সেই পুরান পথেই চলছে 'আধুনিক সভ্যতার শিরোমণি' পশ্চিমের রুলিং ক্লাস। জানা শুনা ছক বাঁধা পথ। অর্থনীতি খারাপ, বৈষম্যের কারণে ঘরে সমস্যা তো কি হয়েছে যুদ্ধ লাগাও। অস্ত্রের রমরমা ব্যবসা কর, অন্যের সম্পদের উপর আধিপত্য বিস্তার কর। আর দেশের ভিতর জাতীয়তাবাদের জিকির তুলে যুদ্ধাবস্তায় জাতীয় ঐক্য সুসংহত কর, বৈষম্যের চির ঢেকে ফেল উড়ে যাওয়া জেট জঙ্গীর শব্দে।
ঘটনাস্থল ইউরোপ হয়ে এশিয়া ও আফ্রিকার দরজা, তেল সমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্য বা তথাকথিত আরব দুনিয়া। ঘটনার ঘনঘটায় পুরাতন শিকারীরা নানান চাল চেলেছে। যে বেনগাজিতে গণজাগরণের প্রধান সুর ছিল গাদ্দাফির পতন আর বিদেশী অপশক্তির রাহু মুক্ত হওয়া সেই বেনগাজি আজ আকাশে ফ্রান্স যুদ্ধ বিমান দেখে মত্ত হয়েছে আতশবাজিতে!
তিউনিশিয়ার বেন আলি খেটে খাওয়া মানুষের তাড়া খেয়ে 'মক্কা'য় পলায়নের পর যেন নড়েচড়ে উঠে আরব দুনিয়া। ১৮ দিনের এক গণশক্তির মহাকাব্য রচনা করে নীল নদবাসি মিশরীয়রা। তারীয় প্যাঁচের জালীয় জগতের মাধ্যমে তা দেখেছে সকলে।
তাহরির চত্বর এখন সবার মুখে মুখে। দুনিয়ার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে।
ভূমধ্যসাগরের তীর থেকে শুরু করে একেবারে ইন্ডিয়া গেট (ইডেন; ইয়েমেন) পর্যন্ত মহাশক্তি ধর 'আল্লা' যেন জেগে উঠে। কি অমোঘ শক্তি নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াচ্ছে প্রতি শুক্রবারে! কায়রোর রাস্তায় খালি হাতে মোকাবিলা করলো সাঁজোয়া ট্যাংক। ঢিল ছুড়ে সামাল দিল মোবারকের মহাশক্তিশালী ঠগ বাহিনী।
জনগনের এমন শক্তি দেখে আঁতকে উঠে মক্কার মসনদ। তেল খেকো এই সভ্যতার মুনাফা খেকো কর্পোরেশনের তাবেদার সরকারগুলো তাড়াতাড়ি পানি ঘোলা করে দর কষাকষিও মনে হয় সম্পন্ন করেছে। এখন তারা যুদ্ধ আর যুদ্ধ কৌশলে ব্যস্ত।
আরব গণজাগরণের ঢেউ লাগলে বেনগাজির মানুষও রাস্তায় নেমে আসে। ট্রাইবাল কালচারের ফেনা তুলে গাদ্দাফি ত্রিপলিতে শক্ত হয়ে দাঁড়ায় আর এই সুযোগে চরেরা পাল্টে দেয় গণ আন্দলনের পথ।
গণ আন্দোলনের যে রূপ গোটা আরবে তা পাল্টে অস্ত্র হাতে যেন ধরতে যাচ্ছিল গাদ্দাফিকে। যে রকম সাংগঠনিক শক্তি ও জনভিত্তি থাকলে এমনটি সম্ভব তার বিন্দু মাত্র ছিলনা লিবিরান রেবেলদের। অধিক সংখ্যক জনগণকে সম্পৃক্ত করার কাজ বাদ দিয়ে বেনগাজি থেকে চেজিংয়ে বের হওয়ার মাঝেই ছিল শিকারীদের পাতা জাল। দখলদারদের আনাগোনা এমন বেড়ে গিয়েছিল যে বিলাতিদের গোপন মিশনের হাড়িও ভেঙ্গেছে হাটে। আর আল-জাজিরা যেন ঘি ঢালছে আগুনে, যেন জন্ম স্মৃতির নাচন কুঁদন।
লিবিয়ার রা্স্তায় রাস্তায় শহরে শহরে ছড়িয়ে পড়ে গৃহযুদ্ধ। আর এখনতো চর দখলের দশা। মোড়লদের ইলেকট্রনিক চেহারায় গণতণ্ত্র ফেরি করা দেখতে দেখতে জগত অস্থির।
আফগানস্তান ইরাক দখলের চেয়ে নাকি লিবিয়া আলাদা। এই প্রথম নাকি সিভিলিয়ানদের স্বার্থে জাতিসংঘের এমন মহতি অবস্থান।
জাতিসংঘের মতে, এবার ন্যায় হয়েছে কারণ আরব লীগের সমর্থন আছে। আরব লীগের নেতা বর্তমান 'মক্কা'র 'পথ প্রদর্শক' সৌদি কিং আবদুল্লাহ্ হুঁশিয়ারি জারি করেছেন-"কিংডোমের দিকে কোন আঙ্গুল উঠলে তা কেটে ফেলা হবে"। শিয়া-সুন্নির গাঁজন তুলে ইতিমধ্যে দখল করেছেন বাহরাইন। আফগানস্থান ইরাকসহ কোন দখলে এই 'সৌদ আরব লীগ' সাথে ছিলনা! আর এরা সকলে মিলে এখন লিবিয়ায় নেমেছে সিভিলিয়ান বাঁচানোর নামে! ঘটনাবলির এমন মঞ্চায়ন হয়েছে যে দুনিয়ার মানুষ স্তম্ভিত, কোন প্রতিবাদ প্রতিরোধ নেই।
আরবের রাজরাজড়ারা বা জনবিচ্ছিন্ন ক্ষমতাসীনরা যদি অতি সহজেই শিয়া-সুন্নির বিষ বাষ্প বা গোত্রের লড়াই ছড়িযে দিতে পারেন তবে তারা পিছপা হবেন কেন? আরব জনগণকে এই সব বিষয়ের মোকাবিলা করতে হবে দৃঢ় চিত্তে।
আরবের তরুণেরা তাদের স্বাধীনতা ও অর্থনৈতিক মুক্তির যে দাবি নিয়ে আজ রাজপথে জীবন বাজি রেখেছে তাদের শক্তির ডঙ্কা বেজে উঠুক।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।