আমি আগা গোড়ায় মোড়ানো পুরোপুরি একজন মুক্তমনা মানুষ।
The Abundance of Life-Bearing Planets
By Carl Sagan
জীবনবাহী গ্রহের প্রাচুর্য - কার্ল সাগান
আমরা উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার ও উদ্ভাবনের এক যুগে বাস করি। নেবুলা নক্ষত্রমণ্ডলের মতো গ্যাসের চাকতি ও ধূলিকণা সূর্যসদৃশ নক্ষত্রগুলোর অর্ধেকের মধ্যেই রয়েছে। আমাদের গ্রহগুলি ৪.৬ বিলিয়ন বৎসর আগে গঠিত হয়েছে এই নেবুলা নক্ষত্রমণ্ডলে। বেতার তরঙ্গের এক নতুন, অপ্রত্যাশিত পদ্ধতিতে আমরা অন্ততঃ ২টি পৃথিবীর মতো গ্রহ খুঁজে পেয়েছি।
৫১ পেগাসি (Pegasi) তারকার পাশে এক বিরাটাকার গ্রহ স্পষ্টভাবে দেখাও গেছে।
নিকটবর্তী তারকারাজির পাশে যদি এই বিশালাকার গ্রহগুলি থেকে থাকে তাহলে ভূমিতে স্থাপিত এবং মহাকাশ সম্বন্ধীয় কিছু নতুন প্রযুক্তি যেমন অ্যাসট্রোমেট্রি (Astrometry), স্পেকট্রোফটোমেন্ট্রি (Spectrophotometry), রেডিয়াল ভেলোসিটি মেজারমেন্টস (Radial Velocity Measurements), এডাপটিভ অপটিকস (Adaptive optics) এবং ইন্টারফেরোমেট্রি (Interferometry)- এর সবগুলো গ্রহগুলিকে চিহ্নিত করতে পেরেছে বলেই মনে হয়।
প্রজেক্টগুলোর মধ্যে অন্ততঃ একটি প্রস্তাব (Frequency of Earth Sized Inner Planets) ভিন্নজগতের বিরাট গ্রহগুলিকে স্পষ্টভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পেরেছে। যদি আমাদের প্রতি দেয়া সমর্থনকে হঠাৎ করে বন্ধ করে দেয়া না হয় তাহলে মিল্কিওয়ে ছায়াপথের অন্য নক্ষত্রের গ্রহগুলোকে পর্যবেক্ষণ করার একটি স্বর্ণযুগে আমরা প্রবেশ করতে যাচ্ছি।
আপনি যদি আরেকটি পৃথিবীর মতো ভরযুক্ত গ্রহ খুঁজে পান, তাহলে এটা পৃথিবীর মতো জগত হবে এমনটা নাও হতে পারে।
ধরুন শুক্রগ্রহ। কিন্তু আমরা এই বিষয়টা তদন্ত করতে পারি। আমরা সমুদ্রের জলের অবশিষ্টাংশের বর্ণিল স্বাক্ষর খুঁজতে পারি। গ্রহটির বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন ও ওজন খুঁজতে পারি। গ্রহের আদিম তাপীয় অস্থির পরিবেশে মিথেনের পরমাণু খুঁজতে পারি।
আমরা অক্সিজেনের পরমাণুও খুঁজবো কারণ তা জীবনেরই চিহ্ন। (আসলে এইসব পরীক্ষাগুলোর সবই গ্যালিলিও মহাকাশযানের দ্বারা পৃথিবীর উপরিভাগে ১৯৯০ এবং ১৯৯২ সালে করা হয়েছে এবং তা এখন বৃহস্পতি গ্রহ অভিমুখে ছুটে চলছে। [কার্ল সাগান, ১৯৯৩])
নতুন তৈরি হওয়া সৌরজগতগুলোর পৃথিবীর মতো ভরের গ্রহদের সম্পর্কে সংখ্যা ও আয়তন বিষয়ে সংগৃহীত নতুন তথ্যের সাথে বিভিন্ন গ্রহের সাগরগুলোর দীর্ঘস্থায়িত্ব সম্পর্কে সাম্প্রতিক সময়ে পাওয়া তথ্যকে একত্রিত করে দেখা গেছে প্রত্যেক সূর্যের মতো নক্ষত্রের চারপাশে একের অধিক নীল জগত থাকতে পারে। সূর্যের চাইতে বেশি ঘনত্বের নক্ষত্রের সংখ্যা কিছুটা দুর্লভ। সূর্যের চাইতে কম ভরের নক্ষত্রের পৃথিবীর মতো গ্রহ থাকতে পারে বলে আশা করা যায়।
কিন্তু জীবন থাকার মতো উষ্ণগ্রহগুলো হয়তো এমনভাবে আটকে আছে যে তাদের একটি দিক শুধু স্থানীয় সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে।
যাহোক, হয়তো বাতাস ওই ধরণের গ্রহের উষ্ণতাকে এক আবহমণ্ডল থেকে আরেক আবহমণ্ডলে বয়ে নিয়ে যায় এবং প্রাণীর সম্ভাব্য বাসস্থান তৈরিতে ওইসব গ্রহের অগ্রগতি খুবই সামান্য।
তা সত্ত্বেও নতুন পাওয়া প্রমাণগুলো এমন তথ্য দিয়েছে যে, ছায়াপথের বেশ কিছু গ্রহে ধারণার চাইতে বেশি পরিমাণ তরল জল বিলিয়ন বৎসর আগে থেকেই আছে। এর মধ্যে কোন কোনটি জীবনের জন্য বেশ উপযোগী। আমাদের মতো কার্বন ও জল রয়েছে এমন গ্রহগুলোর কোনটির বয়স পৃথিবীর চাইতে কম, কোনটির আবার বিলিয়ন বৎসর বেশি।
আর হ্যাঁ, আমাদের ছায়াপথ এক বিরাট সংখ্যক হয়তো শত শত বিলিয়ন সংখ্যক গ্যালাক্সির মধ্যে মাত্র একটি।
বাসযোগ্য জগতে বিবর্তনের জন্য কি বুদ্ধির প্রয়োজন রয়েছে?
অ্যাপোলো মিশনের সংগৃহীত চাঁদে উল্কাপাতের পরিসংখ্যান থেকে আমরা জানি যে প্রায় ৪ বিলিয়ন বৎসর আগে পৃথিবীতে সারাক্ষণ মহাকাশ থেকে আসা ছোট-বড় বিভিন্ন রকমের পদার্থের আঘাতে নরকের মতো অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। মুহুর্মুহু উল্কাপাত এতো ভয়ানক ছিল যে এর ফলে আবহাওয়া মণ্ডল ও সমুদ্র মহাকাশে বিলীন হয়ে যেতে পারতো। তারও আগে সমস্ত পৃথিবী ডিমের খোসার মতো পাতলা আবরণযুক্ত এক ম্যাগমার মহাসাগর ছিল। আর এটা পরিষ্কার যে সেই অবস্থায় জীবনের উদ্ভবের কোন পরিবেশই ছিল না।
হ্যাঁ, ঠিক তার পরপর, মেয়র যেমন বলেছেন- ৩.৮ বিলিয়ন বৎসর আগে কিছু প্রাথমিক জৈব পদার্থ তৈরি হয় (ফসিলগুলোর দেয়া প্রমাণ সাপেক্ষে)। অনুমান করা হয় যে, জীবনের সূচনা তার কিছু আগে থেকে শুরু হয়েছিল। এরপর অবস্থা অনুকূলে আসার সাথে সাথে জীবন বিস্ময়করভাবে দ্রুত বিকশিত হচ্ছিল। আমি এই ঘটনাটা আগেও বলেছি (সাগান, ১৯৭৪)। জীবনের উৎস আসলে এমন একটি সম্ভাবনাময় অবস্থা, যা পরিবেশের আনুকূল্যের সাথে দ্রুত বিকশিত হয়েছে।
এখন আমি বুঝতে পেরেছি যে, এটা আপাতদৃষ্টিতে ন্যায়সঙ্গত বিতর্ক। আসলে সামান্য এক উদাহরণ থেকে অজ্ঞাত অসীম বিষয়ে ধারণা করার চাইতেও বেশি। কিন্তু আমরা উপাত্তের বাইরে কিছু বলতে পারি না, আমরা এই কাজটাই সবচেয়ে ভালোভাবে করতে পারি।
বুদ্ধির বিবর্তনের ক্ষেত্রে কি একই ধরণের বিশ্লেষণ প্রয়োগ করা যায়?
ধরুন একটি গ্রহে জীবন খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে, পরিবেশ পরিবর্তিত হচ্ছে এবং অক্সিজেনসমৃদ্ধ আবহাওয়ামণ্ডল ২ বিলিয়ন বছর আগে থেকে তৈরি হচ্ছে। মেয়র যেমন বলেছেন, তেমন বহুবিচিত্ররূপে এই পরিবর্তন ঘটছে।
আর মাত্র ৪ বিলিয়ন বৎসর একটি যান্ত্রিক সভ্যতার উত্থানের জন্য যথেষ্ঠ নয়।
এই বিষয়টি নিয়ে বিতর্কের প্রথমদিকে (যেমন: G.G. Simpson-The Nonprevalence of Humanoids) লোকেরা এই যুক্তি দেখাতেন যে, ঠিক মানুষ অথবা মানুষের মতো কোন কিছু তৈরি হওয়ার জন্য বিশাল সংখ্যক প্রচেষ্টার প্রয়োজন। অন্য কোন গ্রহে এই ধরণের সম্ভাবনার পুনঃপুনঃ সংঘটনের সংখ্যাও শূন্য। এবং ফলে কোন মহাজাগতিক বুদ্ধিমত্তা থাকার সম্ভাবনাও শূন্য।
কিন্তু একথা আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাইযে, যখন আমরা মহাজাগতিক বুদ্ধিমত্তার কথা বলি, তখন স্টারট্রেকের মানুষ বা মানুষের মত কারও কথা বলিনা।
আমরা মানুষের মত সমান ক্ষমতাসম্পন্ন প্রাণী যারা রেডিও টেলিস্কোপ বানাতে এবং পরিচালনা করতে পারে এমন কারো কথা বলি। তারা ভূমি অথবা সমুদ্র অথবা বাতাসে যে কোন জায়গায় বাস করতে পারে। তারা অভাবনীয় রাসায়নিক গড়ন, গঠন, আকার, জৈবিক বৈশিষ্ট্য যে কোন রকম হতে পারে। আমরা এমন মনে করিনা যে মানুষের মত বিবর্তনের একই ধারাবাহিকতা তারা অতিক্রম করেছে। হয়তো বিবর্তনের পথ এত বেশি রয়েছে যার সংখ্যা আমরা ধারণাও করতে পারিনা।
মেয়রের সাম্প্রতিক উপস্থাপনায় মানবসদৃশ প্রাণী না থাকার প্রসঙ্গের প্রতিধ্বনি রয়েছে। তবে আমার ধারণা আমাদের বিতর্কের মূল বিষয়টি সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য হবে। বিবর্তন কোন ভাগ্যনির্ভর বিষয় নয়, এটা উপযুক্ত সময়ে অনিবার্যভাবে ঘটে। ভবিষ্যতের কয়েক বিলিয়ন বৎসরে বুদ্ধিমান প্রাণী তৈরির জন্য কোন পরিকল্পনা এটা নয়। স্বল্পকালীন প্রভাবকের প্রেক্ষিতে এটা হঠাৎ করে প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে।
আর এখনও সবকিছু সমান থাকা সত্ত্বেও বুদ্ধিহীন থাকার চাইতে বুদ্ধিমান হওয়াটা বেশি গ্রহণযোগ্য। আর বুদ্ধিবিকাশের যে গতিপথ তার চিহ্ন জীবাশ্মতেই রয়েছে। অন্য পৃথিবীর কোনটিতে বুদ্ধির প্রতি আগ্রহ উচ্চমাত্রায় রয়েছে, আর কোনটিতে হয়তো রয়েছে কম মাত্রায়।
আমরা যদি কোন একটির উপাত্ত বিশ্লেষণ করি, যেমন আমাদের নিজেদের ক্ষেত্রে তাহলে দেখবো যে, সৌরজগত সৃষ্টির পর থেকে আজকে যান্ত্রিক সভ্যতার যুগ পর্যন্ত পৌঁছাতে প্রায় ৪.৬ বিলিয়ন বৎসর লেগেছে। এ থেকে কি বোঝা যায়? আমরা অন্য পৃথিবীতে বদ্ধরূপে সভ্যতা বিকাশ হয়েছে এটা আশা করবো না।
কেউ হয়তো বেশ দ্রুত যান্ত্রিক উন্নতি করেছে, কেউ হয়তো ধীরে, আর এটা সন্দেহ নেই যে কোনখানে হয়তো সভ্যতার বিকাশ একেবারে হয়নি। কিন্তু ছায়াপথ (Milky way) দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্মের তারা দিয়ে ভর্তি (এর অর্থ, যেগুলোতে ভারী পদার্থ রয়েছে)। এর অনেকগুলো ১০ বিলিয়ন বৎসরের পুরনো।
দুটি বিষয় কল্পনা করা যাক, প্রথমটি হল যান্ত্রিক বুদ্ধির বিবর্তনের জন্য সম্ভাব্য সময়ধারা। এটা শুরু হয় খুব ধীরে, কিন্তু কয়েক বিলিয়ন বৎসরে এর অগ্রগতিকে চিহ্নিত করা যায়।
৫ বিলিয়ন বৎসরে এর অগ্রসরের পরিমাণ ৫০ ভাগ, আর ১০ বিলিয়ন বৎসরে হয়তো এই অগ্রসরতা ১০০ ভাগে পৌঁছাবে।
দ্বিতীয় কল্পনাটি সূর্যের মতো তারাগুলিকে নিয়ে। এর মধ্যে কোন কোনটি একেবারে তরুণ। এগুলো এখন জন্মগ্রহণ করল। কিছু আছে যেগুলো সূর্যের মতো বয়সী, আর কিছু আছে, যেগুলো ১০ মিলিয়ন বৎসরের পুরনো।
আমরা যদি এই কল্পনা দুটিকে একসঙ্গে মেলাই, তাহলে দেখবো যে বিভিন্ন তারার গ্রহগুলিতে বিভিন্ন বয়সের যন্ত্রনির্ভর সভ্যতার দেখা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। শুধুমাত্র নতুনগুলোতে নয়। বরং পুরনো তারাগুলোতে এই সম্ভাবনা অনেক অনেক বেশি। খুব সম্ভব আমরা আমাদের চাইতে অগ্রসর সভ্যতার কাছ থেকে সাড়া পেতে যাচ্ছি। এই যন্ত্রকৌশলী সভ্যতাগুলোতে হয়তো কোটি কোটি প্রজাতি রয়েছে।
একসূত্রে গ্রথিত হয়ে যন্ত্রনির্ভর প্রজাতির উদ্ভব ঘটেছে এ ধরণের সাদৃশ্যহীন ঘটনার সংখ্যা আশাতীত। আর হয়তো নিজেদের অনন্য বুদ্ধিমত্তা নিয়ে গর্ব করে এধরণের প্রজাতি সারা মহাবিশ্বেই রয়েছে।
সেটির (SETI) জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তির উন্নয়নের জন্য সভ্যতার প্রয়োজন রয়েছে কি?
এটা নিশ্চিতভাবেই কল্পনা করা যায় যে কবিদের সভ্যতা অথবা ব্রোঞ্জযুগের যোদ্ধারা কখনও হঠাত করেও জেমস ক্লার্ক, ম্যাক্সওয়েলের গণিত এবং বেতার যন্ত্রের দেখা পায়নি। প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে তারা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এই পৃথিবী অসংখ্য উল্কা ও ধুমকেতু দিয়ে পরিবেষ্টিত হয়ে আছে।
এর কোন কোনটি এত বড় যে একটির আঘাতেই গ্রহের বড় রকমের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হল K-T ঘটনা (ক্রিটেসিয়াস যুগের শেষে সংঘটিত আর এর ফলেই জন্ম হয় টারসিয়ারি যুগের। ) ৬৫ মিলিয়ন বৎসর আগের এই ঘটনার ফলে ডাইনোসর এবং পৃথিবীর বেশিরভাগ প্রজাতি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। আগামী শতাব্দীতে এই ধরণের একটি সভ্যতাবিনাশী সংঘর্ষের সম্ভাবনা রয়েছে।
পৃথিবীর নিকটবর্তী বস্তুসমূহকে চিহ্নিত ও অনুসরণ করার সঠিক অর্থ আমাদেরকে পরিষ্কারভাবে বুঝতে হবে।
এই বস্তুগুলোকে বাধা দেয়া ও ধ্বংস করার কারণ সম্পর্কে বিশদ জানতে হবে। আমরা যদি তা করতে ব্যর্থ হই, তাহলে আমাদেরকে সবংশে ধ্বংস হয়ে যেতে হবে। সিন্ধু সভ্যতা, সুমেরীয় সভ্যতা, মিশরীয় সভ্যতা, গ্রিক ও অন্যান্য সভ্যতা খুব বেশিদিন টেকেনি ফলে তাদেরকে এ ধরণের সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়নি। পার্থিব বা অপার্থিব যেকোন দীর্ঘমেয়াদী সভ্যতাকে এই বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতেই হবে। অন্য সৌরজদতকে তুলনামূলকভাবে কম বা বেশি গ্রহাণু বা ধুমকেতুর মুহুর্মুহু আঘাত সহ্য করতে হয়।
কিন্তু প্রায় সব ক্ষেত্রেই বিপদের অস্তিত্ব একেবারে বাস্তব।
রেডিওটেলিমেট্রি অর্থাৎ মহাজাগতিক বস্তুগুলোকে পর্যবেক্ষণ করা এবং বিদ্যুৎচৌম্বকীয় তরঙ্গ বিশ্লেষণ ও এই সম্পর্কিত প্রযুক্তিকে মহাকাশীয় হুমকির মুখোমুখি হতেই হবে। ফলে যে কোন দীর্ঘকাল টিকে থাকা সভ্যতাকে প্রাকৃতিক নির্বাচনের নিয়ম অনুযায়ী বাধ্যতামূলকভাবে সেটি'র (SETI) মতো প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটাতেই হবে। (এবং এর জন্য বেতার তরঙ্গকে 'দেখতে' পারে এরকম কোন প্রত্যঙ্গ বিকাশের প্রয়োজন নেই। পদার্থবিজ্ঞানই এর জন্য যথেষ্ঠ)।
যখন থেকে গ্রহাণু ও ধূমকেতুগুলোর পরস্পরের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়েছে তখন থেকেই গ্রহাণু ও ধূমকেতুর আঘাত অবিরাম সহ্য করতে হচ্ছে। ফলে প্রযুক্তির বিশ্রাম নেবার আর কোন অবকাশ নেই। অবশ্য ধুমকেতু ও উল্কাপিণ্ডের সাথে সংঘর্ষের সম্ভাবনার সামনে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে এমন শক্তি সেটির (SETI) খুব কম।
(প্রসঙ্গক্রমে জানাই, এটা সত্যি যে সেটি'র (SETI) শক্তি খুব কম। আমাদের গ্যালাক্সির এক অল্প অংশে এটা পৌঁছাতে পেরেছে।
যদি প্রয়োজনমতো শক্তিশালী ট্রান্সমিটার আমাদের থাকত, তাহলে দূরের গ্যালাক্সির রহস্য ভেদ করতে সেটি সক্ষম হতো। আমাদের ট্রান্সমিটারগুলো এত পুরনো ডিজাইনের যে সেগুলো যদি আর একটু শক্তিশালী হতো, শুধু এটুকুই আমরা আশা করতে পারি। Megachannel Extraterrestrial Assay [META] এর এটা একটা অন্যতম প্রচেষ্টা)
সেটি কি প্রকৃতিবিজ্ঞানীদের স্বপ্নবিলাস?
সেটি (SETI) সম্পর্কিত বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে প্রকৃতিবিজ্ঞানীদের এবং এ বিষয়ে জীববিজ্ঞানীরাও ভালো জানেন বলে মেয়র বারবার উল্লেখ করেছেন। যখন থেকে প্রকৃতিবিজ্ঞান এর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত তখন থেকেই মহাকাশবিজ্ঞানী, পদার্থবিজ্ঞানী এবং ইঞ্জিনিয়াররাও সেটি'র (SETI) বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
কিন্তু ১৯৮২ সালে যখন সেটি'র (SETI) বৈজ্ঞানিক মর্যাদা সম্পর্কে 'সাইন্স' পত্রিকায় প্রকাশিত আবেদনটি লিখলাম তখন অনেক নিবেদিতপ্রাণ জীববিজ্ঞানী ও জৈবরসায়নবিদদের স্বাক্ষর সংগ্রহ করতে আমার কোন সমস্যা হয়নি।
এঁদের মধ্যে ছিলেন ডেভিড বাল্টিমোর, মেলভিন কেলভিন, ফ্রান্সিস ক্রিক, ম্যানফ্রেড এইজেন, থমাস ইসনার, স্টিফেন জে গুল্ড, ম্যাথিউ মেসেলসন, লিনাস পনিং, ডেভিড রাউপ এবং ই.ও.উইলসন। প্রথমদিকে যখন আমি এই বিষয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনা তৈরি করছিলাম, তখন আমার বিজ্ঞ পরামর্শদাতা এইচ.জি. মুলারের কাছ থেকে দৃঢ় সমর্থন পেয়েছিলাম। জীববিজ্ঞানী ও জেনেটিকসের উপর নোবেলজয়ী এই বিজ্ঞানীর সমর্থন আমাকে খুবই উৎসাহিত করেছিল। বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক না করে আমার আবেদনটি যা প্রস্তাব করেছিল, তা হল- আমরা খুঁজছি-
"আমরা সর্বসম্মতিক্রমে দৃঢ়ভাবে একমত যে বহির্জাগতিক বুদ্ধিমত্তার উপস্থিতির পরীক্ষণ একটি পরীক্ষাধীন বিষয়। এই বিষয়ে কোন পূর্বতন আলোচনা এই পর্যবেক্ষণাধীন প্রচেষ্টার পরিবর্তে ব্যবহার বা উপস্থাপন করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।
"
কার্ল সাগান: প্লানেটরি সোসাইটির একজন অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৯৬ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বিজ্ঞান জগতে খুবই পরিচিত মুখ ছিলেন। তিনি সেটি'র (SETI) একজন প্রধান সমর্থক। সেটি'র সাফল্য নিয়ে তিনি অনেক লেখালেখি করেছেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।