মেয়েটি পাশের বিল্ডিং-এ থাকে। ছেলেটির সাথে রোজ বিকেলে চোখাচোখি হয় ছাদে উঠলে। মেয়েটি যে সব সময়ই ছেলেটিকে লক্ষ্য করে ব্যাপারটা তা নয়। তবু, ছেলেটির ধারণা, রোজ বিকেলে তাদের চোখাচোখি হচ্ছে। এই লোভেই ছেলেটি একদিনও ছাদে উঠা মিস করে না।
পাশাপাশি বিল্ডিং-এ থেকে একদিনও কথা না বলার দীর্ঘশ্বাস ছেলেটিকে আচ্ছন্ন করে। মেয়েটির নামটাও যদি জানা যেত!
তারপর একদিন ছেলেটি কলেজ থেকে বাসায় ফেরার পথে দেখলো, কারা যেন বাসা পালটিয়ে চলে যাচ্ছে। রোজকার মত বিকেলে ছাদে উঠে ছেলেটি মেয়েটির দেখা পেল না। হয়ত বাসায় মেহমান এসেছে নয়ত সামনে পরীক্ষা, পড়ার অনেক চাপ এজন্য আজ সে আসতে পারে নি। ছেলেটি নিজেকে বুঝ দিয়ে রাখে।
আবার টেনশনও হয়, কোন অসুখ করে নি তো? এভাবেই অপেক্ষাতে কেটে গেল কয়েক দিন। মেয়েটা আর ছাদে এলো না। তার বদলে ছাদে দুটি ছোট ভাই-বোনের দৌড়াদৌড়ি চোখে পড়ে। ‘’সেদিন তবে ওরাই বাসা পাল্টাচ্ছিল!’’—ছেলেটির বুক ভেংগে যায়। চোখ ভিজে যায়।
বিকেল হলে সে আর ছাদে আসে না। এ শহরে কোথায় আছে মেয়েটি জানে না ছেলেটি। মনের যত কষ্ট লিখতে থাকে ডায়রীর পাতায় পাতায়।
একদিন ছেলেটির এক বন্ধু সেই ডায়রীটা দেখে বলে, ‘’তুই তো মামা দারুন লিখিস!’’ সেই বন্ধুর উৎসাহেই পত্রিকাতে একটা কবিতা পাঠায় ছেলেটি। আর ছেলেটিকে অবাক করে দিয়ে সে কবিতা ছাপাও হয়।
ছেলেটি ভাবে, যার জন্য লেখা কবিতা, তার চোখে কি পড়েছে? এ প্রশ্নের উত্তর ছেলেটির জানা হয় না। কিন্তু তবুও সে লিখতে থাকে কবিতা। যদি কোনদিন তার চোখে পড়ে যায় কোন একটা কবিতা, তাতেই ছেলেটির শান্তি। এইভাবে লিখতে লিখতে একদিন তার একটি কবিতার বইও বের হয়ে গেল। একটির পরে, আরো একটি, এবং আরো কিছু বই বের হলো ছেলেটির।
ছেলেটি আর ছেলেটি রইল না, একজন কবি হয়ে গেল। প্রেমিকেরা তাদের ভালোবাসার কথা প্রেমিকাদের কাছে পৌঁছানোর জন্য এই ছেলেটির কবিতার পংক্তি ব্যবহার করতে লাগলো। প্রেমিকাদের মন জয় করতে তার বই উপহার দিতে লাগলো। কিন্তু এত কবিতা লিখে কবি হতে পারলেও ছেলেটি এক অজানা কারণে একা যুবক থেকে গেলো।
অন্য বছরের মত এবারও যুবক বইমেলায় এসেছে।
তার বই কিনে কেউ কেউ অটোগ্রাফও চাইছে। অটোগ্রাফ দিতে দিতেই যুবক দেখে এক সুন্দরী তরুণী তার দিকে বাড়িয়ে রেখেছে তারই একটি বই, অটোগ্রাফের জন্য। তরুণীটিকে দেখে যুবকটির চিনতে ভুল হয় না। এযে তার সেই কৈশোরের বিকেল বেলার ছাদের সেই কিশোরী। অন্যদের বাড়ানো হাত সরিয়ে যুবকটি তুলে নেয় তরুণীটির বই।
‘’আপনার কবিতা আমি ভীষণ পছন্দ করি’’—হড়বড় করে বলে ফেলে তরুণীটি। ‘’চিনতে পারে নি’’—যুবক মনে মনে ভাবে। বইয়ের পাতা উলটিয়ে সাদা পৃষ্ঠাতে লেখে, ‘’কবি নয় কবির অটোগ্রাফ?’’ আর কীই বা লিখতে পারে সে? তরুণীর পাশে দাঁড়ানো দু বছরের মিষ্টি এক বাচ্চা কোলে ভদ্রলোককে দেখে যা বোঝার বুঝে নেয় যুবকটি।
---এই তুই, উঠবি? কতক্ষণ ধরে তোকে ডাকছি?
ছেলেটির ঘুম ভেঙ্গে যায় ছোটবোনের চিৎকারে। বিরক্ত হয় ছেলেটি।
লোকে শুধু ঘুমাতেই দেখে, স্বপ্ন দেখতে তো আর দেখে না!
২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১২
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।