রঙ্গিলা বন্ধুরে....... i_mahmud2008@yahoo.com
ইসমাইল মাহমুদ
বীর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী পাক হানাদার বাহিনীর সাথে সম্মুখ সমরে জয়ী হলেও স্বাধীন বাংলাদেশে অবহেলিত। ৭১’এর বীর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাঁর যুদ্ধ চলছে অবিরত। এখন তিনি যুদ্ধ করছেন রোগ-শোক ও চরম দারিদ্রের সঙ্গে। মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী শরীফপুর ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর গ্রামের বাসিন্দা রহমত আলী ৪ নং সেক্টরের অধীনে কৈলাশহর সাব-সেক্টরের মাধ্যমে অংশগ্রহণ করেন স্বাধীনতা যুদ্ধে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় তার একটাই স্বপ্ন ছিল দেশ স্বাধীন হবে, খেয়ে-পড়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবেন। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে অনেক স্বপ্নকে সঙ্গী করে। কিন্তু সেই রহমত আলীর স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেছে। স্বাধীনতার পর রহমত আলী সব সময় অন্যায়ের প্রতিবাদ করে গেছেন নিজ গ্রাম নিশ্চিন্তপুরে। এই প্রতিবাদই তাঁর কাল হয়েছে।
বহুবার গ্রামের দুষ্টচক্রের রোষানলে পড়তে হয়েছে তাঁকে। আর প্রভাবশালী মহলের রোষানলে পড়ে নিজ সহায়-সম্পত্তি বিনষ্ট হয়েছে। বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধা রহমত আলী অল্প কিছু চাষবাস করে বৃদ্ধ মা-বাবা, স্ত্রী আর দুই ছেলে এক মেয়েকে নিয়ে সংসারের ঘানি টেনে চলেছেন। সুন্দর জীবন-যাপন ও রোগ-শোকের চিকিৎসার আর্থিক সামর্থ নেই। ছোট ছেলে সিলেট মদনমোহন কলেজে পড়াশোনা করছে।
তার লেখাপড়ার খরচ চালান ছেলের মামা। সাপ্তাহিক ২০০০-এর সাথে কথা বলতে গিয়ে এ তথ্য জানান একাত্তরের বীর সেনানী রহমত আলী।
তিন যুগেরও বেশি সময় পূর্বে দেশ স্বাধীন হয়েছে। স্বাধীনতার বিরোধীতাকারীরা আজ সমাজে প্রতিষ্ঠিত। অথচ প্রকৃত একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়েও রহমত আলী পাননি সরকার কর্তৃক কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধা।
এমনকি ২০০৪ সালের পূর্ব পর্যন্ত তার নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় সরকারিভাবে স্থান পায়নি। গত ২০০৪ সালে সরকারিভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরি করা হলে ওই তালিকায় তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার রহমত আলীর নাম তালিকভুক্ত করেন। যার স্মারক নং- ২৩০, ক্রমিক নং-২৪/১। মুক্তিযুদ্ধের যোগদানের তারিখ ২৩/৫/৭১ এবং স্থান হিসেবে কালিপুরের নাম উল্লেখ আছে।
২০০৪ সালের সরকারিভাবে তালিকা তৈরি সময় আশার আলো দেখেছিলেন রহমত আলী।
কিন্তু বাস্তবে কোনো লাভ হয়নি তাঁর। এ তালিকা শুধু তালিকাই হয়েই রইল। ৭১ সালের সেক্টের কমান্ডেরে দেওয়া একটি সার্টিফিকেট ও ২০০৪ সালের উপজেলা প্রশাসনের তৈরি তালিকার একটি ফটোকপি সযতেœ রেখেছেন। তিনি জানন, ‘এগুলোই হলো আমি যে মুক্তিযোদ্ধা তার প্রমাণ’।
রহমত আলী জানান, “মুক্তিযুদ্ধের শুরু দিকে গাইড হিসেবে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগী হয়ে কাজ করি।
পরবর্তীতে সম্মুখ সমরে অংশগ্রহণের প্রবল ইচ্ছা জাগে মনের মধ্যে। মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতায় ভারতে স্বল্প মেয়াদে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে খুব দ্রুত থ্রি নথ থ্রি, এসএলআর ও হ্যান্ড গ্রেনেড চালানো আয়ত্ত করি। প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার পর অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে অনেক অপারেশনে গিয়েছি। তার মধ্যে আলীনগর বিওপি আক্রমণের কথা অম্লান রয়ে গেছে মনের মধ্যে। সেদিন অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে আমিও বিওপি আক্রমণে অংশগ্রহণ করি।
প্রচন্ড লড়াই হয়। প্রায় ৪ ঘন্টা ব্যাপী যুদ্ধ হয়। এ সময় ক্রস ফায়ারে গ্রামের একজন নিরিহ মহিলা মারা যায়। অবশেষে উভয় পক্ষ নিজ নিজ অবস্থান থেকে সরে আসে এবং ওই দিনের মত যুদ্ধ শেষ হয়। রহমত আলী আক্ষেপের সুরে বলেন, দেশমাতৃকার টান যুদ্ধ করেছি কোনো স্বার্থের জন্য নয়।
তখন বুঝিনি যে, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সনদ গ্রহণ করা একান্ত প্রয়োজন এবং এই সনদ দিয়ে অনেক স্বার্থ আদায় করা যাবে। বিভিন্ন সময় দেখেছি অনেক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধারা নকল সনদ জোগাড় করে রাষ্ট্রীয় অনেক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে। অথচ অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের নাম তালিকায় নেইÑতারা মানবেতর জীবন যাপন করছে। আমি চাই বর্তমান সরকার সঠিকভাবে যাচাইবাছাই করে গ্রামেগঞ্জে অবহেলিতভাবে বেঁচে থাকা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজে রেব করে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করুন”।
সাপ্তাহিক ২০০০-এর সাথে আলাপকালে বীর মুক্তিযোদ্ধা সেনাবাহিনীর অনারারি ক্যাপ্টেন (অব) মোহাম্মদ আলীর বলেন, সীমান্ত এলাকায় রহমত আলীর বাড়ী হওয়ার ফলে যুদ্ধকালীন পুরো ৯ মাস আমার মত অনেক মুক্তিযোদ্ধা তার বাড়ীতে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
তার মা-বাবা সাধ্য মত আমাদেরকে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাসহ সার্বিকভাবে সহায়তা করেছেন। বিশেষ করে অনেক সময় রাত্রী বেলায় রহমত আলীর মা আমাদেরকে রান্না করে ভাত খাইয়েছেন। এতে কখনও তার মাকে বিরক্তি বোধ করতে দেখিনি। মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী আরো বলেন, রহমত আলী মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই গাইড হিসেবে মুক্তিযোদ্ধাদের খবরাখবর রাস্তাঘাট চিনিয়ে দিতে সব সময় মুক্তিযোদ্ধাদের ঘনিষ্ট সহযোগী ছিলেন এবং পরবর্তীতে রহমত আলী সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
ইসমাইল মাহমুদ
মৌলভীবাজার
০১৭১৫১৭১৯৫০
০১১৯৬১২৮৫১৩
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।