দাগ খতিয়ান নাইতো আমার/ঘুরি আতাইর পাতাইর...
প্রাচীন বাংলার প্রথম রাজধানী লাউড়ের তীরে অবস্থিত সুনামগঞ্জের সীমান্তনদী যাদুকাটাকে বলা হয় রূপের নদী। সীমান্তঘেষা হওয়ায় এর সৌন্দর্য ঠিকরে পড়ে সব সময়। সন্ধ্যায় মনে হবে এ যেন কাশমিরের ঝিলম নদী। আর সকালেও স্রোতঢেইহীন এই নদীর মৌনতা সীমান্ত ছুয়ে আসা পাহাড়ি ঠান্ডা বাতাসে এক অন্যরকম আবহ তৈরী করে। আর এই নদীর উৎপত্তি স্থলে একটি আকর্ষণীয় ঘন সবুজের পাহাড়রূপি টিলা রয়েছে।
এর নাম বারেকের টিলা। স্থানীয় লোকজন এই টিলাকে বাংলাদেশ এর '' আইফেল টাওয়ার'' বলে ডাকেন। খাড়া ও ঢালুপথের এই টিলায় উঠানামা করতে দর্শণার্থীরা প্রায়ই ছুটে আসেন এখানে।
জলটলটল এই নদীর তলদেশ চিক চিক করে বালুর দানা আর নূড়িপাথর। বছরের নির্দিষ্ট দিনে এই নদীর তীরে অনুষ্ঠিতহয় বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের সবচেয়ে বড়ো মেলা 'বারুণি'।
এই সময় সনাতন ধর্মের লোকজন তীর্থরূপি যাদুকাটায় স্নান করার আশায় এসে জড়ো হন নদীতীরের অদ্বৈত মহাপ্রভু চৈতন্যের নবগ্রামে। তাছাড়াও বছরের বারো মাস এখানে দর্শনার্থীদের আনাগোনা লণীয়।
খাসিয়া পাহাড় থেকে যাদুকাটা নদীর উৎপত্তি। আরেকটি ছোট সীমান্ত নদী ‘রক্তি’ হয়ে এসে মিশেছে সুরমা নদীতে। বারোমাসই নদীটি থেকে বারকি শ্রমিকরা বালু ও পাথর আহরন করে জীবিকা নির্বাহ করে।
তবে পাহাড়ি ঢলে নদীতে পলি পড়ে ইতোমধ্যে তলদেশ ভরে গেছে। খননের কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে শ্রমিকের জীবন। নদীও হারিয়ে ফেলছে তার শ্রী। চলতি বছরের মার্চ মাসে বারূণি মেলার সময় স্থানীয় লোকজন সীমান্ত নদী খনন ও পাহাড়ি ঢলের আগ্রাসনের প্রতিবাদে এই নদীতে দাড়িয়ে সংবাদ সম্মেলন ও সিগনেচার ক্যাম্পিং করে।
নদীটির আদি নাম রেণুকা।
হিন্দু ধর্মমতে শ্রী অদ্বৈত মহাপ্রভুর মায়ের ইচ্ছানুসারে এই নদীতে বছরের নির্দিষ্ট দিনে পৃথিবীর সপ্তবারির জল একত্রিত হয়ে তাকে। আর এই বিশ্বাস থেকেই এর নাম হয় পনাতীর্থ। সনাতন ধর্মীদের বিশ্বাস এখানে দোল পূর্ণিমার রাতে সপ্তবারির জল একত্রিত হয়। আর একারণেই সারা দেশের পূণ্যার্থীরা এখানে এসে বছরের নির্দিষ্ট দিনে মিলিত হন স্নানের আশায়।
যাদুকাটা নদীর নামকরণের পিছনে কারণ খুজতে গিয়ে জানা যায় নদী তীরবর্তী কোনো গ্রামের এক বধূ মাছ মনে করে একদা নিজের পুত্র (যাদু) কে কেটে ফেলেছিলেন।
আর তখন থেকেই এর নাম হয় যাদুকাটা। বহু জনশ্র“তি ও মিথের পর নদীটির বর্তমান নাম যাদুকাটা।
নানান জনশ্রতির পর বর্তমানে এই নদীটি যাদুকাটা নামেই পরিচিত। রূপের নদী যাদুকাটার উৎপত্তিস্থলের অদূরেই রয়েছে একটি ছোটো টিলা। বারেকের টিলা নামক এই টিলাটিও নদীটির সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুন।
নদী ঘেষে খাড়া ও ঢালু পথ বেয়ে উঠতে হয় এই সবুজময় টিলায়। সরকারের বন বিভাগ এই টিলার সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে গাছ লাগাচ্ছে। এই টিলাকে কেন্দ্র করে বেসরকারি একাধিক উদ্যোক্তা পর্যটন স্পট করার চিন্তা ভাবনা করছেন। এই টিলার নিচেই বহমান স্বচ্চতোয়া জলের রূপের-নদী যাদুকাটা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।