্র“র হোক, তা শোকাবহ এবং আপনজনদের মাঝে তা ঘনিষ্টতার মাত্রা অনুসারে এক ধরনের শূন্যতা সৃষ্টি করে।
আপাতত তাদের মাঝে দেশ বা ধর্মকেন্দ্রিক কোনো ঘনিষ্টতা ছিল না। কিন্তু একটি বিষয়ে তাদের সাদৃশ্য সূর্যের মতো উজ্জ্বল, এটা আশা করি কেউ অস্বীকার করবেন না।
আর তা হল রাজনীতির ক্ষেত্রে বালঠাকরের আশ্রয় হিন্দুয়ানি মতাদর্শ, হিন্দু মৌলবাদ তথা হিন্দত্ববাদ, এবং মুফতি আমিনীর আশ্রয় মোল্লাতন্ত্র তথা ইসলামি মৌলবাদ। অর্থাৎ দুজনের সিঁড়ি হল ধর্ম এবং এ বেয়েই তারা দুজন খ্যাতির শীর্ষে আরোহণ করেন।
বাল ঠাকরের পিতা ছিলেন সাম্যবাদী রাজনীতির উচ্চ পর্যায়ের নেতা। কিন্তু বাল ঠাকরে জীবনের সূচনা করেন পিতার বিপরীত অবস্থান থেকে। বলা যায়, বাল ঠাকরের হাতেই পিতার গড়ে তোলা ‘মানুষের জন্য আন্দোলন’-এর সমাধি ঘটে।
বাল ঠাকরের পিতা সাধারণ শ্রমিকদের স্বার্থ-রক্ষার উদ্দেশ্যে গঠন করেছিলেন একাধিক শ্রমিক ইউনিয়ন। পুত্র বাল ঠাকরে একে একে সেই-সব শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের জীবন-নাশের মাধ্যমে মুম্বইয়ে তার রাজনৈতিক আসন পাকাপোক্ত করেন। ধর্মের সঙ্গে তিনি মারাঠিদের জাতিবোধকে উষ্কে দেন আর এভাবেই মহারাষ্ট্রকে পৃথক রাজ্যের মর্যাদায় অভিষিক্ত করেন। অপরদিকে মুফতি আমিনীর পিতা একজন সাধারণ মানুষ ছিলেন। চলমান রাজনীতি ও বিশ্বব্যবস্থা সম্পর্কে তার খুব একটা গভীর যোগাযোগ ছিল, তেমন জানা যায় না।
কিন্তু আমিনী যেই প্রতিষ্ঠানে বেড়ে উঠেন, সেই প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ গুরুদের সাহচর্য তাঁর জীবনে পরিবর্তনের সূচনা করে। মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী তাঁর প্রথম জীবনের গুরু হলেও তাঁর প্রভাব আমিনীর জীবনের খুব একটা নেই। এমন কি যেই হাফেজ্জী হুজুরের হাত ধরে তিনি বাংলার মাঠে রাজনীতির রশি পাকান, তাঁর আদর্শও খুব একটা বাসা বাঁধতে পারে নি মনের গভীরে। ফরিদপুরী এবং হাফেজ্জী দুজনই ছিলেন ক্ষমতা ও লোভ-লালসার রাজনীতি থেকে যোজন যোজন দূরে এবং অবশ্যই ভীষণ রকমের যুগ-সচেতন।
মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী বলতেন, ‘রাজনীতিবিদকে বিশেষত ইসলামী রাজনীতি যারা করেন, তাদেরকে ন্যূনতম পক্ষে আগামী পঞ্চাশ বছরের জন্য দূরদর্শী হতে হবে।
সেই অনুসারেই তাদের রাজনীতি পরিচলিত হবে। ’ অপরপক্ষে, তৎকালীন পাক-শাসক আইয়ুব খান রাজনৈতিক উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য যখন তাঁকে মোটা অঙ্কের নগদ উপঢৌকন দিয়েছিলো, ফরিদপুরী তখন এই বলে তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন যে, তিনি বাজারের গরু বা বলদ নন যে, তাকে টাকা দিয়ে খরিদ করা যাবে! পুরোটা জীবন মাওলানা ফরিদপুরী মাদরাসার চার দেওয়ালের ভিতরই কাটিয়ে দেন। এ ধরনের নিস্পৃহতার বিষয়ে আমিনীর প্রবণতার আলোচনায় পরে আসছি। এবারে আসি হাফেজ্জী হুজুরের সাধামাটা জীবন-দর্শন, গভীর মানবিক চেতনা, দূরদর্শিতা ও মানবতাবোধ বিষয়ে। প্রায় জীবনের অর্ধেক বা তারও বেশি সময় হাফেজ্জী হুজুর মাদরাসার চার দেয়ালের বাধা জীবন পার করেও একাত্তরে এসে দেখতে পেলেন পাকিস্তানি শাসক ও জান্তার নির্মম জুলুম-নির্যাতন।
একাত্তরের এ পর্বে আবেগী পাকিস্তান-প্রেমী তরুণরা তার কাছে করণীয় স্থির করার জন্য প্রস্তাব করে। তরুণদের আবেগী বা ধর্মাচ্ছন্নতার সায় ছিল পাকিস্তানের পক্ষ নেওয়া এবং মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করা। হাফেজ্জী হুজুরের কাছে সে অনুসারেই একটি নির্দেশনার প্রত্যাশা ছিল। তিনি যে উত্তর দেন, (শোনা মতে) তাতে সে সময়ের তরুণরা আশাহত হয় এবং নিজেদের গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়। তিনি উত্তর দেন, ‘বাঙালিদের এ প্রতিবাদ হল জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের ফরিয়াদ’।
অর্থাৎ তিনি বাঙালিদের পক্ষে। কিন্তু তখন তিনি যেহেতু রাজনীতি-বিমুখ, তাই এ ব্যাপারে রাজনৈতিক কোনো অবস্থান স্পষ্ট করেন নি। কিন্তু বিবেকী অবস্থান যে কতটা স্পষ্ট, তা ওপরের বক্তব্যেই ধৃত। স্বাধীনতার পরও যখন মানুষের প্রতিশ্র“ত মুক্তির বিষয়ে তিনি হতাশা বোধ করেন, তখন পেছনের খানকাহবন্দি জীবনের জন্য অনুতাপ প্রকাশ করেন। তিনি মানুষের মুক্তির জন্য রাজনীতির আহবান জানান।
যেহেতু তিনি রাজনীতি-অনভিজ্ঞ, তাই রাজনীতির ক্ষেত্রে গভীর কোনো স্রোত তৈরি করতে পারেন নি সত্য। কিন্তু চারপাশে প্রলোভনের অনেক ফাঁদ ছিল, নগদ অনেক কিছুর হাতছানি ছিল, তিনি সব কিছুকে নিখাঁদ সাধু-সন্তুর মতো এড়িয়ে যান, পেরিয়ে যান। এই হাফেজ্জীর শাগরেদ ও জামাতাই হলেন মাওলানা ফজলুর হক আমিনী।
এ দুজনের আলোচনাটা দীর্ঘ করার উদ্দেশ্য হল বাল ঠাকরের সঙ্গে তাঁর তুলনাটাকে স্পষ্ট করা। বাল ঠাকরে পিতার মতবাদই গ্রহণ করতে পারতেন।
করেন নি। কিন্তু মুফতি আমিনীর প্রাতিষ্ঠানিক পিতা তথা আত্মিক পিতাদের নিকট থেকে তিনি রাজনীতির সবকটুকু নিয়েছেন বটে। কিন্তু যতটুকু তাঁর প্রয়োজন ছিল, ঠিক ততটুকুই। তাদের আত্মার মূল আকুতিটুকু তিনি কীভাবে গ্রহণ করেছেন, তা বাইরে থেকে আমরা কিছুই দেখতে পাই নি। এর কোনো প্রকাশও ঘটে নি।
তবে এর বিপরীত যে অপ-লক্ষণগুলো তাকে গ্রাস করেছিল এবং সংবাদ-মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা প্রায় অনেকেরই জানা।
বাল ঠাকরে মহারাষ্ট্রীয় দাবি-দাওয়া নিয়ে নিজ অঞ্চলকে উত্তপ্ত রেখেছেন। পুরো মুম্বই ছিল তার হাতের কব্জায়। আর ধর্মীয় মৌলবাদের নিরিখে তিনি বিজেপির মূল মন্ত্রদাতা। নব্বই দশকে বিজেপির উত্থান এবং ক্ষমতারোহণ তার নিজস্ব ধর্ম-দেশনার ভিত্তিতেই।
তাই তিনি পুরো ভারতকে উতাল-পাতাল করেছেন এই ধর্মবোধকে কেন্দ্র করেই। ধর্মবোধের বা ধর্মাচ্ছন্নতার এ পর্যায়েই তিনি ‘রামজনমভূম’-এর তত্ত্ব আওড়াতে থাকেন, আর এ জোয়ারেই ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদকে নির্মমভাবে শহিদ হতে হয়। বাবরি মসজিদ ভাঙার পর ভারতে যে দাঙা দেখা দেয়, তাতে পুরো পৃথিবী কেঁপে উঠেছিল। কিন্তু বাল ঠাকরে ছিলেন সম্পূর্ণ নিস্তরঙ্গ-নিস্পৃহ। মানুষের প্রাণহরণে তার কোনো অনুতাপ নেই।
তার একান্ত আগ্রহ ক্ষমতা। আর এজন্যই নিজের জীবনকে তিনি জনতার চোখ থেকে আড়াল করেন অত্যন্ত কৌশলে। অবশ্য বাবরি মসজিদ ভাঙার পর বিজেপি ক্ষমতার মসনদে বসলে জনতার মোহ ভাঙে। জনতা বুঝতে পারে যে, ধর্মের দোহাই দিয়ে এরা শুধু নিজেদেরে আখের গোছানোর জন্যই ক্ষমতার মসনদে আসীন হয়। এরপর মুম্বইয়েও তাঁর প্রভাব মিইয়ে আসতে থাকে।
কিন্তু চতুর এবং সচেতন বাল ঠাকরে জনতাকে মোহিত করার জন্য মুম্বইয়ে যে পদক্ষেপ নেন, তা আমাদের দেশের পেশাদার রাজনীতিবিদদের মাথায়ও কাজ করে না, করবে না; মোল্লা-মুনশি তো অনেক দূরের কথা। তিনি বস্তিবাসী লোকদের জন্য আবাস নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেন। আর মুম্বইয়ের বস্তিকে স্বাস্থ্যসম্মত ও বাসযোগ্য করে গড়ে তোলার প্রকল্প নিয়েই তিনি মুম্বইয়ে নিজের নায়কত্ব ধরে রাখেন। অর্থাৎ তিনি এক জায়গায় থেমে থাকেন নি। ধর্মের বায়বীয় বাক্য অতিক্রম করে তিনি তখন মাটি ও মানুষের রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
আমিনীর পরিচিতি আমাদের দেশে বিশেষ রকমের ফতোয়া-প্রসূ মুফতি হিসাবে এবং তাঁর ফতোয়ায় ইতিবাচকতার তুলনায় নেতিবাচকতার উপাদান ছিল বেশি। যে ফতোয়া শান্তির ধর্ম ইসলামের একটি অপরিহার্য অঙ্গ, সেটা তাঁর হাতে এক রকমের রঙ্গ-রসিকতায় পরিণত হয় এবং অনেকের মানসিক পীড়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ফতোয়ার মাধ্যমে তাঁর রাজনৈতিক মেরুর বিরোধী শক্তিকে তিনি ঘায়েল করার চেষ্টা করতেন হরহামেশাই। এভাবেই তিনি ব্যাপক হারে দেশের জনতাকে, বিশেষত সুশীল সমাজকে ক্ষেপিয়ে তুলেন। তারপরও যেহেতু এটি ধর্মান্ধ বা ধর্মাচ্ছন্ন দেশ, তাই এখানেও তার অনেক ভক্তবৃন্দ ছিল।
উপরন্তু তিনি প্রচলিত ধারার কওমি মাদরাসার প্রিন্সিপাল বা সর্বাধিক মান্য বুখারির পাঠদাতা। এজন্যই তার একনিষ্ঠ ভক্তকুল থাকা বিচিত্র নয়। কিন্তু এই ভক্তকুলকে শক্ত কোনো অবস্থানে তিনি দাঁড় করাতে পারেন নি, হয়ত সে ইচ্ছা বা যোগ্যতাও তার ছিল না। তাই তার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই তার আচরিত রীতি ও গঠিত দলের ইতি দেখতে পাচ্ছি। অথচ বাল ঠাকরের পর কিন্তু তার দলের স্রোত বহমান আছে।
যতদিন দল টিকা থাকার উপাদানগুলো অক্ষুণ্ণ থাকবে, ততদিন তা টিকে থাকবে, তা যত ঝড়-তুফানই আসুক।
ধর্ম যে শুধু পরকালের পরিত্রাতা নয়, ইহকালেও এর প্রয়োগ আছে, তা আমিনীর ধর্ম চর্চায় এবং ধর্মভাষণে খুব একটা গুরুত্ব পেত না। তার অনুরাগীদের চোখ খোলার কোনো প্রকল্প তিনি হাতে নেন নি। বরং অন্ধকারের ঘেরা টোপে তাদের আচ্ছন্ন রাখতেই তিনি আনন্দ পেতেন। তাই তাকে গ্রেফতার করার প্রতিবাদে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অচ্ছন্ন তরুণদের প্রাণ ঝরে গেলেও তাদের কোনো প্রাপ্তি ঘটে নি।
ঘটনার সময়ে যাদের হত্যার বিচার হবে বলে প্রতিশ্র“ত দেওয়া হয়েছিল, সেই মামলার কোনো গতিই তার শাসনামলে হয় নি।
তাঁর একান্ত আগ্রহ ছিল ইহুদি লুই আই কানের নির্দেশনায় গড়া সংসদভবনে পা রাখা। তাই নিজ জন্মস্থানের বাইরে অন্য থানায় বোনা বিএনপির জমির ফসল নিজ ঘরে তুলে নিয়ে আসেন। এতে তার কোনো রকমের অনুশোচনা ছিল না। শোনা যায়, বিএনপির নেত্রী তাকে নির্বাচন না করেও টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী বানানোর প্রস্তাব দিয়ে ছিলেন।
কিন্তু তিনি এতে আশ্বস্ত হতে পারেন নি। তাই অপর এক এলাকায় প্রার্থী হওয়ার জন্য গোঁ ধরে বসেন। তিনি পাস করেন, তবে নিজ কোনো প্রতীক নিয়ে নয়, জিয়া-খালেদার ধানের শীষ প্রতীক নিয়েই। তাই এ বিজয় কতটা তার নিজের কৃতিত্ব, সে প্রশ্ন কিন্তু রয়েই গেল। তিনি পাশ করার পর এলাকায় শুরু হল মোল্লা-মৌলবির দৌরাত্ম, সরকারি দান-অনুদানে ভোগ-লুটের ধর্মতান্ত্রিক কর্তৃত্ব! পুরুষ মাদরাসা, মহিলা মাদরাসা আর নানা ওয়াজ মাহফিলের টাকা সংগ্রহের উৎসব।
তার সাঙ্গপাঙ্গরা সবাই এ সময় বেশ রমারমা অবস্থানে ছিলেন। বিএনপির শাসন শেষ, মুফতি আমিনীর কর্তৃত্বও শেষ। মোল্লামৌলবির অবস্থা একেবারে মিইয়ে যাওয়া মুড়ির মতো হয়ে পড়ে। কারণ, রাজনীতির মাঠে ধর্মের বাইরে অন্য কোনো মাত্রা তিনি সংযোজন করতে পারেন নি, যেমনটা পেরেছেন বাল ঠাকরে। বাল ঠাকলে নিজের এলাকায় প্রতিষ্ঠিত, কিন্তু আমিনী নিজ এলাকায় অপাঙক্তেয়।
সদর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিনি নিজ গ্রামের সকল ভোট পাবেন কিনা সন্দেহ। তা না হলে নিজের সদর এলাকা ছেড়ে নিরীহ নেতা উকিল আবদুস সাত্তারের পাওনায় ভাগ বসাতেন না।
শোনা যায়, হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে মাঠ-তাতানোর বক্তব্য দিয়ে এরশাদের নেক নজরে আসেন। এরশাদ তখন তাঁকে যে হাদিয়া দেন, তা আমৃত্যু এরশাদের প্রতি নমনীয় করে রেখেছে। এ জন্য এরশাদের বিরুদ্ধে তিনি খুব একটা উচ্চবাচ্য করতেন না।
বিএনপির আমলে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর চারদলীয় জোটের মন্ত্রিত্ব ভাগ-বাটোয়ারার সময় গুটিকয় ক্ষুদ্র ইসলামী দলের সমন্বয়ে গঠিত ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যানকে একটি মন্ত্রিত্ব দেওয়ার প্রস্তাব ওঠে। আর যায় কোথা? রাতারাতি তিনিই ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যানের পদে সমাসীন হন! মানে নিজেকে চেয়ারম্যান হিসাবে ঘোষণা করেন, দাবি করেন। অথচ তখন ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান ছিলেন তার শিক্ষাগুরু মাওলানা আজিজুল হক (শাইখুল হাদিস)। শিক্ষকের পদটুকু ছিনিয়ে নিয়ে মন্ত্রিত্ব নেওয়ার জন্য এতটাই ব্যাকুল ছিলেন তিনি! ইসলামী ঐক্যজোটের পদ নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হলে চারদলীয় সরকার মন্ত্রিত্ব বিভাজনে বিরত থাকে। আমিনী তখন গোস্বা করে জোট ত্যাগের ঘোষণা দেন।
কিন্তু খালেদার সঙ্গে গোপন আলোচনার পর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন!
সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়কের নির্বাচনে চৌদ্দ দলীয় মহাজোট আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ক্ষমতায় বসে। এরা প্রথম থেকেই মাওলানা ফজলুল হক আমিনীকে নানা ভাবে হয়রানি করতে থাকে। নিশ্ছিদ্র গৃহবন্দিত্বসহ তার ছেলেকেও অপহরণ করা হয়। তার ছেলেকে ফেরত দেওয়া হলেও তার স্বাধীন চলাফেরার কোনো সুযোগ তৈরি হয় নি, ছিল না। এ অবস্থাতেই তার মৃত্যু ঘটে।
মাথামোটা গবেট আওয়ামী অপকর্মের এ এক নতুন সংযোজন! কারণ, নির্বাচনী এলাকায় আমিনীর কোনোই আকর্ষণ ছিল না। তাকে মুক্ত রাখলেও আওয়ামী লীগের কোনো ক্ষতি বৃদ্ধি হত না।
বাল ঠাকরের মৃত্যুতে পুরো মুম্বই জগৎ নিস্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। আমিনীর জন্য সেটা হয় নি। কিন্তু তাঁর যে অন্ধ জন সমর্থন রয়েছে, তাও কিন্তু কম নয়।
হরতাল-অবরোধের মাঝখানে দেশটা যখন চিঁড়ে-চ্যাপটা, তখনও দূর-দূরান্ত থেকে তার জানাজায় ব্যাপক জন-সমাগম ঘটেছে। দেশ শান্ত থাকলে এবং রাজনৈতিক কর্মপ্রক্রিয়ার স্বাভাবিক পরিবেশ থাকলে নতুন কোনো মুম্বইয়ি পরিবেশ হয়ত আমাদের দেখতে হত। তবে বিরোধী দল ক্ষমতায় থাকার পরও মুম্বইয়ের নিস্তব্ধতা প্রমাণ করে ধর্ম-ব্যবহার করেও আমিনী বাল ঠাকরের সমান হতে পারেন নি। তারপরও মুসলমান হিসাবে আমিনীর জন্য মাগফিরাত কামনা নৈতিক দায়িত্ব। আল্লাহ, আমাদের সবাইকে ক্ষমার চাদরে ঢেকে দিন এবং সহায় হোন।
আমিন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।