পাঠকের মনে থাকবার কথা ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশে এসেছিলেন আমেরিকার ফার্স্ট লেডি হিলারি ক্লিনটন। এসেছিলেন গ্রামীণ ব্যাংকের আমন্ত্রণে। হিলারির জন্য নববধুর সাজে সাজিয়ে তোলা হয়েছিলো ঝিনাইদহের কালিগঞ্জ উপজেলার মশিহাটির ঋষিপাড়াকে। ৫ এপ্রিল ঋষিপাড়ায় হিলারির পদধূলি পড়ার পর ম্যাডামের সম্মানে এলাকার নামটাই পাল্টে ফেলা হয়। ঋষিপাড়ার নতুন নাম হয়-হিলারি পল্লি।
সেদিন গ্রামের দরিদ্র মহিলাদের এনে মুরিদ করানো হয় হিলারির কাছে। জামদানি শাড়ি পরে, মুড়িভাজা খেয়ে খেয়ে হিলারি নতুন মুরিদদের সবকও দেন। সবকটি একেবারে মূখস্ত করিয়ে দিয়ে যান। উচ্চারণ করান, যৌতুক আর দেবো না, বাল্য বিয়ে মানবো না, বদ্ধ ঘরে থাকবো না...।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, অইদিন মশিহাটিতে গ্রামীণ ব্যাংকের পক্ষে সাথী ও মুক্তি নামের যে দু’টি শিশু মেয়ে ফুল দিয়ে স্বাগত জানিয়েছিলো হিলারিকে, সেই মেয়ে দু’টিকেও বলি হতে হয়েছিলো বাল্য বিবাহের।
১৯৯৯ সালে ১২ বছরের সাথীর বিয়ে হয় হিরন্ময় নামের যুবকের সাথে। ১১ বছরের মুক্তির বিয়ে হয় মুক্তা নামের এক জুতার মিস্ত্রির সাথে। তাদের বিয়েতেও টেলিভিশন, সাইকেল, ঘড়ি ইত্যাদি দিতে হয় যৌতুক হিসেবে!
আরো দু:খজনক ঘটনা হলো, মুক্তি নামের সেই মেয়েটির বাবাও মুক্তি পাননি ইউনুসীয় থাবা থেকে। ইউনুস সাহেবের মহান একটি গুণ হলো, সুদের কিস্তির ব্যাপারে কারো সাথেই আপোস করেন না তিনি। ছাড়েননি মুক্তির বাবা মুকিন্দকেও।
সুদসহ ঋণ পরিশোধ করতে যেয়ে বেচারা মুকিন্দকে ভিটেমাটি বিক্রি করে গ্রাম ছাড়তে হয়েছিলো।
চাইলে এমন উদাহরণ দেয়া যাবে ভুরিভুরি। মাইক্রো ক্রেডিটের এই মহান জাদুকরের ঋণের পাতানো জালে ফেঁসে গিয়ে ভিটেমাটি বিক্রি করে সর্বশ্রান্ত হতে হয় যশোরের সেই মশিহাটির লাবনী, শান্তি, শ্রাবণ, ভানুদাস, মিনারাণী, গীতা, সন্তুসহ নাম না জানা আরো কতো মানুষকে!
মাত্র সাত হাজার টাকা ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে মারা গিয়েছিলো দরিদ্র গৃহবধু পারুল। ইউনুসের গুণধর সৈনিকেরা লাশ আটকে দিয়েছিলো মেয়েটির। আগে ঋণের টাকা পরিশোধ, তারপর লাশ দাহ।
শেষে পারুলের স্বামী কার্ত্তিক সুদে-আসলে টাকা পরিশোধের মুচলেকা দিয়ে লাশ সৎকারের সুযোগ পায়। মমতা নামের মেয়েটিকে কিস্তি পরিশোধ করতে গিয়ে বিক্রি করতে হয় ঘরের চালের টিন। মায়ারাণীকে বিক্রি করতে হয় ছাগল, গরু এমনকি বিয়ের আংটিটি পর্যন্ত।
মোটকথা, অভাবের তাড়নায় পেটের জ্বালায় ইউনুস সাহেবের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণের পর থেকে ঋণ গ্রহীতাদের চৌদ্দগোষ্ঠীর আরাম হারাম হয়ে যেতো। সকল অপমান ও নির্যাতন সহ্য করতে হতো নিরবে।
প্রতিবাদ করার সাহস দেখাতে পারতোনা কেউ। কারণ, কারো ঘাড়েই দু'টি মাথা ছিলো না।
ঝিনাইদহের বিপ্ল¬বী কমিউনিস্ট নেতা মীর ইলিয়াছ হোসেন দীলিপ। গ্রামীণ ব্যাংকের কুকীর্তি নিয়ে একটি বই লিখেছিলেন ১৯৯৫ সালে। বইটির নাম ছিলো-‘গ্রামীণ ব্যাংক, মহাজনী শোষণের অভিনব হাতিয়ার’।
দেখাগেলো কিছুদিনের মধ্যেই লাশ হয়ে গেছেন তিনি। ২০০০ সালের ১৫ই জানুয়ারি গুলি করে মেরে ফেলা হলো দীলিপকে!
৩৬% সুদের রমরমা ব্যবসা এদেশে কেবল ড. ইউনুসই করতে পেরেছেন। তারপরও তিনি মাইক্রো ক্রেডিটের জনক! দেশের গরিবের ভাগ্য নিয়ে বিদেশের সাথে ভালোই ব্যবসা করতে পেরেছেন তিনি। আমাদের মাথা বিক্রি করে দাতাদের কাছ থেকে নিয়ে এসেছেন হাজার হাজার কোটি টাকা। বিনিয়োগ করেছেন নিজের আত্মীয়-স্বজনের ফার্মে, পছন্দের প্রতিষ্ঠানে।
কিছু অবশ্য গরিবও পেয়েছে। তবে সাহায্য হিসেবে নয়, চড়া হারে সুদভিত্তিক ঋণ হিসেবে। সময়মত যে ঋণের কিস্তি পরিশোধে অপারগ হলে খুলে নেয়া হয়েছে চালের টিন পর্যন্ত।
গ্রামীণ ব্যাংকের তহবিলের অবস্থা খুবই শক্তিশালী। আবার বাংলাদেশের নাম্বার ওয়ান হাওয়ার ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ফোনের ৩৫% মালিকানাও এই গ্রামীণ ব্যাংকের।
তারপরও ড. ইউসুস লাভ চাই আরো চাই’ নীতিই ছিলো তার সবচে’ প্রিয় নীতি। দারিদ্রের এই জাদুকর সময় সময় আমাদের মাথা বেঁচে বাইরে থেকে মোট কতো হাজার কোটি টাকা নিয়ে এসেছিলেন, সেই প্রশ্নটি আমাদের কোনো সরকার তাকে করেছিলো কি না, কে জানে!
আমাদের দারিদ্রকে জাদুঘরে পাঠানোর মুখরোচক স্লোগান দিয়ে ইউনুস সাহেব বাইরে থেকে কতো বিলিয়ন ডলার নিয়ে এসেছেন, সেটার কোনো পরিসংখ্যান আমাদের সরকারগুলোর কাছে নেই সম্ভবত! থাকলে তো ইউনুস সাহেবের তহবিল কারসাজির কাহিনী নরওয়ে থেকে আমাদের জানতে হতো না। সম্প্রতি নরওয়ে থেকে ইউনুস সাহেবের তহবিল কেলেংকারির খবর ফাঁস হবার পর একে একে থলের বিড়ালগুলোও বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে।
ইউনুসীয় সুকীর্তির আনবিক বোমাটি ফাটান ডেনমার্কের সাংবাদিক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা টম হাইনেমান। কট ইন মাইক্রো ডেট বা ক্ষুদ্র ঋণের ফাঁদে শিরোণামে তৈরি প্রামাণ্য চিত্রটি বিশ্বের সামনে প্রকাশ করে দেয় নরওয়ের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন এনকেআর।
৩০ সভেম্বর ২০১০ ডকুমেন্টারি প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হবার পর ইউনুস সাহেবের চেহারা থেকে কৃত্রিম পর্দাটি সরে যায়। এদেশের দরিদ্র মানুষকে সাহায্য করবার নাম করে নোরাডের কাছ থেকে সাহায্য হিসেবে আনা ৭শ কোটি ডলার তহবিল স্থানান্তরের তথ্য বেরিয়ে আসে।
দেখা যায়, ইউনুস সাহেব টাকাগুলো গ্রামীণ ব্যাংকের ফান্ড থেকে সরিয়ে ‘গ্রামীণ কল্যাণ’ নামের উনার আরেকটি প্রতিষ্ঠানে সরিয়ে রাখেন। ঘটনাটি ফাঁস হয়ে যাবার পর এ ব্যপারে তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, কর বাঁচানো (ফাঁকি)’র জন্য তিনি এই সুকর্মটি করেছেন। রাষ্ট্রের কর ফাঁকি দেয়ার কাজ এক অর্থে রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল।
ইউনুস সাহেবের ভাগ্য ভালো, এনবিআর তাকে অপমান করে আদালতে নিয়ে যায়নি। হয়তো পকেটে একটি নোবেল ছিলো বলে!
চলবে
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।