আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আধিপত্য ও সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের শিকার মাহমুদুর রহমান

সত্য প্রকাশে সংকোচহীন

স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা রক্ষায় আপসহীন, নির্ভেজাল দেশপ্রেমিক ও ক্ষুরধার লেখক মাহমুদুর রহমান আধিপত্যবাদ ও সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের নির্মম শিকার হয়ে বর্তমানে কারান্তরীণ। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের দায়ে অভিযুক্ত সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে অকুতোভয় কলমযোদ্ধার কারাবরণ গোটা দেশপ্রেমিক শক্তিকে দেশপ্রেমে আরও উদ্বুদ্ধ করতে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতাসীন হয়েছে তখনই সংবাদপত্র ও সাংবাদিকরা আক্রমণের শিকার হয়েছেন। সংবাদপত্র ও সংবাদকর্মীদের ওপর নির্মম নির্যাতন, হামলা-মামলা এবং প্রকাশনা বাতিল আওয়ামী-বাকশালী অপশক্তির চিরাচরিত স্বভাবে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগের চরিত্রই হচ্ছে মুখে গণতন্ত্র কাজে বাকশাল।

মুখে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বাস্তবে কণ্ঠরোধ। তাই আওয়ামী লীগের কাছে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, গণতন্ত্রচর্চা, পরমতসহিষ্ণুতা প্রত্যাশা করা তালগাছ থেকে বেল আশা করার শামিল। বাকশালের স্বপ্নদ্রষ্টা শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন গণতন্ত্রকামী জনগণকে তাক লাগিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা প্রথম গলাটিপে হত্যা করেন। রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে বাকশালের মুখপত্র হিসেবে ৪টি পত্রিকা রেখে বাকি সব সংবাদপত্রের ডিক্লারেশন বাতিল করে দেন। ২১ বছর পর ক্ষমতাসীন হয়ে আওয়ামী লীগ আবার দৈনিক বাংলা, টাইমস, বিচিত্রা ও আনন্দ বিচিত্রা পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ করে।

আওয়ামী লীগ জরুরি সরকারের প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে ২০০৯ সালে ক্ষমতাসীন হয়ে নেতার যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে আবারও বিরোধী মত-পথ দলন, সংবাদপত্র-টিভি চ্যানেল বন্ধের উদ্যোগ নেয়। আওয়ামী লীগের গত ২১ মাসে দৈনিক আমার দেশ-এর প্রকাশনা বাতিল (বর্তমানে আদালতের রায়ে যার প্রকাশনা অব্যাহত রয়েছে), সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও বিশেষ প্রতিনিধি অলিউল্লাহ নোমানকে গ্রেফতার, চ্যানেল ওয়ান ও যমুনা টেলিভিশন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি বন্ধ হয়ে গেছে বাংলাদেশের প্রাচীন ইংরেজি পত্রিকা দৈনিক অবজারভার। টিভি চ্যানেলগুলোয় সরকারের চরম ব্যর্থতার বিষয়ে আলোচনা-সমালোচনা যাতে না হয় তাই টকশো বন্ধ করা হয়েছে। সারাদেশে ৪ জন সাংবাদিক নিহত হওয়াসহ শত শত সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হামলা-মামলা এবং লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা অব্যাহত রয়েছে।

মন্ত্রীরা জনসভা এমনকি সংসদে দাঁড়িয়ে গণমাধ্যমকে হুমকি দিচ্ছেন। ঘরে ঘরে চাকরি দেয়ার মুখরোচক কথা বলে ক্ষমতাসীন হলেও ঘরে ঘরে বেকার তৈরি করা হচ্ছে। শুধু চ্যানেল ওয়ান, যমুনা টিভি ও অবজারভার বন্ধ হওয়ায় দুই সহস্রাধিক সাংবাদিক কর্মকর্তা-কর্মচারী বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অতীত ও বর্তমান কর্মকাণ্ডে প্রতীয়মান হয়, আওয়ামী লীগের মুখে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার কথা মানায় না। প্রকৌশলী মাহমুদুর রহমান জরুরি সরকারের অসাংবিধানিক ও অগণতান্ত্রিক দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ায় তারা তাকে দুর্নীতিবাজ হিসেবে প্রমাণ করার শত চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।

আজ জরুরি সরকারের ধারাবাহিকতায় আওয়ামী সরকার তার বিরুদ্ধে সেই অপচেষ্টা আরও বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। অপ্রতিরোধ্য দেশপ্রেমিক মাহমুদুর রহমান জাতীয় স্বার্থে ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিষয়ে নানা প্রতিকূল পরিবেশ পরিস্থিতি মোকাবিলা করে তার কলম ও বাকযুদ্ধ চালিয়ে যান। বর্তমান আধিপত্যবাদ ও সাম্রাজ্যবাদী অপশক্তির তাঁবেদার আওয়ামী-বাকশালী সরকার এবং নব্য বেনিয়া গোষ্ঠীর স্বার্থ হাসিলে বাদ সাধে দৈনিক আমার দেশ ও মাহমুদুর রহমান। রাষ্ট্রীয় পতাকাধারী মন্ত্রী-এমপিরা জনসভায় আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে দিগম্বর করা ও পত্রিকা বন্ধের হুমকি দেয়। বারবার তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করা হয়।

সরকার ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে গ্রেফতার করে এবং বেআইনি পন্থায় পত্রিকা বন্ধ করে দেয়। তার অপরাধ ছিল আমার দেশ পত্রিকায় জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী ও প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিদেশি কোম্পানি শেভরন থেকে ঘুষ লেনদেন বা দুর্নীতির অভিযোগের খবর প্রকাশ করা হয়েছিল। দেশবাসী জানেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর চাঁদাবাজির চেক জরুরি সরকারের সময়ে উদ্ধার করা হয়েছিল। এ নিয়ে তার বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছিল। এ দুর্নীতির অভিযোগ বিএনপি, জামায়াত বা মাহমুদুর রহমানের ছিল না।

এমনকি অনুমাননির্ভর কোনো সংবাদও এটি নয়। পেট্রোবাংলা দুর্নীতির তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে সুপারিশ করেছিল। এ খবরটি তথ্যপ্রমাণসহ আমার দেশ পত্রিকায় প্রকাশ হয়েছিল। সরকারের উচিত ছিল বিষয়টি তদন্তসাপেক্ষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া। তা না করে মাহমুদুর রহমান ও আমার দেশ-এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দমন-পীড়ন, হামলা-মামলা ও রিমান্ডের নামে অমানুষিক নির্যাতন শুরু করা হয়, যাতে সরকারের ফ্যাসিস্ট চরিত্রের নবরূপ জাতির সামনে নতুন করে উন্মোচিত হয়।

রাষ্ট্র যখন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের প্রতিপক্ষ হয় সেখানে নিয়মনীতি, মানবাধিকার বা আইনের শাসন অকার্যকর হয়ে যায়। একজন সম্পাদককে ১২ দিনের রিমান্ডের নামে নির্মম পৈশাচিক নির্যাতন এবং বিবস্ত্র করার মতো মানবতাবিরোধী হিংস্র ও দানবীয় অপকর্মটিও করেছে বর্তমান সরকার। বিচারের বাণী আজ নিভৃতে কাঁদে। মানবতা ও মানবাধিকার আজ দুঃশাসনের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে নির্বাসনে যাওয়ার পথে চলছে। মুক্ত মাহমুদুর রহমানের চেয়ে কারান্তরীণ মাহমুদুর রহমান আজ আরও শক্তিশালী ও আপসহীন।

তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননা মামলা হয়েছে এবং সত্য লিখলেও আদালত অবমাননা হয়েছে অভিযোগে গুরুদণ্ড দিয়েছেন আদালত; কিন্তু তথ্য প্রকাশে অভিযুক্ত মাহমুদুর রহমান সবাইকে তাক লাগিয়ে আদালতের কাছে আত্মসমর্পণ করেননি, বরং প্রকাশিত সংবাদ সঠিক বলে আদালতের সামনে নিজেই তথ্যপ্রমাণ তুলে ধরেছেন। তিনি সততা ও দেশপ্রেমের যে পরিচয় বাংলাদেশের জনগণের সামনে উপস্থাপন করেছেন তা বিরল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। দেশের যুবসমাজ মাহমুদুর রহমানকে সাম্রাজ্যবাদ, আধিপত্যবাদ বিরোধিতা ও জাতীয় স্বার্থরক্ষায় আদর্শের প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করেছে। পরিশেষে বলতে চাই, ইতিহাসের নায়করা কোনো আধিপত্যবাদী শক্তির কাছে আত্মসমর্পণ করেননি বরং তারা বীরের বেশে মোকাবিলা করেছেন। মাহমুদুর রহমান আমাদের জাতীয় বীর।

এসব বীরের কারণে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ববিরোধী শক্তির সব ষড়যন্ত্র ধূলিসাত্ হবেই। তাই জাতীয় কবি নজরুল বলেছেন, ‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী, ভয় নাই ওরে ভয় নাই, নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান, ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই। ’ সৌজন্যে-ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.