দাগ খতিয়ান নাইতো আমার/ঘুরি আতাইর পাতাইর...
গত কয়েক বছর ধরে উত্তর-পূর্ব ভারতের মেঘালয়, খাসিয়া ও জৈন্তিয়া পাহাড় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল সুনামগঞ্জের হাওরের কৃষকের চরম উৎকণ্ঠার কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই তিনটি পাহাড় এক সময় সংরতি বনভূমি থাকায় তখন পৃথিবীর বৃষ্টিবহুল এই এলাকায় বৃষ্টির পানি ভাটিতে ছাকনি পদ্দতিতে নামতো। কিন্তু এখন বনভূমি না থাকায় এবং আবহাওয়াগত ও জলবায়ুগত পরিবর্তনের কারণে ঢলের পানি ধেয়ে এসে অকাল বন্যার সৃষ্টি করে ফসলহানিসহ পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে।
চলতি বোরো মওসুম শুরুতেই সুরমা নদীসহ সুনামগঞ্জ জেলার অভ্যন্তরে বয়ে যাওয়া ৮টি সীমান্ত নদী খাসিয়ামারা, বৌলাই, রক্তি, যাদুকাটা, চলতিসহ অন্যান্য নদী হয়ে ধেয়ে নামছে পাহাড়ি ঢল। কৃষকরা জানিয়েছেন ঢলের সঙ্গে নেমে আসা বালু ও পলিতে নদী খাল বিল ভরাটসহ ফসলি জমিও ভরাট হয়ে যাচ্ছে।
এতে ফতুর হয়ে পড়ছে কৃষক। গতবার আগাম পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের হাওরের প্রায় ৯০ ভাগ ফসল তলিয়ে গিয়ে ব্যাপক য়তি হয়। এবারও বোরো মওসুম শুরু হওয়ার আগেই পাহাড়ি ঢলে কয়েকটি হাওরের জমি তলিয়ে গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে অধিকাংশ হাওরের ফসলরা বাঁধ। তবে পাহাড়ি ঢলে পাশপাশি পানি উন্নয়ন বোর্ডের ফসলরা বাঁধের কাজে বিলম্ব ও দুর্নীতির কারণেও ফসলহানি ঘটছে।
গত মঙ্গলবার কয়েকটি হাওরে পানি প্রবেশ করায় এবং বাকি গুলো ঝূকির মুখে পড়ায় গতকাল খরচার হাওরপাড়ের লোকজন শহরে বিােভ মিছিল করে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ছোট বড় মিলিয়ে সুনামগঞ্জের ১৩৩ টি হাওর পাহাড়ি ঢলের আগ্রাসনের কবলে পড়ে প্রতি বছর। যার ফলে ঢলে ফসলহানির ঘটনা বাড়ছে। বেসরকারি হিসেবে ২০০১ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত সুনামগঞ্জের হাওরবাসী অর্ধেকেরও বেশি ফসল ঘরে তোলতে পারেনি এই কারণে। ঢলে গেলবার সরকারি হিসেবেই সুনামগঞ্জে ৬০ ভাগ ফসলের তি হয়।
এবার মওসুমের শুরুতেই পাহাড়ি ঢলে সুরমা নদী ও সীমান্ত নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে কয়েকটি হাওরে পানি প্রবেশ করছে। অন্য গুলোও রয়েছে হুমকির মুখে। এতে গতবারের মত ফসলহানির আশংকা করছেন কৃষকরা।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েকদিনের পাহাড়ি ঢলে সুরমা নদীর পানি ক্রমাগত বাড়ছে। গত ১৯ মার্চ সুরমা নদীর পানি ছিল ৩.১৪ মিটার।
গতকাল বেড়ে হয়েছে প্রায় ৬ মিটার। যার ফলে মঙ্গলবার তাহিরপুরের ঘনিয়াকুড়ি হাওর, ধরমপাশার চন্দ্রসোনারথাল হাওর ও সদর-বিশ্বম্ভলপুরের খরচার হাওরের ফসলরা বাধ ভেঙ্গে পানি ঢুকছে। জামালগঞ্জের পাকনার হাওর, হালির হাওর, সদর উপজেলার কানলার হাওরসহ বড় হাওরগুলো রয়েছে ঝুকির মুখে। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শৈলেনচন্দ্র পাল বলেন, পাহাড়ি ঢলে ইতোমধ্যে যে কয়টি হাওরে পানি প্রবেশ করছে তার মধ্যে চন্দ্রসোনারথাল ব্যতিত অন্য হাওরগুলো পাউবোর বাঁধের আওতাধীন নয় এবং পাউবো আফরমারা বাঁধ বাদে মাত্র ২২১ কি.মি বাধ মেরামত করে।
সুনামগঞ্জের কানলার হাওরপাড়ের গ্রাম বিরামপুরের কৃষক কালা মিয়া বলেন, পাহাড়ি ঢলে কানলার হাওরের অবস্থা যায় যায়।
তাছাড়া সময় চলে যাওয়ার পরও হাওরের ফসলরা বাধের কাজ না হওয়ায় হাওরটি সম্পূর্ণ হুমকির সম্মুখিন। ধরমপাশা সেলবরষ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলা উদ্দিন শাহ বলেন, গত কয়েক বছর ধরে যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে মনে হচ্ছে পাহাড়ি ঢল আর আমাদের হাওরে বোরো ফসল ফলাতে দেবেনা। আমরা কষ্ঠ করে ঋণ করে বোরো ধান লাগাব আর তা তলিয়ে নিবে পাহাড়ি ঢল। পাহাড়ি ঢলের আগ্রাসন থেকে হাওর রার জন্য সরকারের উর্ধ্বতন মহলকে উদ্যোগ নিতে হবে। নাহলে সুনামগঞ্জের কৃষি ও কৃষি সংস্কৃতি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
হাওর ও কৃষিপ্রাণ বৈচিত্র গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, উত্তর-পূর্ব ভারতের মেঘালয়, জৈন্তিয়া ও খাসিয়া পাহার এক সময় সংরতি বনভূমি ছিল। কিন্তু এখন আর এই এলাকা সংরতি নেই। পৃথিবীর বৃষ্টিবহুল এই তিনটি পাহাড়ি এলাকায় এক সময় সংরতি বনভূমির কারণে আগে বৃষ্টি হলে ছাকনি পদ্দতি পানি নামতো। কিন্তু এখন জলবায়ু ও আবহাওয়াগত কারণে সেই ছাকনি পদ্দতিতে পানি না নেমে দ্রুত নেমে আসায় বাংলাদেশের হাওরাঞ্চলে অকাল বন্যার সৃষ্টি হয়ে ফসলহানিসহ পরিবেশ বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।