আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দায়

আমাদের বাসায় ভয়াবহ একটা ঘটনা ঘটেছে। পানি পান করার জন্য যে গ্লাস, সেটা আজ দুপুরে হঠাৎ মেঝেতে পড়ে ভেঙে গেছে। গ্লাসটা ভেঙেছে এটা অতো বড় রকমের কোনো ঘটনা হতো না, যদি ওটা আমাদের বাসায় একমাত্র গ্লাস না হতো। হ্যা, একমাত্র গ্লাস। অবাক হবেন না।

আমাদের আব্বাকে ভাল করে চিনলে অবাক হওয়ার মতো ঘটনা না এটা। তার অকাট্য যুক্তি, যখন একটা গ্লাসেই চলে যায় সবার, তো দুইটা গ্লাস কেনা অপচয় ছাড়া আর কিছু না। অপচয়কারী শয়তানের ভাই। একমাত্র গ্লাসটি ভেঙে গেছে তাই ঘটনার থেকে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছিল চারদিকে। এই চরম উত্তেজনাকর অবস্থা থেকে রেহাই পেতে আমরা একটা মিটিং এ বসেছি।

আব্বা তার বিছানায় আসন গেড়ে বসেছেন। বললেন, যতো দোষ সব রহিমার মা’র। সে আমার জন্য পানি আনতে গিয়েই না এ ঘটনা ঘটাল। হাত থেকে গ্লাসটা ফেলে দিল। তাকে অবশ্যই তার সব দায় স্বীকার করতে হবে।

আমরা সবাই আব্বার কথায় একমত হলাম। যদিও অতীতে তার কথার অবাধ্য হবার কোন রেকর্ড আমাদের কারু নাই। আমরা সবাই আব্বার কথায় সায় দিলেও রহিমার মা, যে কিনা এতোক্ষণ মেঝেতে বসে ছিল সে দাঁড়িয়ে পড়ল। বলল, আ’র কোন দোঁষ নাই খালুজান। বিশ্বাস কইরেন।

সব দোঁষ ঐ মনি আপুর। উনি যদি আমারে পেছন থন ধাইক্কা না দিতেন তাইলে কি আ’র হাত থন গিলাসখানা ফইড়ত? মনি আপুরে তার দোঁষ সিকার খরতে কন। রহিমার মা মন্দ বলেনি কথাটা। সবার চোখ গিয়ে পড়ল মনির উপর। আব্বা বললেন, মনি, তুমি দায়ী এজন্য।

তোমাকে অবশ্যই গ্লাস ভাঙার দায়িত্ব স্বীকার করে নিতে হবে। আব্বার ধমক শুনে আমার ইমিডিয়েট ছোট বোন মনি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল যেন। । চিৎকার দিয়ে সে বলে উঠল, আমি দোষ স্বীকার করব কেন? হু? তোমরা সবাই জান, আমি মাকড়সা ভয় পাই। সুহা কেন আমাকে মাকড়সার ভয় দেখাতে গেল।

তাও মুঠোতে মাকড়সা না রেখেই মিথ্যা কথা বলে আমাকে ভয়টা দেখাল! সব দোষ সুহার। আমি ভয় পেয়ে না দৌড়ালে কি অঘটনটা ঘটত, তোমরাই বল? আমরা সবাই মনির কথায় ঐকমত্য প্রকাশ করলাম। মনি বলতে থাকল, সুহা দুইটা অপরাধ করেছে। এক. মিথ্যা বলেছে। দুই. আমাকে ভয় দেখিয়েছে।

যা বলার তোমরা ওকে বল। আমাকে না। আব্বা বললেন, ও, তাহলে এই ঘটনা। সুহা তুমি কানে ধরে দশবার উঠবস করো আগে। তারপর বাকি কথা।

সুহা আমাদের সকলের ছোট। ছোট বলেই কিনা জানিনা, ও আব্বাকে ভয়ানক রকম ভয় পায়। আব্বার কথা শুনে তাই সে সাথে সাথে কাঁপতে থাকল এবং কাঁদতে ধাকল। কাঁদতে কাঁদতেই বলল, আমার কোন দোষ নাই আব্বু। ভাইয়াই তো আমাকে বলল, আপুকে মাকড়সার ভয় দেখাতে।

আব্বা বললেন, ও যা বলে তাই তোমাকে করতে হবে? ঠিক কথা। আমি সায় দিলাম। আমার দিকেই যে গুলি ধেয়ে আসছে! সুহা বলল, ভাইয়াকে বলেছিলাম আমাকে চাইনিজ খাওয়াতে। তখনই ভাইয়া আমাকে শর্তটা দিয়েছিল। এমনি এমনি চাইনিজ খাওয়ালে তো আমি কিছু করতাম না আব্বু।

এবার কয়েস ঠেলা সামলাও! মনে মনে সত্যি কথাটাই বলব বলে ঠিক করলাম। জিজ্ঞেস করার আগেই তাই বললাম, বারে! আমার পকেটে টাকা থাকলে না চাইনিজ খাওয়াব সুহাকে। সুহা তো মনি আপুকে খুব পছন্দ করে, দুজনের মধ্যে খুব ভাব ও আছে দেখেছি। তাই ভাবলাম, সুহাকে এমন একটা শর্ত দিতে হবে যেটা সে করতে পারবে না। আমি কি করে বুঝব খাওয়ার লোভে সে তার প্রিয় মনি আপুকে ওভাবে মিথ্যা ভয় দেখাবে? আমি তাই মনে করি সব দোষ সুহারই হবে।

ও চাইনিজ খেতে না চাইলে এটা হতো না। আমার কথা শুনে সুহা আবার কেঁদে ফেলল। এ পর্যয়ে আম্মা তার মুখ খুললেন। বললেন, আসলে দোষটা মনে হয় তোমাদের আব্বার। তিনি যদি পানি খেতে না চাইতেন তবে তো কোন ঝামেলাই হতো না।

এরকম জুৎসই যুক্তি আম্মার মুখ থেকে আসবে তা আমরা বেউ প্রত্যাশা করিনি। খুশী হয়ে সবাই মিলে তাই হাত তালি দিতে শুরু করলাম। এমন সময় অন্য রুম থেকে, জেসমিন কাঁদতে কাঁদতে ঘরে ঢুকল। আমরা সবাই মিলে তার কান্নার রহস্য জানতে চাইলাম। আব্বাকেই এ বিষয়ে সবচাইতে আগ্রহী বলে মনে হল।

আর কেউ না বুঝলেও আমি ঠিকই বুঝতে পারলাম তার দিকে ছুটে আসা রাডার ঠেকাতে এখন কান্নার রহস্য জানাটাই সবচাইতে উত্তম পন্থা বলে মনে করছেন তিনি। জেসমিন কাঁদতে কাঁদতে বলল, তোমরা আর কতোক্ষণ দায় স্বীকারের কাহিনী করবে। ওদিকে সাফওয়ানের তেষ্টা পেয়েছে। সে কিছুতেই নাকি গ্লাস ছাড়া পানি খাবে না। কথাটা শুনেই আব্বা তাড়াতাড়ি করে তার বিছানা থেকে নামলেন।

বললেন, দাঁড়াও বউমা। আমি গ্লাস কিনে আনতে গেলাম। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।