বিষয়টি নিয়ে আমরা প্রায়ই ভাবিত হই। দুজনে মিলে আলোচনা করি।
এতদিন সেই অবসর ছিল না। ঢাকা শহরে বেচে থাকার কামড়া-কামড়ি লড়াইয়ে এত ব্যস্ত ছিলাম যে দেশ নিয়ে ভাববার সময় বা প্রয়োজন কোথায়? নিজে বাচলে বাপের নাম।
কিন্তু এখন বিদেশে চাকরি করি।
সংসার খরচ বাদে ভালই টাকা জমছে। একটি নিরাপদ ভবিষ্যতের আশা করতে পারি। তাই এখন, এই অবসরে, দেশ থেকে অনেক দুরে বসে আমরা দেশের শ্রীহীন অবস্থা নিয়ে চিন্তিত। বাংলাদেশের মানুষ আজ দুই দল গুন্ডার হাতে জিম্মি। বেশীরভাগ মানুষ চোর আর বাটপাড়।
মানুষ নিদারুন দু:খ, কষ্টের মধ্যে আছে।
আমরা যেখানে চাকরি করি সেখানে আরও অনেক দেশের মানুষ কাজ করে। বাংলাদেশী ছাড়াও আছে ভারতীয়, পাকিস্তানী, মিশরীয়, সিরিয়, সুদানি, জর্ডানি, আমেরিকান, ইংরেজ, অস্ট্রেলীয়, নিউজিল্যান্ডি, কানাডিয় ইত্যাদি। সব দেশের মানুষের সাথেই মোটামুটি মেশা হয়েছে এই ৩ বছরের চাকুরি জীবনে।
তো আমি একটি গল্প বললাম আমার বন্ধু নূরুল আলম ভাই কে।
ধরুন আমার আর আপনার যোগ্যতা সমান, কিন্তু আপনি আমার চেয়ে বেশী বেতন পান।
একজন ভারতীয় হলে এই পরিস্থিতিতে বসকে বলবে, "আমার বেতনটা কি একটু বাড়ানো যায়? আমার মনে হয় আমি আরও বেশী বেতন পাওয়ার যোগ্যতা রাখি"। বস তখন চিন্তা করবে, "আরে, তাই তো! আমি তো একই যোগ্যতার আর এক জন কে বেশী বেতন দেই। তবে একেও দেওয়া উচিত। "
একজন পাকিস্তানী হলে এই পরিস্থিতিতে বসকে বলবে, "আমার বেতনটা কি একটু বাড়ানো যায়? আমার কাছে পাকা খবর আছে যে আপনি কাউকে কাউকে বেশী বেতন দিচ্ছেন।
কাজেই আমাকেও বেশী বেতন দিন। "
আর একজন বাংলাদেশী হলে এই পরিস্থিতিতে বলবে, "আপনি নূরুল আলমকে কেন বেশী বেতন দিলেন? এখন আমাকেও দিতে হবে, নাহলে হবে না। "
এই হল পার্থক্য। বাংলাদেশের মানুষের সবচেয়ে বড় সমস্যা তারা একতা বদ্ধ নয়। এই প্রসংগে নূরুল আলম ভাই তার বিখ্যাত "পায়ে পায়ে বাড়ি খাওয়া" থিউরি উপস্থাপন করলেন।
উনার ভাষ্যমতে, বাংলাদেশ এগুতে পারছে না কারন আমরা পায়ে পায়ে বাড়ি খেয়ে পড়ে যাচ্ছি।
কিভাবে? মূলতে নিম্নলিখিত কারনে আমরা একতাবদ্ধ হতে পারছি না:
১) আমরা অন্যের ভাল দেখতে পারি না। নিজেও "উত্তম" হতে পারি না, বা চাই না, অন্যকেও "উত্তম" দেখতে পারি না। আমাদের বিচিএ গাএদাহ হয় অন্যের সাফল্যে।
২) আমাদের "ইগো" আকাশস্পর্শী।
"আমি কি হনু রে" - এই ভাবনায় ও ভাবে আমরা এতই আচ্ছন্ন থাকি যে অন্যকে তুচ্ছ করবার একটা নেশা আমাদের পেয়ে বসে। নিজেই নিজেকে নোবেল প্রাইজ দিয়ে বসে থাকি। (সম্ভবত সে কারনেই যদি অন্য কোনো নোবেই প্রাইজ পাওয়া ব্যাক্তির কোনো দোষ খুজে পাওয়া যায়, আমরা তৎক্ষনাৎ মহা ধুমধামের সাথে তাকে টেনে নিচে নামাতে উদ্যত হই। ) মানুষকে ছোট করার মধ্যেই যে আমাদের আনন্দ!
৩) আমরা রোজার সময় মহা ধুমধামের সাথে রোজা পালন করি, ঈদের নামাজ পড়ি, জুম্মার নামাজের দিন মসজিদের বাইরেও লোক ধরে না, কিন্তু ধর্মের আসল বই (কোরআন ও হাদিস) পড়ি না, বা পড়লেও মানি না। আমরা নিজেকে এতই স্মার্ট ভাবি যে মনে করি সৃষ্টিকর্তাকেও ফাকি দেওয়া যাবে।
ফলাফল? "পায়ে পায়ে বাড়ি খেয়ে" পড়ে থাকা। আমরা নিজেরাই নিজেদের সর্বনাশ করে চলেছি। প্রতি ক্ষনে। প্রতিটি কাজে।
তবে উপায়?
রাত সাড়ে বারটা বেজে গিয়েছিল।
বললাম, "নূরুল আলম ভাই, আজ তবে উঠি। সমস্যা তো বের করা গেল। পরেরদিন আমরা সমাধান নিয়ে আলোচনা করবো। "
সোজা বাসায় ফিরে এলাম। মনে মনে ভাবছি, সমস্যার যদি সঠিক নির্নয় করতে পেরে থাকি, সমাধান নিশ্চয়ই পাব।
ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।