রাস্তায় চলে, পানিতেও ভাসে। এর নাম ‘জল ও স্থল শৌখিন পরিবহন’। উভচর এই যানটির উদ্ভাবক হাবিবুর রহমান (৩৫), ডাকনাম ইমরান। ১৩ মাসের প্রচেষ্টায় যানটি তৈরি করেছেন তিনি। গতকাল রোববার যানটি পরীক্ষামূলকভাবে চালিয়ে এর কার্যকারিতা যাচাই করেন তিনি।
গতকাল দুপুরে শহরের রাজবাড়ী রাস্তার মোড় থেকে সিএনবি ঘাট পর্যন্ত প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরত্ব স্থলপথে যানটি চালিয়ে নেওয়ার পর সামনে পড়ে পদ্মা নদী। দ্রুত এর তিনটি চাকা খুলে নদীতে নামানোর পর চলতে থাকে যানটি। নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে কয়েক শ মানুষ বিস্ময়মাখা দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকে। গতকালের চালানোটা ছিল শুধুই পরীক্ষামূলক। আগামী মাসে এটি পরিবহন হিসেবে নামানোর ইচ্ছে ইমরানের।
ইমরান জানান, শ্যালো পাম্পের ইঞ্জিন দিয়ে দুই লাখ ১৮ হাজার টাকা খরচ করে গাড়িটি তৈরি করেছেন তিনি। এটি অনায়াসে ১৫ জন যাত্রী বহনে সক্ষম। বর্তমানে ঘণ্টায় এর গতি ডাঙায় ২০ কিলোমিটার এবং পানিতে ৩০ কিলোমিটার। আধুনিক ইঞ্জিন লাগানো সম্ভব হলে আরও গতি পাবে এটি। তিনি আরও জানান, গাড়িটি ঢেউয়ের তোড়ে তলিয়ে গেলে রিমোট কন্ট্রোল বা দূরনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের মাধ্যমে এক মিনিটের মধ্যেই এর অবস্থান জানা এবং ওই রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যেই একে টেনে তোলা যাবে।
ইমরান জানান, বিমানের মতো চাকা যাতে ভাঁজ করে রাখা যায়, সে চেষ্টা করা হচ্ছে। এটা সম্ভব হলে পানিতে নামার সময় আর চাকা খুলে রাখতে হবে না। গাড়িটি ডাঙায় থাকলে যে স্টিয়ারিং দিয়ে চাকার দিক নিয়ন্ত্রণ করা হয়, পানিতে সেটা দিয়েই হাল নিয়ন্ত্রণ করা যায়। গতি কমানো ও বাড়ানোর জন্য ডাঙা ও পানির জন্য রয়েছে আলাদা এস্কেলেটর।
ফরিদপুর শহরতলির কোমরপুরে দরিদ্র পরিবারে ইমরানের জন্ম।
বাবার নাম হাসমত আলী। আর্থিক অনটনের জন্য পঞ্চম শ্রেণীর বেশি পড়াশোনা করতে পারেননি। ফার্নিচারের দোকানে কাজ করতেন। পাঁচ বছর আগে অসুস্থ হয়ে পড়ায় দোকানের কাজ ছেড়ে দেন। কিন্তু বেকার থাকতে চাননি ইমরান।
ইমরান বলেন, ‘খেলনা বানানো থেকে আবিষ্কারের নেশা চেপে বসে। উভচর গাড়ি বানানোর মাধ্যমে একটা স্বপ্ন সফল হয়েছে। আগামীতে কাজ করতে চাই বিদ্যুৎ নিয়ে। ’
ইমরানের মূল প্রেরণা ফরিদপুরের বিদ্যুৎ বিভাগের গাড়িচালক আবুল কালাম মোল্যা। তিনি জানান, সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ইমরান তাঁর উদ্ভাবিত গাড়িটি আরও আধুনিক করে তুলতে পারবে।
নদীমাতৃক দেশের যোগাযোগব্যবস্থায় এই গাড়ি কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।