অতি সাধারণ....প্রধানমন্ত্রী হলে দেশটারে সাজাইতাম
সাকিব ফারহান
মন্ত্রিপরিষদ খসড়া নারি উন্নয়ন নীতিমালা পাশ করেছে। এর আগে হাইকোর্ট ফতোয়া নিয়ে একটি রায় দিয়েছে। নারি উন্নয়ন নীতিমালা কুরআনের বিধানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। যা শত শত বছর ধরে বাংলাদেশে চালু রয়েছে। অন্যদিকে ফতোয়ার ব্যাপারে হাইকোর্টের দেয়া রায়ও একইভাবে কুরআনের নির্দেশের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
ফতোয়া এবং নারী নীতিমালা নিয়ে দেশের আলেম ওলামাদের বিভিন্ন সংস্থা সংগঠন কঠোর মনোভাব নিয়েছে। সরকারের নব গৃহীত এসব নীতি প্রত্যাহারে দাবিতে শুক্রবার ঢাকাসহ সারাদেশে তারা বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। পরদিন শনিবার বাংলাদেশের পত্রিকাগুলো কিভাবে কাভার করলো সে বিক্ষোভের খবর?
খবরটি প্রথম আলো শেষের পাতায় এক কলামে ছেপেছে। ‘নারী-পুরুষের সমানাধিকার মানব না’ এই শিরোণামের নিচে পত্রিকাটি লিখেছে, ধর্মভিত্তিক দলগুলোর নেতাদের হুশিয়ারি। বিস্তারিত বিবরণে পত্রিকাটি লিখেছে, ‘নারী উন্নয়ন নীতির বিরুদ্ধে রাজধানীসহ সারাদেশে বিক্ষোভ করেছে কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো।
এসব দলের নেতারা বলেছেন, তারা নারী পুরুষের সমান অধিকার মেনে নেবেন না। সরকার এমনটি করতে চাইলে ক্ষমতা থেকে টেনে নামানোর হুমকি দেন তারা। ... জুমার নামাজের পর একে একে কয়েকটি ধর্মভিত্তিক দলের মোর্চা ইসলামি আইন বাস্তবায়ন কমিটি, একই ধরনের আরেকটি মোর্চা সম্মিলিত ওলামা মাশায়েক পরিষদ ও খেলাফত মজলিশ সমাবেশ করে। ’
যে কয়টি সংগঠনের কথা পত্রিকাটি লিখেছে তাদের বক্তব্য খুব সংক্ষিপ্ত করে তুলে ধরেছে। সংবাদের শেষে একটি সাব হেড করেছে - ‘নারী কর্মীদের অশালীন ভাষায় আক্রমণ’।
এর নিচে পত্রিকাটি লিখেছে, ইসলামী আন্দোলনের সমাবেশে দলের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য সৈয়দ মো. ফয়জুল করীম নারী কর্মীদের অশালীন ভাষায় আক্রমণ করে বক্তব্য দেন। বলেন, ‘নারীদের সমঅধিকার দিলে সমাজ ও পরিবারের মধ্যে আগুন লাগবে। নারী অধিকারের নামে যারা চিল্লাচ্ছেন তাদের পারিবারিক বন্ধন খুব দুর্বল। আপনাদের স্বামী আপনাদের অধিকার দেয়নি। আমরা আমাদের স্ত্রীদের অধিকার দিয়েছি।
’
ফজলুল করিম বলেন, কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফতোয়াকে নিষিদ্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। দোররা মারার কথা বলা হয়। কিন্তু কোন আলেম দোররা মারার কথা বলেছেন? এগুলো সব মিডিয়ার সৃষ্টি। এরপর জামায়াতে ইসলামি প্রভাবিত আরেকটি সংগঠনের বিক্ষোভ সমাবেশ ও তাদের নেতাদের কয়েক লাইন বক্তব্য দিয়ে পত্রিকাটির এ সংবাদটি শেষ হয়। পত্রিকাটির সাবহেডিং ‘নারী কর্মীদের অশালীন ভাষায় আক্রমণ’ এটি দেখে কেউ যদি সে জায়গাটা পড়তে যায় তাহলে কিছুটা হতাশই হবেন।
রাজনীতিবিদদের অনেক এলোমেলো অশালীন বক্তৃতা পত্রিকাটিকে এডিট করে ছাপতে দেখা যায়। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন মুখ ফসকে কিছু বলে ফেলেন সে ব্যাপারে পত্রিকাটি সব সময় পরিমিতি বোধের পরিচয় দেয়। সেসব বক্তৃতা যদি এ ধরনের সাবহেড দিয়ে প্রকাশ করা হতো তাহলে প্রতিদিন পাঠকদের অনেক বেশি এ ধরনের সাবহেড পড়তে হতো।
প্রথম আলো ওলামা মাশায়েকদের বিক্ষোভের কোনো ছবি দেয় নি। কালের কণ্ঠ সমকালে খবরটি কোথাও দেয়নি।
অনেক সময় যেসব খবর পত্রিকাগুলো এড়িয়ে যেতে চায় সেগুলো ভিতরের পাতায় দিয়ে থাকে। পত্রিকা দুটোকে এবার সেটাও করতে দেখা গেল না। তবে একইদিন ভিতরের পাতায় ধর্ম বিষয়ক একটি আঞ্চলিক খবর কালের কণ্ঠকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে ছাপতে দেখা গেল। তিন কলাম ছবির নিচে ক্যাপশনে পত্রিকাটি লিখেছে, শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের ১২ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার শহরে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে রংপুর বিভাগীয় উৎসব উদযাপন পরিষদ।
সরকার সমর্থক পত্রিকা ইত্তেফাক শেষের পাতায় একেবারে নিচে ছবিসহ খবরটি দিয়েছে।
তারা শিরোণাম করেছে - নারী নীতিমালার বিরুদ্ধে চার ইসলামী সংগঠনের বিক্ষোভ। ওলামা মাশায়েকদের মূল ধারার সব সংগঠনই এদিন ঢাকাসহ সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। কিন্তু ইত্তেফাকের শিরোণাম পড়লে মনে হবে ওলামা মাশায়েকদের (একাংশ) শুধু চারটি সংগঠন এই বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। তারা খবরের প্রথম অংশেই উল্লেখ করেছে ছুটির দিন শুক্রবারে হুজুরদের এ বিক্ষোভ সমাবেশের কারণে কি ধরনের যানজট হয়েছে। যুগান্তর খবরটি শেষের পাতায় ছবিসহ দিয়েছে।
সংবাদ রচনার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের পক্ষপাতদুষ্টতা এতে ছিল না। অর্থাৎ ‘নাউজ এজ ইট ইজ’ দিয়েছে তারা। তবে বিক্ষোভ সমাবেশের যে ব্যাপকতা ছিল সে অনুযায়ী কাভারেজ দেয়া হয়নি।
এক সময়ের মাদ্রাস শিক্ষা ও ইসলামপন্থিদের সমর্থক ও বর্তমান সময়ে সরকারের ঘোরতর সমর্থক ইনকিলাবের কাভারেজ ছিল বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। কিভাবে এ ধরনের একটি ইস্যুতে তারা একইসাথে সরকারের প্রতি সমর্থন ধরে রেখে ওলামা মাশায়েকদেরও সমর্থন করবেন তার কোনো পথ যেনো খুঁজে পাচ্ছিলো না পত্রিকাটি।
অবশেষে তারা খবরটি প্রথম পাতার নিচে ছোট করে দিলেন। এক পলকে পত্রিকা দেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বা নীতি নির্ধারকরা ধরতে পারেবেনা নারী নীতি ও ফতোয়া প্রশ্নে পত্রিকাটি কি অবস্থান নিয়েছেন। ভিতরে দুই নাম্বার পাতায় দেখা গেল পাতার প্রায় পুরোটা জুড়েই ওলামা মাশায়েকদের বিক্ষোভের ছবি এবং খবর। অর্থাৎ তারা খবরটি নিজেদের খবর হিসেবে নিয়েছে। তবে সাহসের অভাবে বা অন্য কোনো কারণে প্রথম পাতায় ন্যায্য প্রজেকশন দেয়নি।
আমার দেশ প্রথম পাতার নিচে তিন কলামে ছবি এবং সংবাদটি দিয়েছে। নয়া দিগন্তও প্রথম পাতার নিচে ছবি এবং খবরটি দিয়েছে। নয়া দিগন্ত চার কলামে দিয়েছে। তারা একটি লম্বা লোগো ব্যবহার করেছে যেখানে খবরটির একটা আলাদা গুরুত্ব ফুটে উঠছে। কয়েকটি ছবি পেষ্ট করে একটি বড় কম্পাইল ছবি করা হয়েছে।
ক্যাপশনে ছবির বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে। খবরটি প্রথম পাতা থেকে দ্বিতীয় পাতায় জাম্ফ করেছে। সেখানে দেখা গেল টানা দুই কলাম কাভারেজ দেয়া হয়েছে। সমাবেশে বক্তারা যে বক্তব্য দিয়েছেন তা বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। মানবজমিন প্রথম পাতায় ছবিসহ খবরটি দিয়েছে।
সংগ্রাম এ নিয়ে প্রথম পাতায় তিনটি স্টোরি করেছে। আলাদা করে তিনটি ছবিও ছেপেছে প্রথম পাতায়।
ইংরেজি পত্রিকাগুলো এ নিয়ে একেবারে নির্বিকার। নিউ এজ এবং ডেইলি স্টার-এ এ নিয়ে কোনো সংবাদ দেখা গেল না।
সেকেন্ড লাইন
১৩ মার্চ প্রথম আলোর প্রধান সংবাদ শিরোণাম- সীমান্তে প্রাণঘাতী অস্ত্র চালাবে না ভারত।
পত্রিকাটি লিখেছে, সীমান্তে নিরস্ত্র বেসামরিক বাংলাদেশীদের হত্যা বন্ধে প্রাণঘাতি নয়- এমন অস্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। এরপর খবরটি নানা তথ্য উপাত্ত উপস্থাপনের মাধ্যমে এগিয়ে যায়।
এ থবরটির মর্মকথা হচ্ছে, ভারত বাংলাদেশীর মারবে তবে প্রাণে মারবে না। আর এখবরটি আমাদের জন্য আনন্দের! তাই সুন্দর করে সফ্ট ভাষায় ভারতীয়দের মহত্ব ছড়িয়ে দাও সারা বাংলাদেশে। ভারতের ইমেজ গড়ার প্রচেষ্টা হিসেবে কাজ করবে প্রথম আলোর ১৩ মার্চের প্রধান সংবাদটি।
Link here
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।