সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের টক শো-তে ‘ইমরানের দাদা হাজী খয়ের উদ্দিন রাজাকার এবং তার পরিবার মুসলীগপন্থী ছিল’ বলে দাবি করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু।
এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন স্থানে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপকভাবে আলোচনা-সমালোচনা হয়।
রাজীবপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল হাই সরকার বলেন, এটি শাহবাগের তরুণ প্রজন্মের আন্দোলনকে ‘বিতর্কিত’ করার অপচেষ্টা মাত্র। এমন ‘মিথ্যাচারে’ কুড়িগ্রামের লোকজন হতবাক।
কুড়িগ্রামের রাজীবপুরের বাসিন্দা ও দেশের একমাত্র নারী বীরপ্রতীক তারামন বিবি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হাজী খয়ের উদ্দিন রাজাকার ছিলেন এমন কথা কখনো শুনিনি।
শুনেছি তিনি হাজি মানুষ ছিলেন। একজন ভাল মানুষ ছিলেন। ”
রাজীবপুর উপজেলার বালিয়ামারীতে ইমরানের গ্রামের বাড়ি। তার বাবা মতিউর রহমান স্থানীয় প্রবীণ সাংবাদিক ও এলাকার মানুষের কাছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের একজন হিসাবেই পরিচিত।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদ- দিলে ওই রায়ের প্রতিবাদে শাহবাগে আন্দোলনে নামে তরুণ প্রজন্ম।
পরে এই আন্দোলন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণে সারাদশে ছড়িয়ে পরে।
যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি, জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে মাসব্যাপী লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে আসছে শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চ, যা গণমাধ্যমে ‘দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ’ হিসাবে প্রচার পায়। ইমরান শুরু থেকেই এ আন্দোলনে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন।
শাহবাগ আন্দোলনকে বিতর্কিত করতে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ও তাদের সহযোগীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন স্থানে এই আন্দোলন ও আন্দোলনের সংগঠকদের নামে নানা কুৎসা রটাচ্ছে বলে বিভিন্ন সময় অভিযোগ তোলা হয় শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চ থেকে।
মুক্তিযোদ্ধা কামান্ডার আব্দুল হাই সরকার জানান, ব্রহ্মপুত্র নদ বেষ্টিত এ অঞ্চলে পাকিস্তানি সেনারা আসার সাহস পায়নি কখনো।
রাজীবপুর মুক্তাঞ্চল হিসেবে পরিচিত ছিল। কোদালকাটি এলাকায় একদিন মাত্র পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়েছিল।
রাজীবপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আকবর হোসেন হিরু বলেন, “ইমরানের গ্রামের বাড়ি আমার বাড়ির পাশে। ছোটবেলা থেকে তাদের আমি চিনি। ইমরানের দাদা হাজী খয়ের উদ্দিন একজন সৎ মানুষ ছিলেন।
তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় সংগঠক হিসেবে কাজ করেছিলেন।
“এলাকাটি মুক্তাঞ্চল হওয়ায় এখানে পাকিস্তানিরা আসতে পারেনি। এ এলাকায় কোন শান্তি কমিটি ছিল না, রাজাকারের সংখ্যা ছিল হাতেগোনা। ”
মহোনগঞ্জ এলাকায় আবদুল কাদের ও চর রাজীবপুর এলাকায় মৌলভী আবদুল আজিজ নামে দুজন রাজাকার ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের ভয়ে তারা প্রতিদিন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে হাজিরা দিতেন বলে জানান রাজীবপুর উপজেলা চেয়ারম্যান।
একই কথা বলেন চিলমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শওকত আলী সরকার বীর বিক্রমও।
রাজীবপুরের বালিয়ামারী এলাকার বাসিন্দা ও সচেতন নাগরিক কমিটি-সনাক কুড়িগ্রাম জেলার সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, জানা মতে, মুক্তিযুদ্ধের সময় ও পরেও হাজী খয়ের উদ্দিন সরকার এবং তার পরিবার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ ছিলেন।
রাজীবপুরের মুক্তিযোদ্ধা বেলাল হোসেন, হাবিবুর রহমান ও হাফিজ উদ্দিন জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় হাজী খয়ের উদ্দিন মাথায় পাগড়ি বেঁধে চলাফেরা করতেন। তিনি হাজি মানুষ ছিলেন। রাজাকার ছিলেন না।
ইমরানের বাবা মতিউর রহমান মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাকে, আমার বাবা হাজী খয়ের উদ্দিন সরকার এবং আমার পরিবারকে নিয়ে কুৎসা রটাচ্ছে একটি মহল। আমি কোন দিনও মুসলীম লীগ করিনি। আমার বাবাও মুসলীগ লীগের সদস্য ছিলেন না। ” ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।