বউপাগলা বলে পরিচিত যিশু আমাদের অফিসের পিয়ন। বয়স ৩০ ছাড়িয়ে গেছে অনেক আগেই। কথায় কথায় বউকে টেনে আনে বলে তাকে আমরা এই উপাধি দিয়েছিলাম। কয়েকটা উদাহরন দিলে ব্যাপারটা স্পষ্ট হবে। একবার অফিসের ক্যান্টিনে বসে লাঞ্চ করছি।
অনেকগুলো মেনুর মধ্যে একটি ছিল সরষে ইলিশ। কি খান স্যার? ইলিশ? এই ইলিশ মাছটা আমার বউ যা মজা করে রান্ধে না! একবার খাইলে সারাজীবন মনে থাকব আপনের! উত্তরের আশা না করেই যিশুর ঝটিকা মন্তব্য। আরেকবার স্যার খুব ধমকে দিয়েছেন যিশুকে। দেখি, সে মন খারাপ করে বসে আছে। চোখ থেকে জল পড়ছে টপ টপ করে।
বললাম, এইটুকু ধমক ধামক স্যারেরা এমনিতেই দেয়। অতো গায়ে মাখলে চলে? সে উত্তরে বলল, স্যারের ধমকের জন্য কানছি না স্যার। কাল রাতে মশারি না টানিয়ে দেয়ায় বউকে খুব ধমক দিসিলাম। বউ কান্না শুরু করলে আরো ধমক দিলাম। এখন বুঝতেসি বউকে ধমক দেয়ার কারনেই আমি ধমক খাইলাম।
আমার বউয়ের আবার পিরাকি লাইন আছে। বললাম, বউকে খুব ভালবাসো, তাই না? হ স্যার। মাথা নুইয়ে যিশুর ঝটপট জবাব।
দুর্ভাগ্য যিশুর বউ এর। যিশুর সেই অপার ভালবাসা তার জীবনে বেশিদিন সইল না।
বাচ্চা প্রসবের সময় মারা গেল সে। বউ মারা যাবার পর প্রথম যেদিন অফিসে আসল সেদিন খোঁচা খোঁচা দাড়ি, উস্কোখুস্কো চুলের যিশুকে ঠিক অপ্রকৃতিস্থের মতো লাগছিল।
তারপর ধীরে ধীরে যিশু স্বাভাবিক হল। বছর যেতে না যেতেই আবার বিয়ে করল সে। অবারো সেই আগের যিশু! কথায় কথায় বউ আর বউ! এবং একদিন আমাকে রুই মাছের মুড়িঘন্ট খেতে দেখে সে বলল, স্যার আমার বউটা না যা মজা করে রুই মাছ রান্ধে।
একবার খাইলে সারাজীবন মনে থাকব আপনের! জিজ্ঞেস করলাম, বউকে খুব ভালবাসো, তাই না? হ স্যার। মাথা নুইয়ে যিশুর জবাব! ঘটনা ও কথার পুনরাবৃত্তিতে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করতে চাইলাম, তোমার কাছে কোনটা ফেক্টর? বউ, নাকি বউ পদবীর পেছনের মানুষটা? নাহ! প্রশ্নটা বোধ হয় যিশুর জন্য অনেক বেশি কঠিন হয়ে যাবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।