পরিচয়: মানুষ; ঠিকানা: পৃথিবী; ধর্ম: মনুষ্যত্ব সূর্যের রগ কেটেই দিলে সে এখন আর পৃথিবীর চারপাশে ঘুরবে না এবং ধর্মের দোয়াত কালিতে ইতিহাস অন্ধকার করে দিলেও গ্যালেলিও-রা পৃথিবীর পৃষ্ঠা থেকে মুছে যাবে না। সত্য সতত সময়ের সমানুপাতিক এবং প্রবাহমান প্রতিটি প্রজন্মে। একজন সানিউরকে কুপিয়ে রক্তাক্ত করে কুসংস্কার আর কূপমণ্ডূকতার ভাইরাস সমাজের সেন্টিমেন্টে ইনস্টল করা যায় না। এটা একুশ শতক এবং বসন্ত, মধ্যযুগের সেই অন্ধকারে ব্রুনো-রা পুড়েনি, বরং জ্বালিয়ে ছিল সলতে। যার আলোতে আধুনিক সভ্যতা বিকশিত হয়েছিল, যুগে যুগে সক্রেটিসরা হেমলক পান করেই কিন্তু মানবজাতিকে বৌদ্ধিক বিলুপ্তির হাত থেকে পরিত্রাণ দিয়েছিল।
আমাদের সমাজে আজও ধর্মের সমালোচনা প্রচল বলেই কতিপয় ধর্মব্যবসায়ীদের ধর্ষণপ্রবণ আগ্রাসনে মানবতার সতীত্ব কুলশিত হয় না। মানুষের নৈতিক শৃঙ্খলা রক্ষায় সমাজে ধর্মের প্রয়োজন যেমন আছে, তেমনি ধর্মাশ্রিত কুসংস্কার প্রতিরোধেও ধর্মীয় সমালোচনার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। 'স্বর্ণ'-কে তার সতীত্বের প্রমাণ দিতে হলে কষ্টি পাথরের কঠোর-কঠিন আঘাতের মুখোমুখি হতেই হবে! তেমনি ধর্ম-কে কিংবা কোন মতাদর্শকে তার অস্তিত্বের সত্যতা ও সার্থকতার প্রমাণ দিতে হলে প্রতিটি প্রজন্মেই নাস্তিক ও অবিশ্বাসীদের তীব্র-তীক্ষ্ণ সমালোচনার মুখোমুখি হতেই হবে। যুগে যুগে ধর্ম-অবতারগণও এই কঠিন বাস্তবতাকে এড়িয়ে যেতে পারেননি। অসির জবাব অসিতে হয়, মসীতে নয়।
মসীতে কেবল ব্যক্তি মানুষকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়া যেতে পারে, তার আদর্শকে নয়, চিন্তা-চেতনা-মুক্তবুদ্ধির বিকাশকে নয়। চাপাতির দক্ষতায় সত্যকে সাময়িক আড়াল করা, মিথ্যাচারের মোড়কে আচ্ছাদিত করা যায় হয়ত, কিন্তু বিলুপ্ত করা অসম্ভব। অতি ধার্মিকদের পাশবিক আগ্রাসন, তাদের যৌক্তিক-বৌদ্ধিক অন্তঃসারশূন্যতাই প্রমাণ করে আর কিছু না। কোন সত্য মতবাদ প্রমাণে-প্রচারে-প্রসারে চাপাতির তীক্ষ্ণতা দেখাতে হয় না, রক্তপাতের প্রয়োজন হয় না, প্রোপাগান্ডার প্রয়োজন হয় না; মৌলবাদের নগ্ন আগ্রাসনে কোন মানুষের বাক-স্বাধীনতাকে নির্বাক করে দেয়ার নাম ধর্মাচার কিংবা ধর্ম-প্রচার হতে পারে, কিন্তু কিছুতেই একে সুস্থ মানবাচার বলে স্বীকৃতি দেয়া যায় না। নিউটন-আইনস্টাইনরা তাদের তত্ত্বের-তথ্যের সমসাময়িক বিরুদ্ধাচারীদের বিপরীতে ঢাল-তলোয়ার হাতে মাঠে নামেননি বরং যুক্তিতে-বুদ্ধিতে তাদের প্রতিহত করেছেন কিংবা করতে চেয়েছিলেন।
পশ্চিমের মানুষ ইতিহাসের পাঠোদ্ধারের মাধ্যমে তাদের ধর্মাচারে সম্যক সংশোধনী এনেছে, যা আজও উপমহাদেশীয় ধর্ম-হুজুগেরা পারেনি। যার ফলে এখানে এখনও একদল স্ক্রিজোফ্রেনিয়া রোগী চাঁদে-সূর্যে শয়তানের প্রতিকৃতির হ্যালুসিনেশান দেখে প্রায়শই প্রাণহননে প্রলুব্ধ হয়।
চাপাতির আঘাতে হয়ত সানিউরের শারীরিক চেতনার গতিরোধ করা যেতে পারে, তবে বৌদ্ধিক চেতনার বিকাশকে নিউক্লিয় শক্তির আগ্রাসনেও প্রতিরোধ করা যায় না। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।