...............................................................................................................................................................। ‘প্রেম আসিয়া গেল গোপনে আমি যেন টেরও পেলাম না’-এর এর প্রমান আরো একবার মেলালো রোমেল। সরলতার এক মুর্ত প্রতীক হয়ে এতদিন পার করেছে। মেয়েদের দিকে চোখ তুলে তাকাতে সাহস পেত না। তবু খুব নিরব থাকত না।
বন্ধুবান্ধবদের সাথে মেশাও হত। নিরব দর্শকের ভুমিকা পালন করত রোমেল আবার মাঝে মাঝে দু একটি কথা বলে বোমা ফাটাত। যা শুনে সবাই না হেসে পারত না। রোমেলের আরেকটা শখ হচ্ছে বই পড়া। হাতে কিছু টাকা জমা পড়লেই সোজা চলে যেত আজিজ সুপার মার্কেটে বইয়ের দোকানে নতুন বইয়ের ঘ্রান নিতে।
বিড়ি সিগারেট কখনো তার মন গলাতে পারেনি যেকারনে তাদের সাথে তার সখ্যতা হয়ে উঠেনি। ইদানিং রোমেলকে বেশি দেখা যায় না। সবার দৃষ্টির আড়ালেই থাকে বেশিরভাগ সময়। না রোমেলের অন্য কোন কারন নয় রোমেল এক হরিনীর প্রেমে পড়েছে। সেই হরিনিকে সময় দিতেই সে এখন বেশি ব্যস্ত থাকে।
‘জানো, তোমার জন্য সুন্দর একটা ড্রেস পছন্দ করে এসেছি। কাল তা কিনে আনবো। তুমি বিকেলে অই জায়গায় থেকো যেখানে আমরা সেদিন দেখা করেছিলাম। তুমিতো জানোই বাসার ঝামেলা নিয়ে আমাকে দোড়াদোড়ি করতে হচ্ছে,সেজন্য তোমাকে বেশিক্ষন সময় দিতে পারবো না। তুমি একটু আগে এসো,আমি তোমাকে গিফট টা দিয়েই দেরি করবোনা ফিরতে হবে।
আর তার পরদিনতো ঈদ,সুতরাং এর পরে আর এ গিফটের তেমন মুল্য থাকবে না। ’
কয়েকদিন থেকেই রোদেলাকে বারবার করে তার গিফটের কথা জানিয়ে দিচ্ছে রোমেল। এ ড্রেসটা রোদেলাও দেখেছে তার পছন্দ হয়েছে। কিন্তু রোমেল চায় এটা সে তাকে উপহার দিবে। রোদেলাও ভীষন খুশি।
গতকালই রোদেলা রোমেলকে পাঞ্জাবি আর জিন্স প্যান্ট উপহার দিয়েছে। সম্পর্কের তিনমাস না জেতেই একটা ঈদ তারা পেয়ে গেছে যে কারনে তাদের উত্তাল মধুর সম্পর্কে এ এক নতুন আনন্দের মাত্রা যোগ করে দিয়েছে। খুশিতে খুশিতে মন একাকার। হাতে টাকা ছিলনা বলে রোদেলাকে ড্রেস দিতে তার দেরি হচ্ছে না হলে সে রোদেলার আগেই তাকে দিত। এখন সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে যে কারনে বারবার রোদেলা কে বিষয়টি অবহিত করছে।
যে ছেলেটি কদিন আগেও ছিল এক সরলতার প্রতীক,হাতে কিছু টাকা জমলেই এক দৌড়ে আজিজ সুপার মার্কেটে গিয়ে নতুন বইয়ের ঘ্রান নিত,…………
আজ সে ছেলেটি প্রেমে পড়ে কেমন যেন পরিবর্তন হয়ে গেছে। বইয়ের নেশা যেন কমতে শুরু করেছে। হাতে কিছু টাকা জমলেই আজিজ সুপার মার্কেটে নতুন বইয়ের ঘ্রান নিতে যায় না,চলে যায় কোন ক্যাফে রেস্ট্রুরেন্টে রোদেলাকে নিয়ে। সরল ছেলের চঞ্চলতার ফুল ফুটতে লাগলো,চালাক ছেলের দরজায় কড়া নাড়তে শুরু করল…………। ।
রোমেলের পরিবর্তিত চেহারা বন্ধু বান্ধবের চোখে ধরা পড়ল। রোমেল দৃষ্টি এড়াতে পারল না। ঠোটের কোনে মুচকি হাসির রেখা ফুটিয়ে তাদের ধারনা সত্য প্রমান করল। বিকেল বেলা রোমেল যাত্রা শুরু করেছে মার্কেটে প্রিয়জনের উপহার কিনবে বলে। আজ কিনে রাখবে কাল দেখা হলেই দিয়ে দিবে।
রাস্তার কিনার ঘেষে হেটে চলেছে। চারিদিকে ঈদের আমেজ পড়ে গেছে। মানুষের জটলা এখনো কমেনি। হঠাৎ চোখে পড়ল রাস্তার পাশে দুটি ছেলে(যারা টোকাই বা বস্তির গরীব ছেলে) একটি জামা হাতে বসে বসে দেখছে। একজন আরেকজনকে দেখাচ্ছে।
জামাটি নতুন না হলেও খুব পুরোনো নয়। হয়ত তারা দুজন ভাই। না হলে একটা জামা নিয়ে দুজন কিভাবে সন্তুষ্ট থাকে। তবে একজনের মুখে হাসির রেখা নেই,কারন জামাটি তার পাশের জনকে দেয়া হয়েছে। তবু কারো মাঝে কোন কলহ বা হিংসা বিরাজ করছে না নেই কোন প্রকার কাড়াকাড়িও।
তবে পাশের ভাইটির মন খারাপ দেখে রোমেলের ও কিছুটা খারাপ বোধ হল। মানবতার ফুল ফুটল হৃদয়ে। হৃদয়ে জমে থাকা সুপ্ত ভালোবাসা ছড়িয়ে দিতে এগিয়ে এল রোমেল। রোদেলার উপহার কেনার টাকা দিয়ে অনেকগুলো ছোট জামা কিনে পথশিশুদের মাঝে বিলিয়ে দিল। তাদের মুখের তৃপ্ত হাসি দেখে রোমেলের মন ভরে গেল।
যেন আজ জীবনের অনেক বড় একটা কিছু পাওয়া হল। আজ তার নিজের কাছেও অনেক ভালো লাগছে খুশি লাগছে। সেই পথশিশুরাও নতুন জামা পরে অন্য সবার মত ঈদ পালন করবে তাই তার কাছে স্বস্তি লাগছে। রোদেলার অনেক নতুন ড্রেস আছে যেগুলো দিয়ে ও ভালোভাবে ঈদ করতে পারবে। তাছাড়া তাকে পরে গিফট দেয়া যাবে,সে হয়ত শুনলে অনেক খুশিও হতে পারে।
সত্যিকার অর্থে এ মুহুর্তে রোমেলের কাছে রোদেলার স্মৃতি গুলো যতটা না আনন্দে ভাসায় তার চেয়ে বেশি আনন্দ এখন তার কাছে লাগছে আজকের এই মহৎ কাজটি করার পর থেকে। তাই রোমেল এখন রোদেলা থেকে অনেক দূরে আছে অন্তত এই মুহুর্তে।
রোদেলার ফোন আসার সাথে সাথে ঘোর কাটল রোমেলের। কি করবে কি বলবে বুঝতে পারছেনা। ভনিতা না করে বলে ফেলাই ভালো।
এবং করল ও তাই।
কি করলে তুমি?-কিছুটা রেগে গিয়ে শুনে ও না শোনার ভান করে রোদেলার প্রতি উত্তর।
তুমি এতটা উত্তেজিত হচ্ছ কেন?-রোমেল
লাইন কাটা গেল । এরপর অনেক চেষ্টা করেও আর সংযোগ পাওয়া গেলনা।
তবু কথামত ঠিক জায়গায় ঠিক সময়ে উপস্থিত হলো রোমেল,ভাবল রাগ করে তখন হয়ত ফোন ধরেনি আজ ঠিকই আসবে।
রোমেল খালি হাতে আসেনি রোদেলার জন্য তার পছন্দের ড্রেস আনেনি ঠিক কিন্তু সাথে করে চমৎকার একটি ঈদকার্ড নিয়ে এসেছে,সাথে নিজের অগোছালো কিছু কথামালা। ফোন বন্ধ । কোন ভাবেই যোগাযোগ করা যাচ্ছেনা। এদিকে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমেছে রোদেলার কোন দেখা নেই। শুন্যতায় মন খা করে উঠল,বুকের ভিতর কঠিন ভাবে এক অদৃশ্য আঘাত অনুভব করল।
রোমেল ভাবতে পারেনি এমনটা ঘটবে। রোমেল কষ্ট পাচ্ছে এই ভেবে যে ভালো কাজের মুল্যায়ন কেন এমন হয়?মন খারাপ করে রাস্তার পাশ দিয়ে আনমনে হেটে চলছে। কিছুদুর গিয়ে হাতের ঈদ কার্ডটা একপাশে ড্রেন লক্ষ্য করে ছুড়ে মারল। মুহুর্তের মধ্যে একটা ছেলে দোড়ে এসে তা তুলে নিল। এই ছেলেটিকেও গতকাল রোমেল নতুন জামা দিয়েছিল।
ছেলেটি দৌড়ে এসে রোমেলের সামনে দাড়াল-
আপনার এডা পইরা গেছে নিবেন না?
এমনিতেই রোমেলের মন মেজাজ ভালো না। কিছু না বলে একটু কড়া ভাবে তার দিকে তাকাল। ছেলেটি ভয় না পেয়ে পেছন থেকে তার আরেক হাত বাড়িয়ে দিল ,রোমেল দেখতে পেল ছেলেটির হাতে তার মোবাইল ফোনটি। পকেটে হাত দিয়ে দেখে নেই। কি করেছে মনে নেই।
রোদেলার কথা ভাবতে ভাবতে হুশ হারিয়ে ফেলেছিল। হাতে থাকা মোবাইল ফোনটি ঈদ কার্ডের সাথে ছুড়ে মেরেছিল। ভাগ্যিস ছেলেটি পাশে ছিল। রোমেল হাত পেতে নিজের মোবাইলটি নিল। ছেলেটি আরেক হাত বের করে ঈদকার্ডটি দেখিয়ে বলল এটা আমি নিয়া যাই?রোমেল মাথা নাড়িয়ে সায় দেয়া মাত্র ছেলেটি ভোঁদৌড়ে এক গলির পাশ ধরে উধাও,দৃষ্টির আড়াল না হওয়া পর্যন্ত রোমেল তাকিয়ে থাকল।
তার ছোট পায়ে দৌড় দেখতে দেখতে তার বিষন্ন মুখেও হাসির রেখা ফুটে উঠল। সে হাসি ঠোটের কোনে আকড়ে ধরে রোমেল গন্তব্যের পানে হেটে চলল…………। ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।